ইসলামপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মাকছুদুর রহমান আনছারীকে উপজেলা বিএনপির ‘রানিং সেক্রেটারি’ আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলেছেন জামালপুরের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদ ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহসভাপতি হোসনে আরা। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টায় ইসলামপুর পৌরশহরের গোবিন্দ বাড়ি পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এই অভিযোগ করেন।

মাকছুদুর রহমান আনছারীর উদ্দেশে সাংসদ হোসনে আরা বলেন, বিএনপির ‘রানিং সেক্রেটারি’ লন্ডনে টাকা পাচার করতেছে। এ সময় তিনি ইসলামপুর আসনের সাংসদ ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক দুলালকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমি আর আমাদের মন্ত্রীর মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এখনো মিল আছে। আগেও মিল ছিল। ভবিষ্যতেও মিল থাকবে।’

মাকছুদুর রহমান আনছারীকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, দেখুন, দুঃখের কথা বলে কি শেষ করতে পারব? না, তা পারব না। দলে তো অবস্থান নিছেই। রাস্তা-ঘাট, বাঁধ, কালভার্ট সমস্ত কাজগুলোই বিএনপির রানিং সেক্রেটারি করতেছে। কোটি কোটি টাকার কাজ করতেছে। সেই টাকা কোথায় যায়? সেই টাকা লন্ডনে পাচার হয়। সেই টাকা তারেক জিয়ার কাছে পাচার করে আসছে বিএনপি নেতা মাকছুদুর রহমান আনছারী।

জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির রানিং সেক্রেটারি কীভাবে আ. লীগে ঢুকেছে-এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন সাংসদ হোসনে আরা। ওইদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিকী সম্মেলনে মাকছুদুর রহমান আনছারীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন প্রশ্ন করেন।

ইসলামপুর আসনের সাংসদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের সভাপতিত্বে স্থানীয় জনতা মাঠে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সাংসদ হোসনে আরা আরও বলেছিলেন, ‘জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা কোনোভাবেই যাতে আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান না পায়, সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’

স্থানীয় দলীয় সূত্র জানা যায়, মাকছুদুর রহমান আনছারী গত ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন ছিলেন। এর আগে তিনি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই মনোনয়ন না টিকায় মাকছুদুর রহমান আনছারী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগে ভেড়েন। গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান পদেও আসীন মাকছুদুর রহমান আনছারী।

আগামী ২৮ শে নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন মাকছুদুর রহমান আনছারী।

অভিযুক্ত মাকছুদুর রহমান আনছারী মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলাম ২০১৩ সাল পর্যন্ত। দলের নেতা-কর্মীরা অনিয়ম-দুর্নীতি করায় বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি। আমার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমি বিদেশে টাকা পাচার করি, এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। ‘কে কী বললো, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হয়ে বাঁচতে চাই।’

এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল এমপি বলেন, মাকছুদুর রহমান আনছারীর সঙ্গে সাংসদ হোসনে আরার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। হয়তো সে জন্যই মাকছুদুর রহমান আনছারীর বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

ফরিদুল হক আরও বলেন, ‘ইসলামপুর উপজেলার মতো মফস্বল এলাকা থেকে বিদেশে কীভাবে টাকা পাচার হয়, তা আমার বোধগম্য নয়। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি আপাসহ সিনিয়র নেতাদের হাত ধরে মাকছুদুর রহমান আনছারী অনেক আগেই আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।’