দুই বছর ধরে অকেজো আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০৬: ৪৯
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ১৪

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি দুই বছর ধরে অকেজো। ২০১৯ সালে নতুন আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি সরবরাহ করা হয় ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা এ হাসপাতালে। কিন্তু রেডিওলজিস্ট না থাকায় মেশিনটি কোনো কাজে আসছে না। সেটি দিনে দিনে নষ্ট হচ্ছে। ফলে রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে প্রায় ৮০ জন রোগী আসে। তাঁদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বাসহ ১২ জনকে আলট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি অকেজো। তাই তাঁরা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। তিন গুণ বেশি টাকায় তাঁদের আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হয়।

জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাকলি বেগম (২৮) অন্তঃসত্ত্বা। তিনি কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। তাঁকে আলট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে রোগীর পেটের অংশ আলট্রাসনোগ্রাম করলে সরকারি ফি দিতে হয় ২২০ টাকা। আর পেটের একাংশের জন্য ১০০ টাকার কিছু বেশি। কিন্তু মেশিনটি অকেজো থাকায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই পরীক্ষা করাতে কাকলির স্বজনদের খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা।

এদিকে হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি নষ্ট থাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ‘দালালেরা’ সুযোগ নিচ্ছেন। তাঁরা রোগীদের প্রেসক্রিপশন টানাহেঁচড়া করে দেখার চেষ্টা করেন চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন কি না, তা দেখার জন্য। আলট্রাসনোগ্রামের কোনো রোগী পেলেই তাঁরা নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কম টাকায় পরীক্ষা করার লোভ দেখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে নারী ‘দালালেরা’ সক্রিয়।

আরেকজন রোগী হান্নান মিয়া। তাঁর বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজুড়া ইউনিয়নে। তিনি একজন রিকশাচালক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পেটের যন্ত্রণায় ভুগছেন। চিকিৎসক তাঁকে আলট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে তিনিও বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৬০০ টাকা দিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ইনজেকশন ও ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে হান্নান মিয়াকে। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও, সেই অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যে কারণে নতুন আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। রোগীরাও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, প্রতি সপ্তাহে এ হাসপাতালে অর্ধশত প্রসূতি আসেন চিকিৎসাসেবা নিতে। কিন্তু তাঁদের এ হাসপাতালে উপযুক্ত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান বলেন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি নষ্ট, তাই পরীক্ষা করা যাচ্ছে না।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে আলট্রাসনোগ্রাম করার মতো কোনো রেডিওলজিস্ট নেই। যে কারণে মেশিনটিতে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটা বড় কিছু না। এখন আলট্রাসনোগ্রাম করার মতো রেডিওলজিস্ট না থাকাটাই বড় সমস্যা।’

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক ও রেডিওলজিস্টদের সমস্যা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হবে। তা ছাড়া এখন যাঁরা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাঁরা সবাই আন্তরিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত