Ajker Patrika

থিয়েটারের ৫০ বছর এবং আগাম তাগিদ

মামুনুর রশীদ
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ১৩
থিয়েটারের ৫০ বছর এবং আগাম তাগিদ

পৃথিবীতে এমন পেশা আছে যেখানে পরিচালক ও কর্মী দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ-বঞ্চনা নিয়ে কাজ করে যান, অথচ তাঁদের মেলে না কোনো অর্থ। নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে এ কাজগুলো করে একধরনের তৃপ্তিও পান তাঁরা। হয়তো কারও কারও ভাগ্যে পদক, সম্মাননাও মিলে যায়; কিন্তু জীবিকা হয় না। এই অদ্ভুত এক কাজের ক্ষেত্র মঞ্চনাটক।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই নাটক হয়ে চলেছে। অভিনয়ে ক্লান্তি নেই, নতুন প্রেরণায় আবার জেগে উঠছেন শিল্পীরা। কিন্তু এর-ও একটা শেষ আছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়েছে, মঞ্চনাটকেরও ৫০ বছর হবে ফেব্রুয়ারি মাসে। এই ৫০ বছরের ইতিহাস এক অভূতপূর্ব জাগরণের ইতিহাস। একেবারে শূন্য থেকে বাংলাদেশের নাটক একটা বিশ্বমানে গিয়ে পৌঁছেছে। অপ্রতুল, অনুগ্রহভিত্তিক অনুদানে হাঁটি হাঁটি পা পা করে নয়, একটা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে নাটক একটি উচ্চমানের শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট। দেশ-বিদেশের বহু সৃজনশীল নাট্যকর্মীর পদচারণে মুখরিত হয়েছে আমাদের মঞ্চ। কিন্তু একজন কর্মীও বলতে পারবেন না, সম্পূর্ণভাবে মঞ্চনাটকের ওপর ভিত্তি করে তাঁর জীবিকা অর্জন করতে পারেন।

শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, করণিক, অফিসার সবাই মাস শেষে কিছু না কিছু অর্থ নিয়ে ঘরে ফেরেন। নাটকের লোকজন একটি পয়সা নিয়েও ফিরতে পারেন না। এখানে কি জীবিকার একটা ব্যবস্থা করা যেত না? মঞ্চনাটকের জন্য রাষ্ট্র বিভিন্ন ব্যক্তিকে সম্মাননা দেয়; কিন্তু একজন সার্বক্ষণিক কর্মীও সেই শিল্পে নেই। মিডিয়ায় কাজ করে যদি কারও তারকাখ্যাতি আসে, তাহলে হয়তো জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয়; কিন্তু যাঁদের হয় না, তাঁদের অবস্থাটা কী দাঁড়ায়? পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে জীর্ণশীর্ণ শিক্ষকদের আমরা দেখেছি—তাঁরাও খেতে পেতেন না, পুষ্টিহীনতায় ভুগতেন। শিক্ষকতার নেশায় তাঁরা ভুগে ভুগে একসময় মৃত্যুবরণ করতেন। আজ শিক্ষকতা একটা অর্থকরী পেশায় পরিণত হয়েছে। সাংবাদিকেরাও মোটামুটি ভালো আছেন। একসময় সাংবাদিকদের অবস্থাও ছিল করুণ। কিন্তু মঞ্চের পেশায় এখনো কোনো অর্থ আসছে না। অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে, সেটা-ও খুব বেশি নয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যদি আমরা ভারতবর্ষের এবং ইংল্যান্ড বা ইউরোপের নাট্যমঞ্চের দিকে তাকাই, দেখব, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সবাই বিভিন্ন কোম্পানিভিত্তিক থিয়েটারে কাজ করে কিছু না কিছু অর্থ উপার্জন করছেন। ১৮৭২ সাল থেকে কলকাতায় পাবলিক থিয়েটার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থিয়েটারের কাজ একটা জীবিকা হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। ওই শতাব্দীর শেষ থেকে যদি আমরা ইংল্যান্ডের ছোট ছোট থিয়েটারের ইতিহাস পড়ি, সেখানেও দেখি, বিশ্ববিখ্যাত অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের মা থিয়েটারে বা অপেরায় গান গেয়ে, অভিনয় করে যৎসামান্য হলেও অর্থ পেতেন। চার্লি চ্যাপলিন শিশুশিল্পী হয়ে কিছুটা উপার্জন করেছেন এবং পরে আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে সিনেমায় প্রবেশ করে তাঁর ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।

আমাদের দেশে প্রথম থেকেই গ্রুপ থিয়েটার এসে গেল। এটা কলকাতার গ্রুপ থিয়েটারের অনুকরণে। কিন্তু ষাটের দশক থেকে সেখানে দলগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য রাষ্ট্র বেশ কিছু উদ্যোগ নিল। তার মধ্যে একটি উদ্যোগ হচ্ছে স্যালারি গ্র্যান্ট। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় দলগুলোকে কর্মরত অভিনেতা-অভিনেত্রী ও পরিচালককে বেতন দিতে শুরু করল। সেই সঙ্গে থাকল প্রযোজনাভিত্তিক অনুদান, উৎসব আয়োজনের জন্য অনুদান এবং শিল্পীদের যাতায়াতের জন্য অর্থের ব্যবস্থা। রেল কর্তৃপক্ষ এক টিকিটে দুবার যাতায়াতের ব্যবস্থাও করল। সেই সঙ্গে আছে দলগুলোর কল শো। উপমহাদেশের যেকোনো অনুদানের মধ্যে রাজনীতিটাও জড়িয়ে পড়ে। যদিও পশ্চিমা বিশ্বে বা জাপান, হংকং, কোরিয়ায় রাজনীতি নয়, শিল্পের উৎকর্ষই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রধান বিবেচ্য বিষয়। চীন, রাশিয়ায় সব থিয়েটারই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। শিল্পী-কলাকুশলীদের জীবিকা ও পেনশনের বিষয় সেখানে নিশ্চিত। যেহেতু রাষ্ট্র চলে জনগণের ট্যাক্সে, তাই এসব শিল্পকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া সরকার একটি কর্তব্য বলে মনে করে।

আমাদের দেশে এটি একটি অনুগ্রহের বিষয়। দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হয়ে থাকে। এমনকি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও এই প্রকল্পগুলো চালু আছে। কিন্তু নিয়মিতভাবে শিল্প-সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোনো প্রকল্প নেই। বাংলা একাডেমির একটি প্রকাশনা আছে, যেখানে একমাত্র খ্যাতনামা লেখকেরা বই লিখে কিছু রয়ালটি পেয়ে থাকেন। লেখকদের জন্য কোনো নিয়মিত ভাতা নেই বা নতুন লেখকদের প্রণোদনামূলক কোনো ব্যবস্থাও নেই। লেখক বার্ধক্যে পৌঁছে গেলে তাঁর জন্য কোনো পেনশনের ব্যবস্থা নেই। শিল্পকলা একাডেমি এখন একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, বিপুল তাঁর কর্মচারী-ব্যয়। আনুষঙ্গিক ব্যয়ও অনেক। এখন অবকাঠামোর কাজ শুরু হয়েছে, যদিও তা অপ্রতুল। শিল্পকলার কেন্দ্রীয় অফিসে একটি জাতীয় নাট্যশালা আছে। সেই নাট্যশালার কাজ হচ্ছে পাঁচটি হল ভাড়া দেওয়া। মাঝেমধ্যে কিছু প্রকল্প করে নাটক বা যাত্রা প্রযোজনা হয়; কিন্তু তা-ও কোনো নিয়মিত কাজ নয়। শিল্পকলা একাডেমি ভারতের সংগীত নাটক একাডেমি বা ব্রিটিশ কাউন্সিল অথবা হংকং আর্টস, কাউন্সিল ফ্রান্সের একাডেমি দ্য ফ্রান্স এবং জার্মানির শিক্ষা বিভাগের আদলে চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু যতটুকু অর্থ সরকার থেকে আসে, তার সবটাই শিল্পকলা একাডেমি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় করে থাকে।

যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম বললাম, সেগুলো কিন্তু নিজেরা ব্যয় না করে বিভিন্ন সংগঠনকে আহ্বান জানায়। সেই সংগঠনগুলো সৃজনশীল কাজের জন্য প্রকল্প জমা দেয়। যোগ্য প্রকল্পকে তারা অনুদান দিয়ে থাকে এবং প্রকল্পের মূল্যায়ন করে থাকে। যারা যোগ্য, তারা বছরের পর বছর অনুদান পেয়ে একটা সম্মানজনক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে থাকে। আমার অনেক পরিচিতজন আছেন, যাঁরা থিয়েটারে কাজ করে সারা জীবন সম্মান ও অর্থ দুই-ই অর্জন করেছেন। শুনেছি, দক্ষিণ কোরিয়ায় কোনো নির্মাণ প্রকল্প হলে, বিশেষ করে কোনো শপিং মল বা বড় ধরনের স্থাপনার বরাদ্দকৃত অর্থের শতকরা ১৭ ভাগ সৃজনশীল কাজের জন্য ধরে রাখতে হয়। সেই টাকা থিয়েটার, সংগীত, চিত্রকলা এবং লোকশিল্পে ব্যয় করা হয়। আমাদের দেশে এ রকম নির্মাণকাজ গত ৩০-৪০ বছরে প্রচুর হয়েছে। সেখানে শতকরা ১৭ ভাগ না হলেও অন্তত ৫ ভাগও যদি শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যয় করা হতো, তাহলে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসব প্রকল্পে ব্যবস্থা হয়ে যেত।

কোনো এক সহৃদয় ব্যক্তি ব্যাংক, বিমা এবং বিভিন্ন করপোরেটে সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি)-এর ব্যবস্থা করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিএসআরের দেখাশোনা করে। এই সিএসআরের কোনো অর্থ শিল্প-সাহিত্যের কাজে পাওয়া যায় না। নিজেদের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন সংগঠন এবং নামমাত্র সংগঠনকে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকির কাজেও মনোযোগী হয় না। বাংলাদেশে ৫০টি দলকে স্যালারি গ্র্যান্টের আওতায় আনতে হলে ১১ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়, যাতে হাজারখানেক নাট্যকর্মীকে সার্বক্ষণিক থিয়েটারের কাজে লাগানো যায়। এই ১১ কোটি টাকা সরকার এবং সিএসআরের জন্য কোনো অর্থই নয়। এটাকে কয়েক গুণ করে সারা দেশের নাট্যকর্মীদের এই স্যালারি গ্র্যান্টের আওতায় আনা সম্ভব।

থিয়েটারের কাজকে বেগবান করতে এবং পেশাদারত্ব নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের তহবিল থেকে এই অর্থ কোনো বিবেচনায়ই বড় অঙ্কের নয়। যেখানে বাংলাদেশে একটি মোটামুটি মানের কোম্পানির কর্মীদের প্রতি মাসের বেতনও এর সমান বা বেশি হয়ে থাকে। থিয়েটার একটি উচ্চাঙ্গের শিল্প এবং জাতির দর্পণ। যুগ যুগ ধরে এই শিল্প পৃষ্ঠপোষকতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কাজেই এ শিল্পে রাষ্ট্রের লগ্নি বৃথা যায় না; বরং শিক্ষার অংশ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের থিয়েটারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রকে আগামী ৫০ বছরের বিবেচনায় এগিয়ে আসার জন্য একটা বড় তাগিদ দিতে চাই।

লেখক: মামুনুর রশীদ নাট্যব্যক্তিত্ব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত