আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস। গেট পেরিয়ে লাইন গড়িয়েছে সামনের রাস্তায়। ভোর থেকেই সেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন হাসান হাফিজুর রহমান। ভেবেছিলেন অফিস শুরুর পর দ্রুত এগোতে পারবেন। কিন্তু সময় গড়ায়, মাথার ওপরে সূর্যের তেজ বাড়ে, লাইন আর এগোয় না। হাতে থাকা কাগজপত্রের ফাইল নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। একসময় খেয়াল করেন সামনে-পেছনে কিছু ভবঘুরে মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন ওই লাইনে। তাঁরা কারা—কৌতূহলী প্রশ্নে উত্তর মেলে, ওরা পজেশন বিক্রি করেন। অর্থাৎ নিজের পাসপোর্টের কোনো কাজ না থাকলেও লাইনে দাঁড়িয়ে যান তাঁরা। এরপর সেবা নিতে আসা মানুষদের কাছে ৫০০ টাকায় নিজের পজেশন বেচে দিয়ে সরে পড়েন লাইন থেকে।
এ তো গেল বাইরের চিত্র। ভেতরে আরও বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয় পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষের। সবচেয়ে রাগ হয় বায়োমেট্রিকের জন্য কর্মকর্তাদের কক্ষের কাছাকাছি দাঁড়ানো মানুষগুলোর। খানিক পরপর নানা ছুতোয় লোক ঢোকেন কক্ষে। কাজ সেরে হাসিমুখে বেরিয়েও পড়েন দ্রুত। তাঁরা দালাল ধরে আসা সেবাগ্রহীতা। কেউ কেউ আবার প্রভাবশালীদের সুপারিশে ভিআইপি বুথে যান। সেখানেও স্বস্তি নেই। দেখা গেল আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষায় আছেন শত শত মানুষ।
পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তির এসব গল্প নতুন নয়। হাতে লেখা পাসপোর্টের যুগ থেকেই দালালের দৌরাত্ম্য চলে আসছে সেখানে। এখন অবশ্য হাতে লেখা পাসপোর্ট নেই। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) দিনও শেষ হওয়ার পথে। এখন ই-পাসপোর্টের যুগ। এরই মধ্যে ডিজিটাল হয়েছে সেবা। ফরম পূরণ হয় অনলাইনে। কিন্তু ভোগান্তিও পেয়েছে নতুন রূপ।
সেবাপ্রার্থীরা জানান, পাসপোর্ট করতে গিয়ে ভোগান্তির শুরুটা হয় ফরম পূরণের পর ব্যাংকে ফি জমা দিতে যাওয়ার সময় থেকেই। কারণ, বেসরকারি ব্যাংক সহজে টাকা জমা নিতে চায় না। ফি জমা দেওয়ার জন্য চার-পাঁচটি ব্যাংক ঘোরার এমন উদাহরণ অনেক আছে। ফি জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন মাহমুদ মানজুর নামের ভুক্তভোগী। আজকের পত্রিকাকে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টের ফি জমা দিতে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকের শাখায় দৌড়াতে হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁরা টাকা জমা নিতে চান না।’
বেসরকারি ব্যাংকগুলো টাকা জমা নেয় না বলে এমন অভিযোগে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকে কয়েক দফায় চিঠি দিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। কিন্তু তারপরও চিত্র বদলায়নি।
পাসপোর্ট ফি জমা নিতে অনীহার কথা স্বীকার করেছেন বেসরকারি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এমন ঘটনা যে ঘটে না, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, এনআইডি ও পাসপোর্টের সার্ভারের সমস্যা থাকে কখনো কখনো; দ্বিতীয়ত, পিক আওয়ারে সামাল দেওয়া চাপ হয়ে যায়।
ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখে ফরম জমা, ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক করতে গিয়ে আরও ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। এক পাসপোর্ট করতে তিন দিন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বনশ্রীর বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। গত সোমবার সকাল থকে বিকেল পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কারণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার না থাকায় বায়োমেট্রিক নিতে পারছিল না কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সার্ভারের এই বিভ্রাট প্রায়ই হয়। এনআইডি, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), জন্মনিবন্ধন, বিটিসিএল, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং জার্মানির ই-পাসপোর্ট সার্ভারের যেকোনো একটিতে ত্রুটি দেখা দিলেই পাসপোর্ট কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। একাধিক সার্ভারের কারণে প্রায়ই পাসপোর্টের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া ইন্টারনেটের কারণেও কার্যক্রমে গতি পায় না বলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ছোট ভুলে বড় ভোগান্তি
ছোট ভুলে বড় ভোগান্তিতে পড়তে হয় পাসপোর্টগ্রহীতাদের। জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট আবেদনের তথ্য একই হওয়ার কথা। তবে কখনো কখনো পাসপোর্টে ভিন্ন তথ্য চলে এলে তা ঠিক করতে ত্রাহি অবস্থা হয় নাগরিকদের।
কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই সুযোগে ঘুষ নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসে যাওয়া এক সেবাগ্রহীতা। ঢাকায়ও এ রকম ভুলে হয়রানির অভিযোগ মিলছে।
এমন সমস্যা নিয়ে পুরান ঢাকা থেকে আমিনুল ইসলাম নামের এক তরুণ এসেছেন পাসপোর্ট অফিসে। তাঁর সমস্যা জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নামে মোহাম্মদ নেই, কিন্তু পাসপোর্টে মোহাম্মদ চলে এসেছে। আর সেটা সংশোধন করতে দুই দিন ধরে ঘুরছেন তিনি।
হয়রানির নাম পুলিশ ভেরিফিকেশন
আবেদন ফরম জমা ও বায়োমেট্রিক সম্পন্নের পর ২১ দিনের মধ্যে হাতে পৌঁছানোর কথা সাধারণ পাসপোর্ট। কিন্তু এসবি থেকে ছাড়পত্র পেতে দেরি হলে নির্দিষ্ট সময়ে হাতে আসে না পাসপোর্ট। এসবিতে পাসপোর্ট আবেদনকারীর তদন্তের ভার পড়ে উপপরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তার হাতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরেজমিন না গিয়ে ফোন করে নিজের পছন্দের জায়গায় ডাকেন আবেদনকারীকে। চেয়ে বসেন একেক সময় একেক কাগজ। সেই কাগজ জোগাড় করতে ২১ দিন পেরিয়ে যায় অনেকের। স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা আলাদা হলে হয়রানিও দ্বিগুণ হয় মানুষের। পাসপোর্ট পেতে মানুষের এই ভোগান্তির চিত্র সারা দেশে একই। বরিশাল, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, বগুড়া, ঠাকুরগাঁওসহ বেশ কয়েকটি জেলায় পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে তৎপর দালাল চক্র। সবখানে পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে থাকা কম্পিউটার-প্রিন্টিং সেবার দোকানই দালালদের আখড়া।
অন্যদিকে জন্মতারিখসহ বিভিন্ন তথ্যে গরমিল থাকায় প্রবাসীদের অনেকেই নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। কারণ, তাঁরা জন্মনিবন্ধনে তারিখ বাড়িয়ে বা কমিয়ে বিদেশে গিয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশি গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন, কেউ ইচ্ছে করেই ফেলে দেন। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিদেশের দূতাবাস ও মিশনে, কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। তথ্যে গরমিল থাকায় পাসপোর্ট পাননি এমন প্রবাসীর সংখ্যা দেড় থেকে দুই লাখ। এই সংখ্যা ইউরোপে বেশি।
মানিক মিয়াজি নামের ফ্রান্সপ্রবাসী এক তরুণ বলেন, ‘আমার বাড়ি হবিগঞ্জে। জন্মতারিখ সংশোধন করে একাধিকবার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছি। তাই বাড়ি যেতে পারিনি। এদিকে আগের পাসপোর্টের মেয়াদও শেষ।’ তবে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এসব প্রবাসীর পাসপোর্ট দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য দেশ-বিদেশে তাঁদের জন্য আলাদা বুথ খোলা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ইতিমধ্যে অনেক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের জেলা শহরে পাসপোর্টের অফিসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিদেশে পাসপোর্ট জটিলতায় থাকা শ্রমিকদের বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা ধাপে ধাপে পাসপোর্ট পাবেন।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য ঢাকার পশ্চিম ও পূর্বে আরও দুটি অফিস করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ মার্চ মোহাম্মদপুরে পশ্চিমের অফিসটি চালু হয়েছে। পূর্বের অফিসটি হবে রামপুরার বনশ্রী এলাকায়। তাহলে আরও চাপ কমে আসবে।
পাসপোর্ট পেতে মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (ই-পাসপোর্ট) সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগারগাঁওয়ে ৩০টি থানা থেকে মানুষ পাসপোর্ট করতে আসত। মোহাম্মদপুরে একটি অফিস চালু হওয়ায় চাপ অনেক কমে আসবে। তখন সবার জন্যই আরামদায়ক হবে। মোহাম্মদপুরের পর রামপুরারটিও চালু হবে শিগগির।’
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) গ্রহণকারী নাগরিকের সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার ৬৩৯ জন এবং ই-পাসপোর্ট গ্রহণকারী ৬৫ লাখ ২৪ হাজার ৬৩৮ জন।
রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস। গেট পেরিয়ে লাইন গড়িয়েছে সামনের রাস্তায়। ভোর থেকেই সেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন হাসান হাফিজুর রহমান। ভেবেছিলেন অফিস শুরুর পর দ্রুত এগোতে পারবেন। কিন্তু সময় গড়ায়, মাথার ওপরে সূর্যের তেজ বাড়ে, লাইন আর এগোয় না। হাতে থাকা কাগজপত্রের ফাইল নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। একসময় খেয়াল করেন সামনে-পেছনে কিছু ভবঘুরে মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন ওই লাইনে। তাঁরা কারা—কৌতূহলী প্রশ্নে উত্তর মেলে, ওরা পজেশন বিক্রি করেন। অর্থাৎ নিজের পাসপোর্টের কোনো কাজ না থাকলেও লাইনে দাঁড়িয়ে যান তাঁরা। এরপর সেবা নিতে আসা মানুষদের কাছে ৫০০ টাকায় নিজের পজেশন বেচে দিয়ে সরে পড়েন লাইন থেকে।
এ তো গেল বাইরের চিত্র। ভেতরে আরও বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয় পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষের। সবচেয়ে রাগ হয় বায়োমেট্রিকের জন্য কর্মকর্তাদের কক্ষের কাছাকাছি দাঁড়ানো মানুষগুলোর। খানিক পরপর নানা ছুতোয় লোক ঢোকেন কক্ষে। কাজ সেরে হাসিমুখে বেরিয়েও পড়েন দ্রুত। তাঁরা দালাল ধরে আসা সেবাগ্রহীতা। কেউ কেউ আবার প্রভাবশালীদের সুপারিশে ভিআইপি বুথে যান। সেখানেও স্বস্তি নেই। দেখা গেল আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষায় আছেন শত শত মানুষ।
পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তির এসব গল্প নতুন নয়। হাতে লেখা পাসপোর্টের যুগ থেকেই দালালের দৌরাত্ম্য চলে আসছে সেখানে। এখন অবশ্য হাতে লেখা পাসপোর্ট নেই। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) দিনও শেষ হওয়ার পথে। এখন ই-পাসপোর্টের যুগ। এরই মধ্যে ডিজিটাল হয়েছে সেবা। ফরম পূরণ হয় অনলাইনে। কিন্তু ভোগান্তিও পেয়েছে নতুন রূপ।
সেবাপ্রার্থীরা জানান, পাসপোর্ট করতে গিয়ে ভোগান্তির শুরুটা হয় ফরম পূরণের পর ব্যাংকে ফি জমা দিতে যাওয়ার সময় থেকেই। কারণ, বেসরকারি ব্যাংক সহজে টাকা জমা নিতে চায় না। ফি জমা দেওয়ার জন্য চার-পাঁচটি ব্যাংক ঘোরার এমন উদাহরণ অনেক আছে। ফি জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন মাহমুদ মানজুর নামের ভুক্তভোগী। আজকের পত্রিকাকে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টের ফি জমা দিতে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকের শাখায় দৌড়াতে হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁরা টাকা জমা নিতে চান না।’
বেসরকারি ব্যাংকগুলো টাকা জমা নেয় না বলে এমন অভিযোগে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকে কয়েক দফায় চিঠি দিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। কিন্তু তারপরও চিত্র বদলায়নি।
পাসপোর্ট ফি জমা নিতে অনীহার কথা স্বীকার করেছেন বেসরকারি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এমন ঘটনা যে ঘটে না, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, এনআইডি ও পাসপোর্টের সার্ভারের সমস্যা থাকে কখনো কখনো; দ্বিতীয়ত, পিক আওয়ারে সামাল দেওয়া চাপ হয়ে যায়।
ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখে ফরম জমা, ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক করতে গিয়ে আরও ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। এক পাসপোর্ট করতে তিন দিন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বনশ্রীর বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। গত সোমবার সকাল থকে বিকেল পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কারণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার না থাকায় বায়োমেট্রিক নিতে পারছিল না কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সার্ভারের এই বিভ্রাট প্রায়ই হয়। এনআইডি, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), জন্মনিবন্ধন, বিটিসিএল, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং জার্মানির ই-পাসপোর্ট সার্ভারের যেকোনো একটিতে ত্রুটি দেখা দিলেই পাসপোর্ট কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। একাধিক সার্ভারের কারণে প্রায়ই পাসপোর্টের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া ইন্টারনেটের কারণেও কার্যক্রমে গতি পায় না বলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ছোট ভুলে বড় ভোগান্তি
ছোট ভুলে বড় ভোগান্তিতে পড়তে হয় পাসপোর্টগ্রহীতাদের। জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট আবেদনের তথ্য একই হওয়ার কথা। তবে কখনো কখনো পাসপোর্টে ভিন্ন তথ্য চলে এলে তা ঠিক করতে ত্রাহি অবস্থা হয় নাগরিকদের।
কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই সুযোগে ঘুষ নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসে যাওয়া এক সেবাগ্রহীতা। ঢাকায়ও এ রকম ভুলে হয়রানির অভিযোগ মিলছে।
এমন সমস্যা নিয়ে পুরান ঢাকা থেকে আমিনুল ইসলাম নামের এক তরুণ এসেছেন পাসপোর্ট অফিসে। তাঁর সমস্যা জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নামে মোহাম্মদ নেই, কিন্তু পাসপোর্টে মোহাম্মদ চলে এসেছে। আর সেটা সংশোধন করতে দুই দিন ধরে ঘুরছেন তিনি।
হয়রানির নাম পুলিশ ভেরিফিকেশন
আবেদন ফরম জমা ও বায়োমেট্রিক সম্পন্নের পর ২১ দিনের মধ্যে হাতে পৌঁছানোর কথা সাধারণ পাসপোর্ট। কিন্তু এসবি থেকে ছাড়পত্র পেতে দেরি হলে নির্দিষ্ট সময়ে হাতে আসে না পাসপোর্ট। এসবিতে পাসপোর্ট আবেদনকারীর তদন্তের ভার পড়ে উপপরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তার হাতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরেজমিন না গিয়ে ফোন করে নিজের পছন্দের জায়গায় ডাকেন আবেদনকারীকে। চেয়ে বসেন একেক সময় একেক কাগজ। সেই কাগজ জোগাড় করতে ২১ দিন পেরিয়ে যায় অনেকের। স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা আলাদা হলে হয়রানিও দ্বিগুণ হয় মানুষের। পাসপোর্ট পেতে মানুষের এই ভোগান্তির চিত্র সারা দেশে একই। বরিশাল, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, বগুড়া, ঠাকুরগাঁওসহ বেশ কয়েকটি জেলায় পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে তৎপর দালাল চক্র। সবখানে পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে থাকা কম্পিউটার-প্রিন্টিং সেবার দোকানই দালালদের আখড়া।
অন্যদিকে জন্মতারিখসহ বিভিন্ন তথ্যে গরমিল থাকায় প্রবাসীদের অনেকেই নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। কারণ, তাঁরা জন্মনিবন্ধনে তারিখ বাড়িয়ে বা কমিয়ে বিদেশে গিয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশি গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন, কেউ ইচ্ছে করেই ফেলে দেন। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিদেশের দূতাবাস ও মিশনে, কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। তথ্যে গরমিল থাকায় পাসপোর্ট পাননি এমন প্রবাসীর সংখ্যা দেড় থেকে দুই লাখ। এই সংখ্যা ইউরোপে বেশি।
মানিক মিয়াজি নামের ফ্রান্সপ্রবাসী এক তরুণ বলেন, ‘আমার বাড়ি হবিগঞ্জে। জন্মতারিখ সংশোধন করে একাধিকবার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছি। তাই বাড়ি যেতে পারিনি। এদিকে আগের পাসপোর্টের মেয়াদও শেষ।’ তবে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এসব প্রবাসীর পাসপোর্ট দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য দেশ-বিদেশে তাঁদের জন্য আলাদা বুথ খোলা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ইতিমধ্যে অনেক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের জেলা শহরে পাসপোর্টের অফিসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিদেশে পাসপোর্ট জটিলতায় থাকা শ্রমিকদের বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা ধাপে ধাপে পাসপোর্ট পাবেন।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য ঢাকার পশ্চিম ও পূর্বে আরও দুটি অফিস করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ মার্চ মোহাম্মদপুরে পশ্চিমের অফিসটি চালু হয়েছে। পূর্বের অফিসটি হবে রামপুরার বনশ্রী এলাকায়। তাহলে আরও চাপ কমে আসবে।
পাসপোর্ট পেতে মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (ই-পাসপোর্ট) সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগারগাঁওয়ে ৩০টি থানা থেকে মানুষ পাসপোর্ট করতে আসত। মোহাম্মদপুরে একটি অফিস চালু হওয়ায় চাপ অনেক কমে আসবে। তখন সবার জন্যই আরামদায়ক হবে। মোহাম্মদপুরের পর রামপুরারটিও চালু হবে শিগগির।’
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) গ্রহণকারী নাগরিকের সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার ৬৩৯ জন এবং ই-পাসপোর্ট গ্রহণকারী ৬৫ লাখ ২৪ হাজার ৬৩৮ জন।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে