হাসান মামুন
ভারত আমাদের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। অবশ্য রপ্তানির তুলনায় ভারত থেকে আমদানি অনেক বেশি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে রপ্তানি বাড়ছিল আমাদের; বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানি। মাঝে দু-এক বছরে এটা লাফিয়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেলে আমরা উৎসাহিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশটিতে তৈরি পোশাক দিয়ে রপ্তানি বাড়িয়ে ফেলব অনেকখানি। তাতে বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সুযোগ প্রশস্ত হবে। তবে সম্প্রতি প্রাপ্ত খবরে জানা যাচ্ছে, ওভেন ও নিট উভয় পণ্যে ভারতে আমাদের রপ্তানি গেছে কমে। কমার হারটাও অনুল্লেখযোগ্য নয়।
রপ্তানি বাড়তে থাকার সময় আমরা স্বভাবতই আশায় থাকি যে এটা আরও বাড়বে। এ অবস্থায় উল্টো খবর পেলে হতাশ হতে হয়। এর কারণ জানার আগ্রহও বাড়ে। ভারতে পাট ও পাটজাতপণ্যও আমরা রপ্তানি করছি। মার্চে সমাপ্ত ভারতীয় অর্থবছর শেষে যে তথ্য মিলল, সেই অনুযায়ী দেশটিতে আমাদের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে অবশ্য। ভারতের বাণিজ্য বিভাগ থেকে পাওয়া এসব তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন আমাদের সংবাদমাধ্যমে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরে ভারতও বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে আগের বছরের চেয়ে কম; বিশেষ করে মার্চে দুই দেশ থেকেই পরস্পরের কাছে রপ্তানি কমেছে অনেকখানি। এ অবস্থায় মোট বাণিজ্য গেছে কমে। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
গেল বছরের একই সময়ে দেশের একটি বিজনেস ডেইলিতে প্রকাশিত খবরে দেখছি, ২০২২-২৩ অর্থবছরেও দুই দেশের বাণিজ্য কমেছিল ৩১ শতাংশ। সে বছর অবশ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল ভারতে। এই পণ্য রপ্তানির খবরটা বেশি করে পেতে চাই এ জন্য যে, ভারতে আমাদের রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশই এখন তৈরি পোশাক। এটা আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যও বটে। বিশ্ববাজারে ভারত ও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আবার পরস্পরের প্রতিযোগী। তা সত্ত্বেও ভারত কিছু তৈরি পোশাক এখান থেকে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম দামে পাচ্ছে বলে। বাণিজ্যের এটাই নিয়ম। কম দামে পণ্য জোগাতে পারাটা সক্ষমতাও বটে, যা তৈরি পোশাকে আমরা অর্জন করেছি। এ কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমরা আছি ২-৩ নম্বরে। আর রপ্তানি আয়ের ৮০-৮৫ শতাংশই আসছে এখান থেকে। একটি পণ্যে এতটা নির্ভরতা অবশ্য বিপজ্জনক। কোনো কারণে এর রপ্তানিতে ধস নামলে বিপদে পড়ে যাব আমরা।
এ-ও ঠিক, ভারতের মতো তৈরি পোশাকের নতুন নতুন বাজারে আমরা প্রবেশ করছি। এগুলোয় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুরোনো ও বড় বাজারগুলো ধরে রাখতে হবে। ওই সব দেশ হালে মূল্যস্ফীতির শিকার হওয়ায় তাদের তৈরি পোশাকের বাজার কিছুটা সংকুচিত হয়ে এলেও তা আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর স্বীকৃত কৌশল প্রয়োগে তারা সিদ্ধহস্ত। এর সুফলও পাচ্ছে।
ভারতও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছে অনেকখানি। অভ্যন্তরীণ পণ্যবাজার শান্ত রাখতে তারা, বিশেষ করে জরুরি খাদ্যশস্য রপ্তানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে অনেক দিন ধরে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য যে দুই বছর ধরেই কমছে—তার পেছনে প্রধানত রয়েছে সেখান থেকে আমদানি কমে যাওয়াটা। চাল, গম, ভুট্টা, চিনি, পেঁয়াজ ও মসলার মতো খাদ্যপণ্যে আমরা স্বভাবতই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভারত এই তালিকার প্রায় সব কটি পণ্য রপ্তানিই নিরুৎসাহিত করছে। অন্যান্য পণ্য রপ্তানি অবশ্য কমছে ভিন্ন কারণে।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আমরা ভাতের চাল আমদানি করিনি বললেই চলে। তবে গমসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য যথাসম্ভব আমদানি করতে হয়েছে। ভারত থেকে সহজে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় এসব আমদানি করতে হয়েছে দূরবর্তী দেশ থেকে। তাতে বেশি সময় লেগেছে;আমদানি ব্যয়ও বেশি। উদাহরণস্বরূপ, চিনির দাম দেশে অনেক দিন থেকেই চড়া। অথচ ভারতে দাম অর্ধেকেরও কম। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা চিনি আনতে পারছি না ভারত থেকে। আনতে হচ্ছে ব্রাজিলের মতো দূরবর্তী দেশ থেকে। তাতে এর দাম কমানো যাচ্ছে না দফায় দফায় কিছু শুল্ক ছাড় দিয়েও।
সম্প্রতি ‘আজকের পত্রিকা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেল, ভারত থেকে সীমান্তপথে আসছে চিনি এবং বস্তা বদলে তা বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দামে। পাশের দেশে কোনো পণ্য অনেক কম দামে পাওয়া গেলে কিছু লোক এর সুযোগ নেওয়াটা অবশ্য অস্বাভাবিক নয়। চিনি পরিশোধনকারীরাও চোরাচালানের অভিযোগ করে আসছিলেন। এতে তাঁরা ব্যবসা হারাচ্ছেন; সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। এ অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব কেবল চোরাচালান দমন নয়; চিনির বাজার শান্ত রাখা। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মসলার দামও বেড়ে চলেছে।
সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে তার ব্যবসায়ীদের। তবে ‘ন্যূনতম দাম’ বেঁধে দেওয়ায় লাভজনকভাবে পেঁয়াজ আনার সুযোগ কমই।
নতুন অর্থবছরেও দেশটি থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য আনতে আমরা পারব বলে মনে হয় না। এরই মধ্যে চিনি আমদানি ৭০ শতাংশ কমেছে বলে খবরে প্রকাশ। ভারত থেকে ডালজাতীয় পণ্য আমদানিও কমেছে বিপুলভাবে। গত দুই রমজানে আমরা পণ্যবাজারে যে সংকট মোকাবিলা করেছি, সেটা ভারত থেকে সহজে পণ্যসামগ্রী আনা যায়নি বলেও। নজিরবিহীন ডলার-সংকটে পড়েও সামগ্রিকভাবে আমদানি কমাতে বাধ্য হয়েছি আমরা। সেটা অন্যান্য দেশ থেকেও। এ অবস্থায় শিল্পের মেশিনারিজ আর কাঁচামাল আমদানিও কমেছে।
ভারত থেকেও আমরা এসব আমদানি করে থাকি উল্লেখযোগ্যভাবে।
তুলার মতো কাঁচামাল আমদানি হয় সবচেয়ে বেশি। আমাদের সুতা ও বস্ত্র খাত এ জন্য ভারতের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। জ্বালানি তেল, বিটুমিন, রেল আর বিদ্যুৎ খাতের যন্ত্রপাতিও আমরা কম আনি না ভারত থেকে। খাদ্যপণ্যের তুলনায় ডলারে এসবের আমদানি অনেক বেশি। খাদ্য আমদানি ব্যাহত হলে অবশ্য তা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। সরকারের ওপর চাপ বাড়ে সংকট নিষ্পত্তির। তবে সংকটের তীব্রতা কমিয়ে আনাও সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রে। আর এ পরিস্থিতিটাই অনেকখানি প্রতিফলিত হচ্ছে প্রধানত খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে। এটা এতই তীব্র যে গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের ডিজি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বললেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিবিএস এ বিষয়ে যে তথ্য জোগাচ্ছে—পরিস্থিতি তার চেয়ে খারাপ।
ভারত থেকে খাদ্যশস্য আমদানির সুযোগ অনেক কমে যাওয়াটা এতে কতখানি ভূমিকা রেখেছে, সেটাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
সদ্যসমাপ্ত ভারতীয় অর্থবছর শেষে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, দেশটি থেকে এখানে তুলা আমদানি বেড়েছে। জ্বালানি তেল, বিটুমিন, অন্যান্য খনিজ পদার্থ আমদানিও বেড়েছে কিছুটা। এর আগের বছর যে কারণেই হোক–তুলা আমদানি কমে গিয়েছিল অনেক। সেই ঘাটতি পূরণে নিশ্চয়ই বেগ পেতে হয়েছে। আর তুলার মতো কাঁচামালের ঘাটতি তো পূরণ করতেই হবে; নইলে বিকাশমান বস্ত্র খাত পড়বে সংকটে।
এ খাতে সংকট সৃষ্টির অন্য কারণও রয়েছে। যেমন গ্যাসের ঘাটতি। এ খাতে পানিও লাগে প্রচুর। পানি না হয় শক্তিশালী পাম্প বসিয়ে মাটির অনেক গভীর থেকে তোলা যায়। কিন্তু গ্যাসের চলমান সংকটে এটা মিলবে কোত্থেকে? গ্যাস দিয়ে একই সঙ্গে বিদ্যুৎ আর সারের মতো জরুরি উপকরণও উৎপাদন করা হচ্ছে। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমদানি হচ্ছে এলএনজি। এটা অবশ্য ভারত থেকে আনা হচ্ছে না। তবে দেশটি থেকে চুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে বিদ্যুৎ। এটা নতুন বাস্তবতা। বাণিজ্য কিছুটা কমে এলেও ভারতের সঙ্গে এর প্যাটার্ন বদলাচ্ছে। বাণিজ্য সামনে বাড়বে না, সেটাও বলা যায় না।
কোভিডের সময় এবং এর পরপর বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেড়েছিল। এতে দুই দেশই কমবেশি উপকৃত হয়। এরপর ‘ইউক্রেন যুদ্ধ’ বিশ্ববাণিজ্যকে এতটা এলোমেলো করে দিয়েছে যে তাতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যও হয়েছে প্রভাবিত; বিশেষ করে ভারত নিজের খাদ্যপণ্য বাজারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে বেশি। রপ্তানিতে আরোপ করেছে বিধিনিষেধ। এতে তার ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য দেশও পড়েছে সংকটে। ভারত তার আমদানিও কিছুটা কমিয়েছে। তাতে আবার রপ্তানি কমেছে আমাদের মতো দেশগুলোর। ভারতে সামান্যই রপ্তানি; সেটাও কমেছে।
মোট বাণিজ্য কমে আসার মধ্যেও ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়লে সেটা হতো সুসংবাদ। দেশটি থেকে শিল্পের উপকরণ আমদানি কমে যাওয়াটাও উদ্বেগজনক। এর আমদানি কমেছে অন্যান্য দেশ থেকেও। এটা দেশে বিনিয়োগ হ্রাসের সংকেত দিচ্ছে। জুনে যে অর্থবছর শেষ হতে চলেছে, তাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি অনেকখানি কমে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে এর সম্পর্ক। একই সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকার ঘটনাটি এ পরিস্থিতিকে করে তুলেছে সংকটজনক।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ভারত আমাদের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। অবশ্য রপ্তানির তুলনায় ভারত থেকে আমদানি অনেক বেশি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে রপ্তানি বাড়ছিল আমাদের; বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানি। মাঝে দু-এক বছরে এটা লাফিয়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেলে আমরা উৎসাহিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশটিতে তৈরি পোশাক দিয়ে রপ্তানি বাড়িয়ে ফেলব অনেকখানি। তাতে বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সুযোগ প্রশস্ত হবে। তবে সম্প্রতি প্রাপ্ত খবরে জানা যাচ্ছে, ওভেন ও নিট উভয় পণ্যে ভারতে আমাদের রপ্তানি গেছে কমে। কমার হারটাও অনুল্লেখযোগ্য নয়।
রপ্তানি বাড়তে থাকার সময় আমরা স্বভাবতই আশায় থাকি যে এটা আরও বাড়বে। এ অবস্থায় উল্টো খবর পেলে হতাশ হতে হয়। এর কারণ জানার আগ্রহও বাড়ে। ভারতে পাট ও পাটজাতপণ্যও আমরা রপ্তানি করছি। মার্চে সমাপ্ত ভারতীয় অর্থবছর শেষে যে তথ্য মিলল, সেই অনুযায়ী দেশটিতে আমাদের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে অবশ্য। ভারতের বাণিজ্য বিভাগ থেকে পাওয়া এসব তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন আমাদের সংবাদমাধ্যমে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরে ভারতও বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে আগের বছরের চেয়ে কম; বিশেষ করে মার্চে দুই দেশ থেকেই পরস্পরের কাছে রপ্তানি কমেছে অনেকখানি। এ অবস্থায় মোট বাণিজ্য গেছে কমে। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
গেল বছরের একই সময়ে দেশের একটি বিজনেস ডেইলিতে প্রকাশিত খবরে দেখছি, ২০২২-২৩ অর্থবছরেও দুই দেশের বাণিজ্য কমেছিল ৩১ শতাংশ। সে বছর অবশ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল ভারতে। এই পণ্য রপ্তানির খবরটা বেশি করে পেতে চাই এ জন্য যে, ভারতে আমাদের রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশই এখন তৈরি পোশাক। এটা আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যও বটে। বিশ্ববাজারে ভারত ও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আবার পরস্পরের প্রতিযোগী। তা সত্ত্বেও ভারত কিছু তৈরি পোশাক এখান থেকে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম দামে পাচ্ছে বলে। বাণিজ্যের এটাই নিয়ম। কম দামে পণ্য জোগাতে পারাটা সক্ষমতাও বটে, যা তৈরি পোশাকে আমরা অর্জন করেছি। এ কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমরা আছি ২-৩ নম্বরে। আর রপ্তানি আয়ের ৮০-৮৫ শতাংশই আসছে এখান থেকে। একটি পণ্যে এতটা নির্ভরতা অবশ্য বিপজ্জনক। কোনো কারণে এর রপ্তানিতে ধস নামলে বিপদে পড়ে যাব আমরা।
এ-ও ঠিক, ভারতের মতো তৈরি পোশাকের নতুন নতুন বাজারে আমরা প্রবেশ করছি। এগুলোয় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুরোনো ও বড় বাজারগুলো ধরে রাখতে হবে। ওই সব দেশ হালে মূল্যস্ফীতির শিকার হওয়ায় তাদের তৈরি পোশাকের বাজার কিছুটা সংকুচিত হয়ে এলেও তা আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর স্বীকৃত কৌশল প্রয়োগে তারা সিদ্ধহস্ত। এর সুফলও পাচ্ছে।
ভারতও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছে অনেকখানি। অভ্যন্তরীণ পণ্যবাজার শান্ত রাখতে তারা, বিশেষ করে জরুরি খাদ্যশস্য রপ্তানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে অনেক দিন ধরে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য যে দুই বছর ধরেই কমছে—তার পেছনে প্রধানত রয়েছে সেখান থেকে আমদানি কমে যাওয়াটা। চাল, গম, ভুট্টা, চিনি, পেঁয়াজ ও মসলার মতো খাদ্যপণ্যে আমরা স্বভাবতই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভারত এই তালিকার প্রায় সব কটি পণ্য রপ্তানিই নিরুৎসাহিত করছে। অন্যান্য পণ্য রপ্তানি অবশ্য কমছে ভিন্ন কারণে।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আমরা ভাতের চাল আমদানি করিনি বললেই চলে। তবে গমসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য যথাসম্ভব আমদানি করতে হয়েছে। ভারত থেকে সহজে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় এসব আমদানি করতে হয়েছে দূরবর্তী দেশ থেকে। তাতে বেশি সময় লেগেছে;আমদানি ব্যয়ও বেশি। উদাহরণস্বরূপ, চিনির দাম দেশে অনেক দিন থেকেই চড়া। অথচ ভারতে দাম অর্ধেকেরও কম। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা চিনি আনতে পারছি না ভারত থেকে। আনতে হচ্ছে ব্রাজিলের মতো দূরবর্তী দেশ থেকে। তাতে এর দাম কমানো যাচ্ছে না দফায় দফায় কিছু শুল্ক ছাড় দিয়েও।
সম্প্রতি ‘আজকের পত্রিকা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেল, ভারত থেকে সীমান্তপথে আসছে চিনি এবং বস্তা বদলে তা বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দামে। পাশের দেশে কোনো পণ্য অনেক কম দামে পাওয়া গেলে কিছু লোক এর সুযোগ নেওয়াটা অবশ্য অস্বাভাবিক নয়। চিনি পরিশোধনকারীরাও চোরাচালানের অভিযোগ করে আসছিলেন। এতে তাঁরা ব্যবসা হারাচ্ছেন; সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। এ অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব কেবল চোরাচালান দমন নয়; চিনির বাজার শান্ত রাখা। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মসলার দামও বেড়ে চলেছে।
সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে তার ব্যবসায়ীদের। তবে ‘ন্যূনতম দাম’ বেঁধে দেওয়ায় লাভজনকভাবে পেঁয়াজ আনার সুযোগ কমই।
নতুন অর্থবছরেও দেশটি থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য আনতে আমরা পারব বলে মনে হয় না। এরই মধ্যে চিনি আমদানি ৭০ শতাংশ কমেছে বলে খবরে প্রকাশ। ভারত থেকে ডালজাতীয় পণ্য আমদানিও কমেছে বিপুলভাবে। গত দুই রমজানে আমরা পণ্যবাজারে যে সংকট মোকাবিলা করেছি, সেটা ভারত থেকে সহজে পণ্যসামগ্রী আনা যায়নি বলেও। নজিরবিহীন ডলার-সংকটে পড়েও সামগ্রিকভাবে আমদানি কমাতে বাধ্য হয়েছি আমরা। সেটা অন্যান্য দেশ থেকেও। এ অবস্থায় শিল্পের মেশিনারিজ আর কাঁচামাল আমদানিও কমেছে।
ভারত থেকেও আমরা এসব আমদানি করে থাকি উল্লেখযোগ্যভাবে।
তুলার মতো কাঁচামাল আমদানি হয় সবচেয়ে বেশি। আমাদের সুতা ও বস্ত্র খাত এ জন্য ভারতের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। জ্বালানি তেল, বিটুমিন, রেল আর বিদ্যুৎ খাতের যন্ত্রপাতিও আমরা কম আনি না ভারত থেকে। খাদ্যপণ্যের তুলনায় ডলারে এসবের আমদানি অনেক বেশি। খাদ্য আমদানি ব্যাহত হলে অবশ্য তা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। সরকারের ওপর চাপ বাড়ে সংকট নিষ্পত্তির। তবে সংকটের তীব্রতা কমিয়ে আনাও সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রে। আর এ পরিস্থিতিটাই অনেকখানি প্রতিফলিত হচ্ছে প্রধানত খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে। এটা এতই তীব্র যে গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের ডিজি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বললেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিবিএস এ বিষয়ে যে তথ্য জোগাচ্ছে—পরিস্থিতি তার চেয়ে খারাপ।
ভারত থেকে খাদ্যশস্য আমদানির সুযোগ অনেক কমে যাওয়াটা এতে কতখানি ভূমিকা রেখেছে, সেটাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
সদ্যসমাপ্ত ভারতীয় অর্থবছর শেষে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, দেশটি থেকে এখানে তুলা আমদানি বেড়েছে। জ্বালানি তেল, বিটুমিন, অন্যান্য খনিজ পদার্থ আমদানিও বেড়েছে কিছুটা। এর আগের বছর যে কারণেই হোক–তুলা আমদানি কমে গিয়েছিল অনেক। সেই ঘাটতি পূরণে নিশ্চয়ই বেগ পেতে হয়েছে। আর তুলার মতো কাঁচামালের ঘাটতি তো পূরণ করতেই হবে; নইলে বিকাশমান বস্ত্র খাত পড়বে সংকটে।
এ খাতে সংকট সৃষ্টির অন্য কারণও রয়েছে। যেমন গ্যাসের ঘাটতি। এ খাতে পানিও লাগে প্রচুর। পানি না হয় শক্তিশালী পাম্প বসিয়ে মাটির অনেক গভীর থেকে তোলা যায়। কিন্তু গ্যাসের চলমান সংকটে এটা মিলবে কোত্থেকে? গ্যাস দিয়ে একই সঙ্গে বিদ্যুৎ আর সারের মতো জরুরি উপকরণও উৎপাদন করা হচ্ছে। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমদানি হচ্ছে এলএনজি। এটা অবশ্য ভারত থেকে আনা হচ্ছে না। তবে দেশটি থেকে চুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে বিদ্যুৎ। এটা নতুন বাস্তবতা। বাণিজ্য কিছুটা কমে এলেও ভারতের সঙ্গে এর প্যাটার্ন বদলাচ্ছে। বাণিজ্য সামনে বাড়বে না, সেটাও বলা যায় না।
কোভিডের সময় এবং এর পরপর বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেড়েছিল। এতে দুই দেশই কমবেশি উপকৃত হয়। এরপর ‘ইউক্রেন যুদ্ধ’ বিশ্ববাণিজ্যকে এতটা এলোমেলো করে দিয়েছে যে তাতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যও হয়েছে প্রভাবিত; বিশেষ করে ভারত নিজের খাদ্যপণ্য বাজারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে বেশি। রপ্তানিতে আরোপ করেছে বিধিনিষেধ। এতে তার ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য দেশও পড়েছে সংকটে। ভারত তার আমদানিও কিছুটা কমিয়েছে। তাতে আবার রপ্তানি কমেছে আমাদের মতো দেশগুলোর। ভারতে সামান্যই রপ্তানি; সেটাও কমেছে।
মোট বাণিজ্য কমে আসার মধ্যেও ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়লে সেটা হতো সুসংবাদ। দেশটি থেকে শিল্পের উপকরণ আমদানি কমে যাওয়াটাও উদ্বেগজনক। এর আমদানি কমেছে অন্যান্য দেশ থেকেও। এটা দেশে বিনিয়োগ হ্রাসের সংকেত দিচ্ছে। জুনে যে অর্থবছর শেষ হতে চলেছে, তাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি অনেকখানি কমে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে এর সম্পর্ক। একই সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকার ঘটনাটি এ পরিস্থিতিকে করে তুলেছে সংকটজনক।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে