মোনায়েম সরকার

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ২৬ মার্চ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এই দিনেই ৯৫ হাজার পাকিস্তানি সেনাসদস্য তাদের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই রেসকোর্স ময়দানেই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বলদর্পী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে ২৫ মার্চ গভীর রাতে বাঙালি জনগণের ওপর অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে ওই রাতেই গ্রেপ্তারের আগে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
শবাসীকে যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার আহ্বান জানান এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানান। বাঙালি জাতি অসম সাহসে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী ভারত মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে। সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি নানাভাবে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে ধারাবাহিক রাজনৈতিক যুদ্ধ, তার চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনতে বাঙালি জাতিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে।
প্রতিবছর বাঙালি জাতির সামনে বিজয় দিবস নতুন জিজ্ঞাসা ও বাস্তবতা নিয়ে হাজির হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা প্রবল হয়ে ওঠে।
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেনাছাউনিতে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলতে থাকল। বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের পর শেষ পর্যন্ত চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন। কিন্তু প্রথম দিকে তিনি নিজেকে কিছুটা আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনিরা আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদকে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত করে। মোশতাকের মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য যোগ দেন বা অস্ত্রের মুখে যোগ দিতে বাধ্য হন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসের গোড়ার দিকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অবস্থায় আওয়ামী লীগের চারজন বিশিষ্ট নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী এবং কামারুজ্জামান—যাঁরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই জেলখানায় এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত আরেক সামরিক অভ্যুত্থানে মোশতাক গদিচ্যুত হন। এরপর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসানো হয়। স্বল্পকাল ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের হাতে হস্তান্তর করে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আইনগত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা বিফল হয়ে যায় এবং তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রকৃত ঘটনা হলো, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্টে তাঁর নিজের অবস্থান সংহত করার পর পর্দার আড়ালে থেকে বেরিয়ে এসে নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে ক্রমাগত চাপের মুখে বিচারপতি সায়েম তাঁর সামনে পেশকৃত পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তৎক্ষণাৎ বঙ্গভবন ত্যাগ করে নিজের বাসায় চলে যান।
১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিচারপতি সায়েম পদত্যাগ করার পরপরই জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁর আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রপতির পদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন। এরপর নজিরবিহীন কায়দায় এক গণভোটের ব্যবস্থা করা হলো। এই ব্যবস্থায় শতকরা ৯৮ ভাগ ভোট জিয়ার পক্ষে পড়েছে বলে দেখানো হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জিয়া বুঝতে পারলেন যে, বিশ্বজনমত এই ধোঁকাবাজিতে বিশ্বাস করে না, বহির্বিশ্বের জনগণ সামরিক সরকার পছন্দ করেন না। তখন তিনি তাঁর নিযুক্ত উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সাহায্য নিয়ে তাঁর সরকারকে বেসামরিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে সামরিক ক্ষমতাকে আবার পর্দার আড়ালে সরিয়ে রাখলেন। বিচারপতি সাত্তারের সহায়তায় জিয়া ক্যান্টনমেন্টে থেকেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করলেন, যার নাম দিলেন বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)। অল্প দিনের মধ্যেই কিছুসংখ্যক উচ্চাভিলাষী সাবেক সামরিক অফিসার, ক্ষমতালোভী আমলা, ভাগ্যান্বেষী ব্যবসায়ী এবং খুদে রাজনীতিবিদ বিএনপিতে ভিড় জমালেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অচিরে বিএনপি একটি ‘বড়’ দলে পরিণত হয়। জেনারেল জিয়ার নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক দর্শন ছিল না। তিনি দৈবচক্রে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন তিনি তাঁর একান্ত অনুগত ছিলেন। জিয়া বাকশালে যোগ দিতে দ্বিধা করেননি।
১৯৭৭ সালে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করার পর ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করার জন্য তিনি শক্তিশালী সমর্থক খুঁজতে লাগলেন। আওয়ামী লীগ তাঁকে সমর্থন করবে না—এ কথা তিনি জানতেন। তাই তিনি আওয়ামী লীগবিরোধী, বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র থেকে বাছাই করে কিছু লোককে বিএনপিতে নিয়ে আসেন এবং মন্ত্রিসভায় নিযুক্ত করলেন। এইভাবে জেনারেল জিয়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। একই সঙ্গে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্য, সংগঠক ও নেতাদের ব্যাপকভাবে পুনর্বাসিত করা শুরু হলো। জিয়ার আমলেই জামায়াত নেতা কুখ্যাত গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তির ওপর জিয়া চরম আঘাত হানলেন। যে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল, সেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে পাকিস্তানি কায়দায় শাসনতন্ত্রকে ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করলেন জিয়াউর রহমান। ফলে দেশের অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিল। যে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে এই দেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই জাতীয় ঐক্যে ফাটল দেখা দিল। জিয়ার এই নীতির ফলে জাতি সম্প্রদায়গতভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ল।
জিয়ার মৃত্যুর পর এইচ এম এরশাদ ও তাঁর পতনের পর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেও জিয়ার আওয়ামী লীগবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক ধারায়ই দেশ শাসন করতে থাকেন।
জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতকে হেয় করার জন্য ‘নন্দ ঘোষ’ বানানো হয়েছিল। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে ট্রেনিং, অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা করার অনুমতি দিয়ে, ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটনা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। যে ভারত মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস বাংলাদেশের ১ কোটি শরণার্থীকে অতুলনীয় সহযোগিতা করেছে, মুক্তিবাহিনীর লাখ লাখ সদস্যকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করতে সক্ষম করে গড়ে তুলেছে, তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব ও আচরণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমরা এ কথা ভুলে যাই যে, ইতিহাস বদলানো গেলেও ভূগোল বদলানো যায় না। আমরা যদি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে কারণে-অকারণে শত্রুর পর্যায়ে ঠেলে দিই, তাহলে নিজেদের উন্নতি করার সময় ও সুযোগ কীভাবে পাব? ভারত একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এটা বাস্তবতা। তার অর্থনৈতিক অবস্থান এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম। তার সামরিক শক্তি বিশ্ব সামরিক শক্তির উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার সঙ্গে পাকিস্তানের মতো গায়ে পড়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়া কি বাংলাদেশের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ? ভারতের ভূত দেখতে দেখতে পাকিস্তানের আজ কী হাল হয়েছে, সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
এবারের এই বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত জনগণের সামনে এই সত্য নতুনভাবে তুলে ধরা দরকার যে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতা উপলব্ধি করে শান্তি, সহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথেই আমাদের পথ চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি নীতি-আদর্শের প্রতি অনুগত দল, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।
এখন ক্ষমতায় আছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার রয়েছে অসামান্য দক্ষতা ও নৈপুণ্য। তিনি শুধু বাংলাদেশের নির্বাচিত সফল প্রধানমন্ত্রীই নন; তিনি বিশ্ববরেণ্য এক জননেত্রী।
উন্নয়ন অভিযাত্রা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ তিনি মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নমুখী যেসব কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। নগরীতে চালু হয়েছে মেট্রোরেল, স্থাপিত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। চালু হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলীর তলদেশে দৃষ্টিনন্দন টানেল। ঢাকা থেকে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সড়কপথে যাওয়া আজ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। শহর বা গ্রাম; চোখ মেললেই দেখা যায় সার্বিক উন্নয়নের দীপ্ত স্বাক্ষর। জীবনযাপনের ধারা এবং মানেও এসেছে ইতিবাচক বিরাট পরিবর্তন। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরীক্ষিত নেতৃত্বে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে আবার উন্নয়নের ধারা চলমান রাখবে—এটাই এবারের বিজয় দিবসে জাতির প্রত্যাশা।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ২৬ মার্চ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এই দিনেই ৯৫ হাজার পাকিস্তানি সেনাসদস্য তাদের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই রেসকোর্স ময়দানেই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বলদর্পী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে ২৫ মার্চ গভীর রাতে বাঙালি জনগণের ওপর অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে ওই রাতেই গ্রেপ্তারের আগে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
শবাসীকে যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার আহ্বান জানান এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানান। বাঙালি জাতি অসম সাহসে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী ভারত মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে। সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি নানাভাবে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে ধারাবাহিক রাজনৈতিক যুদ্ধ, তার চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনতে বাঙালি জাতিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে।
প্রতিবছর বাঙালি জাতির সামনে বিজয় দিবস নতুন জিজ্ঞাসা ও বাস্তবতা নিয়ে হাজির হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা প্রবল হয়ে ওঠে।
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেনাছাউনিতে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলতে থাকল। বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের পর শেষ পর্যন্ত চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন। কিন্তু প্রথম দিকে তিনি নিজেকে কিছুটা আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনিরা আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদকে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত করে। মোশতাকের মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য যোগ দেন বা অস্ত্রের মুখে যোগ দিতে বাধ্য হন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসের গোড়ার দিকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অবস্থায় আওয়ামী লীগের চারজন বিশিষ্ট নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী এবং কামারুজ্জামান—যাঁরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই জেলখানায় এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত আরেক সামরিক অভ্যুত্থানে মোশতাক গদিচ্যুত হন। এরপর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসানো হয়। স্বল্পকাল ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের হাতে হস্তান্তর করে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আইনগত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা বিফল হয়ে যায় এবং তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রকৃত ঘটনা হলো, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্টে তাঁর নিজের অবস্থান সংহত করার পর পর্দার আড়ালে থেকে বেরিয়ে এসে নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে ক্রমাগত চাপের মুখে বিচারপতি সায়েম তাঁর সামনে পেশকৃত পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তৎক্ষণাৎ বঙ্গভবন ত্যাগ করে নিজের বাসায় চলে যান।
১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিচারপতি সায়েম পদত্যাগ করার পরপরই জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁর আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রপতির পদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন। এরপর নজিরবিহীন কায়দায় এক গণভোটের ব্যবস্থা করা হলো। এই ব্যবস্থায় শতকরা ৯৮ ভাগ ভোট জিয়ার পক্ষে পড়েছে বলে দেখানো হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জিয়া বুঝতে পারলেন যে, বিশ্বজনমত এই ধোঁকাবাজিতে বিশ্বাস করে না, বহির্বিশ্বের জনগণ সামরিক সরকার পছন্দ করেন না। তখন তিনি তাঁর নিযুক্ত উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সাহায্য নিয়ে তাঁর সরকারকে বেসামরিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে সামরিক ক্ষমতাকে আবার পর্দার আড়ালে সরিয়ে রাখলেন। বিচারপতি সাত্তারের সহায়তায় জিয়া ক্যান্টনমেন্টে থেকেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করলেন, যার নাম দিলেন বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)। অল্প দিনের মধ্যেই কিছুসংখ্যক উচ্চাভিলাষী সাবেক সামরিক অফিসার, ক্ষমতালোভী আমলা, ভাগ্যান্বেষী ব্যবসায়ী এবং খুদে রাজনীতিবিদ বিএনপিতে ভিড় জমালেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অচিরে বিএনপি একটি ‘বড়’ দলে পরিণত হয়। জেনারেল জিয়ার নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক দর্শন ছিল না। তিনি দৈবচক্রে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন তিনি তাঁর একান্ত অনুগত ছিলেন। জিয়া বাকশালে যোগ দিতে দ্বিধা করেননি।
১৯৭৭ সালে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করার পর ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করার জন্য তিনি শক্তিশালী সমর্থক খুঁজতে লাগলেন। আওয়ামী লীগ তাঁকে সমর্থন করবে না—এ কথা তিনি জানতেন। তাই তিনি আওয়ামী লীগবিরোধী, বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র থেকে বাছাই করে কিছু লোককে বিএনপিতে নিয়ে আসেন এবং মন্ত্রিসভায় নিযুক্ত করলেন। এইভাবে জেনারেল জিয়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। একই সঙ্গে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্য, সংগঠক ও নেতাদের ব্যাপকভাবে পুনর্বাসিত করা শুরু হলো। জিয়ার আমলেই জামায়াত নেতা কুখ্যাত গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তির ওপর জিয়া চরম আঘাত হানলেন। যে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল, সেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে পাকিস্তানি কায়দায় শাসনতন্ত্রকে ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করলেন জিয়াউর রহমান। ফলে দেশের অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিল। যে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে এই দেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই জাতীয় ঐক্যে ফাটল দেখা দিল। জিয়ার এই নীতির ফলে জাতি সম্প্রদায়গতভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ল।
জিয়ার মৃত্যুর পর এইচ এম এরশাদ ও তাঁর পতনের পর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেও জিয়ার আওয়ামী লীগবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক ধারায়ই দেশ শাসন করতে থাকেন।
জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতকে হেয় করার জন্য ‘নন্দ ঘোষ’ বানানো হয়েছিল। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে ট্রেনিং, অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা করার অনুমতি দিয়ে, ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটনা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। যে ভারত মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস বাংলাদেশের ১ কোটি শরণার্থীকে অতুলনীয় সহযোগিতা করেছে, মুক্তিবাহিনীর লাখ লাখ সদস্যকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করতে সক্ষম করে গড়ে তুলেছে, তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব ও আচরণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমরা এ কথা ভুলে যাই যে, ইতিহাস বদলানো গেলেও ভূগোল বদলানো যায় না। আমরা যদি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে কারণে-অকারণে শত্রুর পর্যায়ে ঠেলে দিই, তাহলে নিজেদের উন্নতি করার সময় ও সুযোগ কীভাবে পাব? ভারত একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এটা বাস্তবতা। তার অর্থনৈতিক অবস্থান এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম। তার সামরিক শক্তি বিশ্ব সামরিক শক্তির উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার সঙ্গে পাকিস্তানের মতো গায়ে পড়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়া কি বাংলাদেশের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ? ভারতের ভূত দেখতে দেখতে পাকিস্তানের আজ কী হাল হয়েছে, সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
এবারের এই বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত জনগণের সামনে এই সত্য নতুনভাবে তুলে ধরা দরকার যে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতা উপলব্ধি করে শান্তি, সহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথেই আমাদের পথ চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি নীতি-আদর্শের প্রতি অনুগত দল, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।
এখন ক্ষমতায় আছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার রয়েছে অসামান্য দক্ষতা ও নৈপুণ্য। তিনি শুধু বাংলাদেশের নির্বাচিত সফল প্রধানমন্ত্রীই নন; তিনি বিশ্ববরেণ্য এক জননেত্রী।
উন্নয়ন অভিযাত্রা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ তিনি মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নমুখী যেসব কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। নগরীতে চালু হয়েছে মেট্রোরেল, স্থাপিত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। চালু হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলীর তলদেশে দৃষ্টিনন্দন টানেল। ঢাকা থেকে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সড়কপথে যাওয়া আজ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। শহর বা গ্রাম; চোখ মেললেই দেখা যায় সার্বিক উন্নয়নের দীপ্ত স্বাক্ষর। জীবনযাপনের ধারা এবং মানেও এসেছে ইতিবাচক বিরাট পরিবর্তন। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরীক্ষিত নেতৃত্বে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে আবার উন্নয়নের ধারা চলমান রাখবে—এটাই এবারের বিজয় দিবসে জাতির প্রত্যাশা।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
মোনায়েম সরকার

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ২৬ মার্চ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এই দিনেই ৯৫ হাজার পাকিস্তানি সেনাসদস্য তাদের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই রেসকোর্স ময়দানেই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বলদর্পী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে ২৫ মার্চ গভীর রাতে বাঙালি জনগণের ওপর অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে ওই রাতেই গ্রেপ্তারের আগে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
শবাসীকে যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার আহ্বান জানান এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানান। বাঙালি জাতি অসম সাহসে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী ভারত মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে। সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি নানাভাবে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে ধারাবাহিক রাজনৈতিক যুদ্ধ, তার চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনতে বাঙালি জাতিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে।
প্রতিবছর বাঙালি জাতির সামনে বিজয় দিবস নতুন জিজ্ঞাসা ও বাস্তবতা নিয়ে হাজির হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা প্রবল হয়ে ওঠে।
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেনাছাউনিতে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলতে থাকল। বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের পর শেষ পর্যন্ত চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন। কিন্তু প্রথম দিকে তিনি নিজেকে কিছুটা আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনিরা আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদকে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত করে। মোশতাকের মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য যোগ দেন বা অস্ত্রের মুখে যোগ দিতে বাধ্য হন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসের গোড়ার দিকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অবস্থায় আওয়ামী লীগের চারজন বিশিষ্ট নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী এবং কামারুজ্জামান—যাঁরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই জেলখানায় এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত আরেক সামরিক অভ্যুত্থানে মোশতাক গদিচ্যুত হন। এরপর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসানো হয়। স্বল্পকাল ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের হাতে হস্তান্তর করে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আইনগত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা বিফল হয়ে যায় এবং তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রকৃত ঘটনা হলো, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্টে তাঁর নিজের অবস্থান সংহত করার পর পর্দার আড়ালে থেকে বেরিয়ে এসে নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে ক্রমাগত চাপের মুখে বিচারপতি সায়েম তাঁর সামনে পেশকৃত পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তৎক্ষণাৎ বঙ্গভবন ত্যাগ করে নিজের বাসায় চলে যান।
১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিচারপতি সায়েম পদত্যাগ করার পরপরই জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁর আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রপতির পদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন। এরপর নজিরবিহীন কায়দায় এক গণভোটের ব্যবস্থা করা হলো। এই ব্যবস্থায় শতকরা ৯৮ ভাগ ভোট জিয়ার পক্ষে পড়েছে বলে দেখানো হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জিয়া বুঝতে পারলেন যে, বিশ্বজনমত এই ধোঁকাবাজিতে বিশ্বাস করে না, বহির্বিশ্বের জনগণ সামরিক সরকার পছন্দ করেন না। তখন তিনি তাঁর নিযুক্ত উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সাহায্য নিয়ে তাঁর সরকারকে বেসামরিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে সামরিক ক্ষমতাকে আবার পর্দার আড়ালে সরিয়ে রাখলেন। বিচারপতি সাত্তারের সহায়তায় জিয়া ক্যান্টনমেন্টে থেকেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করলেন, যার নাম দিলেন বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)। অল্প দিনের মধ্যেই কিছুসংখ্যক উচ্চাভিলাষী সাবেক সামরিক অফিসার, ক্ষমতালোভী আমলা, ভাগ্যান্বেষী ব্যবসায়ী এবং খুদে রাজনীতিবিদ বিএনপিতে ভিড় জমালেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অচিরে বিএনপি একটি ‘বড়’ দলে পরিণত হয়। জেনারেল জিয়ার নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক দর্শন ছিল না। তিনি দৈবচক্রে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন তিনি তাঁর একান্ত অনুগত ছিলেন। জিয়া বাকশালে যোগ দিতে দ্বিধা করেননি।
১৯৭৭ সালে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করার পর ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করার জন্য তিনি শক্তিশালী সমর্থক খুঁজতে লাগলেন। আওয়ামী লীগ তাঁকে সমর্থন করবে না—এ কথা তিনি জানতেন। তাই তিনি আওয়ামী লীগবিরোধী, বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র থেকে বাছাই করে কিছু লোককে বিএনপিতে নিয়ে আসেন এবং মন্ত্রিসভায় নিযুক্ত করলেন। এইভাবে জেনারেল জিয়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। একই সঙ্গে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্য, সংগঠক ও নেতাদের ব্যাপকভাবে পুনর্বাসিত করা শুরু হলো। জিয়ার আমলেই জামায়াত নেতা কুখ্যাত গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তির ওপর জিয়া চরম আঘাত হানলেন। যে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল, সেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে পাকিস্তানি কায়দায় শাসনতন্ত্রকে ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করলেন জিয়াউর রহমান। ফলে দেশের অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিল। যে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে এই দেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই জাতীয় ঐক্যে ফাটল দেখা দিল। জিয়ার এই নীতির ফলে জাতি সম্প্রদায়গতভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ল।
জিয়ার মৃত্যুর পর এইচ এম এরশাদ ও তাঁর পতনের পর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেও জিয়ার আওয়ামী লীগবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক ধারায়ই দেশ শাসন করতে থাকেন।
জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতকে হেয় করার জন্য ‘নন্দ ঘোষ’ বানানো হয়েছিল। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে ট্রেনিং, অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা করার অনুমতি দিয়ে, ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটনা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। যে ভারত মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস বাংলাদেশের ১ কোটি শরণার্থীকে অতুলনীয় সহযোগিতা করেছে, মুক্তিবাহিনীর লাখ লাখ সদস্যকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করতে সক্ষম করে গড়ে তুলেছে, তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব ও আচরণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমরা এ কথা ভুলে যাই যে, ইতিহাস বদলানো গেলেও ভূগোল বদলানো যায় না। আমরা যদি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে কারণে-অকারণে শত্রুর পর্যায়ে ঠেলে দিই, তাহলে নিজেদের উন্নতি করার সময় ও সুযোগ কীভাবে পাব? ভারত একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এটা বাস্তবতা। তার অর্থনৈতিক অবস্থান এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম। তার সামরিক শক্তি বিশ্ব সামরিক শক্তির উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার সঙ্গে পাকিস্তানের মতো গায়ে পড়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়া কি বাংলাদেশের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ? ভারতের ভূত দেখতে দেখতে পাকিস্তানের আজ কী হাল হয়েছে, সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
এবারের এই বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত জনগণের সামনে এই সত্য নতুনভাবে তুলে ধরা দরকার যে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতা উপলব্ধি করে শান্তি, সহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথেই আমাদের পথ চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি নীতি-আদর্শের প্রতি অনুগত দল, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।
এখন ক্ষমতায় আছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার রয়েছে অসামান্য দক্ষতা ও নৈপুণ্য। তিনি শুধু বাংলাদেশের নির্বাচিত সফল প্রধানমন্ত্রীই নন; তিনি বিশ্ববরেণ্য এক জননেত্রী।
উন্নয়ন অভিযাত্রা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ তিনি মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নমুখী যেসব কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। নগরীতে চালু হয়েছে মেট্রোরেল, স্থাপিত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। চালু হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলীর তলদেশে দৃষ্টিনন্দন টানেল। ঢাকা থেকে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সড়কপথে যাওয়া আজ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। শহর বা গ্রাম; চোখ মেললেই দেখা যায় সার্বিক উন্নয়নের দীপ্ত স্বাক্ষর। জীবনযাপনের ধারা এবং মানেও এসেছে ইতিবাচক বিরাট পরিবর্তন। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরীক্ষিত নেতৃত্বে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে আবার উন্নয়নের ধারা চলমান রাখবে—এটাই এবারের বিজয় দিবসে জাতির প্রত্যাশা।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ২৬ মার্চ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এই দিনেই ৯৫ হাজার পাকিস্তানি সেনাসদস্য তাদের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই রেসকোর্স ময়দানেই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বলদর্পী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে ২৫ মার্চ গভীর রাতে বাঙালি জনগণের ওপর অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে ওই রাতেই গ্রেপ্তারের আগে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
শবাসীকে যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার আহ্বান জানান এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানান। বাঙালি জাতি অসম সাহসে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী ভারত মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে। সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি নানাভাবে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে ধারাবাহিক রাজনৈতিক যুদ্ধ, তার চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনতে বাঙালি জাতিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে।
প্রতিবছর বাঙালি জাতির সামনে বিজয় দিবস নতুন জিজ্ঞাসা ও বাস্তবতা নিয়ে হাজির হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা প্রবল হয়ে ওঠে।
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেনাছাউনিতে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলতে থাকল। বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের পর শেষ পর্যন্ত চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন। কিন্তু প্রথম দিকে তিনি নিজেকে কিছুটা আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনিরা আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদকে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত করে। মোশতাকের মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য যোগ দেন বা অস্ত্রের মুখে যোগ দিতে বাধ্য হন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসের গোড়ার দিকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অবস্থায় আওয়ামী লীগের চারজন বিশিষ্ট নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী এবং কামারুজ্জামান—যাঁরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই জেলখানায় এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত আরেক সামরিক অভ্যুত্থানে মোশতাক গদিচ্যুত হন। এরপর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসানো হয়। স্বল্পকাল ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের হাতে হস্তান্তর করে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আইনগত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা বিফল হয়ে যায় এবং তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রকৃত ঘটনা হলো, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্টে তাঁর নিজের অবস্থান সংহত করার পর পর্দার আড়ালে থেকে বেরিয়ে এসে নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে ক্রমাগত চাপের মুখে বিচারপতি সায়েম তাঁর সামনে পেশকৃত পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তৎক্ষণাৎ বঙ্গভবন ত্যাগ করে নিজের বাসায় চলে যান।
১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিচারপতি সায়েম পদত্যাগ করার পরপরই জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁর আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রপতির পদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন। এরপর নজিরবিহীন কায়দায় এক গণভোটের ব্যবস্থা করা হলো। এই ব্যবস্থায় শতকরা ৯৮ ভাগ ভোট জিয়ার পক্ষে পড়েছে বলে দেখানো হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জিয়া বুঝতে পারলেন যে, বিশ্বজনমত এই ধোঁকাবাজিতে বিশ্বাস করে না, বহির্বিশ্বের জনগণ সামরিক সরকার পছন্দ করেন না। তখন তিনি তাঁর নিযুক্ত উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সাহায্য নিয়ে তাঁর সরকারকে বেসামরিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে সামরিক ক্ষমতাকে আবার পর্দার আড়ালে সরিয়ে রাখলেন। বিচারপতি সাত্তারের সহায়তায় জিয়া ক্যান্টনমেন্টে থেকেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করলেন, যার নাম দিলেন বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)। অল্প দিনের মধ্যেই কিছুসংখ্যক উচ্চাভিলাষী সাবেক সামরিক অফিসার, ক্ষমতালোভী আমলা, ভাগ্যান্বেষী ব্যবসায়ী এবং খুদে রাজনীতিবিদ বিএনপিতে ভিড় জমালেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অচিরে বিএনপি একটি ‘বড়’ দলে পরিণত হয়। জেনারেল জিয়ার নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক দর্শন ছিল না। তিনি দৈবচক্রে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন তিনি তাঁর একান্ত অনুগত ছিলেন। জিয়া বাকশালে যোগ দিতে দ্বিধা করেননি।
১৯৭৭ সালে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করার পর ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করার জন্য তিনি শক্তিশালী সমর্থক খুঁজতে লাগলেন। আওয়ামী লীগ তাঁকে সমর্থন করবে না—এ কথা তিনি জানতেন। তাই তিনি আওয়ামী লীগবিরোধী, বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র থেকে বাছাই করে কিছু লোককে বিএনপিতে নিয়ে আসেন এবং মন্ত্রিসভায় নিযুক্ত করলেন। এইভাবে জেনারেল জিয়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। একই সঙ্গে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্য, সংগঠক ও নেতাদের ব্যাপকভাবে পুনর্বাসিত করা শুরু হলো। জিয়ার আমলেই জামায়াত নেতা কুখ্যাত গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তির ওপর জিয়া চরম আঘাত হানলেন। যে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল, সেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে পাকিস্তানি কায়দায় শাসনতন্ত্রকে ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করলেন জিয়াউর রহমান। ফলে দেশের অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিল। যে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে এই দেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই জাতীয় ঐক্যে ফাটল দেখা দিল। জিয়ার এই নীতির ফলে জাতি সম্প্রদায়গতভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ল।
জিয়ার মৃত্যুর পর এইচ এম এরশাদ ও তাঁর পতনের পর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেও জিয়ার আওয়ামী লীগবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক ধারায়ই দেশ শাসন করতে থাকেন।
জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতকে হেয় করার জন্য ‘নন্দ ঘোষ’ বানানো হয়েছিল। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে ট্রেনিং, অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা করার অনুমতি দিয়ে, ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটনা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। যে ভারত মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস বাংলাদেশের ১ কোটি শরণার্থীকে অতুলনীয় সহযোগিতা করেছে, মুক্তিবাহিনীর লাখ লাখ সদস্যকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করতে সক্ষম করে গড়ে তুলেছে, তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব ও আচরণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমরা এ কথা ভুলে যাই যে, ইতিহাস বদলানো গেলেও ভূগোল বদলানো যায় না। আমরা যদি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে কারণে-অকারণে শত্রুর পর্যায়ে ঠেলে দিই, তাহলে নিজেদের উন্নতি করার সময় ও সুযোগ কীভাবে পাব? ভারত একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এটা বাস্তবতা। তার অর্থনৈতিক অবস্থান এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম। তার সামরিক শক্তি বিশ্ব সামরিক শক্তির উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার সঙ্গে পাকিস্তানের মতো গায়ে পড়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়া কি বাংলাদেশের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ? ভারতের ভূত দেখতে দেখতে পাকিস্তানের আজ কী হাল হয়েছে, সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
এবারের এই বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত জনগণের সামনে এই সত্য নতুনভাবে তুলে ধরা দরকার যে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতা উপলব্ধি করে শান্তি, সহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথেই আমাদের পথ চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি নীতি-আদর্শের প্রতি অনুগত দল, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।
এখন ক্ষমতায় আছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার রয়েছে অসামান্য দক্ষতা ও নৈপুণ্য। তিনি শুধু বাংলাদেশের নির্বাচিত সফল প্রধানমন্ত্রীই নন; তিনি বিশ্ববরেণ্য এক জননেত্রী।
উন্নয়ন অভিযাত্রা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ তিনি মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নমুখী যেসব কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। নগরীতে চালু হয়েছে মেট্রোরেল, স্থাপিত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। চালু হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলীর তলদেশে দৃষ্টিনন্দন টানেল। ঢাকা থেকে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সড়কপথে যাওয়া আজ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। শহর বা গ্রাম; চোখ মেললেই দেখা যায় সার্বিক উন্নয়নের দীপ্ত স্বাক্ষর। জীবনযাপনের ধারা এবং মানেও এসেছে ইতিবাচক বিরাট পরিবর্তন। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরীক্ষিত নেতৃত্বে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে আবার উন্নয়নের ধারা চলমান রাখবে—এটাই এবারের বিজয় দিবসে জাতির প্রত্যাশা।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ২৬ মার্চ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ২৬ মার্চ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ২৬ মার্চ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ২৬ মার্চ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫