জলাবদ্ধতায় রবি শস্যের বড় ক্ষতি

সাইফুল ইসলাম, চরফ্যাশন (ভোলা)
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২২, ০৭: ৩২
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ১২: ২০

অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চরফ্যাশন উপজেলার চাষিরা। বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতায় মুগ ডাল, চিনাবাদাম ও মরিচসহ রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বাদাম, মরিচ ও মুগ ডালখেত।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, বাদাম, মরিচ ও মুগ ডালখেতে কিছুদিন পানি জমে থাকলে এসব ফসল পচে যায়। মৌসুমের শুরুতে মরিচ ও মুগ ডাল একবার তুলতে পারলেও ওই সময় অপরিপক্ব থাকায় বাদাম তোলেননি অনেকে। কিন্তু জলাবদ্ধতায় অপরিপক্ব বাদাম পচে গেছে। বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এদিকে এ সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি কার্যালয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিপাতে উপজেলার বেশির ভাগ রবি শস্যের খেত ডুবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার অধিকাংশ নিচু এলাকার রবি শস্যের খেত পানিতে ডুবে রয়েছে। খেতে থাকা বাদাম, মরিচ ও মুগ ডাল পচে গেছে। খেতের পানি পচে কালো বর্ণ ধারণ করেছে। এতে খেত থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, চরফ্যাশন উপজেলায় ৮৫ হাজার ১৯২ হেক্টর আবাদি জমি ও ৩ হাজার ৩৩৭ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছে। আবাদি জমির মধ্যে চলতি রবি মৌসুমে ৭ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম, ১২ হাজার ২০৫ হেক্টর জমির মুগ ডাল ও ১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমির মরিচ আবাদ হয়েছে।

উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের চর যমুনা গ্রামের কৃষক সালাউদ্দিন (৩৫) বলেন, ‘গত বছর এক একর জমিতে চিনাবাদাম চাষ করেছি। ভালো ফলন হওয়ায় এবার করেছি তিন একর জমিতে। পোকামাকড়ের আক্রমণের পরও এবার ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে প্রায় সব খেতেই পানি জমেছে। পানিতে পচে এক একর জমির অপরিপক্ব বাদাম নষ্ট হয়ে গেছে। লাভের পরিবর্তে এবার লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

একই এলাকার কৃষক আবদুর রহমান (৩৫) বলেন, ‘সাড়ে তিন একর জমিতে ১ লাখ টাকা খরচ করে বাদাম, মুগ ডাল ও মরিচ চাষ করেছিলাম। লাভের আশায় আড়তদার থেকে ঋণ নিয়ে ফসলের আবাদ করেছি। মুগ ডাল ও মরিচ একবার তোলার পরেই বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির মধ্যে আর ফসল তুলতে পারিনি। খেতে পানি জমে সব ফসল পচে গেছে। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব?’

চরফ্যাশন বাজারের আড়তদার আবদুল কাইয়ুম মিয়াজি বলেন, ‘আমার আড়তের অন্তর্ভুক্ত চর মাদ্রাজের মাঝি বাড়ির বাছেদ মাঝি, ফারুক মাঝি, জামাল আহন, আবদুল্লাহপুর এলাকার রফিক হাওলাদার, নূরনবি ডাক্তার, নীলকমল ইউনিয়নের চর যমুনা গ্রামের আবুল কালাম, মো. মিরাজসহ ২৫-৩০ জন চাষি আছেন। তাঁদের রবি শস্য চাষের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা দাদন দিয়েছি। তাঁরা রবি শস্য চাষ করে আমার আড়তে বিক্রি করেন। পর্যায়ক্রমে দাদনের টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার অতি বৃষ্টিতে কৃষকদের একাধিক ফসল নষ্ট হয়েছে। এবার দাদনের টাকা উঠবে না।’

চরফ্যাশন উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ২০ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম, মরিচ ও মুগ ডাল চাষ হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে খেতে পানি জমে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে। তবে খেতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকলে ফসলের তেমন ক্ষতি হতো না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত