তারাগঞ্জ পশুর হাট যেন ময়লার ভাগাড়

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৬: ৪৫
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৪৪

হাটটি থেকে বছরে রাজস্ব আয় হয় দুই কোটি টাকার বেশি, কিন্তু উন্নয়ন হয়নি সিকিভাগও। গণশৌচাগার নষ্ট, সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। মাঝখানের ময়লার স্তূপের দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় ক্রেতা-বিক্রেতা ও পথচারীদের। এমনই অবস্থা উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পশু ও সবজির হাট তারাগঞ্জের।

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশ স্বাধীনের পর ব্যক্তিমালিকানায় প্রথমে হাটটি গড়ে ওঠে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অল্প দিনে এটি জমে যায়। বর্তমানে প্রতিবছর দুই কোটি টাকার বেশি সরকারি ইজারা আসে এ হাট থেকে। বার্ষিক হিসাবে এ হাট ইজারা দেওয়া হলেও করোনাকালে মাসিক হিসেবে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এখানে সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার হাট বসে। বাকি পাঁচ দিন চলে বাজার। হাটের দিন ব্যাপক লোকসমাগম হয় এখানে।

সরেজমিন দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় হাটের মাঝখানে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখান দুর্গন্ধ এতটাই প্রকট যে নাক-মুখে কাপড় গুঁজে চলাফেরা করতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাঁশ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের প্রশ্ন, নাক-মুখ চেপে কত দিন আর ব্যবসা করতে হবে? তিনি জানান, দুর্গন্ধে বমি আসে। ইজারাদার খাজনা ঠিকমতো নিলেও ময়লা পরিষ্কার করছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী রাকিবুল হাসান জানান, সরকার তো ইজারাদারের মাধ্যমে খাজনা নেয়, কিন্তু হাটের কোনো উন্নয়ন করে না। নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তিন মাসেও তা হয় না। লোকজন হাটের মাঝখানে ময়লা ফেলে। সেগুলো পচে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনি করোনায় বেচাকেনা নেই। এই ময়লার দুর্গন্ধে এখন আরও ক্রেতা আসে না।

হাটে আসা ঢুলিয়া গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এত বড় একটা হাট। সরকার কোটি কোটি টাকা কামাই করে, কিন্তু আমরা ফসল বেচপার আইসা কৃষকের পেশাব-পায়খানা কইরার জাগা নাই। হাটোত অল্প আনা পরপর ময়লার ভাগাড়। তারে পাশোতে লোকজন বসি পেশাব-পায়খানা করোছে।’

হাটের চা-বিক্রেতা সাবলু রায় বলেন, ‘ইউএনও, ওসিসহ প্রশাসনের সউগ লোক এই দিক দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু কারও চোখে ময়লার ভাগাড়টা পড়ে না। একনার জন্যে দুর্গন্ধে টেকা যায়ছে না। ময়লাগুলা পরিষ্কার কইরবার ব্যবস্থা করি দেন।’

তারাগঞ্জ বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘গোটা বাজার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। নিয়মিত হাটের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শৌচাগার নষ্ট, নালা উপচে সড়কে কাদার কারণে হাঁটা যায় না। হাটে জায়গারও সংকট।’

ময়লার দুর্গন্ধে ক্রেতা-বিক্রেতাদের অতিষ্ঠ থাকার বিষয়ে কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজালুল হক বলেন, ‘ময়লাগুলো পরিষ্কার করা ইজারাদার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। হাটটি আমার ইউনিয়নে হওয়ায় এর আগে পরিষদের তহবিল দিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করেছি। এখন ফান্ড না থাকায় ময়লাগুলো সরাতে পারছি না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘তারাগঞ্জ হাটের সমস্যাগুলো তো দীর্ঘদিনের। ময়লা-আবর্জনার বিষয়টি কেউ আমাকে জানাননি। খোঁজ নিয়ে খুব শিগগির হাটের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত