মহিউদ্দিন খান মোহন
অনেক তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা ও সন্দেহ-সংশয়ের সাগর পাড়ি দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তরি তীরে ভিড়ছে আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনোরকম বিরতি ছাড়া টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এবার সব কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে কাগজের ব্যালটে। ভোট গ্রহণকে নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করার নিমিত্তে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ-আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি।
উপকূলীয় অঞ্চলে রয়েছে কোস্ট গার্ড বাহিনী। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকার জন্য বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারও প্রস্তুত। এত সব প্রস্তুতি থেকে এটা অনুমান করা যায়, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে সারা দেশে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তাতে আজকের দিনটি কতটা শান্তিপূর্ণ থাকবে, তা নিয়ে অনেকেই উৎকণ্ঠিত।
এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ২ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যায় ৭৩১ জনের প্রার্থিতা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে ২৮৬ জন তাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ করাতে সক্ষম হন। প্রত্যাহার করেছেন ৩৪৭ জন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৮৯৬ জন। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২৬৩ এবং জাতীয় পার্টির ২৮৩ জন ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন। সমঝোতার বিনিময় হিসেবে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে ২৬টি আসনে, আর ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ছেড়েছে ৬টি আসন। এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও অভিনব ঘটনা হলো দল মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেওয়া। ফলে ১৩০টি আসনে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব আসনের বেশ কয়েকটিতে নৌকার প্রার্থীদের চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্তিশালী অবস্থানের খবর ইতিমধ্যেই জানা গেছে। গত ১৯ ডিসেম্বরের আজকের পত্রিকায় ৭ মন্ত্রী, ১০ প্রতিমন্ত্রী ও ১ উপমন্ত্রীর আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যদের অনেকেই ‘স্বতন্ত্র-ঝড়ের’ মুখে পড়েছেন; যাঁদের কারও কারও ভরাডুবির বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ কারণে কেউ কেউ মনে করছেন, দেশের সংসদীয় ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণত দল মনোনীত প্রার্থীদের বাইরে দলের কেউ প্রার্থী হলে কিংবা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করলে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। এটা যেকোনো রাজনৈতিক দলের গঠনতান্ত্রিক বিধান। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রেও একই বিধান রয়েছে। কিন্তু সে বিধানের কোনোরকম পরিবর্তন ব্যতিরেকেই দলীয় প্রার্থীর বাইরে কেন স্বদলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ অবারিত করা হয়েছে, তা আর অপ্রকাশিত নেই। বিএনপির অনুপস্থিতিতে যাতে নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানো যায়, তদ্দুশ্যেই এই অভিনব সিদ্ধান্ত। এতে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় ঐক্যে আপাত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেও আখেরে তা তেমন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন না দলটির সমর্থকেরা। তাঁদের ভাষ্য, নৌকা কিংবা ‘দলীয় স্বতন্ত্র’ যিনিই জিতুন, তিনি তো বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত হাতিয়ার। সুতরাং নৌকা, ঈগল কিংবা ট্রাক, যেটাই জিতুক, সবার মঞ্জিলে মকসুদ তো আওয়ামী লীগই। তাই এটা দুশ্চিন্তার কোনো বিষয় নয়। তবে, অভিজ্ঞজনেরা আশঙ্কা করছেন, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে স্থায়ী অনৈক্যের সূত্রপাত ঘটতে পারে।
ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে এবারের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দেশের রাজনীতির অন্যতম স্টেকহোল্ডার বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবিতে অনড় থেকে তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। শুধু তা-ই নয়, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ বলেও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তাদের সেই ঘোষণা শেষ পর্যন্ত ‘বায়বীয় আস্ফালন’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির নেতাদের ওই সব হম্বিতম্বিকে অনেকে ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’ প্রবাদের সঙ্গে তুলনা করতে চান। নির্বাচন বর্জন তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন সেই নির্বাচন প্রতিহত করা যায়। না হলে সেই বর্জন থেকে কিছুই অর্জন করা যায় না। বিএনপি যদিও এখন জনগণকে ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করছে, তবে দলীয় সমর্থক ব্যতীত সাধারণ মানুষ তাদের আহ্বানে কতটুকু সাড়া দেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদি ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেন, তাহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। সে ক্ষেত্রে এত দিনের আন্দোলন, নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হওয়া সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, বিএনপিকে ঘরে ফিরতে হবে শূন্য হাতে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ছিল সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা, এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকারের ওপর প্রচণ্ড বিদেশি চাপ ছিল। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা ছিল প্রকাশ্য এবং অনেকটা প্রভুত্বসুলভ। ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা কখনো কখনো কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে গেছে।
তারপরও সরকার তার সিদ্ধান্ত ‘সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি। আন্তর্জাতিক প্রবল চাপের মুখেও সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই দৃঢ়তা সবারই মনোযোগ কেড়েছে। তবে, এটা করতে গিয়ে সরকার বিএনপির ওপর যে দমননীতি প্রয়োগ করেছে, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। দলটির মহাসচিবসহ শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে কারারুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই মেরুতে অবস্থান করলেও সমঝোতার বিষয়ে কোনো পক্ষই ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। আওয়ামী লীগের কথাবার্তা ও আচরণে মনে হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে আসুক, তারা সেটা মনেপ্রাণে চায়নি। অন্যদিকে বিএনপির কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট ছিল, তারা এমন একটি পরিবেশে নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছে, যে নির্বাচনে বিজয় সুনিশ্চিত থাকবে। আর এই নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য তারা বিদেশি শক্তির দ্বারা চাপ সৃষ্টি করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনড় থেকেছে। যাদের ওপর ভরসা করে বিএনপি এই কঠোর অবস্থান নিয়েছিল, তারাও শেষ পর্যন্ত পাশে থাকেনি। এ প্রসঙ্গে ৩ জানুয়ারি একটি দৈনিক ‘বিদেশি কূটনীতিকেরা সরব থেকে নীরব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে লিখেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার বিদেশি শক্তিগুলো বিএনপির আন্দোলন থেকে তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে। তাদের কাছে এটা অনুমিত হয়েছে যে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে জনগণ সংযুক্ত নয়। তাই তারা এখন এ দেশের সংবিধান ও নির্বাচনী আইনকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ৩৫টি দেশের পর্যবক্ষকেরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। সুতরাং আন্তর্জাতিক চাপ ব্যবহার করে সরকারকে নির্বাচন বন্ধ করতে বাধ্য করার যে স্বপ্ন বিএনপি দেখেছিল, তা শূন্যে মিলিয়ে গেছে। এখন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো অবাধ, অহিংস ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করা। যদি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয় এবং ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ হয়, তাহলে সরকারের বিরাট বিজয় সূচিত হবে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এখন আর কোনো সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই। কিন্তু এই নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কতটা সহায়ক হবে, তা এক বিরাট প্রশ্ন। নিকট ভবিষ্যতেই এর উত্তর পাওয়া যাবে।
লেখক: মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
অনেক তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা ও সন্দেহ-সংশয়ের সাগর পাড়ি দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তরি তীরে ভিড়ছে আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনোরকম বিরতি ছাড়া টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এবার সব কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে কাগজের ব্যালটে। ভোট গ্রহণকে নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করার নিমিত্তে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ-আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি।
উপকূলীয় অঞ্চলে রয়েছে কোস্ট গার্ড বাহিনী। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকার জন্য বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারও প্রস্তুত। এত সব প্রস্তুতি থেকে এটা অনুমান করা যায়, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে সারা দেশে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তাতে আজকের দিনটি কতটা শান্তিপূর্ণ থাকবে, তা নিয়ে অনেকেই উৎকণ্ঠিত।
এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ২ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যায় ৭৩১ জনের প্রার্থিতা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে ২৮৬ জন তাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ করাতে সক্ষম হন। প্রত্যাহার করেছেন ৩৪৭ জন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৮৯৬ জন। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২৬৩ এবং জাতীয় পার্টির ২৮৩ জন ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন। সমঝোতার বিনিময় হিসেবে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে ২৬টি আসনে, আর ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ছেড়েছে ৬টি আসন। এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও অভিনব ঘটনা হলো দল মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেওয়া। ফলে ১৩০টি আসনে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব আসনের বেশ কয়েকটিতে নৌকার প্রার্থীদের চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্তিশালী অবস্থানের খবর ইতিমধ্যেই জানা গেছে। গত ১৯ ডিসেম্বরের আজকের পত্রিকায় ৭ মন্ত্রী, ১০ প্রতিমন্ত্রী ও ১ উপমন্ত্রীর আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যদের অনেকেই ‘স্বতন্ত্র-ঝড়ের’ মুখে পড়েছেন; যাঁদের কারও কারও ভরাডুবির বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ কারণে কেউ কেউ মনে করছেন, দেশের সংসদীয় ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণত দল মনোনীত প্রার্থীদের বাইরে দলের কেউ প্রার্থী হলে কিংবা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করলে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। এটা যেকোনো রাজনৈতিক দলের গঠনতান্ত্রিক বিধান। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রেও একই বিধান রয়েছে। কিন্তু সে বিধানের কোনোরকম পরিবর্তন ব্যতিরেকেই দলীয় প্রার্থীর বাইরে কেন স্বদলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ অবারিত করা হয়েছে, তা আর অপ্রকাশিত নেই। বিএনপির অনুপস্থিতিতে যাতে নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানো যায়, তদ্দুশ্যেই এই অভিনব সিদ্ধান্ত। এতে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় ঐক্যে আপাত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেও আখেরে তা তেমন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন না দলটির সমর্থকেরা। তাঁদের ভাষ্য, নৌকা কিংবা ‘দলীয় স্বতন্ত্র’ যিনিই জিতুন, তিনি তো বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত হাতিয়ার। সুতরাং নৌকা, ঈগল কিংবা ট্রাক, যেটাই জিতুক, সবার মঞ্জিলে মকসুদ তো আওয়ামী লীগই। তাই এটা দুশ্চিন্তার কোনো বিষয় নয়। তবে, অভিজ্ঞজনেরা আশঙ্কা করছেন, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে স্থায়ী অনৈক্যের সূত্রপাত ঘটতে পারে।
ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে এবারের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দেশের রাজনীতির অন্যতম স্টেকহোল্ডার বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবিতে অনড় থেকে তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। শুধু তা-ই নয়, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ বলেও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তাদের সেই ঘোষণা শেষ পর্যন্ত ‘বায়বীয় আস্ফালন’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির নেতাদের ওই সব হম্বিতম্বিকে অনেকে ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’ প্রবাদের সঙ্গে তুলনা করতে চান। নির্বাচন বর্জন তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন সেই নির্বাচন প্রতিহত করা যায়। না হলে সেই বর্জন থেকে কিছুই অর্জন করা যায় না। বিএনপি যদিও এখন জনগণকে ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করছে, তবে দলীয় সমর্থক ব্যতীত সাধারণ মানুষ তাদের আহ্বানে কতটুকু সাড়া দেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদি ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেন, তাহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। সে ক্ষেত্রে এত দিনের আন্দোলন, নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হওয়া সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, বিএনপিকে ঘরে ফিরতে হবে শূন্য হাতে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ছিল সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা, এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকারের ওপর প্রচণ্ড বিদেশি চাপ ছিল। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা ছিল প্রকাশ্য এবং অনেকটা প্রভুত্বসুলভ। ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা কখনো কখনো কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে গেছে।
তারপরও সরকার তার সিদ্ধান্ত ‘সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি। আন্তর্জাতিক প্রবল চাপের মুখেও সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই দৃঢ়তা সবারই মনোযোগ কেড়েছে। তবে, এটা করতে গিয়ে সরকার বিএনপির ওপর যে দমননীতি প্রয়োগ করেছে, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। দলটির মহাসচিবসহ শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে কারারুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই মেরুতে অবস্থান করলেও সমঝোতার বিষয়ে কোনো পক্ষই ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। আওয়ামী লীগের কথাবার্তা ও আচরণে মনে হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে আসুক, তারা সেটা মনেপ্রাণে চায়নি। অন্যদিকে বিএনপির কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট ছিল, তারা এমন একটি পরিবেশে নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছে, যে নির্বাচনে বিজয় সুনিশ্চিত থাকবে। আর এই নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য তারা বিদেশি শক্তির দ্বারা চাপ সৃষ্টি করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনড় থেকেছে। যাদের ওপর ভরসা করে বিএনপি এই কঠোর অবস্থান নিয়েছিল, তারাও শেষ পর্যন্ত পাশে থাকেনি। এ প্রসঙ্গে ৩ জানুয়ারি একটি দৈনিক ‘বিদেশি কূটনীতিকেরা সরব থেকে নীরব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে লিখেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার বিদেশি শক্তিগুলো বিএনপির আন্দোলন থেকে তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে। তাদের কাছে এটা অনুমিত হয়েছে যে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে জনগণ সংযুক্ত নয়। তাই তারা এখন এ দেশের সংবিধান ও নির্বাচনী আইনকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ৩৫টি দেশের পর্যবক্ষকেরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। সুতরাং আন্তর্জাতিক চাপ ব্যবহার করে সরকারকে নির্বাচন বন্ধ করতে বাধ্য করার যে স্বপ্ন বিএনপি দেখেছিল, তা শূন্যে মিলিয়ে গেছে। এখন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো অবাধ, অহিংস ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করা। যদি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয় এবং ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ হয়, তাহলে সরকারের বিরাট বিজয় সূচিত হবে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এখন আর কোনো সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই। কিন্তু এই নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কতটা সহায়ক হবে, তা এক বিরাট প্রশ্ন। নিকট ভবিষ্যতেই এর উত্তর পাওয়া যাবে।
লেখক: মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে