হাসান মামুন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যয় সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় গতবারের চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ ব্যয় করতে হবে। গতবার, অর্থাৎ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭০০ কোটি টাকা। বাস্তবে ব্যয় আরও বেশি হয়েছিল। এবারও ব্যয় অনুমিত অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে বলে ধরে নেওয়া ভালো। সিংহভাগ ব্যয় নাকি হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে।
এবার যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটি দ্বাদশ। তার মানে, এগারোটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তবে প্রতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যয় নিয়ে আলাপ তেমন হয়নি। এবার হবে। তার একটা কারণ হলো, সরকার অর্থসংকটে রয়েছে। টাকা ছাপিয়ে এবং অব্যাহতভাবে ঋণ করে চলতে হচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচন এসে যাওয়ায় তাতেও বিপুল ব্যয় করতে হচ্ছে। আর ইসির চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করতেই হয় সরকারকে।
পাঁচ বছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও একেবারে দ্বিগুণ ব্যয় কেন করতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অবশ্য স্বাভাবিক। সেটা হয়তো তীব্রভাবে উঠত না–নির্বাচনটি স্বাভাবিক পরিবেশে গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হলে। নিবন্ধিত দলগুলোর অধিকাংশ মনোনয়নপত্র জমা দিলেও এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ বলা যাচ্ছে না কেন, সেটা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না সুনির্দিষ্ট দাবির ভিত্তিতে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের সমঝোতার দিকে না গিয়ে সরকারপক্ষ সমমনা দলগুলোকে নিয়েই নির্বাচন সেরে ফেলার পথে এগিয়েছে। ইসিও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নেমে পড়েছে কাজে।
২০১৪ সালের মতোই একটা একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যাতে বিরোধী দল-সমর্থক বিপুলসংখ্যক ভোটারও এটা বর্জন করবেন। এমন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের জয় সুনিশ্চিত থাকে বলে তার সমর্থকেরাও কম হারে ভোট দিতে আসেন। নির্বাচন বর্জনকারীদের তৎপরতার কারণে গোলযোগের আশঙ্কায়ও অনেকে ভোটকেন্দ্র এড়ান। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দল ও জনগণের স্বাভাবিক অংশগ্রহণে নির্বাচনটি অর্থবহ না হলেও রাষ্ট্রীয় অর্থ কিন্তু ব্যয় করতেই হয়। রাষ্ট্রীয় অর্থ মানে তো জনগণের অর্থ।
জনগণের অর্থ বিপুলভাবে ব্যয় হচ্ছে, অথচ নির্বাচনটি সব দল-মতের মানুষের অবাধ অংশগ্রহণে ধন্য হচ্ছে না–এটা অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি। এটা এড়ানোই কাম্য। কিন্তু বারবারই দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে এবং আইনগত বৈধতা পেতেও তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। একতরফা বা ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে গঠিত সরকার দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছে রাজনৈতিক ও নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা ছাড়া। বছরের পর বছর বাজেট দিয়ে যাচ্ছে। তার আকারও নির্বাচনী ব্যয়ের মতোই বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
আর সেটা নির্বাহ করা হচ্ছে জনগণের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করে; দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অব্যাহতভাবে ঋণ করে। এর ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবি করা হচ্ছে বরং। তবে এ কথা ঠিক, রাজনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে না, কিংবা সে ক্ষেত্রে আমরা বরং পিছিয়ে পড়ছি।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই সব হয়ে যায়–গণতন্ত্র ও সুশাসন হয়ে যায়, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটে যায়, তা অবশ্যই নয়। তা সত্ত্বেও নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার প্রয়োজন উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্বাচন হলো গণতন্ত্রচর্চার ন্যূনতম শর্ত এবং ভোটাধিকার হলো নাগরিকের ন্যূনতম প্রাপ্তি। এটা খর্ব হলে গণতন্ত্র, সুশাসন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিকাশের দিকে এগোনোই যায় না। তখন এগিয়ে যেতে হয় বিপরীত দিকে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না বা নামকাওয়াস্তে হয়, এমন কিছু দেশ অবশ্য রয়েছে।
আমরা নিশ্চয়ই ওই সব দেশের কাতারে গিয়ে দাঁড়াতে চাই না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করুক, সেটা নিশ্চয়ই চাই না। সে জন্যই একটা ন্যূনতম মানসম্পন্ন নির্বাচন দেশের সিংহভাগ মানুষ চায়। গণতান্ত্রিক দেশগুলো, যাদের সঙ্গে আমাদের সুদীর্ঘ বহুমাত্রিক সম্পর্ক–তারাও চায় এখানে এবার একটা নির্বাচন হোক সব দল-মতের মানুষের অবাধ অংশগ্রহণে।
সেটা যে হতে যাচ্ছে না বা নির্বাচনের পরিবেশ যে ইতিমধ্যে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে, তা-ও কি অজানা? তারপরও কেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে? অতিসম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে নতুন করে ব্যক্ত করা হয়েছে এমন প্রত্যাশা। সমমনাদের নির্বাচনে এনে সরকার যতই এটাকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ দেখাতে চাক–নির্বাচনটি যে একতরফা, তা বুঝতে কারও কষ্ট হচ্ছে না।
নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে ক্ষমতাসীন দল (এমনকি গঠনতন্ত্র অমান্য করে) নিজ বিদ্রোহী প্রার্থীদের ‘স্বতন্ত্র’ বলে অনুমোদন দেবে, এমনটাও জানিয়েছে। আন্দোলনরত দলগুলো ভেঙে তাদের নির্বাচনে আনার চেষ্টাও ছিল। সেটা সফল হলেও তাতে সরকারপক্ষের গৌরব বাড়ত না। রাজনীতি তো কেবল যেনতেনভাবে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার বিষয় নয়। এতে নীতির চর্চা আর গৌরব অর্জনের ব্যাপারও রয়েছে।
যেকোনো উপায়ে নির্বাচন সেরে ফেলে পুনরায় সরকার গঠনই যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে কিন্তু এত রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়েরও প্রয়োজন নেই। সামনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। সরকারপক্ষ চাইলে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তিন শ আসনেই ‘পছন্দের প্রার্থী’ রেখে বাকি সবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিয়ে নির্বাচনটা সেরে ফেলতে পারে। তাতে ৭ জানুয়ারির ভোটাভুটিতেও যেতে হয় না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে যাঁরা কেবল সংসদ সদস্য হতে চান এবং সেটা ব্যবহার করে আরও ক্ষমতাবান হয়ে উঠতে উদ্গ্রীব, তাঁদের কেউ মনে হয় না এতে আপত্তি করবেন।
নির্বাচনও ‘অবৈধ’ হবে না। আংশিকভাবে এমনটা কিন্তু নিকট অতীতেই ঘটেছে–২০১৪ সালের নির্বাচনে। ‘আংশিকভাবে’ই বা বলি কেন! সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ তথা ১৫৩ আসনেই বিনা ভোটে তখন নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রার্থীরা। এভাবে ‘নির্বাচিত’ একজনও কি পরে পদত্যাগ করেছিলেন লজ্জিত হয়ে? তবে এবার নাকি তেমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধেই নেওয়া হয়েছে নিজ দল থেকে ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার ব্যবস্থা!
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। একতরফা নির্বাচন অনাকর্ষণীয় বলে ভোটার উপস্থিতি কম হবে, এটা ধরে নিয়েই নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। অন্তত নিজ দলের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার কিছু ‘প্রকল্পের’ কথাও শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সমমনা দলগুলোর মধ্যে কেবল জাতীয় পার্টিরই রয়েছে কিছু ভোট। তবে গত ১০ বছরে রাজনীতিতে তাদের যে ভূমিকা, তাতে মনে হয় এ দলের ভোটও কমে এসেছে। জাপার তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাও কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছিলেন দলীয় সভায়।
শেষতক তাঁরা নির্বাচনে থাকলেও সে কারণে ভোটের হার বাড়ার তেমন সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে যা করার ক্ষমতাসীন দলকেই করতে হবে। তবে ভোটের হার বাড়িয়ে দেখাতে ব্যাপকভাবে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা হলে তা গোপন করা সহজ হবে না। মানসম্মত নির্বাচন হচ্ছে না বলে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা পর্যবেক্ষকেরা আসছেন না বটে; তবে দূর থেকেও একধরনের পর্যবেক্ষণ এখন সম্ভব। দেশের সচেতন মানুষও সব লক্ষ করবে।
নির্বাচন আসলে শুরু হয়ে যায় তফসিল ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই। সংবিধানের নির্দেশনা হলো, সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। সেই অনুযায়ী ‘নির্বাচন’ কিন্তু শুরু হয়ে গেছে অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরু থেকেই। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা ওই সময় থেকেই এর পরিবেশ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। তখন থেকেই কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গেছে, এবারও একটা একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে দেশে। একতরফা নির্বাচন মানে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে সক্ষম কোনো দল এতে অংশগ্রহণ না করা। আওয়ামী লীগও যদি কোনো নির্বাচন বর্জন করে, সেটা হবে একতরফা। সেনাশাসক এরশাদের সময় একটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও বিএনপি নেয়নি। সেটাও একতরফা বলে বিবেচিত হয়েছিল এবং নির্বাচনটি রাজনৈতিক ও নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
এখন দেখা যাক, গণ্য করার মতো ভোটার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কি না। সেটা নিশ্চিত করা গেলেও বিপুলসংখ্যক ভোটার কিন্তু কেন্দ্রের আশপাশ দিয়েও যাবেন না। তাঁরাও এ দেশের নাগরিক। এদিকে দেশের অন্যতম প্রধান একটি দল মাঠছাড়া। তাদের একাংশ কারাগারে। দেশটা তাদেরও এবং নির্বাচনে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, এর একাংশ তাদের কাছ থেকেও আদায় করা হবে। এই যে অপূর্ণতার জায়গা–যেভাবে হোক, সেটা ‘অ্যাড্রেস’ করতে হবে। নইলে দেশের বাইরে থেকেও কী দুর্যোগ নেমে আসতে পারে, তার আলামত ইতিমধ্যে স্পষ্ট। বিরোধী দল এবং তার সমর্থকেরাও এর প্রভাব এড়াতে পারবেন না। আমরা তো রয়েছি একই নৌকায়!
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যয় সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় গতবারের চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ ব্যয় করতে হবে। গতবার, অর্থাৎ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭০০ কোটি টাকা। বাস্তবে ব্যয় আরও বেশি হয়েছিল। এবারও ব্যয় অনুমিত অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে বলে ধরে নেওয়া ভালো। সিংহভাগ ব্যয় নাকি হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে।
এবার যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটি দ্বাদশ। তার মানে, এগারোটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তবে প্রতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যয় নিয়ে আলাপ তেমন হয়নি। এবার হবে। তার একটা কারণ হলো, সরকার অর্থসংকটে রয়েছে। টাকা ছাপিয়ে এবং অব্যাহতভাবে ঋণ করে চলতে হচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচন এসে যাওয়ায় তাতেও বিপুল ব্যয় করতে হচ্ছে। আর ইসির চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করতেই হয় সরকারকে।
পাঁচ বছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও একেবারে দ্বিগুণ ব্যয় কেন করতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অবশ্য স্বাভাবিক। সেটা হয়তো তীব্রভাবে উঠত না–নির্বাচনটি স্বাভাবিক পরিবেশে গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হলে। নিবন্ধিত দলগুলোর অধিকাংশ মনোনয়নপত্র জমা দিলেও এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ বলা যাচ্ছে না কেন, সেটা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না সুনির্দিষ্ট দাবির ভিত্তিতে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের সমঝোতার দিকে না গিয়ে সরকারপক্ষ সমমনা দলগুলোকে নিয়েই নির্বাচন সেরে ফেলার পথে এগিয়েছে। ইসিও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নেমে পড়েছে কাজে।
২০১৪ সালের মতোই একটা একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যাতে বিরোধী দল-সমর্থক বিপুলসংখ্যক ভোটারও এটা বর্জন করবেন। এমন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের জয় সুনিশ্চিত থাকে বলে তার সমর্থকেরাও কম হারে ভোট দিতে আসেন। নির্বাচন বর্জনকারীদের তৎপরতার কারণে গোলযোগের আশঙ্কায়ও অনেকে ভোটকেন্দ্র এড়ান। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দল ও জনগণের স্বাভাবিক অংশগ্রহণে নির্বাচনটি অর্থবহ না হলেও রাষ্ট্রীয় অর্থ কিন্তু ব্যয় করতেই হয়। রাষ্ট্রীয় অর্থ মানে তো জনগণের অর্থ।
জনগণের অর্থ বিপুলভাবে ব্যয় হচ্ছে, অথচ নির্বাচনটি সব দল-মতের মানুষের অবাধ অংশগ্রহণে ধন্য হচ্ছে না–এটা অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি। এটা এড়ানোই কাম্য। কিন্তু বারবারই দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে এবং আইনগত বৈধতা পেতেও তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। একতরফা বা ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে গঠিত সরকার দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছে রাজনৈতিক ও নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা ছাড়া। বছরের পর বছর বাজেট দিয়ে যাচ্ছে। তার আকারও নির্বাচনী ব্যয়ের মতোই বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
আর সেটা নির্বাহ করা হচ্ছে জনগণের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করে; দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অব্যাহতভাবে ঋণ করে। এর ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবি করা হচ্ছে বরং। তবে এ কথা ঠিক, রাজনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে না, কিংবা সে ক্ষেত্রে আমরা বরং পিছিয়ে পড়ছি।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই সব হয়ে যায়–গণতন্ত্র ও সুশাসন হয়ে যায়, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটে যায়, তা অবশ্যই নয়। তা সত্ত্বেও নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার প্রয়োজন উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্বাচন হলো গণতন্ত্রচর্চার ন্যূনতম শর্ত এবং ভোটাধিকার হলো নাগরিকের ন্যূনতম প্রাপ্তি। এটা খর্ব হলে গণতন্ত্র, সুশাসন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিকাশের দিকে এগোনোই যায় না। তখন এগিয়ে যেতে হয় বিপরীত দিকে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না বা নামকাওয়াস্তে হয়, এমন কিছু দেশ অবশ্য রয়েছে।
আমরা নিশ্চয়ই ওই সব দেশের কাতারে গিয়ে দাঁড়াতে চাই না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করুক, সেটা নিশ্চয়ই চাই না। সে জন্যই একটা ন্যূনতম মানসম্পন্ন নির্বাচন দেশের সিংহভাগ মানুষ চায়। গণতান্ত্রিক দেশগুলো, যাদের সঙ্গে আমাদের সুদীর্ঘ বহুমাত্রিক সম্পর্ক–তারাও চায় এখানে এবার একটা নির্বাচন হোক সব দল-মতের মানুষের অবাধ অংশগ্রহণে।
সেটা যে হতে যাচ্ছে না বা নির্বাচনের পরিবেশ যে ইতিমধ্যে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে, তা-ও কি অজানা? তারপরও কেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে? অতিসম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে নতুন করে ব্যক্ত করা হয়েছে এমন প্রত্যাশা। সমমনাদের নির্বাচনে এনে সরকার যতই এটাকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ দেখাতে চাক–নির্বাচনটি যে একতরফা, তা বুঝতে কারও কষ্ট হচ্ছে না।
নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে ক্ষমতাসীন দল (এমনকি গঠনতন্ত্র অমান্য করে) নিজ বিদ্রোহী প্রার্থীদের ‘স্বতন্ত্র’ বলে অনুমোদন দেবে, এমনটাও জানিয়েছে। আন্দোলনরত দলগুলো ভেঙে তাদের নির্বাচনে আনার চেষ্টাও ছিল। সেটা সফল হলেও তাতে সরকারপক্ষের গৌরব বাড়ত না। রাজনীতি তো কেবল যেনতেনভাবে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার বিষয় নয়। এতে নীতির চর্চা আর গৌরব অর্জনের ব্যাপারও রয়েছে।
যেকোনো উপায়ে নির্বাচন সেরে ফেলে পুনরায় সরকার গঠনই যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে কিন্তু এত রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়েরও প্রয়োজন নেই। সামনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। সরকারপক্ষ চাইলে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তিন শ আসনেই ‘পছন্দের প্রার্থী’ রেখে বাকি সবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিয়ে নির্বাচনটা সেরে ফেলতে পারে। তাতে ৭ জানুয়ারির ভোটাভুটিতেও যেতে হয় না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে যাঁরা কেবল সংসদ সদস্য হতে চান এবং সেটা ব্যবহার করে আরও ক্ষমতাবান হয়ে উঠতে উদ্গ্রীব, তাঁদের কেউ মনে হয় না এতে আপত্তি করবেন।
নির্বাচনও ‘অবৈধ’ হবে না। আংশিকভাবে এমনটা কিন্তু নিকট অতীতেই ঘটেছে–২০১৪ সালের নির্বাচনে। ‘আংশিকভাবে’ই বা বলি কেন! সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ তথা ১৫৩ আসনেই বিনা ভোটে তখন নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রার্থীরা। এভাবে ‘নির্বাচিত’ একজনও কি পরে পদত্যাগ করেছিলেন লজ্জিত হয়ে? তবে এবার নাকি তেমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধেই নেওয়া হয়েছে নিজ দল থেকে ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার ব্যবস্থা!
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। একতরফা নির্বাচন অনাকর্ষণীয় বলে ভোটার উপস্থিতি কম হবে, এটা ধরে নিয়েই নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। অন্তত নিজ দলের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার কিছু ‘প্রকল্পের’ কথাও শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সমমনা দলগুলোর মধ্যে কেবল জাতীয় পার্টিরই রয়েছে কিছু ভোট। তবে গত ১০ বছরে রাজনীতিতে তাদের যে ভূমিকা, তাতে মনে হয় এ দলের ভোটও কমে এসেছে। জাপার তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাও কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছিলেন দলীয় সভায়।
শেষতক তাঁরা নির্বাচনে থাকলেও সে কারণে ভোটের হার বাড়ার তেমন সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে যা করার ক্ষমতাসীন দলকেই করতে হবে। তবে ভোটের হার বাড়িয়ে দেখাতে ব্যাপকভাবে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা হলে তা গোপন করা সহজ হবে না। মানসম্মত নির্বাচন হচ্ছে না বলে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা পর্যবেক্ষকেরা আসছেন না বটে; তবে দূর থেকেও একধরনের পর্যবেক্ষণ এখন সম্ভব। দেশের সচেতন মানুষও সব লক্ষ করবে।
নির্বাচন আসলে শুরু হয়ে যায় তফসিল ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই। সংবিধানের নির্দেশনা হলো, সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। সেই অনুযায়ী ‘নির্বাচন’ কিন্তু শুরু হয়ে গেছে অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরু থেকেই। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা ওই সময় থেকেই এর পরিবেশ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। তখন থেকেই কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গেছে, এবারও একটা একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে দেশে। একতরফা নির্বাচন মানে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে সক্ষম কোনো দল এতে অংশগ্রহণ না করা। আওয়ামী লীগও যদি কোনো নির্বাচন বর্জন করে, সেটা হবে একতরফা। সেনাশাসক এরশাদের সময় একটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও বিএনপি নেয়নি। সেটাও একতরফা বলে বিবেচিত হয়েছিল এবং নির্বাচনটি রাজনৈতিক ও নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
এখন দেখা যাক, গণ্য করার মতো ভোটার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কি না। সেটা নিশ্চিত করা গেলেও বিপুলসংখ্যক ভোটার কিন্তু কেন্দ্রের আশপাশ দিয়েও যাবেন না। তাঁরাও এ দেশের নাগরিক। এদিকে দেশের অন্যতম প্রধান একটি দল মাঠছাড়া। তাদের একাংশ কারাগারে। দেশটা তাদেরও এবং নির্বাচনে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, এর একাংশ তাদের কাছ থেকেও আদায় করা হবে। এই যে অপূর্ণতার জায়গা–যেভাবে হোক, সেটা ‘অ্যাড্রেস’ করতে হবে। নইলে দেশের বাইরে থেকেও কী দুর্যোগ নেমে আসতে পারে, তার আলামত ইতিমধ্যে স্পষ্ট। বিরোধী দল এবং তার সমর্থকেরাও এর প্রভাব এড়াতে পারবেন না। আমরা তো রয়েছি একই নৌকায়!
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে