ড. তৈফুর রহমান
গ্রামের বাড়ি থেকে বাবা আর ছেলে তাদের ধনী আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছে ঢাকায়। টেবিলে নাশতা দিয়ে গেছে। ছেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করল, ‘বাজান, গেলাসে কী দিয়া গেল?’ বাবা উত্তর দিলেন, ‘চা।’ ছেলে লজ্জায় অবনত হয়ে বলল, ‘আপনি চান, আমার শরম লাগে।’
সেই দিন আর নেই। আমরা সবাই চা চিনি, চিনি দিয়ে চা খাই, দুধ দিয়ে খাই, আদা দিয়ে খাই, লেবু দিয়ে খাই, কিছু না দিয়ে খাই।
কিন্তু আপনি বা আমি কেউই প্রথম চা পানকারী ব্যক্তি নই। জনশ্রুতি আছে, বাঙালির মধ্যে প্রথম চা পানকারী ব্যক্তিটি হচ্ছেন অতীশ দীপঙ্কর। আজ থেকে এক হাজার বছর আগে তুষারাবৃত হিমালয় পাড়ি দিয়ে তিনি যখন তিব্বতে পৌঁছালেন–তখন এই কিংবদন্তির পণ্ডিতকে নাকি চা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন মঠের ভিক্ষুরা। কিন্তু তিব্বতে না হয় বৃষ্টি, না আছে চা উৎপাদনের মতো উপযোগী মাটি বা আবহাওয়া। তাহলে সেই সময় তিব্বতে চা আসল কোথা থেকে?
জানা যায়, ৬৮১ সালে চীনা রাজকুমারী ওয়েন চেং এর সঙ্গে বিয়ে হয় তিব্বতি রাজা সাংতাং গাম্বোর। রাজকুমারী বাপের বাড়ি থেকে রেশমি পোশাক, গয়না, দাসী ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এক পেটি চা। তিব্বতিরা সেই জিনিস ঘন দুধের সঙ্গে খেয়ে তো মুগ্ধ! প্রবল শীতে গা গরম তো হয়ই, মঠের শিক্ষার্থীরা রাত জেগে বৌদ্ধ শাস্ত্র পড়ার সময় আর ঘুমিয়ে পড়ে না! সেই ঘন চায়ের ক্বাথই অতীশ দীপঙ্কর খেয়েছিলেন বলে ধারণা করা যায়।
এ গল্প থেকে এমন ধারণা করা যেতেই পারে যে, বাংলা-বিহার-ওডিশায় এর আগে আর কেউ কোনো দিন চা পান করিনি। কারণ এ অঞ্চলে এই গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটির আগমন হয়নি। কথাটি সর্বাংশে সঠিক নয়।
এ কথা সত্য যে ভারতবর্ষে জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে চায়ের প্রসার হয়েছে মাত্র শ খানিক বছর আগে ইংরেজদের হাত ধরেই। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, এ অঞ্চলে চায়ের অনেক আগে এসেছে কফি। আরব আর পারস্যের বণিকেরা সেই সিন্দাবাদের গল্পের সময়কালের আগে থেকেই জাহাজে করে আসত আজকের মুম্বাই, সুরাট আর কালিকট বন্দরে। তারাই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল কফি। ১৬৩৮ সালে জার্মান পর্যটক আলবার্ট ম্যান্ডেলসলো সুরাটে এসে ইউরোপীয় বণিক এবং ভারতীয় সম্ভ্রান্তদের কফি খেতে দেখেন, দিল্লির চাঁদনি চকে তখন রীতিমতো কফিহাউস ছিল। তখন দিল্লির সিংহাসনে সম্রাট শাহজাহান এবং তাজমহল নির্মাণ তখনো শেষ হয়নি।
১৫০০ সালের পর প্রায় এক শতাব্দী দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনে একচ্ছত্র বাণিজ্য করেছে পর্তুগিজেরা। এর পরে ১৬০০ সাল থেকে ভারতবর্ষ, ইন্দোচীন আর চীনের দিকে পিল পিল করে আসতে শুরু করে ইংরেজ, ওলন্দাজ এবং এর পরে ফরাসিরা। ভারতের মসলা, সুতি এবং মসলিন আর চীনের রেশমি বস্ত্র, চীনামাটির বাসনপত্র তখন ইউরোপে চাহিদার শীর্ষে থাকা বাণিজ্য পণ্য। এর লোভে জীবনপণ করে ইউরোপীয়রা জাহাজে ভাসতে ভাসতে আমাদের বন্দরে বন্দরে হামলে পড়ল। তখনো তারা চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তেমন করে জমিয়ে বাণিজ্য শুরু করতে পারেনি। আজকের ম্যাকাওতে পর্তুগিজেরা আর হংকংয়ে ইংরেজ ও ওলন্দাজেরা চীনের বণিকদের সঙ্গে লেনদেন করত। যদিও পর্তুগিজেরা চীনা বন্দরে প্রথম বাণিজ্য শুরু করে। কিন্তু চায়ের প্রথম চালান ইউরোপে নিয়ে যায় ওলন্দাজেরা—সময়টা ১৬১০ সাল।
ইংরেজ, ফরাসি, জার্মানদের বলতে গেলে চা খাওয়া শেখায় ওলন্দাজেরা। ইংল্যান্ডে চা আসে ১৬৪৫ সালে। ১৬৫৬ সালে লন্ডনে প্রথম চায়ের নিলাম হয়। এতে বোঝা যায় তত দিনে চা একটা বাণিজ্য পণ্যের মর্যাদা পেয়ে গেছে বিলেতে। ১৬৬২ সালে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগিজ রাজকুমারী ক্যাথরিনকে বিয়ে করেন। ক্যাথরিনকে যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয় বিরাট একটা বাক্স ভরা চীন দেশের চা। ধারণা করা হয়, এই রাজকুমারীর চা-প্রীতির কারণেই ইংল্যান্ডের রাজপ্রাসাদ থেকে ধীরে ধীরে এই পানীয়ের ফ্যাশন ধনী এবং সম্ভ্রান্ত মহলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
এই বস্তু সাধারণ জনতা কিনতে বা খেতে পারত না এর চড়া দামের জন্যই শুধু নয়। চা পানের সরঞ্জাম, যেমন কেটলি, কাপ, বাহারি টেবিল, চিনি সবই তখন ছিল দুর্মূল্য। তবে সব সম্ভ্রান্তই যে ঠিকঠাক মতো চা পান শিখতে পেরেছিল, তা বলা যাবে না। সেই সময়ে ডিউক অফ মনমাউথের বিধবা স্ত্রী তাঁর স্কটিশ আত্মীয়স্বজনকে এক পাউন্ড চা পাঠালেন। তাঁরা চা পেয়ে খুব খুশি। চা পাতা ভালো মতো পানিতে জ্বাল দিয়ে, কালচে সবুজ পানি সুন্দর করে ছেঁকে ফেলে দিয়ে, সেদ্ধ পালং শাকের মতো কচকচ করে সেদ্ধ চা পাতা সবাই মিলে তৃপ্তি করে খেয়েছিলেন বলে শোনা যায়!
১৭২১ সালের মধ্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চীনে চা-বাণিজ্যের একচেটিয়া ব্যবসার সনদ পায়। তারা সিন্দুক ভরে রৌপ্য মুদ্রা নিয়ে এসে জাহাজ বোঝাই করে চা নিয়ে যেত ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের বাজারে। এইভাবে কয়েক বছর চলার পরে ইংরেজদের টনক নড়ল। বস্তা বস্তা রৌপ্য মুদ্রা যে নিয়ে যাচ্ছে তাতে তাদের তারল্য সংকট শুরু হলো বলে! কারণ ইংরেজরা এমন কিছু বানাতে পারত না বা উৎপাদন করত না যার চাহিদা ভারতবর্ষ বা চীনে আছে। তাহলে উপায়?
চতুর ইংরেজ দেখল, চীনের মানুষের আফিমের প্রতি একটা নেশা আছে। তখন বাংলায় ভালো আফিম চাষ হতো। তত দিনে বাংলাতেও ইংরেজ রাজ গেঁড়ে বসেছে। তারা বুদ্ধি করল, অতি সস্তা দরে, মেরে ধরে বাংলার চাষিদের দিয়ে আফিম উৎপাদন করিয়ে নিয়ে সেই আফিম বিক্রি করবে চীনে। তার বদলে জাহাজ বোঝাই করে নিয়ে আসবে চা। নগদ লেনদেনের কোনো দরকারই নেই। এমন মোক্ষম সমাধান পেয়ে ইংরেজের চা বাণিজ্য ফুলে ফেঁপে উঠল। কিন্তু চীনের জনগণ এমনভাবে আফিমে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে দেখে চীন সম্রাট গেলেন ক্ষেপে। তারা ইংরেজের আফিম বাণিজ্যে বাঁধ সাধল। তাতে বাঁধল যুদ্ধ—সময়টা ১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ সাল। যুদ্ধের ডামাডোলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চীনের চা বাণিজ্যে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। ওদিকে ইংরেজেদের চা পানের অভ্যাস বনেদি বাড়ির ড্রয়িংরুমের সীমানা পেরিয়ে সাধারণের হেঁশেলে গিয়ে হাজির হচ্ছে। চায়ের চাহিদাও বেড়ে গেছে বহু গুণ।
আফিম যুদ্ধের আগেই ইংরেজ বুঝে গিয়েছিল, ইউরোপে চায়ের যে পরিমাণ চাহিদা তা চীনের ছোট ছোট চা বাগানিদের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া আফিম বিক্রি করে বেশি দিন বাণিজ্য চালানো যাবে না। এদিকে ওলন্দাজেরা জাভাতে চা উৎপাদনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালু করেছে, আমেরিকা স্বাধীনতা পেয়ে তারাও চায়ের সন্ধানে প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্র পথে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে তৎপর হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় চায়ের বিকল্প একটা উৎপাদন ক্ষেত্র ইংরেজদের জন্য ফরজ হয়ে উঠল।
১৮২৩ সালে দুর্গম আসামে বদলি হলেন রবার্ট ব্রুস নামের এক স্কটিশ মেজর। তিনি দেখলেন, স্থানীয় লোকজন একধরনের গাছের পাতা চিবিয়ে খায় পানের মতো করে। তিনি ভালো করে খেয়াল করে বুঝলেন, এই গাছ একধরনের চা-গুল্ম। তখন তাঁর আনন্দ আর ধরে না! কিন্তু আসামে প্রাকৃতিক ভাবে চা গাছ হয়, বাজার ধরতে হলে দরকার বাণিজ্যিক চাষবাদ এবং প্রক্রিয়াকরণ। সে জন্য তারা চীন থেকে অভিজ্ঞ চাষি ও প্রক্রিয়াজাতকারী ভাড়া করে নিয়ে এলেন, সঙ্গে বাঙালি এবং অন্যান্য অঞ্চলের মজুরি-শ্রমিকদের শিক্ষা চলতে থাকল।
শুরুতে উদ্দেশ্য ছিল আসামে চা উৎপাদন করে তা ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়া। আসামে চা উৎপাদন পুরোদমে শুরু হওয়ার কয়েক দশকের ভেতরেই চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গেল হুহু করে। কাড়ি কাড়ি পাউন্ড কামাই করতে লাগল আসাম টি-গার্ডেন। ১৯০০ সালের শুরুতে ইংরেজ সাহেবদের হঠাৎ বোধোদয় হলো, আসামের চা সাতসমুদ্র তেরো নদীর ওপারে নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে ভালো কথা। কিন্তু কোটি কোটি মানুষের দেশ ভারতবর্ষই তো বিরাট বাজার হতে পারে চায়ের! যেই ভাবা সেই কাজ।
১৯০২ সালে ইন্ডিয়া টি অ্যাসোসিয়েশন জরিপ করে দেখল, চা পানীয় হিসেবে জনপ্রিয় করতে হলে আগে ভারতীয়দের বোঝাতে হবে এ এক দারুণ গুণের পানীয়। তার পরে তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে দেখাতে হবে কীভাবে চা বানাতে হয়, কীভাবে আয়েশ করে চা পান করতে হয়। তারা ছোট ছোট দলকে এক একজন সুপারিনটেনডেন্টের তত্ত্বাবধানে দিয়ে একটু অবস্থাসম্পন্নদের বাড়িতে বাড়িতে পাঠাতে শুরু করল। তারা প্রায় প্রতিদিন স্টোভ, কেটলি, ছাঁকনি, কাপ পিরিচ নিয়ে হাজির হতে থাকল মানুষজনের বাড়িতে। বিনি পয়সায় যখন পাওয়া যাচ্ছে তখন প্রাথমিক আপত্তি বেশি দিন টিকল না। রেল স্টেশনে চায়ের ক্যানটিন চালু হলো। এমনকি হাতে করে চা ফেরিও শুরু হলো। তার পরে ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে আসল প্রথম মহাযুদ্ধ। কলকারখানায় উৎপাদনের সঙ্গে কাজের সময় বেড়ে গেল। কারখানার ক্যানটিনে ক্যানটিনে নামমাত্র মূল্যে সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যায় বিতরণ শুরু হলো, শরীরও চাঙা করা পানীয় চা।
এর পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি চীনের চা-কে। বাংলা, বিহার, ওডিশা, উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত সবখানে চায়ের সঙ্গে বাধা পড়ে গেলাম আমরা। আর পড়ল চা উৎপাদনকারী মজুরেরা।
অবাক চা পান
চীনে রাজ কর্মচারী বা কর্মকর্তা হওয়ার জন্য আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে থেকেই কঠিন পরীক্ষা চালু ছিল। মিং রাজ বংশের শুরুর দিকে (১৩৮৫) তরুণ জু ঝি ডিং’র অফিসার হওয়ার খায়েশ। তিনি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে রওনা দিলেন। ফুজিয়ান প্রদেশের উইশান পার্বত্য অঞ্চলে এসে অসুস্থ হয়ে পথের ধরে পড়ে রইলেন জু ঝি ডিং। এক ভিক্ষু তাঁকে দেখে মন্দিরে নিয়ে গেলেন। সেখানে তাঁকে আশ্রয়ের সঙ্গে দেওয়া হলো বিশেষ এক ধরনের চা। সেই চা পান করে জু ঝি ডিং ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেলেন। সময় মতো পরীক্ষা দিয়ে শুধু উত্তীর্ণই হলেন না, সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি নিযুক্ত হলেন সম্রাটের খাস কর্মকর্তা হিসেবে।
সেই সময় চাকরির এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সবাইকে একটা করে লাল আলখাল্লা দেওয়া হতো। জু ঝি ডিং সেই আলখাল্লা গায়ে দিয়ে ঈশান পর্বতে হাজির হলেন। যে চা খেয়ে আজ তাঁর এত উন্নতি, সেই চা গাছের গায়ে সেই আলখাল্লা জড়িয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। পরে একবার সম্রাটের মা অসুস্থ হলে যখন সব কবিরাজ বৈদ্য ফেল মেরে গেলেন, তখন জু ঝি সম্রাটকে বললেন, তাঁর সন্ধানে এমন চা আছে যা পান করলে রাজমাতা নির্ঘাত সুস্থ হবেন। দ্রুত সেই চা আনা হলো রাজপ্রাসাদে। সম্রাটের মা সুস্থও হয়ে উঠলেন। এমনই ধন্বন্তরি সেই চা, এমনই তার কেরামতি! সম্রাট আদেশ দিলেন, ‘এটি যে সে চা নয়, এই চায়ের গাছে ইচ্ছে করলেই আর হাত দেওয়া যাবে না, এই চা গাছ এখন থেকে সংরক্ষিত’। সেই থেকে সেই বিশেষ চায়ের কথা সবখানে রাষ্ট্র হয়ে গেল। সবাই ধন্য ধন্য করে তার নাম রাখল ডা হং পাও চা। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘লাল আলখাল্লার চা’।
এখনো পর্বতের গায়ে এক দুর্গম অংশে মাত্র ছয়টি মাতৃ গাছ টিকে আছে শত শত বছর ধরে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৭২ সালে মাও যে দং বা মাও সেতুং এর সঙ্গে দেখা করতে গেলে চীনের প্রধান তাঁকে ২০০ গ্রাম ‘লাল আলখাল্লার চা’ উপহার দেন বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে।
২০০৫ সালে শেষ বারের মতো সেই মাতৃ গাছ থেকে মাত্র ২০ গ্রাম চা সংগ্রহ করে নিলামে তোরা হয়। দাম ওঠে ত্রিশ হাজার ডলার অর্থাৎ প্রায় ২৮ লাখ টাকা!
চীনারা আর সবার মতো চা শুধু পানীয় হিসেবে নয়, খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে। তবে তা শাক পাতার মতো করে নয়। খানিকটা ভিন্ন উপায়ে। আমাদের দেশে যেমন রাস্তাঘাট-স্টেশন-লঞ্চে গরম ডিম বিক্রি হয়, চীনেও আছে তেমন ব্যবস্থা।
ডিম-চায়ের রেসিপি
প্রথম ডিম পানিতে সেদ্ধ করে নিন। মোটামুটি ভালো সেদ্ধ হলে ডিমটি শক্ত কিছুর ওপর আস্তে আস্তে ঠুকে খোসায় চিড় ধরান। কিন্তু ছাড়িয়ে নেবেন না। খোসাওয়ালা ডিম পানিতে নিয়ে সেখানে চা, দারুচিনি, গোলমরিচ, তেজপাতা আর স্টার এনিস দিন। দিনভর জ্বাল দিয়ে শক্ত করে ফেলার পরে খোসা ছড়িয়ে মুখে দিলেই আপনি পাবেন চীনের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ডিম চায়ের স্বাদ।
তথ্যসূত্র
1.Tea War: A history of capitalism in China and India by Andrew B. Liu (Yale University Press 2020)
2. Curry: A tale of cooks and conquerors by Lizzie Cullingham (Vintage books, 2006)
3. Tea: A Global History by Helen Saberi (Reaktion books, 2010)
লেখক: প্রযুক্তিবিদ, ইনফিনিয়াম ইউকে লিমিটেড, অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য
গ্রামের বাড়ি থেকে বাবা আর ছেলে তাদের ধনী আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছে ঢাকায়। টেবিলে নাশতা দিয়ে গেছে। ছেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করল, ‘বাজান, গেলাসে কী দিয়া গেল?’ বাবা উত্তর দিলেন, ‘চা।’ ছেলে লজ্জায় অবনত হয়ে বলল, ‘আপনি চান, আমার শরম লাগে।’
সেই দিন আর নেই। আমরা সবাই চা চিনি, চিনি দিয়ে চা খাই, দুধ দিয়ে খাই, আদা দিয়ে খাই, লেবু দিয়ে খাই, কিছু না দিয়ে খাই।
কিন্তু আপনি বা আমি কেউই প্রথম চা পানকারী ব্যক্তি নই। জনশ্রুতি আছে, বাঙালির মধ্যে প্রথম চা পানকারী ব্যক্তিটি হচ্ছেন অতীশ দীপঙ্কর। আজ থেকে এক হাজার বছর আগে তুষারাবৃত হিমালয় পাড়ি দিয়ে তিনি যখন তিব্বতে পৌঁছালেন–তখন এই কিংবদন্তির পণ্ডিতকে নাকি চা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন মঠের ভিক্ষুরা। কিন্তু তিব্বতে না হয় বৃষ্টি, না আছে চা উৎপাদনের মতো উপযোগী মাটি বা আবহাওয়া। তাহলে সেই সময় তিব্বতে চা আসল কোথা থেকে?
জানা যায়, ৬৮১ সালে চীনা রাজকুমারী ওয়েন চেং এর সঙ্গে বিয়ে হয় তিব্বতি রাজা সাংতাং গাম্বোর। রাজকুমারী বাপের বাড়ি থেকে রেশমি পোশাক, গয়না, দাসী ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এক পেটি চা। তিব্বতিরা সেই জিনিস ঘন দুধের সঙ্গে খেয়ে তো মুগ্ধ! প্রবল শীতে গা গরম তো হয়ই, মঠের শিক্ষার্থীরা রাত জেগে বৌদ্ধ শাস্ত্র পড়ার সময় আর ঘুমিয়ে পড়ে না! সেই ঘন চায়ের ক্বাথই অতীশ দীপঙ্কর খেয়েছিলেন বলে ধারণা করা যায়।
এ গল্প থেকে এমন ধারণা করা যেতেই পারে যে, বাংলা-বিহার-ওডিশায় এর আগে আর কেউ কোনো দিন চা পান করিনি। কারণ এ অঞ্চলে এই গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটির আগমন হয়নি। কথাটি সর্বাংশে সঠিক নয়।
এ কথা সত্য যে ভারতবর্ষে জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে চায়ের প্রসার হয়েছে মাত্র শ খানিক বছর আগে ইংরেজদের হাত ধরেই। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, এ অঞ্চলে চায়ের অনেক আগে এসেছে কফি। আরব আর পারস্যের বণিকেরা সেই সিন্দাবাদের গল্পের সময়কালের আগে থেকেই জাহাজে করে আসত আজকের মুম্বাই, সুরাট আর কালিকট বন্দরে। তারাই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল কফি। ১৬৩৮ সালে জার্মান পর্যটক আলবার্ট ম্যান্ডেলসলো সুরাটে এসে ইউরোপীয় বণিক এবং ভারতীয় সম্ভ্রান্তদের কফি খেতে দেখেন, দিল্লির চাঁদনি চকে তখন রীতিমতো কফিহাউস ছিল। তখন দিল্লির সিংহাসনে সম্রাট শাহজাহান এবং তাজমহল নির্মাণ তখনো শেষ হয়নি।
১৫০০ সালের পর প্রায় এক শতাব্দী দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনে একচ্ছত্র বাণিজ্য করেছে পর্তুগিজেরা। এর পরে ১৬০০ সাল থেকে ভারতবর্ষ, ইন্দোচীন আর চীনের দিকে পিল পিল করে আসতে শুরু করে ইংরেজ, ওলন্দাজ এবং এর পরে ফরাসিরা। ভারতের মসলা, সুতি এবং মসলিন আর চীনের রেশমি বস্ত্র, চীনামাটির বাসনপত্র তখন ইউরোপে চাহিদার শীর্ষে থাকা বাণিজ্য পণ্য। এর লোভে জীবনপণ করে ইউরোপীয়রা জাহাজে ভাসতে ভাসতে আমাদের বন্দরে বন্দরে হামলে পড়ল। তখনো তারা চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তেমন করে জমিয়ে বাণিজ্য শুরু করতে পারেনি। আজকের ম্যাকাওতে পর্তুগিজেরা আর হংকংয়ে ইংরেজ ও ওলন্দাজেরা চীনের বণিকদের সঙ্গে লেনদেন করত। যদিও পর্তুগিজেরা চীনা বন্দরে প্রথম বাণিজ্য শুরু করে। কিন্তু চায়ের প্রথম চালান ইউরোপে নিয়ে যায় ওলন্দাজেরা—সময়টা ১৬১০ সাল।
ইংরেজ, ফরাসি, জার্মানদের বলতে গেলে চা খাওয়া শেখায় ওলন্দাজেরা। ইংল্যান্ডে চা আসে ১৬৪৫ সালে। ১৬৫৬ সালে লন্ডনে প্রথম চায়ের নিলাম হয়। এতে বোঝা যায় তত দিনে চা একটা বাণিজ্য পণ্যের মর্যাদা পেয়ে গেছে বিলেতে। ১৬৬২ সালে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগিজ রাজকুমারী ক্যাথরিনকে বিয়ে করেন। ক্যাথরিনকে যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয় বিরাট একটা বাক্স ভরা চীন দেশের চা। ধারণা করা হয়, এই রাজকুমারীর চা-প্রীতির কারণেই ইংল্যান্ডের রাজপ্রাসাদ থেকে ধীরে ধীরে এই পানীয়ের ফ্যাশন ধনী এবং সম্ভ্রান্ত মহলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
এই বস্তু সাধারণ জনতা কিনতে বা খেতে পারত না এর চড়া দামের জন্যই শুধু নয়। চা পানের সরঞ্জাম, যেমন কেটলি, কাপ, বাহারি টেবিল, চিনি সবই তখন ছিল দুর্মূল্য। তবে সব সম্ভ্রান্তই যে ঠিকঠাক মতো চা পান শিখতে পেরেছিল, তা বলা যাবে না। সেই সময়ে ডিউক অফ মনমাউথের বিধবা স্ত্রী তাঁর স্কটিশ আত্মীয়স্বজনকে এক পাউন্ড চা পাঠালেন। তাঁরা চা পেয়ে খুব খুশি। চা পাতা ভালো মতো পানিতে জ্বাল দিয়ে, কালচে সবুজ পানি সুন্দর করে ছেঁকে ফেলে দিয়ে, সেদ্ধ পালং শাকের মতো কচকচ করে সেদ্ধ চা পাতা সবাই মিলে তৃপ্তি করে খেয়েছিলেন বলে শোনা যায়!
১৭২১ সালের মধ্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চীনে চা-বাণিজ্যের একচেটিয়া ব্যবসার সনদ পায়। তারা সিন্দুক ভরে রৌপ্য মুদ্রা নিয়ে এসে জাহাজ বোঝাই করে চা নিয়ে যেত ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের বাজারে। এইভাবে কয়েক বছর চলার পরে ইংরেজদের টনক নড়ল। বস্তা বস্তা রৌপ্য মুদ্রা যে নিয়ে যাচ্ছে তাতে তাদের তারল্য সংকট শুরু হলো বলে! কারণ ইংরেজরা এমন কিছু বানাতে পারত না বা উৎপাদন করত না যার চাহিদা ভারতবর্ষ বা চীনে আছে। তাহলে উপায়?
চতুর ইংরেজ দেখল, চীনের মানুষের আফিমের প্রতি একটা নেশা আছে। তখন বাংলায় ভালো আফিম চাষ হতো। তত দিনে বাংলাতেও ইংরেজ রাজ গেঁড়ে বসেছে। তারা বুদ্ধি করল, অতি সস্তা দরে, মেরে ধরে বাংলার চাষিদের দিয়ে আফিম উৎপাদন করিয়ে নিয়ে সেই আফিম বিক্রি করবে চীনে। তার বদলে জাহাজ বোঝাই করে নিয়ে আসবে চা। নগদ লেনদেনের কোনো দরকারই নেই। এমন মোক্ষম সমাধান পেয়ে ইংরেজের চা বাণিজ্য ফুলে ফেঁপে উঠল। কিন্তু চীনের জনগণ এমনভাবে আফিমে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে দেখে চীন সম্রাট গেলেন ক্ষেপে। তারা ইংরেজের আফিম বাণিজ্যে বাঁধ সাধল। তাতে বাঁধল যুদ্ধ—সময়টা ১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ সাল। যুদ্ধের ডামাডোলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চীনের চা বাণিজ্যে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। ওদিকে ইংরেজেদের চা পানের অভ্যাস বনেদি বাড়ির ড্রয়িংরুমের সীমানা পেরিয়ে সাধারণের হেঁশেলে গিয়ে হাজির হচ্ছে। চায়ের চাহিদাও বেড়ে গেছে বহু গুণ।
আফিম যুদ্ধের আগেই ইংরেজ বুঝে গিয়েছিল, ইউরোপে চায়ের যে পরিমাণ চাহিদা তা চীনের ছোট ছোট চা বাগানিদের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া আফিম বিক্রি করে বেশি দিন বাণিজ্য চালানো যাবে না। এদিকে ওলন্দাজেরা জাভাতে চা উৎপাদনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালু করেছে, আমেরিকা স্বাধীনতা পেয়ে তারাও চায়ের সন্ধানে প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্র পথে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে তৎপর হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় চায়ের বিকল্প একটা উৎপাদন ক্ষেত্র ইংরেজদের জন্য ফরজ হয়ে উঠল।
১৮২৩ সালে দুর্গম আসামে বদলি হলেন রবার্ট ব্রুস নামের এক স্কটিশ মেজর। তিনি দেখলেন, স্থানীয় লোকজন একধরনের গাছের পাতা চিবিয়ে খায় পানের মতো করে। তিনি ভালো করে খেয়াল করে বুঝলেন, এই গাছ একধরনের চা-গুল্ম। তখন তাঁর আনন্দ আর ধরে না! কিন্তু আসামে প্রাকৃতিক ভাবে চা গাছ হয়, বাজার ধরতে হলে দরকার বাণিজ্যিক চাষবাদ এবং প্রক্রিয়াকরণ। সে জন্য তারা চীন থেকে অভিজ্ঞ চাষি ও প্রক্রিয়াজাতকারী ভাড়া করে নিয়ে এলেন, সঙ্গে বাঙালি এবং অন্যান্য অঞ্চলের মজুরি-শ্রমিকদের শিক্ষা চলতে থাকল।
শুরুতে উদ্দেশ্য ছিল আসামে চা উৎপাদন করে তা ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়া। আসামে চা উৎপাদন পুরোদমে শুরু হওয়ার কয়েক দশকের ভেতরেই চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গেল হুহু করে। কাড়ি কাড়ি পাউন্ড কামাই করতে লাগল আসাম টি-গার্ডেন। ১৯০০ সালের শুরুতে ইংরেজ সাহেবদের হঠাৎ বোধোদয় হলো, আসামের চা সাতসমুদ্র তেরো নদীর ওপারে নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে ভালো কথা। কিন্তু কোটি কোটি মানুষের দেশ ভারতবর্ষই তো বিরাট বাজার হতে পারে চায়ের! যেই ভাবা সেই কাজ।
১৯০২ সালে ইন্ডিয়া টি অ্যাসোসিয়েশন জরিপ করে দেখল, চা পানীয় হিসেবে জনপ্রিয় করতে হলে আগে ভারতীয়দের বোঝাতে হবে এ এক দারুণ গুণের পানীয়। তার পরে তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে দেখাতে হবে কীভাবে চা বানাতে হয়, কীভাবে আয়েশ করে চা পান করতে হয়। তারা ছোট ছোট দলকে এক একজন সুপারিনটেনডেন্টের তত্ত্বাবধানে দিয়ে একটু অবস্থাসম্পন্নদের বাড়িতে বাড়িতে পাঠাতে শুরু করল। তারা প্রায় প্রতিদিন স্টোভ, কেটলি, ছাঁকনি, কাপ পিরিচ নিয়ে হাজির হতে থাকল মানুষজনের বাড়িতে। বিনি পয়সায় যখন পাওয়া যাচ্ছে তখন প্রাথমিক আপত্তি বেশি দিন টিকল না। রেল স্টেশনে চায়ের ক্যানটিন চালু হলো। এমনকি হাতে করে চা ফেরিও শুরু হলো। তার পরে ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে আসল প্রথম মহাযুদ্ধ। কলকারখানায় উৎপাদনের সঙ্গে কাজের সময় বেড়ে গেল। কারখানার ক্যানটিনে ক্যানটিনে নামমাত্র মূল্যে সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যায় বিতরণ শুরু হলো, শরীরও চাঙা করা পানীয় চা।
এর পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি চীনের চা-কে। বাংলা, বিহার, ওডিশা, উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত সবখানে চায়ের সঙ্গে বাধা পড়ে গেলাম আমরা। আর পড়ল চা উৎপাদনকারী মজুরেরা।
অবাক চা পান
চীনে রাজ কর্মচারী বা কর্মকর্তা হওয়ার জন্য আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে থেকেই কঠিন পরীক্ষা চালু ছিল। মিং রাজ বংশের শুরুর দিকে (১৩৮৫) তরুণ জু ঝি ডিং’র অফিসার হওয়ার খায়েশ। তিনি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে রওনা দিলেন। ফুজিয়ান প্রদেশের উইশান পার্বত্য অঞ্চলে এসে অসুস্থ হয়ে পথের ধরে পড়ে রইলেন জু ঝি ডিং। এক ভিক্ষু তাঁকে দেখে মন্দিরে নিয়ে গেলেন। সেখানে তাঁকে আশ্রয়ের সঙ্গে দেওয়া হলো বিশেষ এক ধরনের চা। সেই চা পান করে জু ঝি ডিং ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেলেন। সময় মতো পরীক্ষা দিয়ে শুধু উত্তীর্ণই হলেন না, সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি নিযুক্ত হলেন সম্রাটের খাস কর্মকর্তা হিসেবে।
সেই সময় চাকরির এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সবাইকে একটা করে লাল আলখাল্লা দেওয়া হতো। জু ঝি ডিং সেই আলখাল্লা গায়ে দিয়ে ঈশান পর্বতে হাজির হলেন। যে চা খেয়ে আজ তাঁর এত উন্নতি, সেই চা গাছের গায়ে সেই আলখাল্লা জড়িয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। পরে একবার সম্রাটের মা অসুস্থ হলে যখন সব কবিরাজ বৈদ্য ফেল মেরে গেলেন, তখন জু ঝি সম্রাটকে বললেন, তাঁর সন্ধানে এমন চা আছে যা পান করলে রাজমাতা নির্ঘাত সুস্থ হবেন। দ্রুত সেই চা আনা হলো রাজপ্রাসাদে। সম্রাটের মা সুস্থও হয়ে উঠলেন। এমনই ধন্বন্তরি সেই চা, এমনই তার কেরামতি! সম্রাট আদেশ দিলেন, ‘এটি যে সে চা নয়, এই চায়ের গাছে ইচ্ছে করলেই আর হাত দেওয়া যাবে না, এই চা গাছ এখন থেকে সংরক্ষিত’। সেই থেকে সেই বিশেষ চায়ের কথা সবখানে রাষ্ট্র হয়ে গেল। সবাই ধন্য ধন্য করে তার নাম রাখল ডা হং পাও চা। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘লাল আলখাল্লার চা’।
এখনো পর্বতের গায়ে এক দুর্গম অংশে মাত্র ছয়টি মাতৃ গাছ টিকে আছে শত শত বছর ধরে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৭২ সালে মাও যে দং বা মাও সেতুং এর সঙ্গে দেখা করতে গেলে চীনের প্রধান তাঁকে ২০০ গ্রাম ‘লাল আলখাল্লার চা’ উপহার দেন বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে।
২০০৫ সালে শেষ বারের মতো সেই মাতৃ গাছ থেকে মাত্র ২০ গ্রাম চা সংগ্রহ করে নিলামে তোরা হয়। দাম ওঠে ত্রিশ হাজার ডলার অর্থাৎ প্রায় ২৮ লাখ টাকা!
চীনারা আর সবার মতো চা শুধু পানীয় হিসেবে নয়, খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে। তবে তা শাক পাতার মতো করে নয়। খানিকটা ভিন্ন উপায়ে। আমাদের দেশে যেমন রাস্তাঘাট-স্টেশন-লঞ্চে গরম ডিম বিক্রি হয়, চীনেও আছে তেমন ব্যবস্থা।
ডিম-চায়ের রেসিপি
প্রথম ডিম পানিতে সেদ্ধ করে নিন। মোটামুটি ভালো সেদ্ধ হলে ডিমটি শক্ত কিছুর ওপর আস্তে আস্তে ঠুকে খোসায় চিড় ধরান। কিন্তু ছাড়িয়ে নেবেন না। খোসাওয়ালা ডিম পানিতে নিয়ে সেখানে চা, দারুচিনি, গোলমরিচ, তেজপাতা আর স্টার এনিস দিন। দিনভর জ্বাল দিয়ে শক্ত করে ফেলার পরে খোসা ছড়িয়ে মুখে দিলেই আপনি পাবেন চীনের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ডিম চায়ের স্বাদ।
তথ্যসূত্র
1.Tea War: A history of capitalism in China and India by Andrew B. Liu (Yale University Press 2020)
2. Curry: A tale of cooks and conquerors by Lizzie Cullingham (Vintage books, 2006)
3. Tea: A Global History by Helen Saberi (Reaktion books, 2010)
লেখক: প্রযুক্তিবিদ, ইনফিনিয়াম ইউকে লিমিটেড, অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৩ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ দিন আগে