১২ ফগারের সাতটিই নষ্ট

শামিম রেজা, রাজবাড়ী
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ৫৮

মশা নিধনের জন্য রাজবাড়ী পৌরসভার ফগার মেশিন রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে সাতটিই নষ্ট। পাঁচটি মেশিন ভালো থাকলেও মাঝেমধ্যে দুয়েকটি বিকল হয়ে যায়, যে কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে নানা পদক্ষেপ নিলেও এর সুফল পাচ্ছেন না পৌর বাসিন্দারা। পৌরবাসীদের অভিযোগ, দিনে কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে মশার উপদ্রব বাড়তে থাকে। সে সময় মশারি বা কয়েল ছাড়া ঘরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

সরেজমিনে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। অনেক এলাকার ঝোপঝাড়, জঙ্গল, ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বাড়ছে। অধিকাংশ ড্রেনে পানিপ্রবাহ না থাকায় ড্রেনগুলোতে ময়লা-আবর্জনা জমে রয়েছে। ফলে ড্রেনে জমে থাকা পানি থেকে জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা। এদিকে সারা দেশের মতো রাজবাড়ীতেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগী।

পৌর শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার বাসিন্দা মো. রাজু বলেন, ‘এ এলাকায় মশার উপদ্রব খুবই বেশি। দুপুর দুইটা থেকে কয়েল জ্বালানো লাগে। কয়েল না জ্বালিয়ে ঘরে থাকা যায় না। আমার দোকানে কোনো ক্রেতা আসতে পারেন না। মশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে মেয়র মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বলেছেন, মশা নিধনের জন্য ওষুধ পাঠাবেন।’

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা চম্পা খাতুন বলেন, ‘ঘরের বাইরে থাকা যায় না মশার অত্যাচারে। ঘরের মধ্যে থাকতে হলে কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। পৌরসভা থেকে মশা মারার জন্য মাঝেমধ্যেই আসে। ওষুধ ছিটানোর পর এক থেকে দুদিন মশা কম দেখা যায়, এরপর আবার আগের মতোই।

আকলিমা বেগম বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় বাচ্চারা পড়াশোনা করতে পারে না। এগুলো যদি মেয়র না দেখেন তাহলে আমরা থাকব কীভাবে? এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি, সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।’

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটোন বলেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এ জেলার যোগাযোগ সহজ ও কাছের হওয়ায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। জেলায় চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৮৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১৭৭ জন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে আটজন। জ্বর এলে পরীক্ষা করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলাসহ বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলেন, ‘মশার উপদ্রব ও মশা নিধনের নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধনের জন্য পৌরসভার একটি টিম কাজ করছে। এরপরও রাজবাড়ী পৌরবাসীকে বলতে চাই, আপনারা যাঁর যাঁর জায়গা থেকে সচেতন থাকবেন।

আপনাদের বাড়ির ফুলের টপ পরিষ্কার রাখবেন, কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পৌর শহরে কিছু অপরিকল্পিত ড্রেন রয়েছে। তারপরও প্রতিবছরই ড্রেনগুলো পরিষ্কারের জন্য পৌরসভা থেকে বাজেট দিয়ে থাকি এবং প্রতিনিয়তই ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখছি। মূলত জনগণকে সচেতন থাকতে হবে, তাহলে আমরা মশার উপদ্রব এবং ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাব।’

মেয়র বলেন, মশা নিধনের জন্য রাজবাড়ী পৌরসভার ফগার মেশিন রয়েছে ১২টি। এগুলো আধুনিক না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে যায়। সে সময় মেকানিক এনে সচল করতে হয়। তবে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু আধুনিক ফগার মেশিন ক্রয় করা হবে। বর্তমানে পাঁচটি ফগার মেশিন সচল রয়েছে। এর মধ্যে থেকেও কয়েকটি বিকল হয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত