মোনায়েম সরকার
বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সামনে। ৯ অক্টোবর পূজা শুরু। বাংলাদেশে এবার দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্যাপন হবে কি না, তা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু উদ্বেগ আছে বলে শুনতে পাচ্ছি। যদিও কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, দুর্গাপূজা ভালোভাবে উদ্যাপনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পূজামণ্ডপ পাহারা দেবে বলেও খবর প্রচার হয়েছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীও দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে পালনের পক্ষে কথা বলেছে। কিন্তু এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ কমছে না বাড়ছে, তা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে সরকার পরিবর্তনের পর প্রায় দেড় মাসেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, পুলিশ সব জায়গায় সমান সক্রিয় হয়নি। আন্দোলনের সময় ও পরে এমন সব ঘটনা ঘটেছে যার ফলে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা একটি খোলাচিঠিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ছাত্র-জনতার এই আত্মদান, ত্যাগ ও সংগ্রাম বাংলাদেশে জাগরণের যে চেতনা প্রজ্বালন করেছে, তা যেন কখনো কেউ নিভিয়ে দিতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধ যেন পথ না হারায়। এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি যে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচার তুলনাহীন সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জনে কালিমা লেপন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।’
খোলাচিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক নারী নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও। মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।’
অন্য দিকে ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘বিশেষ করে ভারতের ১৪০ কোটি মানুষ চায় হিন্দুসহ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা যেন নিরাপদে থাকে।’
এর পরদিনই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। দুইজনের মধ্যে হিন্দুসহ বাংলাদেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয়েছে। প্রফেসর ইউনূস নরেন্দ্র মোদিকে বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে সেটি দেখতে বাংলাদেশে এসে ভারতীয় সাংবাদিকদের রিপোর্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি যখন উত্থাপন করেছেন তখন প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নিরাপত্তার দাবিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একাধিক সমাবেশ করে বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরা হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে না ঘটে, সেটাই সবার প্রত্যাশা। সারা দেশে এখন চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। ১৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় একটি মন্দিরে নির্মাণাধীন আটটি দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা সদর বাজারের গুড়পট্টি এলাকার হরি মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে বলে ভাঙ্গা থানার ওসি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় সঞ্জিত বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে তাকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচিত করানো হয় স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এই ঘটনা সম্পর্কে জার্মানিভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন খবর। ডয়চে ভেলে জানাচ্ছে: পুলিশ যাকে ‘ভারতীয়’ ধরে নিয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছিল তার নাম সঞ্জিত বিশ্বাস (৪৫), বাবার নাম নিশিকান্ত বিশ্বাস, বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলায়। ডয়চে ভেলেকে নিশিকান্ত বিশ্বাস জানান, তাঁর ছেলে মানসিক ভারসাম্য হারানোর ফলে ২০১৯ সাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন ৷ সংবাদপত্রে ছবি দেখে সঞ্জিতের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা।
অথচ সঞ্জিতের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে, এমনকি প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা তথ্য না পেয়েই পুলিশের পক্ষ থেকে সোমবার গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় ৷ সেই তথ্য যাচাই-বাছাই না করে খবরও প্রকাশ করা হয় ৷ একটি ইংরেজি দৈনিকের বাংলা ভার্সনে সেই খবরের শিরোনাম ছিল ‘ফরিদপুরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় “ভারতীয় নাগরিক” গ্রেপ্তার।’
কিন্তু ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে কিনা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আসামি ধরার কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছে পুলিশ, পাসপোর্ট বা অন্য কোনো পরিচয়পত্র না দেখা সত্ত্বেও তাঁকে ভারতীয় নাগরিক সাব্যস্ত করে দ্রুত খবর প্রচারে উদ্যোগ নিয়েছে, সংবাদমাধ্যমের একটা অংশও কোনো যাচাই-বাছাইয়ে না গিয়ে হুবহু প্রচার করেছে সেই ‘কাল্পনিক’ তথ্য। অথচ খুব সহজেই সঞ্জিতের জাতীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যেত। আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে পরীক্ষা করলেই পুলিশ জানতে পারত সঞ্জিত বাংলাদেশের নাগরিক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জাতীয় পরিচয়পত্র দেখেই পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভাঙ্গার স্থানীয় এক সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অন্তত দেড় মাস ধরে ওই পাগলকে বাজারে দেখা যাচ্ছে। সে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয় না। পোশাক খুবই অপরিচ্ছন্ন। ঘটনা জানার পর এসপি যখন ঘটনাস্থলে যান, তখন আমাদেরও ডাকা হয়েছিল। আমরা তখনো ওই পাগলকে সেখানে দেখেছিলাম। কিন্তু সেদিন তাকে ধরা হয়নি। পরদিন হঠাৎ করে পুলিশ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাগলকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। ফলে আমরাও নিশ্চিত নই কীভাবে ওই পাগলের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করল। তবে আমরা ধারণা করছি, পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাদের তৎপরতা দেখাতে ওই পাগলকে গ্রেপ্তার করে থাকতে পারে।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন ইউএনও বি এম কুদরত-এ-খুদা। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে ৯ মাস ধরে আছি ৷ এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোনো অভাব নেই ৷ হঠাৎ করেই কেন এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল, সেটা বুঝতে পারছি না। এবার এখানে ৯১টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, আর কোনো সমস্যা হবে না।’
সঞ্জিতের সম্পর্কে তার বাবা নিশিকান্ত বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই সঞ্জিতের মাথায় কিছুটা সমস্যা ছিল। ২০০৬ সালে সে একবার পালিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিল। ৬ মাস পর আবার ফিরে আসে। ২০০৯ সালে আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলের মাথা আরও খারাপ হয়ে যায় ৷ মায়ের মৃত্যুর শোক সে নিতে পারেনি। যত দিন যায়, তার মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। ২০১৫ সাল থেকে আমরা একজন মানসিক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা করাতে থাকি ৷ কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ২০১৯ সালে সে একেবারে হারিয়ে যায়। বহু জায়গায় আমরা খোঁজ করেছি, কিন্তু পাইনি। অবশেষে থানা পুলিশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কথা জানায়। আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে আদালতে গিয়েছিলাম। কিন্তু জামিন হয়নি। আশা করি, ২৯ সেপ্টেম্বর হয়ে যাবে। তবে যে কেউ তাকে দেখলে বুঝবে, তার পক্ষে প্রতিমা ভাঙচুর করা সম্ভব না।’
বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ, কোনো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে অতিউৎসাহী হয়ে কারোরই এমন কিছু করা বা বলা উচিত নয়, যা মানুষের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি বা উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে সব পক্ষকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী ভূমিকা যে সত্য উদ্ঘাটনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটাও ভাঙ্গার ঘটনায় প্রমাণ হলো। কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়—এই বোধ তৈরি না হলে সম্প্রীতির পরিবেশ কীভাবে প্রশস্ত হবে?
লেখক: মোনায়েম সরকার
লেখক, রাজনীতিবিদ; চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সামনে। ৯ অক্টোবর পূজা শুরু। বাংলাদেশে এবার দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্যাপন হবে কি না, তা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু উদ্বেগ আছে বলে শুনতে পাচ্ছি। যদিও কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, দুর্গাপূজা ভালোভাবে উদ্যাপনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পূজামণ্ডপ পাহারা দেবে বলেও খবর প্রচার হয়েছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীও দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে পালনের পক্ষে কথা বলেছে। কিন্তু এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ কমছে না বাড়ছে, তা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে সরকার পরিবর্তনের পর প্রায় দেড় মাসেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, পুলিশ সব জায়গায় সমান সক্রিয় হয়নি। আন্দোলনের সময় ও পরে এমন সব ঘটনা ঘটেছে যার ফলে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা একটি খোলাচিঠিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ছাত্র-জনতার এই আত্মদান, ত্যাগ ও সংগ্রাম বাংলাদেশে জাগরণের যে চেতনা প্রজ্বালন করেছে, তা যেন কখনো কেউ নিভিয়ে দিতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধ যেন পথ না হারায়। এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি যে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচার তুলনাহীন সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জনে কালিমা লেপন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।’
খোলাচিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক নারী নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও। মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।’
অন্য দিকে ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘বিশেষ করে ভারতের ১৪০ কোটি মানুষ চায় হিন্দুসহ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা যেন নিরাপদে থাকে।’
এর পরদিনই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। দুইজনের মধ্যে হিন্দুসহ বাংলাদেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয়েছে। প্রফেসর ইউনূস নরেন্দ্র মোদিকে বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে সেটি দেখতে বাংলাদেশে এসে ভারতীয় সাংবাদিকদের রিপোর্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি যখন উত্থাপন করেছেন তখন প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নিরাপত্তার দাবিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একাধিক সমাবেশ করে বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরা হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে না ঘটে, সেটাই সবার প্রত্যাশা। সারা দেশে এখন চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। ১৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় একটি মন্দিরে নির্মাণাধীন আটটি দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা সদর বাজারের গুড়পট্টি এলাকার হরি মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে বলে ভাঙ্গা থানার ওসি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় সঞ্জিত বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে তাকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচিত করানো হয় স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এই ঘটনা সম্পর্কে জার্মানিভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন খবর। ডয়চে ভেলে জানাচ্ছে: পুলিশ যাকে ‘ভারতীয়’ ধরে নিয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছিল তার নাম সঞ্জিত বিশ্বাস (৪৫), বাবার নাম নিশিকান্ত বিশ্বাস, বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলায়। ডয়চে ভেলেকে নিশিকান্ত বিশ্বাস জানান, তাঁর ছেলে মানসিক ভারসাম্য হারানোর ফলে ২০১৯ সাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন ৷ সংবাদপত্রে ছবি দেখে সঞ্জিতের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা।
অথচ সঞ্জিতের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে, এমনকি প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা তথ্য না পেয়েই পুলিশের পক্ষ থেকে সোমবার গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় ৷ সেই তথ্য যাচাই-বাছাই না করে খবরও প্রকাশ করা হয় ৷ একটি ইংরেজি দৈনিকের বাংলা ভার্সনে সেই খবরের শিরোনাম ছিল ‘ফরিদপুরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় “ভারতীয় নাগরিক” গ্রেপ্তার।’
কিন্তু ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে কিনা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আসামি ধরার কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছে পুলিশ, পাসপোর্ট বা অন্য কোনো পরিচয়পত্র না দেখা সত্ত্বেও তাঁকে ভারতীয় নাগরিক সাব্যস্ত করে দ্রুত খবর প্রচারে উদ্যোগ নিয়েছে, সংবাদমাধ্যমের একটা অংশও কোনো যাচাই-বাছাইয়ে না গিয়ে হুবহু প্রচার করেছে সেই ‘কাল্পনিক’ তথ্য। অথচ খুব সহজেই সঞ্জিতের জাতীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যেত। আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে পরীক্ষা করলেই পুলিশ জানতে পারত সঞ্জিত বাংলাদেশের নাগরিক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জাতীয় পরিচয়পত্র দেখেই পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভাঙ্গার স্থানীয় এক সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অন্তত দেড় মাস ধরে ওই পাগলকে বাজারে দেখা যাচ্ছে। সে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয় না। পোশাক খুবই অপরিচ্ছন্ন। ঘটনা জানার পর এসপি যখন ঘটনাস্থলে যান, তখন আমাদেরও ডাকা হয়েছিল। আমরা তখনো ওই পাগলকে সেখানে দেখেছিলাম। কিন্তু সেদিন তাকে ধরা হয়নি। পরদিন হঠাৎ করে পুলিশ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাগলকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। ফলে আমরাও নিশ্চিত নই কীভাবে ওই পাগলের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করল। তবে আমরা ধারণা করছি, পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাদের তৎপরতা দেখাতে ওই পাগলকে গ্রেপ্তার করে থাকতে পারে।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন ইউএনও বি এম কুদরত-এ-খুদা। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে ৯ মাস ধরে আছি ৷ এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোনো অভাব নেই ৷ হঠাৎ করেই কেন এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল, সেটা বুঝতে পারছি না। এবার এখানে ৯১টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, আর কোনো সমস্যা হবে না।’
সঞ্জিতের সম্পর্কে তার বাবা নিশিকান্ত বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই সঞ্জিতের মাথায় কিছুটা সমস্যা ছিল। ২০০৬ সালে সে একবার পালিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিল। ৬ মাস পর আবার ফিরে আসে। ২০০৯ সালে আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলের মাথা আরও খারাপ হয়ে যায় ৷ মায়ের মৃত্যুর শোক সে নিতে পারেনি। যত দিন যায়, তার মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। ২০১৫ সাল থেকে আমরা একজন মানসিক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা করাতে থাকি ৷ কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ২০১৯ সালে সে একেবারে হারিয়ে যায়। বহু জায়গায় আমরা খোঁজ করেছি, কিন্তু পাইনি। অবশেষে থানা পুলিশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কথা জানায়। আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে আদালতে গিয়েছিলাম। কিন্তু জামিন হয়নি। আশা করি, ২৯ সেপ্টেম্বর হয়ে যাবে। তবে যে কেউ তাকে দেখলে বুঝবে, তার পক্ষে প্রতিমা ভাঙচুর করা সম্ভব না।’
বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ, কোনো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে অতিউৎসাহী হয়ে কারোরই এমন কিছু করা বা বলা উচিত নয়, যা মানুষের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি বা উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে সব পক্ষকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী ভূমিকা যে সত্য উদ্ঘাটনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটাও ভাঙ্গার ঘটনায় প্রমাণ হলো। কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়—এই বোধ তৈরি না হলে সম্প্রীতির পরিবেশ কীভাবে প্রশস্ত হবে?
লেখক: মোনায়েম সরকার
লেখক, রাজনীতিবিদ; চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে