Ajker Patrika

বরেন্দ্রর পিডিদের দুর্নীতির সঙ্গী ইডি

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৪, ১১: ০৩
বরেন্দ্রর পিডিদের দুর্নীতির সঙ্গী ইডি

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক (ইডি) আব্দুর রশীদকে পূর্ণ দায়িত্ব না দিয়ে তাঁর মূল পদ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে সরিয়ে নেওয়া হলো। বরং জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শফিকুল ইসলাম মুকুলকে বিএমডিএর ইডি হিসেবে পদায়ন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আব্দুর রশীদকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ থাকার কথা জানিয়েছেন বিএমডিএর একাধিক কর্মকর্তা। 

বিএমডিএর কর্মকর্তারা জানান, গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ, বদলি ও কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ছাড়া অন্য কোনো কাজের ফাইল বিএমডিএর চেয়ারম্যানের কাছে যায় না। সমস্ত কাজই করে থাকেন ইডি। 

সম্প্রতি এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসে, ভূগর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণের জন্য নিম্নমানের পাইপ কেনায় সরকারের ৬ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ৬৪৪ টাকা ক্ষতি হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলার সাহাব্দীপুরসহ কয়েকটি এলাকায় গত বছরের জুলাই থেকে আগস্ট মাসে এই পাইপ বসানো হয়। নিম্নমানের এসব ইউপিভিসি পাইপ কয়েক মাসের মধ্যেই ফেটে যায়। অথচ প্রকল্পে লোহার পাইপ বসানোর কথা ছিল। পরে ফেটে যাওয়া এসব পাইপ তুলে বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-১-এর কার্যালয়ের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়। তদন্ত কমিটি এই অনিয়মের সত্যতাও পায়। কাজ না করে ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা বিল দেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকা এই প্রকল্পের পিডি শহীদুর রহমানের কাছে পরে ব্যাখ্যা তলব করা হয়।

তবে গত ১ ফেব্রুয়ারি ইডি আব্দুর রশীদ কেবল সতর্ক করে শহীদুর রহমানকে চিঠি দিয়ে তাঁকে এ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। 
সম্প্রতি ইডি আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করেছেন একজন ঠিকাদার। এ ছাড়া বিএমডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকেও আলাদা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। 

অভিযোগে বলা হয়েছে, তিন বছর ধরে ইডি তাঁর আত্মীয়সহ কয়েকজন পছন্দের লোকের কাছ থেকে কোটেশনে নিম্নমানের মালামাল কিনেছেন। কখনো কখনো কাগজ-কলমে কেনাকাটা দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

দুদকে দেওয়া অভিযোগমতে, বিএমডিএর চেয়ারম্যান ও ইডিকে আর্থিকভাবে খুশি করে যে যেভাবে পারছেন লুটপাট করছেন। প্রায় এক বছর আগে সাতজনকে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩০ জনকে সহকারী প্রকৌশলী থেকে চলতি দায়িত্বের নির্বাহী প্রকৌশলী করা হয়েছে। ৬০ জন উপসহকারী প্রকৌশলীকে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অন্য ছোট পদগুলোর কর্মচারীদেরও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। 

অভিযোগে বলা হয়, প্রকৌশলীর পদোন্নতির ক্ষেত্রে দেড় থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রায় ৩ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। ইডি রশীদের পক্ষে ঘুষ আদায়ের কাজটি করেছেন সহকারী প্রকৌশলী থেকে চলতি দায়িত্বের নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়া সানজিদা খানম মলি।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, খাল খননের প্রকল্পের পরিচালক হাবিবুর রহমান খান, সুমন্ত কুমার বসাক, নূরে আলম ও শরীফুল হক যেসব কাজ করেছেন, সেগুলো ইডি ও পিডিদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। ইডি তাঁর অংশের কাজ ১০ শতাংশ কমিশনে ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করেছেন। এ কারণে তিন বছর ধরে ইডি ও পিডিদের পছন্দের বাইরে সাধারণ ঠিকাদারেরা কাজ পান না। 

দুদকে দেওয়া অভিযোগে আরও বলা হয়, পিডি নিয়োগের জন্য নামের সুপারিশ পাঠাতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন ইডি। প্রকল্প অনুমোদনের পর পিডি ও ইডি সরকারি টাকা রাখেন বেসরকারি ব্যাংকে। অথচ প্রকল্পের ২৫ শতাংশের বেশি টাকা বেসরকারি ব্যাংকে রাখার নিয়ম নেই। বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রেখে কমিশন নেন তাঁরা।

বিএমডিএর কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালে ইডি আব্দুর রশীদের নামে দুদকে একটি মামলা করা হয়েছিল। ইডি ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবও তলব করেছিল দুদক। পরে মামলাটি আর এগোয়নি। 

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ইডি আব্দুর রশীদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। একটা সভা করে অভিযোগের কপিটি ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে হয়। সে সভাটি এখনো হয়নি। প্রধান কার্যালয় অভিযোগ অনুসন্ধানের অনুমোদন দিলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে গত বুধবার ইডি আব্দুর রশীদের দপ্তরে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। টানা কয়েক দিন ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। সবশেষ গতকাল শুক্রবার সকালে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

ইডির পক্ষে ঘুষের টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে চলতি দায়িত্বের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা খানম মলি বলেন, ‘এগুলো সত্য নয়। কারও কাছে প্রমাণ থাকলে আমার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে পারে।’

বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান বলেন, মন্ত্রণালয় ইডি পদে নতুন কর্মকর্তাকে পদায়ন করেছে। তবে তিনি এখনো যোগ দেননি। কেন আব্দুর রশীদকে পূর্ণ দায়িত্ব না দিয়ে সরানো হলো—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

বাংলাদেশে-ভারত সম্পর্কের অবনতিতে দায়ী মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা: কংগ্রেস

তখন অন্য একটা সংগঠন করতাম, এখন বলতে লজ্জা হয়: জামায়াতের আমির

কুতুবদিয়ায় ছাত্রলীগ নেতার ছুরিকাঘাতে ২ ছাত্রদল নেতা আহত

আইসিসির শাস্তি নিয়ে খেলতে নামা পাকিস্তানকে হেসেখেলে হারাল নিউজিল্যান্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত