মামুনুর রশীদ
পৃথিবীতে এমন পেশা আছে যেখানে পরিচালক ও কর্মী দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ-বঞ্চনা নিয়ে কাজ করে যান, অথচ তাঁদের মেলে না কোনো অর্থ। নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে এ কাজগুলো করে একধরনের তৃপ্তিও পান তাঁরা। হয়তো কারও কারও ভাগ্যে পদক, সম্মাননাও মিলে যায়; কিন্তু জীবিকা হয় না। এই অদ্ভুত এক কাজের ক্ষেত্র মঞ্চনাটক।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই নাটক হয়ে চলেছে। অভিনয়ে ক্লান্তি নেই, নতুন প্রেরণায় আবার জেগে উঠছেন শিল্পীরা। কিন্তু এর-ও একটা শেষ আছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়েছে, মঞ্চনাটকেরও ৫০ বছর হবে ফেব্রুয়ারি মাসে। এই ৫০ বছরের ইতিহাস এক অভূতপূর্ব জাগরণের ইতিহাস। একেবারে শূন্য থেকে বাংলাদেশের নাটক একটা বিশ্বমানে গিয়ে পৌঁছেছে। অপ্রতুল, অনুগ্রহভিত্তিক অনুদানে হাঁটি হাঁটি পা পা করে নয়, একটা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে নাটক একটি উচ্চমানের শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট। দেশ-বিদেশের বহু সৃজনশীল নাট্যকর্মীর পদচারণে মুখরিত হয়েছে আমাদের মঞ্চ। কিন্তু একজন কর্মীও বলতে পারবেন না, সম্পূর্ণভাবে মঞ্চনাটকের ওপর ভিত্তি করে তাঁর জীবিকা অর্জন করতে পারেন।
শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, করণিক, অফিসার সবাই মাস শেষে কিছু না কিছু অর্থ নিয়ে ঘরে ফেরেন। নাটকের লোকজন একটি পয়সা নিয়েও ফিরতে পারেন না। এখানে কি জীবিকার একটা ব্যবস্থা করা যেত না? মঞ্চনাটকের জন্য রাষ্ট্র বিভিন্ন ব্যক্তিকে সম্মাননা দেয়; কিন্তু একজন সার্বক্ষণিক কর্মীও সেই শিল্পে নেই। মিডিয়ায় কাজ করে যদি কারও তারকাখ্যাতি আসে, তাহলে হয়তো জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয়; কিন্তু যাঁদের হয় না, তাঁদের অবস্থাটা কী দাঁড়ায়? পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে জীর্ণশীর্ণ শিক্ষকদের আমরা দেখেছি—তাঁরাও খেতে পেতেন না, পুষ্টিহীনতায় ভুগতেন। শিক্ষকতার নেশায় তাঁরা ভুগে ভুগে একসময় মৃত্যুবরণ করতেন। আজ শিক্ষকতা একটা অর্থকরী পেশায় পরিণত হয়েছে। সাংবাদিকেরাও মোটামুটি ভালো আছেন। একসময় সাংবাদিকদের অবস্থাও ছিল করুণ। কিন্তু মঞ্চের পেশায় এখনো কোনো অর্থ আসছে না। অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে, সেটা-ও খুব বেশি নয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যদি আমরা ভারতবর্ষের এবং ইংল্যান্ড বা ইউরোপের নাট্যমঞ্চের দিকে তাকাই, দেখব, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সবাই বিভিন্ন কোম্পানিভিত্তিক থিয়েটারে কাজ করে কিছু না কিছু অর্থ উপার্জন করছেন। ১৮৭২ সাল থেকে কলকাতায় পাবলিক থিয়েটার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থিয়েটারের কাজ একটা জীবিকা হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। ওই শতাব্দীর শেষ থেকে যদি আমরা ইংল্যান্ডের ছোট ছোট থিয়েটারের ইতিহাস পড়ি, সেখানেও দেখি, বিশ্ববিখ্যাত অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের মা থিয়েটারে বা অপেরায় গান গেয়ে, অভিনয় করে যৎসামান্য হলেও অর্থ পেতেন। চার্লি চ্যাপলিন শিশুশিল্পী হয়ে কিছুটা উপার্জন করেছেন এবং পরে আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে সিনেমায় প্রবেশ করে তাঁর ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।
আমাদের দেশে প্রথম থেকেই গ্রুপ থিয়েটার এসে গেল। এটা কলকাতার গ্রুপ থিয়েটারের অনুকরণে। কিন্তু ষাটের দশক থেকে সেখানে দলগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য রাষ্ট্র বেশ কিছু উদ্যোগ নিল। তার মধ্যে একটি উদ্যোগ হচ্ছে স্যালারি গ্র্যান্ট। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় দলগুলোকে কর্মরত অভিনেতা-অভিনেত্রী ও পরিচালককে বেতন দিতে শুরু করল। সেই সঙ্গে থাকল প্রযোজনাভিত্তিক অনুদান, উৎসব আয়োজনের জন্য অনুদান এবং শিল্পীদের যাতায়াতের জন্য অর্থের ব্যবস্থা। রেল কর্তৃপক্ষ এক টিকিটে দুবার যাতায়াতের ব্যবস্থাও করল। সেই সঙ্গে আছে দলগুলোর কল শো। উপমহাদেশের যেকোনো অনুদানের মধ্যে রাজনীতিটাও জড়িয়ে পড়ে। যদিও পশ্চিমা বিশ্বে বা জাপান, হংকং, কোরিয়ায় রাজনীতি নয়, শিল্পের উৎকর্ষই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রধান বিবেচ্য বিষয়। চীন, রাশিয়ায় সব থিয়েটারই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। শিল্পী-কলাকুশলীদের জীবিকা ও পেনশনের বিষয় সেখানে নিশ্চিত। যেহেতু রাষ্ট্র চলে জনগণের ট্যাক্সে, তাই এসব শিল্পকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া সরকার একটি কর্তব্য বলে মনে করে।
আমাদের দেশে এটি একটি অনুগ্রহের বিষয়। দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হয়ে থাকে। এমনকি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও এই প্রকল্পগুলো চালু আছে। কিন্তু নিয়মিতভাবে শিল্প-সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোনো প্রকল্প নেই। বাংলা একাডেমির একটি প্রকাশনা আছে, যেখানে একমাত্র খ্যাতনামা লেখকেরা বই লিখে কিছু রয়ালটি পেয়ে থাকেন। লেখকদের জন্য কোনো নিয়মিত ভাতা নেই বা নতুন লেখকদের প্রণোদনামূলক কোনো ব্যবস্থাও নেই। লেখক বার্ধক্যে পৌঁছে গেলে তাঁর জন্য কোনো পেনশনের ব্যবস্থা নেই। শিল্পকলা একাডেমি এখন একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, বিপুল তাঁর কর্মচারী-ব্যয়। আনুষঙ্গিক ব্যয়ও অনেক। এখন অবকাঠামোর কাজ শুরু হয়েছে, যদিও তা অপ্রতুল। শিল্পকলার কেন্দ্রীয় অফিসে একটি জাতীয় নাট্যশালা আছে। সেই নাট্যশালার কাজ হচ্ছে পাঁচটি হল ভাড়া দেওয়া। মাঝেমধ্যে কিছু প্রকল্প করে নাটক বা যাত্রা প্রযোজনা হয়; কিন্তু তা-ও কোনো নিয়মিত কাজ নয়। শিল্পকলা একাডেমি ভারতের সংগীত নাটক একাডেমি বা ব্রিটিশ কাউন্সিল অথবা হংকং আর্টস, কাউন্সিল ফ্রান্সের একাডেমি দ্য ফ্রান্স এবং জার্মানির শিক্ষা বিভাগের আদলে চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু যতটুকু অর্থ সরকার থেকে আসে, তার সবটাই শিল্পকলা একাডেমি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় করে থাকে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম বললাম, সেগুলো কিন্তু নিজেরা ব্যয় না করে বিভিন্ন সংগঠনকে আহ্বান জানায়। সেই সংগঠনগুলো সৃজনশীল কাজের জন্য প্রকল্প জমা দেয়। যোগ্য প্রকল্পকে তারা অনুদান দিয়ে থাকে এবং প্রকল্পের মূল্যায়ন করে থাকে। যারা যোগ্য, তারা বছরের পর বছর অনুদান পেয়ে একটা সম্মানজনক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে থাকে। আমার অনেক পরিচিতজন আছেন, যাঁরা থিয়েটারে কাজ করে সারা জীবন সম্মান ও অর্থ দুই-ই অর্জন করেছেন। শুনেছি, দক্ষিণ কোরিয়ায় কোনো নির্মাণ প্রকল্প হলে, বিশেষ করে কোনো শপিং মল বা বড় ধরনের স্থাপনার বরাদ্দকৃত অর্থের শতকরা ১৭ ভাগ সৃজনশীল কাজের জন্য ধরে রাখতে হয়। সেই টাকা থিয়েটার, সংগীত, চিত্রকলা এবং লোকশিল্পে ব্যয় করা হয়। আমাদের দেশে এ রকম নির্মাণকাজ গত ৩০-৪০ বছরে প্রচুর হয়েছে। সেখানে শতকরা ১৭ ভাগ না হলেও অন্তত ৫ ভাগও যদি শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যয় করা হতো, তাহলে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসব প্রকল্পে ব্যবস্থা হয়ে যেত।
কোনো এক সহৃদয় ব্যক্তি ব্যাংক, বিমা এবং বিভিন্ন করপোরেটে সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি)-এর ব্যবস্থা করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিএসআরের দেখাশোনা করে। এই সিএসআরের কোনো অর্থ শিল্প-সাহিত্যের কাজে পাওয়া যায় না। নিজেদের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন সংগঠন এবং নামমাত্র সংগঠনকে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকির কাজেও মনোযোগী হয় না। বাংলাদেশে ৫০টি দলকে স্যালারি গ্র্যান্টের আওতায় আনতে হলে ১১ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়, যাতে হাজারখানেক নাট্যকর্মীকে সার্বক্ষণিক থিয়েটারের কাজে লাগানো যায়। এই ১১ কোটি টাকা সরকার এবং সিএসআরের জন্য কোনো অর্থই নয়। এটাকে কয়েক গুণ করে সারা দেশের নাট্যকর্মীদের এই স্যালারি গ্র্যান্টের আওতায় আনা সম্ভব।
থিয়েটারের কাজকে বেগবান করতে এবং পেশাদারত্ব নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের তহবিল থেকে এই অর্থ কোনো বিবেচনায়ই বড় অঙ্কের নয়। যেখানে বাংলাদেশে একটি মোটামুটি মানের কোম্পানির কর্মীদের প্রতি মাসের বেতনও এর সমান বা বেশি হয়ে থাকে। থিয়েটার একটি উচ্চাঙ্গের শিল্প এবং জাতির দর্পণ। যুগ যুগ ধরে এই শিল্প পৃষ্ঠপোষকতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কাজেই এ শিল্পে রাষ্ট্রের লগ্নি বৃথা যায় না; বরং শিক্ষার অংশ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের থিয়েটারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রকে আগামী ৫০ বছরের বিবেচনায় এগিয়ে আসার জন্য একটা বড় তাগিদ দিতে চাই।
লেখক: মামুনুর রশীদ নাট্যব্যক্তিত্ব
পৃথিবীতে এমন পেশা আছে যেখানে পরিচালক ও কর্মী দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ-বঞ্চনা নিয়ে কাজ করে যান, অথচ তাঁদের মেলে না কোনো অর্থ। নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে এ কাজগুলো করে একধরনের তৃপ্তিও পান তাঁরা। হয়তো কারও কারও ভাগ্যে পদক, সম্মাননাও মিলে যায়; কিন্তু জীবিকা হয় না। এই অদ্ভুত এক কাজের ক্ষেত্র মঞ্চনাটক।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই নাটক হয়ে চলেছে। অভিনয়ে ক্লান্তি নেই, নতুন প্রেরণায় আবার জেগে উঠছেন শিল্পীরা। কিন্তু এর-ও একটা শেষ আছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়েছে, মঞ্চনাটকেরও ৫০ বছর হবে ফেব্রুয়ারি মাসে। এই ৫০ বছরের ইতিহাস এক অভূতপূর্ব জাগরণের ইতিহাস। একেবারে শূন্য থেকে বাংলাদেশের নাটক একটা বিশ্বমানে গিয়ে পৌঁছেছে। অপ্রতুল, অনুগ্রহভিত্তিক অনুদানে হাঁটি হাঁটি পা পা করে নয়, একটা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে নাটক একটি উচ্চমানের শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট। দেশ-বিদেশের বহু সৃজনশীল নাট্যকর্মীর পদচারণে মুখরিত হয়েছে আমাদের মঞ্চ। কিন্তু একজন কর্মীও বলতে পারবেন না, সম্পূর্ণভাবে মঞ্চনাটকের ওপর ভিত্তি করে তাঁর জীবিকা অর্জন করতে পারেন।
শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, করণিক, অফিসার সবাই মাস শেষে কিছু না কিছু অর্থ নিয়ে ঘরে ফেরেন। নাটকের লোকজন একটি পয়সা নিয়েও ফিরতে পারেন না। এখানে কি জীবিকার একটা ব্যবস্থা করা যেত না? মঞ্চনাটকের জন্য রাষ্ট্র বিভিন্ন ব্যক্তিকে সম্মাননা দেয়; কিন্তু একজন সার্বক্ষণিক কর্মীও সেই শিল্পে নেই। মিডিয়ায় কাজ করে যদি কারও তারকাখ্যাতি আসে, তাহলে হয়তো জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয়; কিন্তু যাঁদের হয় না, তাঁদের অবস্থাটা কী দাঁড়ায়? পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে জীর্ণশীর্ণ শিক্ষকদের আমরা দেখেছি—তাঁরাও খেতে পেতেন না, পুষ্টিহীনতায় ভুগতেন। শিক্ষকতার নেশায় তাঁরা ভুগে ভুগে একসময় মৃত্যুবরণ করতেন। আজ শিক্ষকতা একটা অর্থকরী পেশায় পরিণত হয়েছে। সাংবাদিকেরাও মোটামুটি ভালো আছেন। একসময় সাংবাদিকদের অবস্থাও ছিল করুণ। কিন্তু মঞ্চের পেশায় এখনো কোনো অর্থ আসছে না। অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে, সেটা-ও খুব বেশি নয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যদি আমরা ভারতবর্ষের এবং ইংল্যান্ড বা ইউরোপের নাট্যমঞ্চের দিকে তাকাই, দেখব, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সবাই বিভিন্ন কোম্পানিভিত্তিক থিয়েটারে কাজ করে কিছু না কিছু অর্থ উপার্জন করছেন। ১৮৭২ সাল থেকে কলকাতায় পাবলিক থিয়েটার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থিয়েটারের কাজ একটা জীবিকা হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। ওই শতাব্দীর শেষ থেকে যদি আমরা ইংল্যান্ডের ছোট ছোট থিয়েটারের ইতিহাস পড়ি, সেখানেও দেখি, বিশ্ববিখ্যাত অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের মা থিয়েটারে বা অপেরায় গান গেয়ে, অভিনয় করে যৎসামান্য হলেও অর্থ পেতেন। চার্লি চ্যাপলিন শিশুশিল্পী হয়ে কিছুটা উপার্জন করেছেন এবং পরে আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে সিনেমায় প্রবেশ করে তাঁর ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।
আমাদের দেশে প্রথম থেকেই গ্রুপ থিয়েটার এসে গেল। এটা কলকাতার গ্রুপ থিয়েটারের অনুকরণে। কিন্তু ষাটের দশক থেকে সেখানে দলগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য রাষ্ট্র বেশ কিছু উদ্যোগ নিল। তার মধ্যে একটি উদ্যোগ হচ্ছে স্যালারি গ্র্যান্ট। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় দলগুলোকে কর্মরত অভিনেতা-অভিনেত্রী ও পরিচালককে বেতন দিতে শুরু করল। সেই সঙ্গে থাকল প্রযোজনাভিত্তিক অনুদান, উৎসব আয়োজনের জন্য অনুদান এবং শিল্পীদের যাতায়াতের জন্য অর্থের ব্যবস্থা। রেল কর্তৃপক্ষ এক টিকিটে দুবার যাতায়াতের ব্যবস্থাও করল। সেই সঙ্গে আছে দলগুলোর কল শো। উপমহাদেশের যেকোনো অনুদানের মধ্যে রাজনীতিটাও জড়িয়ে পড়ে। যদিও পশ্চিমা বিশ্বে বা জাপান, হংকং, কোরিয়ায় রাজনীতি নয়, শিল্পের উৎকর্ষই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রধান বিবেচ্য বিষয়। চীন, রাশিয়ায় সব থিয়েটারই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। শিল্পী-কলাকুশলীদের জীবিকা ও পেনশনের বিষয় সেখানে নিশ্চিত। যেহেতু রাষ্ট্র চলে জনগণের ট্যাক্সে, তাই এসব শিল্পকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া সরকার একটি কর্তব্য বলে মনে করে।
আমাদের দেশে এটি একটি অনুগ্রহের বিষয়। দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হয়ে থাকে। এমনকি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও এই প্রকল্পগুলো চালু আছে। কিন্তু নিয়মিতভাবে শিল্প-সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোনো প্রকল্প নেই। বাংলা একাডেমির একটি প্রকাশনা আছে, যেখানে একমাত্র খ্যাতনামা লেখকেরা বই লিখে কিছু রয়ালটি পেয়ে থাকেন। লেখকদের জন্য কোনো নিয়মিত ভাতা নেই বা নতুন লেখকদের প্রণোদনামূলক কোনো ব্যবস্থাও নেই। লেখক বার্ধক্যে পৌঁছে গেলে তাঁর জন্য কোনো পেনশনের ব্যবস্থা নেই। শিল্পকলা একাডেমি এখন একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, বিপুল তাঁর কর্মচারী-ব্যয়। আনুষঙ্গিক ব্যয়ও অনেক। এখন অবকাঠামোর কাজ শুরু হয়েছে, যদিও তা অপ্রতুল। শিল্পকলার কেন্দ্রীয় অফিসে একটি জাতীয় নাট্যশালা আছে। সেই নাট্যশালার কাজ হচ্ছে পাঁচটি হল ভাড়া দেওয়া। মাঝেমধ্যে কিছু প্রকল্প করে নাটক বা যাত্রা প্রযোজনা হয়; কিন্তু তা-ও কোনো নিয়মিত কাজ নয়। শিল্পকলা একাডেমি ভারতের সংগীত নাটক একাডেমি বা ব্রিটিশ কাউন্সিল অথবা হংকং আর্টস, কাউন্সিল ফ্রান্সের একাডেমি দ্য ফ্রান্স এবং জার্মানির শিক্ষা বিভাগের আদলে চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু যতটুকু অর্থ সরকার থেকে আসে, তার সবটাই শিল্পকলা একাডেমি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় করে থাকে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম বললাম, সেগুলো কিন্তু নিজেরা ব্যয় না করে বিভিন্ন সংগঠনকে আহ্বান জানায়। সেই সংগঠনগুলো সৃজনশীল কাজের জন্য প্রকল্প জমা দেয়। যোগ্য প্রকল্পকে তারা অনুদান দিয়ে থাকে এবং প্রকল্পের মূল্যায়ন করে থাকে। যারা যোগ্য, তারা বছরের পর বছর অনুদান পেয়ে একটা সম্মানজনক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে থাকে। আমার অনেক পরিচিতজন আছেন, যাঁরা থিয়েটারে কাজ করে সারা জীবন সম্মান ও অর্থ দুই-ই অর্জন করেছেন। শুনেছি, দক্ষিণ কোরিয়ায় কোনো নির্মাণ প্রকল্প হলে, বিশেষ করে কোনো শপিং মল বা বড় ধরনের স্থাপনার বরাদ্দকৃত অর্থের শতকরা ১৭ ভাগ সৃজনশীল কাজের জন্য ধরে রাখতে হয়। সেই টাকা থিয়েটার, সংগীত, চিত্রকলা এবং লোকশিল্পে ব্যয় করা হয়। আমাদের দেশে এ রকম নির্মাণকাজ গত ৩০-৪০ বছরে প্রচুর হয়েছে। সেখানে শতকরা ১৭ ভাগ না হলেও অন্তত ৫ ভাগও যদি শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যয় করা হতো, তাহলে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসব প্রকল্পে ব্যবস্থা হয়ে যেত।
কোনো এক সহৃদয় ব্যক্তি ব্যাংক, বিমা এবং বিভিন্ন করপোরেটে সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি)-এর ব্যবস্থা করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিএসআরের দেখাশোনা করে। এই সিএসআরের কোনো অর্থ শিল্প-সাহিত্যের কাজে পাওয়া যায় না। নিজেদের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন সংগঠন এবং নামমাত্র সংগঠনকে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকির কাজেও মনোযোগী হয় না। বাংলাদেশে ৫০টি দলকে স্যালারি গ্র্যান্টের আওতায় আনতে হলে ১১ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়, যাতে হাজারখানেক নাট্যকর্মীকে সার্বক্ষণিক থিয়েটারের কাজে লাগানো যায়। এই ১১ কোটি টাকা সরকার এবং সিএসআরের জন্য কোনো অর্থই নয়। এটাকে কয়েক গুণ করে সারা দেশের নাট্যকর্মীদের এই স্যালারি গ্র্যান্টের আওতায় আনা সম্ভব।
থিয়েটারের কাজকে বেগবান করতে এবং পেশাদারত্ব নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের তহবিল থেকে এই অর্থ কোনো বিবেচনায়ই বড় অঙ্কের নয়। যেখানে বাংলাদেশে একটি মোটামুটি মানের কোম্পানির কর্মীদের প্রতি মাসের বেতনও এর সমান বা বেশি হয়ে থাকে। থিয়েটার একটি উচ্চাঙ্গের শিল্প এবং জাতির দর্পণ। যুগ যুগ ধরে এই শিল্প পৃষ্ঠপোষকতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কাজেই এ শিল্পে রাষ্ট্রের লগ্নি বৃথা যায় না; বরং শিক্ষার অংশ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের থিয়েটারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রকে আগামী ৫০ বছরের বিবেচনায় এগিয়ে আসার জন্য একটা বড় তাগিদ দিতে চাই।
লেখক: মামুনুর রশীদ নাট্যব্যক্তিত্ব
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে