আসিফ
ভারতের সাম্প্রতিকতম উৎকর্ষের নজির চন্দ্রযান-৩-এর অভিযান। ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে এই চন্দ্রযান যাত্রা শুরু করে। ৪০ দিনের অভিযান শেষে চাঁদে মহাকাশযানটি অবতরণ করেছে ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট।
জলসহ অনেক খনিজদ্রব্য ছাড়াও হিলিয়াম-৩ নামের এক বিরল বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেছে সেখানে। হিলিয়াম-৩ হচ্ছে অদাহ্য, হালকা মৌলিক পদার্থ, তবে তেজস্ক্রিয় নয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হিলিয়াম অফুরান শক্তির উৎস। এতে রয়েছে দুটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন। এই পদার্থকে প্রথম ভেঙে দেখান অস্ট্রেলিয়ার পদার্থবিদ লুইস আলভারেজ ও রবার্ট করনগ। পৃথিবীর বুকে এর খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত এটিকে একটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ হিসেবে মনে করা হতো। তবে পৃথিবীতে বিরল হলেও চাঁদের মাটিতে এটি প্রচুর পরিমাণে মজুত রয়েছে। এই অভিযানের পর বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, চাঁদে ১১ লাখ মেট্রিক টন হিলিয়াম-৩ রয়েছে, যা ১০ হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতাকে চলার শক্তি জোগাতে পারে।
এর তেজস্ক্রিয় শক্তি এত যে এটি প্রচুর পরিমাণ পরমাণু শক্তি সরবরাহ করতে পারে। হিসাবমতে, ৫ হাজার কিলোগ্রাম কয়লা পোড়ালে যে শক্তি উৎপাদন হয়, মাত্র ৪০ গ্রাম হিলিয়াম-৩ থেকে তৈরি হয় একই পরিমাণ শক্তি। এর মৌল থেকে অপ্রচলিত উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তেজস্ক্রিয়তার বিপদও পুরোপুরি এড়ানো যাবে। এ ছাড়া চাঁদে রয়েছে ল্যান্থানাইড, স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়ামের মতো বিরল ধাতু।
স্মার্টফোন বা উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই ধাতুগুলোর ব্যবহার অপরিসীম। কিন্তু এসব খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করা মোটেই সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন হবে উন্নত প্রযুক্তির রোবট। তা ছাড়া খনিজ পদার্থগুলো পৃথিবীতে নিয়ে আসার খরচ ব্যয়বহুল। তাহলে কি শুধু পরমাণু শক্তিধর পরাশক্তিগুলোই এসব সুবিধা নিতে সক্ষম হবে? অন্যরা বঞ্চিত হবে?
জীবাশ্ম জ্বালানির বাইরে, দূষণহীন এক পৃথিবীর কথা ভাবতে তো ভালোই লাগে।
কিন্তু জ্বালানিশক্তির সন্ধানে পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো শুধু নয়, ছোট-বড় সব দেশ মরিয়া হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ লাগিয়ে রেখেছে। তাই সম্মিলিত ও যৌথ সহযোগিতায় এই হিলিয়াম-৩ শক্তি মানবসভ্যতায় ব্যবহার করা সম্ভব হবে তো? সব রাষ্ট্রের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব থাকবে তো? এগুলো খুব অনিশ্চিত বিষয়।
চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারত অভিজাত ‘স্পেস ক্লাব’-এ যুক্ত হয়েছে। এর আগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মহাকাশযান চাঁদে অবতরণ করেছে। তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের অবতরণের দিক থেকে ভারতই প্রথম দেশ। সম্প্রতি চাঁদে ভারত মহাকাশযানের এ সফল অবতরণে শুধু এই উপমহাদেশই নয়, এ ঘটনা পুরো মানব প্রজাতিকে আলোড়িত করেছে। সমগ্র বিশ্বে যে অস্থিতিশীল অবস্থা চলছে, এর মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে একটা আনন্দের সংবাদ। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরাও খুব আপ্লুত। সবচেয়ে বড় কথা, এই উপমহাদেশের অধিবাসী হিসেবে ভাবতে পারছি আমরা মহাকাশ অভিযান চালাতে পারি। অন্তত আত্মবিশ্বাস আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে, নিশ্চয়ই সামনে আমরাও উদ্যোগ নেব।
দুটি কারণে এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে: প্রথমত, দক্ষিণ মেরুতে এটা প্রথম সফল অবতরণ। দ্বিতীয়ত, এটা বাস্তবায়নে অনেক কম খরচ হয়েছে। ইসরোর তথ্য অনুসারে, চন্দ্রযান-৩ অভিযানে মোট ৬১৫ কোটি ভারতীয় রুপি বা ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো খরচ হয়েছে। এমনকি চার বছর আগের চন্দ্রযান-২-এর চেয়েও এটা কম। সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, এর যা খরচ হয়েছে, তা হলিউডের অনেক বড় বাজেটের ছবির নির্মাণ খরচের চেয়েও কম। এত কম খরচে পৃথিবীতে কোনো সফল মহাকাশযান অভিযান চালানোর নজির কম রয়েছে।
বর্তমানে ইউরোপ ও রুশ মহাকাশ সংস্থার তত্ত্বাবধানে চাঁদে স্থায়ী বসবাসের ঠিকানা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোও এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেছে। বেসরকারিভাবে চাঁদ ও মহাকাশে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে অনেক কোম্পানি। মানববসতি স্থাপনের আশাবাদে ‘মুন ভিলেজ’ তৈরির পরিকল্পনাও করছে তারা এবং সেটা থ্রিডি প্রিন্টারে।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, চাঁদে মানুষের জীবনধারণের উপযোগী বাসস্থানের অবকাঠামো তৈরি করার কাজে রোবট ব্যবহার করা হবে। আমরা সাধারণ মানুষ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি, একসময় ‘চাঁদের শহর’ বা বেজ ক্যাম্প থেকে শুধু মঙ্গল নয়, মহাকাশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হবে। এখন সেটা আরও বেগবান হচ্ছে।
তবে সমস্যা হচ্ছে, চাঁদে অভিযানে পুরো মানবজাতিকে একীভূত দেখতে পাচ্ছি না; বরং বিভাজন বাড়ছে। জাতি-রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে মহাকাশের রাজনীতিতেও বিশ্বরাজনীতি ঢুকে যেতে পারে! এখনই কেউ কারও গবেষণার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিনিময় করতে চাইছে না। এটা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। চাঁদে যাওয়ার পর প্রতিটি রাষ্ট্র শুধু তার নিজস্ব দেশের পতাকা ওড়াচ্ছে। যদি এর সঙ্গে জাতিসংঘের পতাকা ওড়ানো হতো তাহলে পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব করার কথা বলা যেত।
কিন্তু কেন সেটা হচ্ছে না? এ জন্য চাঁদের প্রথম মানব পদার্পণের ঘটনা মনে করা যেতে পারে। সেই সময় জাতিসংঘের পরিবর্তে শুধু মার্কিন পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। তবুও আর্মস্ট্রংয়ের কণ্ঠ থেকে বের হয়েছিল সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রতিনিধিত্বশীল বক্তব্য, ‘এটি একজন মানুষের জন্য ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য বিশাল অগ্রযাত্রা।’
স্নায়ুযুদ্ধের সময় মহাকাশ অভিযান শুরুর পরপরই মহাকাশের নানা বস্তুর মালিকানার বিষয়টি একটি ইস্যু হয়ে ওঠে। যখন নাসা তাদের প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশযান চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তখন জাতিসংঘে বহির্জগতের মহাকাশ চুক্তি নামের একটি চুক্তিপত্র সম্পন্ন করে। ১৯৬৭ সালের ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য। সেখানে বলা হয়, পৃথিবীর বাইরের মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য যেসব বস্তু রয়েছে, সেখানে কোনো দেশ দখল বা অন্য কোনোভাবে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারবে না। ১৯৭৯ সালে চাঁদ ও মহাশূন্যের অন্যান্য বস্তুতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সমঝোতা প্রস্তাব আনে জাতিসংঘ, যেটি ‘মুন অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামে বেশি পরিচিত। সেখানে মূল বিষয় ছিল, এসব কর্মকাণ্ড হতে হবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং কোনো মহাকাশ স্টেশন বানাতে হলে আগে জাতিসংঘকে অবশ্যই জানাতে হবে কেন এবং কোথায় তারা সেটি বানাতে চায়। দুঃখজনক হচ্ছে, চাঁদে অভিযান চালানোর ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো দেশই এই চুক্তি মানছে না। ক্রমশ তা দখল ও সংঘর্ষের দিকে যাচ্ছে।
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
ভারতের সাম্প্রতিকতম উৎকর্ষের নজির চন্দ্রযান-৩-এর অভিযান। ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে এই চন্দ্রযান যাত্রা শুরু করে। ৪০ দিনের অভিযান শেষে চাঁদে মহাকাশযানটি অবতরণ করেছে ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট।
জলসহ অনেক খনিজদ্রব্য ছাড়াও হিলিয়াম-৩ নামের এক বিরল বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেছে সেখানে। হিলিয়াম-৩ হচ্ছে অদাহ্য, হালকা মৌলিক পদার্থ, তবে তেজস্ক্রিয় নয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হিলিয়াম অফুরান শক্তির উৎস। এতে রয়েছে দুটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন। এই পদার্থকে প্রথম ভেঙে দেখান অস্ট্রেলিয়ার পদার্থবিদ লুইস আলভারেজ ও রবার্ট করনগ। পৃথিবীর বুকে এর খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত এটিকে একটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ হিসেবে মনে করা হতো। তবে পৃথিবীতে বিরল হলেও চাঁদের মাটিতে এটি প্রচুর পরিমাণে মজুত রয়েছে। এই অভিযানের পর বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, চাঁদে ১১ লাখ মেট্রিক টন হিলিয়াম-৩ রয়েছে, যা ১০ হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতাকে চলার শক্তি জোগাতে পারে।
এর তেজস্ক্রিয় শক্তি এত যে এটি প্রচুর পরিমাণ পরমাণু শক্তি সরবরাহ করতে পারে। হিসাবমতে, ৫ হাজার কিলোগ্রাম কয়লা পোড়ালে যে শক্তি উৎপাদন হয়, মাত্র ৪০ গ্রাম হিলিয়াম-৩ থেকে তৈরি হয় একই পরিমাণ শক্তি। এর মৌল থেকে অপ্রচলিত উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তেজস্ক্রিয়তার বিপদও পুরোপুরি এড়ানো যাবে। এ ছাড়া চাঁদে রয়েছে ল্যান্থানাইড, স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়ামের মতো বিরল ধাতু।
স্মার্টফোন বা উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই ধাতুগুলোর ব্যবহার অপরিসীম। কিন্তু এসব খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করা মোটেই সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন হবে উন্নত প্রযুক্তির রোবট। তা ছাড়া খনিজ পদার্থগুলো পৃথিবীতে নিয়ে আসার খরচ ব্যয়বহুল। তাহলে কি শুধু পরমাণু শক্তিধর পরাশক্তিগুলোই এসব সুবিধা নিতে সক্ষম হবে? অন্যরা বঞ্চিত হবে?
জীবাশ্ম জ্বালানির বাইরে, দূষণহীন এক পৃথিবীর কথা ভাবতে তো ভালোই লাগে।
কিন্তু জ্বালানিশক্তির সন্ধানে পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো শুধু নয়, ছোট-বড় সব দেশ মরিয়া হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ লাগিয়ে রেখেছে। তাই সম্মিলিত ও যৌথ সহযোগিতায় এই হিলিয়াম-৩ শক্তি মানবসভ্যতায় ব্যবহার করা সম্ভব হবে তো? সব রাষ্ট্রের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব থাকবে তো? এগুলো খুব অনিশ্চিত বিষয়।
চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারত অভিজাত ‘স্পেস ক্লাব’-এ যুক্ত হয়েছে। এর আগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মহাকাশযান চাঁদে অবতরণ করেছে। তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের অবতরণের দিক থেকে ভারতই প্রথম দেশ। সম্প্রতি চাঁদে ভারত মহাকাশযানের এ সফল অবতরণে শুধু এই উপমহাদেশই নয়, এ ঘটনা পুরো মানব প্রজাতিকে আলোড়িত করেছে। সমগ্র বিশ্বে যে অস্থিতিশীল অবস্থা চলছে, এর মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে একটা আনন্দের সংবাদ। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরাও খুব আপ্লুত। সবচেয়ে বড় কথা, এই উপমহাদেশের অধিবাসী হিসেবে ভাবতে পারছি আমরা মহাকাশ অভিযান চালাতে পারি। অন্তত আত্মবিশ্বাস আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে, নিশ্চয়ই সামনে আমরাও উদ্যোগ নেব।
দুটি কারণে এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে: প্রথমত, দক্ষিণ মেরুতে এটা প্রথম সফল অবতরণ। দ্বিতীয়ত, এটা বাস্তবায়নে অনেক কম খরচ হয়েছে। ইসরোর তথ্য অনুসারে, চন্দ্রযান-৩ অভিযানে মোট ৬১৫ কোটি ভারতীয় রুপি বা ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো খরচ হয়েছে। এমনকি চার বছর আগের চন্দ্রযান-২-এর চেয়েও এটা কম। সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, এর যা খরচ হয়েছে, তা হলিউডের অনেক বড় বাজেটের ছবির নির্মাণ খরচের চেয়েও কম। এত কম খরচে পৃথিবীতে কোনো সফল মহাকাশযান অভিযান চালানোর নজির কম রয়েছে।
বর্তমানে ইউরোপ ও রুশ মহাকাশ সংস্থার তত্ত্বাবধানে চাঁদে স্থায়ী বসবাসের ঠিকানা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোও এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেছে। বেসরকারিভাবে চাঁদ ও মহাকাশে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে অনেক কোম্পানি। মানববসতি স্থাপনের আশাবাদে ‘মুন ভিলেজ’ তৈরির পরিকল্পনাও করছে তারা এবং সেটা থ্রিডি প্রিন্টারে।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, চাঁদে মানুষের জীবনধারণের উপযোগী বাসস্থানের অবকাঠামো তৈরি করার কাজে রোবট ব্যবহার করা হবে। আমরা সাধারণ মানুষ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি, একসময় ‘চাঁদের শহর’ বা বেজ ক্যাম্প থেকে শুধু মঙ্গল নয়, মহাকাশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হবে। এখন সেটা আরও বেগবান হচ্ছে।
তবে সমস্যা হচ্ছে, চাঁদে অভিযানে পুরো মানবজাতিকে একীভূত দেখতে পাচ্ছি না; বরং বিভাজন বাড়ছে। জাতি-রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে মহাকাশের রাজনীতিতেও বিশ্বরাজনীতি ঢুকে যেতে পারে! এখনই কেউ কারও গবেষণার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিনিময় করতে চাইছে না। এটা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। চাঁদে যাওয়ার পর প্রতিটি রাষ্ট্র শুধু তার নিজস্ব দেশের পতাকা ওড়াচ্ছে। যদি এর সঙ্গে জাতিসংঘের পতাকা ওড়ানো হতো তাহলে পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব করার কথা বলা যেত।
কিন্তু কেন সেটা হচ্ছে না? এ জন্য চাঁদের প্রথম মানব পদার্পণের ঘটনা মনে করা যেতে পারে। সেই সময় জাতিসংঘের পরিবর্তে শুধু মার্কিন পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। তবুও আর্মস্ট্রংয়ের কণ্ঠ থেকে বের হয়েছিল সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রতিনিধিত্বশীল বক্তব্য, ‘এটি একজন মানুষের জন্য ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য বিশাল অগ্রযাত্রা।’
স্নায়ুযুদ্ধের সময় মহাকাশ অভিযান শুরুর পরপরই মহাকাশের নানা বস্তুর মালিকানার বিষয়টি একটি ইস্যু হয়ে ওঠে। যখন নাসা তাদের প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশযান চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তখন জাতিসংঘে বহির্জগতের মহাকাশ চুক্তি নামের একটি চুক্তিপত্র সম্পন্ন করে। ১৯৬৭ সালের ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য। সেখানে বলা হয়, পৃথিবীর বাইরের মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য যেসব বস্তু রয়েছে, সেখানে কোনো দেশ দখল বা অন্য কোনোভাবে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারবে না। ১৯৭৯ সালে চাঁদ ও মহাশূন্যের অন্যান্য বস্তুতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সমঝোতা প্রস্তাব আনে জাতিসংঘ, যেটি ‘মুন অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামে বেশি পরিচিত। সেখানে মূল বিষয় ছিল, এসব কর্মকাণ্ড হতে হবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং কোনো মহাকাশ স্টেশন বানাতে হলে আগে জাতিসংঘকে অবশ্যই জানাতে হবে কেন এবং কোথায় তারা সেটি বানাতে চায়। দুঃখজনক হচ্ছে, চাঁদে অভিযান চালানোর ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো দেশই এই চুক্তি মানছে না। ক্রমশ তা দখল ও সংঘর্ষের দিকে যাচ্ছে।
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে