ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ মে ২০২২, ০৭: ০১
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১৪: ৪৬

মেহেরপুরে ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে গত সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে বিভিন্ন গ্রামের মাঠের কাটা ধান এখন পানির নিচে। যে স্বপ্ন এত দিন কৃষকেরা দেখছিলেন, অশনির বৃষ্টিতে তা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ভিজে যাওয়া ধান শুকিয়ে কবে ঘরে তুলতে পারবেন নাকি জমিতে ভিজে ধানে চারা গজিয়ে যাবে তা নিয়ে এখন চিন্তিত তাঁরা।

সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের মাঠে দেখা যায়, জমা পানিতে কৃষকেরা ধান কাটার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ ধান কেটে জমিতেই ফেলে রেখেছেন। সেখানে ধান ডুবে আছে। অন্যদিকে অতিবৃষ্টির কারণে মাটিতেই নুয়ে পড়েছে ধানগাছ। ফলে পানি না শুকানো পর্যন্ত এসব জমির ধান কাটতে পারবেন না তাঁরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১৯ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৭৯ হাজার ৬২১ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ৬৬ ভাগ জমির ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। এখনো মাঠে পড়ে আছে ৩৪ ভাগ ধান।

সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘৫ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছি। ১ বিঘার ধানও কাটতে পারিনি। কয়েক দিন ধরে কাটার সিদ্ধান্ত নিলেও বৃষ্টির কারণে কাটতেও পারছি না। এখন অনেক জমির ধান মাটিতে পড়ে গেছ। এভাবে ধান পড়ে থাকলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

আরেক কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘দেড় বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছি। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। দ্রুত বৃষ্টি কমে রোদের দেখা মিললে কিছুটা ধান ঘরে তুলতে পারব।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সামছুল আলম বলেন, ‘আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেসব ধান পেকে গেছে সেগুলো দ্রুত কেটে মাড়াই করে নিতে। আর ধান কাটার পর জমিতে ফেলে না রাখার জন্য চাষিদের বলা হচ্ছে। আবাহাওয়ার ওপরতো আর কারওর হাত থাকে না।’

এদিকে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাব আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস। শুক্রবার পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে রোদের দেখা মিলতে পারে।

গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠের কৃষকের কাটা ধান এখন পানির নিচে। পাকা ধান কাটার পর জমিতে ধানের বিচালি করে রাখা হয়েছে। ডুবে যাওয়ার কারণে ধানের মাথাগুলো কেটে ডাঙায় তুলছেন চাষিরা। এভাবে ঝড় বৃষ্টি হলে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

উপজেলার তেরাইল গ্রামের ধান চাষি আব্দুর রব বলেন, ‘দেড় বিঘা জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছি সোমবার। এখনো ১০ বিঘার ধান মাঠে। আবহাওয়া পরিষ্কার হলে কাটব। তবে এভাবে বৃষ্টি হলে ধানের ক্ষতি হবে।’

চেংগাড়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ধান কাটা হয়ে গেছে পানির কারণে তুলতে পারিনি। তাই এখন পানির মধ্যে থেকে তুলে রাস্তায় রাখছি। পানি ঝরলে বাড়ি নেব।’

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, বৃষ্টিতে অনেক চাষির ধান পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ধানগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হলে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে পানির মধ্যে এভাবে ধান পড়ে থাকলে ক্ষতি হবে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ ও বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে মুজিবনগরে খেতের পাকা ধানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম হতাশায় পড়েছেন কৃষক। একদিকে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া তাঁদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত সোমবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। অনেক জমিতে জমে থাকা পানি কেটে রাখা ধানের ওপরে উঠে গেছে।

বল্লভপুর গ্রামের চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তোলার আগেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে জমির কেটে রাখা পাকা ধান। কিছু ধান তলিয়ে গেছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত