অসচেতন পর্যটক, দূষণ হাওরে

মো. ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২২, ০৬: ৪৪
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২২, ১২: ০৮

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হাওরের পানিতে নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকের বাটি, পলিথিন ব্যাগ, কোমল পানীয়, পানির বোতলসহ নানা প্লাস্টিক বর্জ্য। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, জেলার হাওরাঞ্চলে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসেন। তাঁরা এসব প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছেন। তবে এসব দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোনো ভূমিকা। অন্যদিকে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন বলছে, শিগগির ময়লার বাক্স স্থাপন করা হবে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে দিকনির্দেশনামূলক বিলবোর্ড স্থাপন ও প্রচারপত্র বিতরণের কাজ চলছে।

জেলার অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার হাওরাঞ্চল এখন দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেন হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রতিদিন অন্তত কয়েক শ নৌকা ভাড়া করা হয় এবং এসব নৌকায় পর্যটকেরা হাওরে ঘুরে বেড়ান। এ সময় তাঁদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য পানিতে ফেলা হয়। এতে হাওরে দূষণ বাড়ছে এবং হুমকিতে পড়ছে হাওরের জীববৈচিত্র্য।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাওরের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কে কোনো বর্জ্য ফেলার জন্য ডাস্টবিন নেই। অবাধে প্লাস্টিকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র পানিতে ফেলা হচ্ছে। হাওরের তীরে ভেসে আসছে প্লাস্টিকের এসব ময়লা। মিঠামইন জিরো পয়েন্টের পূর্ব প্রান্তে দেখা গেছে প্লাস্টিকের ময়লার স্তূপ। এ সময় কথা হয় কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, প্লাস্টিক বর্জ্য রাখার জন্য ময়লার বক্স না থাকায় বাধ্য হয়ে এখানে-সেখানে ময়লা ফেলছেন তাঁরা। ময়লার বাক্স থাকলে সেখানে রাখা হতো।

গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে ঘুরতে আসা মাহফুজ আলম (৩৭) বলেন, ‘পানিতে এসব প্লাস্টিক ময়লা ফেলা ঠিক না, তা আমি জানি। তা-ও ফেলছি বাধ্য হয়ে। কারণ, বিকল্প তো নেই। বর্জ্য ফেলার ডাস্টবিন কোথাও চোখে পড়েনি।’

অষ্টগ্রাম পরিবেশ ও নদী রক্ষা আন্দোলন সংগঠন হাওরাঞ্চলবাসী অষ্টগ্রাম উপজেলা ইউনিট সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম বলেন, সুন্দর পরিবেশ দেখতে এসে তার ক্ষতি করা কাম্য নয়। ব্যবহৃত প্লাস্টিকসহ সব বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে। না হলে এক-দুই করে করে প্লাস্টিক ভাগাড়ে পরিণত হবে হাওর। বর্জ্য ফেলার স্থান নির্ধারণ ও দূষণরোধে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করি।

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন রসায়নবিদ রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ বলেন, ‘আমাদের জনবলসংকট রয়েছে। তবু সর্বোচ্চ সেবা দিতে কাজ করছি। হাওরে পরিবেশ সুরক্ষায় ময়লার বক্স স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, হাওরে পর্যটন বিকাশ ও পরিবেশ সুরক্ষায় ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যটন ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কমিটি নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চলতি মাসে মিঠামইনে সব নৌঘাট, প্রদর্শনী স্থান, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কে মিঠামইন অংশে ১০০টি ডাস্টবিন স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে দিকনির্দেশনামূলক বিলবোর্ড স্থাপন ও প্রচারপত্র বিতরণের কাজ চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত