সাত বধ্যভূমি এখনো অরক্ষিত

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, ০৯: ৫৮
Thumbnail image

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও অরক্ষিত রয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সাত বধ্যভূমি। উপজেলার ১০টি বধ্যভূমির মধ্যে জেলা পরিষদের উদ্যোগে তিনটি চিহ্নিত হয়েছে। এসব বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পাশাপাশি সংরক্ষণ করা হলেও বাকি ৭টিতে কোনো স্মারক ও স্মৃতিস্তম্ভ করার উদ্যোগ আজও নেওয়া হয়নি।

বধ্যভূমি সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় বিষয়টি নিয়ে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা অরক্ষিত এসব বধ্যভূমি দ্রুত চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেগুলোতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জোর দাবি জানান।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এখলাস উদ্দিন বলেন, সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দিরে ওঠার ২ নম্বর পুলের পাশের পাহাড়, সদর রেলস্টেশনের পূর্বে তাঁতিপাড়া, পন্থিছিলা বাজার, বশরতনগর ছড়ার পাশ, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন পেশকার পাড়া, শুকলালহাট সেতু, পাক্কা মসজিদ এলাকায়, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির পূর্ব পাশে, কুমিরা পরিত্যক্ত টিবি হাসপাতাল এলাকায়, ভাটিয়ারীর কদমরসুল, ফৌজদারহাট ওভারব্রিজ এলাকায় বধ্যভূমি রয়েছে। যুদ্ধকালে হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও আলবদরের সহায়তায় এসব স্থানে মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালিদের এনে আটকে রাখার পর নির্মমভাবে নির্যাতন চালাত। পরে তাদের নৃশংসভাবে হত্যার পর সেখানেই মাটিচাপা দিতেন।তিনি আরও জানান, সীতাকুণ্ডের ১০টি বধ্যভূমির মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড়সংলগ্ন ২ নম্বর ব্রিজের পাশের পাহাড়টি সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পর এ স্থানে জেলা পরিষদের উদ্যোগে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর স্মরণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি ছোট কুমিরা এলাকায় প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থানে ‘স্মৃতি ৭১ ’, শুকলালহাট সেতু এলাকায় ‘সেতু-৭১’ নির্মাণ করেছেন তাঁরা। তবে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এখনো অরক্ষিত আরও সাতটি বধ্যভূমি। অরক্ষিত এসব বধ্যভূমি সম্পর্কে হয়নি বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান ও গবেষণার কাজ।

কাদেরিয়া বাহিনী চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েক (অব.) শফিউল আলম বলেন, যুদ্ধকালীন হানাদার বাহিনীর সবচেয়ে বড় নির্যাতনকক্ষ ছিল সীতাকুণ্ড-চন্দ্রনাথ পাহাড় ও কুমিরা রেলস্টেশনসংলগ্ন যক্ষ্মা হাসপাতাল। এ দুই স্থানে মুক্তিযোদ্ধা ও শত শত নিরীহ বাঙালিকে আটকে রেখে নির্যাতনের পর সেখানে দেওয়া হয়েছিল গণকবর। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, চন্দ্রনাথ পাহাড়েরসহ তিনটি বধ্যভূমি সংরক্ষণে উদ্যোগ নিলেও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও অরক্ষিত রয়েছে অধিকাংশ বধ্যভূমি। জীবনসায়াহ্নে থাকা এ প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার এখন একটাই স্বপ্ন—পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের আগে তিনি বধ্যভূমির যথাযথ সংরক্ষণ যেন দেখতে পারেন।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য আ ম ম দিলসাদ বলেন, জেলা পরিষদের অর্থায়নে ছোট কুমিরা এলাকায় প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থানে ‘স্মৃতি ৭১ ’, শুকলালহাট সেতু এলাকায় ‘সেতু-৭১’ ও চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ নামের তিনটি যুদ্ধস্মারক ও ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। শুধু ভাস্কর্য নির্মাণ নয়, এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ক্রমান্বয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে থাকা বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণে জেলা পরিষদের উদ্যোগে কাজ করা হবে।

সোনাইছড়ি পাক্কা মসজিদ এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা খায়ের হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে বিকেলে সোনাইছড়ির মসজিদে নামাজরত মুসল্লিকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। সেদিন হানাদার বাহিনীর নৃশংসতায় প্রাণ হারান নামাজরত ও অজুখানায় থাকা ১১ জন মুসল্লি। ঘটনার একদিন পর মসজিদ থেকে তাঁদের লাশ একই স্থানে দাফন করা হয়। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর স্থানীয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজের উদ্যোগে এ বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ করেন।

সীতাকুণ্ড মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বধ্যভূমি সংরক্ষণে উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করবেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের পর অরক্ষিত বধ্যভূমি শনাক্ত ও দখলদারের কবল থেকে উদ্ধারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। আর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এসব স্থান সংরক্ষণে করণীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত