সাজিদ মোহন
কিছু কিছু গান প্রথম দেখা প্রেমের মতো, একবার শুনলেই ভালো লেগে যায়। কিছুদিন ঢেউ তুলে বিলীন হয় সমুদ্রগর্ভে। আবার কিছু কিছু গান হৃদয়ে জায়গা করে নিতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হলেও অভিঘাত হয় অন্তর্ভেদী। গানের ভেতর যেসব ঘটনা বা অভিজ্ঞতার বর্ণনা করা হয়, ব্যক্তিগত বা সমাজ জীবনে লব্ধ সেই সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্ত গানটির পূর্ণ রস আস্বাদন করা যায় না। প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলা আর পরস্পরকে ধীরে ধীরে আত্মস্থ করে ভালোবাসার মধ্যে দুস্তর ব্যবধান।
অমর কণ্ঠশিল্পী মান্না দের বিখ্যাত গান ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ সুর দিয়ে বাঁধা হলেও আদতে এটি একটি গল্প। গল্পটি একক কোনো ব্যক্তির একক কোনো ঘটনার বর্ণনা নয়। গল্পটি বরং বহুরৈখিক, বহুমাত্রিক। গানটির প্রথম পঙ্ক্তির সঙ্গে প্রত্যেকেই নিজেকে সংযুক্ত করতে পারেন। পরবর্তী পঙ্ক্তিগুলোতে দেখা মেলে গানটির বহুমাত্রিকতা।
গিটারিস্ট ডি সুজা কবরে ঘুমিয়ে আছেন, ক্যানসারে ধুঁকছেন অমল, সুজাতার লাখপতি স্বামী। প্রতিটি পঙ্ক্তির ভিন্ন ভিন্ন জীবনের ভিন্ন ভিন্ন গল্প। ঘটনাগুলোর সঙ্গে প্রত্যেকেই কমবেশি পরিচিত। প্রতিটি পঙ্ক্তিই হৃদয়ের গভীর মর্মমূলে আঘাত করে।
ছোটবেলা থেকে গানটি শুনলেও একটি পঙ্ক্তি সঙ্গে একাত্মতা বোধ করতে লেগেছে দীর্ঘ সময়—‘কাগজের রিপোর্টার মইদুল এসে রোজ/ কী লিখেছে তাই শুধু পড়ত’গানের অন্যান্য পঙ্ক্তির তুলনায় পঙ্ক্তিটি নিতান্তই সাধারণ মনে হতে পারে বা প্রশ্ন জাগতে পারে ছাপা হওয়া রিপোর্ট মইদুল বারবার কেন পড়ত?
২০১০ সালের কথা। বেশির ভাগ জাতীয় পত্রিকার শিশুসাহিত্যের পাতা বের হতো শুক্রবারে। লেখা পাঠাতাম ৫-৬টি পত্রিকায়। শুক্রবার লেখা ছাপা হয়েছে কি না, জানতে পত্রিকাগুলো খুলে দেখা সম্ভব না হলেও একজন অগ্রজ লেখকের কল্যাণে জেনে যেতাম কার লেখা ছাপা হয়েছে কোন পত্রিকায়। ওনার বাসার পাশেই ছিল পত্রিকার স্টল। দীর্ঘদিন পত্রিকা কেনার সুবাদে সব পত্রিকা খুলে দেখতে পারতেন। কারও লেখা ছাপা হলে ফোনে মিসকল দিতেন। ওনার মিসকল মানেই কোথাও না কোথাও লেখা ছাপা হয়েছে। ফিরতি ফোনে সবাই জেনে নিত পত্রিকার নাম।
যেদিন ছোটদের পাতা বের হতো, ঘুম ভাঙত খুব সকালে। উঠেই দেখতাম মিসকল এল কি না। কল না আসা পর্যন্ত অধীর অপেক্ষা। যেদিন আসত, সে কী আনন্দ। পত্রিকার নাম জেনে দৌড়ে ছুটে যেতাম দোকানে। ছাপা হওয়া লেখাটি বারবার পড়তাম, পড়ে শোনাতাম অন্যদের। যত্ন করে রেখে দিতাম ড্রয়ারে।
আর মাসিক পত্রিকায় লেখা পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে হতো মাসের পর মাস। মাসের শুরুতে পোস্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতাম কোনো খাম এসেছে কি না।
লেখা ছাপা হয়েছে না হয়নি, জানতে এখন আর মিসকলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ই-পেপারের যুগে রাত ১২টার পরেই ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে নতুন পত্রিকার পাতা। মাসিক পত্রিকাগুলোও ফেসবুকে জানিয়ে দেয় ছাপা হয়েছে কার কার লেখা। পত্রিকা পড়ার পদ্ধতি এক যুগের ব্যবধানে আমূল পাল্টে গেলেও চিরন্তন অপেক্ষার আনন্দের অনুভূতি রয়ে গেছে ঠিক আগের মতোই।
এক যুগ আগে লেখা ছাপা হওয়ার খবরের অপেক্ষায় ঘুম ভাঙত ভোরে। আর এখন লেখা ছাপা হওয়ার খবরের অপেক্ষায় জেগে থাকতে হয় গভীর রাত পর্যন্ত। রাত জাগা সম্ভব না হলে, ঘুম ভাঙে ভোরে। ই-পেপারে ছাপা হওয়া লেখা দেখার আনন্দ ছাপা পত্রিকার আনন্দের মতোই অবর্ণনীয়, আদিম, অকৃত্রিম, চিরন্তন।
লেখা ছাপা হলে শুরু হয় ছাপা পত্রিকা সংগ্রহ করার পালা। প্রযুক্তির কল্যাণে যদিও ছাপা হওয়া লেখাটি সংরক্ষণ করা যায়, মুহূর্তেই ছড়িয়ে দেওয়া যায় অন্তর্জালে। আর কাগজের রিপোর্টার মইদুলের মতো ছাপা হওয়া লেখা বারবার পড়ে দেখার বিষয়টি তো আছেই।
বলছিলাম কফি হাউস গানের কথা। গানের দুটি পঙ্ক্তির সঙ্গে জীবনের অভিজ্ঞতার মেলবন্ধন কীভাবে অনন্য এক অনুভূতির জন্ম দেয় তার কথা। গল্প-কবিতা বা সংবাদ না লেখা কেউ যেমন মামুলি মনে হওয়া পঙ্ক্তি দুটির ভেতর লুকিয়ে থাকা অপূর্ব অনুভূতির সাক্ষাৎ লাভ করতে পারবেন না, তেমনি নাটকের অভিনেত্রী রমা রায়ের সোনালি দুঃখ অনুভব করতে হলে ভুল করে ভুল মানুষকে ভালো না বাসার বিকল্প নেই।
শুধু কফি হাউস গান কেন, যেকোনো গান, কবিতা, গল্প, চিত্রকর্ম, চলচিত্র, ভাস্কর্য তথা শিল্পের মর্ম ততক্ষণ পর্যন্ত উপলব্ধি করা যাবে না, যতক্ষণ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি করা না যায়। আর জীবনের সঙ্গে যে শিল্প ঘনিষ্ঠতা তৈরি করতে পারে না, দ্রুতই ফুরিয়ে যায় তার আবেদন।
কিছু কিছু গান প্রথম দেখা প্রেমের মতো, একবার শুনলেই ভালো লেগে যায়। কিছুদিন ঢেউ তুলে বিলীন হয় সমুদ্রগর্ভে। আবার কিছু কিছু গান হৃদয়ে জায়গা করে নিতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হলেও অভিঘাত হয় অন্তর্ভেদী। গানের ভেতর যেসব ঘটনা বা অভিজ্ঞতার বর্ণনা করা হয়, ব্যক্তিগত বা সমাজ জীবনে লব্ধ সেই সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্ত গানটির পূর্ণ রস আস্বাদন করা যায় না। প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলা আর পরস্পরকে ধীরে ধীরে আত্মস্থ করে ভালোবাসার মধ্যে দুস্তর ব্যবধান।
অমর কণ্ঠশিল্পী মান্না দের বিখ্যাত গান ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ সুর দিয়ে বাঁধা হলেও আদতে এটি একটি গল্প। গল্পটি একক কোনো ব্যক্তির একক কোনো ঘটনার বর্ণনা নয়। গল্পটি বরং বহুরৈখিক, বহুমাত্রিক। গানটির প্রথম পঙ্ক্তির সঙ্গে প্রত্যেকেই নিজেকে সংযুক্ত করতে পারেন। পরবর্তী পঙ্ক্তিগুলোতে দেখা মেলে গানটির বহুমাত্রিকতা।
গিটারিস্ট ডি সুজা কবরে ঘুমিয়ে আছেন, ক্যানসারে ধুঁকছেন অমল, সুজাতার লাখপতি স্বামী। প্রতিটি পঙ্ক্তির ভিন্ন ভিন্ন জীবনের ভিন্ন ভিন্ন গল্প। ঘটনাগুলোর সঙ্গে প্রত্যেকেই কমবেশি পরিচিত। প্রতিটি পঙ্ক্তিই হৃদয়ের গভীর মর্মমূলে আঘাত করে।
ছোটবেলা থেকে গানটি শুনলেও একটি পঙ্ক্তি সঙ্গে একাত্মতা বোধ করতে লেগেছে দীর্ঘ সময়—‘কাগজের রিপোর্টার মইদুল এসে রোজ/ কী লিখেছে তাই শুধু পড়ত’গানের অন্যান্য পঙ্ক্তির তুলনায় পঙ্ক্তিটি নিতান্তই সাধারণ মনে হতে পারে বা প্রশ্ন জাগতে পারে ছাপা হওয়া রিপোর্ট মইদুল বারবার কেন পড়ত?
২০১০ সালের কথা। বেশির ভাগ জাতীয় পত্রিকার শিশুসাহিত্যের পাতা বের হতো শুক্রবারে। লেখা পাঠাতাম ৫-৬টি পত্রিকায়। শুক্রবার লেখা ছাপা হয়েছে কি না, জানতে পত্রিকাগুলো খুলে দেখা সম্ভব না হলেও একজন অগ্রজ লেখকের কল্যাণে জেনে যেতাম কার লেখা ছাপা হয়েছে কোন পত্রিকায়। ওনার বাসার পাশেই ছিল পত্রিকার স্টল। দীর্ঘদিন পত্রিকা কেনার সুবাদে সব পত্রিকা খুলে দেখতে পারতেন। কারও লেখা ছাপা হলে ফোনে মিসকল দিতেন। ওনার মিসকল মানেই কোথাও না কোথাও লেখা ছাপা হয়েছে। ফিরতি ফোনে সবাই জেনে নিত পত্রিকার নাম।
যেদিন ছোটদের পাতা বের হতো, ঘুম ভাঙত খুব সকালে। উঠেই দেখতাম মিসকল এল কি না। কল না আসা পর্যন্ত অধীর অপেক্ষা। যেদিন আসত, সে কী আনন্দ। পত্রিকার নাম জেনে দৌড়ে ছুটে যেতাম দোকানে। ছাপা হওয়া লেখাটি বারবার পড়তাম, পড়ে শোনাতাম অন্যদের। যত্ন করে রেখে দিতাম ড্রয়ারে।
আর মাসিক পত্রিকায় লেখা পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে হতো মাসের পর মাস। মাসের শুরুতে পোস্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতাম কোনো খাম এসেছে কি না।
লেখা ছাপা হয়েছে না হয়নি, জানতে এখন আর মিসকলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ই-পেপারের যুগে রাত ১২টার পরেই ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে নতুন পত্রিকার পাতা। মাসিক পত্রিকাগুলোও ফেসবুকে জানিয়ে দেয় ছাপা হয়েছে কার কার লেখা। পত্রিকা পড়ার পদ্ধতি এক যুগের ব্যবধানে আমূল পাল্টে গেলেও চিরন্তন অপেক্ষার আনন্দের অনুভূতি রয়ে গেছে ঠিক আগের মতোই।
এক যুগ আগে লেখা ছাপা হওয়ার খবরের অপেক্ষায় ঘুম ভাঙত ভোরে। আর এখন লেখা ছাপা হওয়ার খবরের অপেক্ষায় জেগে থাকতে হয় গভীর রাত পর্যন্ত। রাত জাগা সম্ভব না হলে, ঘুম ভাঙে ভোরে। ই-পেপারে ছাপা হওয়া লেখা দেখার আনন্দ ছাপা পত্রিকার আনন্দের মতোই অবর্ণনীয়, আদিম, অকৃত্রিম, চিরন্তন।
লেখা ছাপা হলে শুরু হয় ছাপা পত্রিকা সংগ্রহ করার পালা। প্রযুক্তির কল্যাণে যদিও ছাপা হওয়া লেখাটি সংরক্ষণ করা যায়, মুহূর্তেই ছড়িয়ে দেওয়া যায় অন্তর্জালে। আর কাগজের রিপোর্টার মইদুলের মতো ছাপা হওয়া লেখা বারবার পড়ে দেখার বিষয়টি তো আছেই।
বলছিলাম কফি হাউস গানের কথা। গানের দুটি পঙ্ক্তির সঙ্গে জীবনের অভিজ্ঞতার মেলবন্ধন কীভাবে অনন্য এক অনুভূতির জন্ম দেয় তার কথা। গল্প-কবিতা বা সংবাদ না লেখা কেউ যেমন মামুলি মনে হওয়া পঙ্ক্তি দুটির ভেতর লুকিয়ে থাকা অপূর্ব অনুভূতির সাক্ষাৎ লাভ করতে পারবেন না, তেমনি নাটকের অভিনেত্রী রমা রায়ের সোনালি দুঃখ অনুভব করতে হলে ভুল করে ভুল মানুষকে ভালো না বাসার বিকল্প নেই।
শুধু কফি হাউস গান কেন, যেকোনো গান, কবিতা, গল্প, চিত্রকর্ম, চলচিত্র, ভাস্কর্য তথা শিল্পের মর্ম ততক্ষণ পর্যন্ত উপলব্ধি করা যাবে না, যতক্ষণ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি করা না যায়। আর জীবনের সঙ্গে যে শিল্প ঘনিষ্ঠতা তৈরি করতে পারে না, দ্রুতই ফুরিয়ে যায় তার আবেদন।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে