এই কটা দিন খুশির জোয়ার

আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৯: ৩৪
Thumbnail image

সেই স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে
কুমার বিশ্বজিৎ, সংগীতশিল্পী

পূজার যত আনন্দ এক জীবনে পেয়েছি, তার সবটাই ছেলেবেলায়। ওই রকম আনন্দের দিন আর আসবে না। সেই দিনগুলো কেটেছে গ্রামে। পূজা এলেই মা এবং অন্যদের শাড়ি দিয়ে প্যান্ডেল বানানো হতো। ১৫ দিন আগে থেকে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করত। আমরা ১১ মাস অপেক্ষা করতাম কবে শারদীয় দুর্গাপূজা আসবে। পূজার সময়ে রাউজান থেকে একজন ঢুলি আসতেন আমাদের পাড়ায়। খুব ভালো ঢোল বাজাতেন। এখনো তাঁর ঢোল বাজানোর দৃশ্য চোখে ভাসে। ঢোল বাজানোর সময় আমি সারাক্ষণ তাঁর সঙ্গে থাকতাম। কখনো কখনো কাঁসার প্লেট বাজাতাম। ঢোলের প্রতি আমার এমন নেশা দেখে একদিন বাবা বলেছিলেন, তুই কি ঢুলি হবি? একদিন মেরেছিলেন খুব। এখন গান করার সময় যখন ঢুলি আমার পাশে থাকে, ফিরে যাই ছেলেবেলার পূজার দিনগুলোতে। দুর্গাপূজার মতো বড় উৎসব এলেই মায়ের কথা বেশি বেশি মনে পড়ে। ছেলেবেলায় পূজার সময়ে মা পাঁচন রান্না করতেন। সেই পাঁচনের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। আরও কত-কী রান্না করতেন মা! এখন প্রতিবছর পূজা আসে কিন্তু সেই খাবার আর খাওয়া হয় না। পূজার দিনগুলোতে মাকে প্রণাম করতাম। এখন আর মাকে প্রণাম করা হয় না। এ জন্য পূজা এলে মাকে ছাড়া খারাপ লাগে। মাকে মনে পড়ে খুব।

পূজার ছুটি মানেই গ্রামের বাড়ি
চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেতা

দুর্গাপূজার সময়টা আমি বরাবরই পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চেষ্টা করি। সারা বছর প্রচণ্ড ব্যস্ততা যায়। সে জন্য পূজায় লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন থেকে লম্বা বিরতি নিই। এবারও তা-ই করেছি। পাবনায় আমার গ্রামের বাড়ি। পরিকল্পনা করেছি, পাঁচ-ছয় দিন থাকব সেখানে। আমরা ভাইবোনেরা বিভিন্ন জায়গায় থাকি। পূজা উপলক্ষে বাড়িতে একত্র হই। এই আনন্দটা মেলে পূজায়, পূজার জন্যই সবাই মিলিত হতে পারি। মা-বাবা আছেন গ্রামের বাড়িতে। যত দিন মা-বাবা বেঁচে আছেন, তত দিন পূজায় বাড়ি যাওয়া হবেই। এই পারিবারিক বন্ধনটা ভীষণ ভালো লাগে। পরিবার ছাড়াও ওখানে অনেক বন্ধু, আত্মীয়স্বজন আছেন। আশপাশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন দেখা করতে। তাঁদের সঙ্গে গল্প করি, দারুণ সময় কাটে। এটাও তো বিরাট ভালো লাগার মতো ব্যাপার। সব মিলিয়ে পূজা আমার জীবনে অন্য রকম আনন্দ নিয়ে আসে। তাই তো পূজার ছুটি পেলেই গ্রামের বাড়ি যাই।

বিদ্যা সিনহা মিমসিঁদুর, শাখা, আলতা পরা হাতে প্রথমবার বরণ করলাম দেবী দুর্গাকে
বিদ্যা সিনহা মিম, অভিনেত্রী
পূজা এলে অতীতের কথা খুব মনে পড়ে। অনেক আগে একবার পূজার সময় নৌকায় উঠেছিলাম বেড়ানোর জন্য। খুব বিপদ হয়েছিল। অতিরিক্ত মানুষের কারণে নৌকা প্রায় ডুবুডুবু। পাড়ে ভেড়ানোর আগ পর্যন্ত আতঙ্কে ছিলাম। বেড়ানোর চেয়ে ভয়টাই বেশি কাজ করেছিল সেদিন। প্রতিবছর পূজা এলে ওই ঘটনার কথা খুব মনে পড়ে। পূজায় নতুন পোশাকের ব্যাপারটি এখনো আছে। পূজায় ঘুরে বেড়ানো, মজাদার খাবার খাওয়া সে তো আছেই। ছোটবেলায় নানাবাড়ি রাজশাহী, কখনো ভোলায় পূজা কাটত। রাজশাহীতে অনেক মজা হতো। সারা দিন ঘুরে বেড়াতাম। এলাকার প্রায় সব মণ্ডপে যেতাম। আরতি দিতাম। ওই কয়েকটা দিন কোনো নিয়মের বেড়াজাল ছিল না। অনেক খাওয়াদাওয়া হতো। শৈশব-কৈশোরের সেসব দিন খুব মিস করি। বিয়ের পর এটি আমার প্রথম পূজা। এবারের পূজা আমার জন্য এক অন্য রকম অনুভূতি। শাখা, সিঁদুর, জামদানি শাড়ি, আলতা পরা হাতে প্রথমবার বরণ করলাম দেবী দুর্গাকে! শরতের কাশফুল আর নিজের নতুন সাজ—সবকিছুতেই কেমন যেন একটা স্নিগ্ধতা! প্রথম দুই দিন ঢাকায় কাটানোর পর কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে এসেছি। সনির সঙ্গে এখানে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা আছে। পূজা উপলক্ষে সবাইকে শুভ্র কাশফুলের শুভেচ্ছা। সব জায়গায় শান্তি বিরাজ করুক। সবাই ভালো থাকুন। ভক্তদের বলব, উৎসব সবার জন্য। এই উৎসবের আমেজ সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক।

পূজার আয়োজনে কলকাতায় যাঁরা

অপু বিশ্বাসনিরামিষের ঘ্রাণে মন ভরে যায়
অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী
শুধু পূজার ছুটি কাটাতেই কলকাতায় এসেছি। মাসির বাড়িতে উঠেছি। এখানে অনেক আত্মীয় আছেন। সুন্দর সময় কাটছে। ছেলেকে নিয়ে শপিং করেছি। পূজা দেখতে বের হয়েছি। মণ্ডপে গিয়েছি। রাজবাড়ী নামে একটি জায়গায় বড় পূজা হয়। অনেক ভালো জায়গা। সেলিব্রিটিরা ওখানেই বেশি আসেন। আমিও গিয়েছিলাম। পূজার সময় কলকাতা শহর অন্য রকমভাবে সাজে। চারদিকে ঢোলের বাদ্য। কলকাতায় ঢোলের বাদ্য ও নিরামিষের ঘ্রাণে মন ভরে যায়। এত কালারফুল পূজা আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। অনেক বছর পর এবার পূজায় কলকাতায় এসেছি। ছোটবেলায় মা-বাবার সঙ্গে এসেছিলাম। সেসব কথাও মনে পড়ে। সেই সময় বাবা বলতেন—‘হাত ধরে থেকো, হারিয়ে যাবে’। ওই কথাটি এখনো কানে বাজে।

প্রতিদিন পূজার নিমন্ত্রণ পাচ্ছি
জয়া আহসান, অভিনেত্রী

শুধু পূজা উদ্‌যাপনের জন্যই এবার কলকাতায় এসেছি। এখানে প্রতিদিন পূজার নিমন্ত্রণ পাচ্ছি। দুর্গাপূজার সময় কলকাতা আরও রঙিন হয়ে ওঠে। এত রং, এত আনন্দ দেখে খুব ভালো লাগে। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের জন্য গুড়ের নারকেল নাড়ু নিয়ে যাব কলকাতা থেকে। আমার এক কাকিমা নাড়ু বানিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে এক পূজা পরিক্রমায় বিচারক হিসেবে অংশ নিয়েছি। একসঙ্গে ১০টি মণ্ডপ দেখা হয়ে যাবে। আমার আজও মনে আছে, ছোটবেলায় আমি প্যান্ডেলে ঘুরতাম। এক দিনে কটা ঠাকুর দেখলাম, সেটা গুনে রাখতাম। বন্ধুদের থেকে বেশি ঠাকুর দেখতে পারলাম কি না পরে মিলিয়ে নিতাম।

মণ্ডপের শিল্পকর্ম ভীষণ টানে
জ্যোতিকা জ্যোতি, অভিনেত্রী

কলকাতার পূজামণ্ডপের শিল্পকর্ম আমায় ভীষণ টানে। কলকাতার পূজার বিশেষত্ব আমার কাছে, ওদের মণ্ডপের যে সৌন্দর্য, থিমনির্ভর মণ্ডপ করে তারা, এটা আমার দারুণ লাগে। এই জিনিসটা মিস করতে চাইনি বলে দুই দিন ওখানে পূজা দেখে দেশে ফিরেছি। বাংলাদেশে পূজা আছে, শুটিং আছে; তাই আর দেরি করতে পারছিলাম না। ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ সিনেমায় অভিনয়ের পর থেকে দুই বাংলা মিলিয়েই আমার পূজা কাটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত