পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০৯: ৩৮
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ১১: ২২

দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকত ছাড়াও আশপাশের বন-উপবন, খাল-নদী, ঝিরি-ঝরনা, বন্য প্রাণী ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ জেলা। এসব নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা ছুটে আসেন কক্সবাজারে। গত এক দশকে পর্যটক অনেক বাড়লেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ছিল ভোগান্তি। দীর্ঘদিনের সেই অচলাবস্থার অবসান ঘটছে আজ ১১ নভেম্বর রেলপথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। ফলে সারা দেশ থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে পাল্টে যাবে পর্যটনের চেহারা।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন রেলপথের কারণে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। এতে এ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের দুয়ারও উন্মোচিত হবে।

আজ শনিবার দোহাজারী-কক্সবাজার ট্রেন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে পর্যটন শহর কক্সবাজার সারা দেশের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত হচ্ছে। তবে এ পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার শহর ও আশপাশের পর্যটনকেন্দ্রে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট আছে। এতে ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কেবল পর্যটকের চাপ বেশি থাকে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, দীর্ঘদিনের রেলপথের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই নতুন রেলপথ পর্যটনে গতি আনবে। দৈনিক ৫ থেকে ৬ হাজার পর্যটক বাড়বে। পর্যটকদের যাতায়াতে আর্থিক সাশ্রয় হবে। পর্যটন খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আয়াছুর রহমান বলেন, কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ঘোরাফেরার জন্য নতুন নতুন স্পট তৈরি হচ্ছে। পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ এখন দৃশ্যমান। এই সৈকতের তীর ঘেঁষে নির্মিত মেরিন ড্রাইভও আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। রেলপথের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেল।

টেকনাফের সাবরাং ও মহেশখালীর সোনাদিয়ায় ইকো-ট্যুরিজম পার্ক তৈরির কাজ চলছে। এখানে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন (বিশেষ পর্যটন স্থান) গড়ে তোলা হচ্ছে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেলপথের কারণে কক্সবাজারে পর্যটক বাড়বে। এতে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা হবে। তবে এর জন্য রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকা জরুরি।

গতকাল শুক্রবার ঢাকার মালিবাগ থেকে আসা পর্যটক আহসান সাইনুর হাবীব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বছরে দু-একবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আসা হয়। কিন্তু গাড়িতে যাতায়াতে ভোগান্তির কারণে বিরক্তি লাগত। এখন ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার আসা যাবে—খবরটি শুনে খুবই ভালো লাগছে। আসবও আগের চেয়ে বেশি।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজার রেলপথে যুক্ত হওয়ায় পর্যটকদের যাতায়াত সহজ এবং সাশ্রয়ী হবে। এতে পর্যটক বাড়বে। পর্যটকদের সেবা ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের তদারকিসহ নানা উদ্যোগ রয়েছে।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু ও ঈদগাঁহ) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজারের পর্যটনের উন্নয়নে রেলপথ নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এই রেলপথ ২০৩০ সালের মধ্যে মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে যুক্ত হবে। তখন প্রতিদিন লাখো দেশি-বিদেশি পর্যটক কক্সবাজার বেড়াতে আসবেন। এই শিল্প দিয়েই দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত