তিস্তার গ্রাসে নিঃস্ব জীবন

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ০৬: ০৪
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৫৬

গঙ্গাচড়ার ছালাপাক গ্রাম তখনো তিস্তা নদীর গ্রাসের শিকার হয়ে শুধু চর ছালাপাকে পরিণত হয়নি। সে সময় আবদুল মতিনদের ছিল প্রায় ছয় একর চাষের জমি। সেই সঙ্গে ছিল ফলের বাগান, পুকুর আর গরু-ছাগলে ভরা গোয়ালঘর। সংসারে কোনো কিছুরই অভাব ছিল না।

সেই দিন অতীত হয়েছে অনেক আগে। তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছে মতিনদের পরিবার। নদী কেড়ে নিয়েছে সবকিছু। বর্তমানে ৫৫ বছর বয়সী মতিনের জীবন চলে নৌকা চালিয়ে। তাঁর পরিবারের বেঁচে থাকার সম্বল একটি ডিঙি নৌকা। একে আঁকড়ে ধরেই গত ৩০ বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

সম্প্রতি উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক গ্রামে গিয়ে দেখা পাওয়া যায় মতিনের। সেখানে তাঁর মতো হাজারো হতভাগা রয়েছেন যাঁরা তিস্তায় সর্বস্ব হারিয়েছেন। যাঁদের এক সময় ছিল দিগন্তজোড়া জমি, তাঁদের সবকিছু কেড়ে নিয়ে পথের ভিখারি করেছে সর্বনাশা তিস্তা।

বর্তমানে ছালাপাক গ্রামের অধিকাংশ স্থানই তিস্তা নদীর গর্ভে রয়েছে। অবশিষ্টাংশ আছে চর হিসেবে। তাই গ্রামটিকে এখন বলা হয় চর ছালাপাক। এ গ্রামের সবাই নদীভাঙা পরিবারের সদস্য। তাঁদের কেউ কেউ ১০ বার পর্যন্ত নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন।

মতিন জানান, ৩০ বছর আগে তাঁদের জমিতে তিস্তার ভাঙন শুরু হয়। দুই বছরের মধ্যে বসতভিটাসহ সব জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। নিঃস্ব হয়ে তাঁর বাবা আবদুল আউয়াল ছালাপাক চরে অন্যের জমিতে বসতি গড়েন। তবে রোগে-শোকে ভুগে তিনি অল্প দিনের মধ্যে মারা যান। মতিনেরা চার ভাই দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। শেষে অনেক সংগ্রাম করে সামান্য টাকা জমিয়ে সবাই দুই থেকে চার শতক করে জমি কিনে নিজ নিজ বসতবাড়ি করেন।

মতিনের পরিচয় এখন মতিন মাঝি। তাঁর চাওয়া ছোট নৌকাটি বড় করা। যদিও এই চাওয়া এখনো পূরণ হয়নি। ছোট ডিঙি নৌকাতে তিনি এক সঙ্গে তিন থেকে চারজনের বেশি লোক পারাপার করতে পারেন না। সারা দিন পরিশ্রম করে সর্বোচ্চ আয় করতে পারেন ৩০০ টাকা।

মতিন জানান, তাঁর চার ছেলের মধ্যে বড়জন ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। দ্বিতীয় ছেলে দিনমজুরি করেন। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট দুই ছেলে ও এক মেয়ে গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করছে। মতিনের আশা, এক দিন তিনি বড় একটি নৌকার মালিক হবেন, দেখা পাবেন আর্থিক সচ্ছলতা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত