উৎসব আরও রাঙিয়ে দিল সৌদি সমর্থকেরা

ফারুক মেহেদী, কাতার থেকে
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২২, ১০: ২৫

এই প্রথম অঘটন। এই প্রথম বড় দলের হার। আর এতেই যেন জমে উঠেছে বিশ্বকাপ উৎসব। ফুটবল যে চরম অনিশ্চয়তার খেলা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এ অনিশ্চয়তা এই বিশ্ব প্রতিযোগিতার আকর্ষণ বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারে মেসির আর্জেন্টিনাকে সৌদি আরব ২-১ গোলে হারানোর পর উল্লাসে ফেটে পড়ে কাতারের স্থানীয় সৌদি সমর্থকেরা।

খেলার শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে আনন্দ উল্লাস। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনার অপ্রত্যাশিত পরাজয়ে এই আনন্দের জোয়ারও ছিল চোখে পড়ার মতো। এই আনন্দে সৌদি সমর্থকদের পাশাপাশি আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ শিবিরও শামিল হয়েছিল। তবে আনন্দ-বেদনার এই বিকেলে সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, সৌদি আরব আসলেই ভালো খেলেছে। খেলার পর দোহার মল অব কাতারসহ বিভিন্ন স্থানে দর্শকেরা আজকের পত্রিকার কাছে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এমনই মন্তব্য করেন। 

আর্জেন্টিনা-সৌদি আরব ম্যাচকে ঘিরে সকাল থেকেই কাতারের পথে পথে, শপিং মলে দর্শকদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় কাতারের সবচেয়ে বিলাসবহুল শহর লুসাইল সিটির লুসাইল স্টেডিয়ামে। টিকিট কেটে খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৮০ হাজার দর্শক। কিন্তু মাঠের বাইরে ছিলেন দুই দলেরই হাজার হাজার সমর্থক। বলা বাহুল্য, সৌদি সমর্থকের সংখ্যাই বেশি। তারা বিভিন্ন স্থান ও শপিং মলে স্থাপিত জায়ান্ট স্ক্রিনে দল বেঁধে খেলা দেখতে এসেছিলেন।

কাতারের বিখ্যাত শপিং মল মল অব কাতারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিশাল লবিতে স্থাপিত চারপাশ থেকে দেখা যায় এমন জায়ান্ট স্ক্রিন ঘিরে রয়েছে বিপুলসংখ্যক দর্শক। বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার দর্শক রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে খেতেই খেলা দেখে। প্রথমে আর্জেন্টিনা এক গোলে এগিয়ে থাকার পর আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা খোশ মেজাজে থাকলেও একপর্যায়ে সৌদি আরব গোল দিয়ে খেলায় সমতা আনার পর খেলার নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই চলে যায় সৌদির খেলোয়াড়দের দখলে। পরে আবারও সৌদি আরব গোল দিয়ে ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরই সৌদি শিবিরে আনন্দের মাত্রা বেড়ে যায়। তাঁরা শেষ বাঁশির অপেক্ষায় দম ধরে ছিলেন। খেলা শেষ হওয়ার পরই চারদিকে আনন্দ আর উল্লাসের বন্যা বয়ে যায়। 

বাংলাদেশ থেকে খেলা দেখতে এসেছেন মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাস। তিনি বলেন, ‘পুরো খেলায় আর্জেন্টিনার যথাযথ পরিকল্পনার ঘাটতি দেখেছি। আর তারকা খেলোয়াড় মেসির ওপর বাড়তি চাপ ছিল। সে তার স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারেনি। অপরদিকে সৌদি আরবও দৃঢ়তার সঙ্গে ভালো খেলাটা খেলতে পেরেছে। তারা বড় দলের সঙ্গে টিম হিসেবে সবাই চাপমুক্ত থেকে খেলতে পেরেছে।’ 

আর্জেন্টিনার জার্সি পরে এসেছিলেন কাতারপ্রবাসী বাংলাদেশি আমিনুল ইসলাম। তাঁর কথা, ‘আশা করেছিলাম আর্জেন্টিনা জিতবে। তবে এভাবে হতাশ করে হেরে যাবে ভাবতে পারিনি।’ আরেক আর্জেন্টাইন সমর্থকের মন্তব্য, ‘ভেবেছিলাম সৌদিকে ৫ গোল দেবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২ গোল খেয়ে সৌদির সাথে হারা কোনোভাবেই মানতে পারছি না।’ 

মল অব কাতারের একটি আমেরিকান রেস্টুরেন্টের ওয়েটার সৌদি আরবের প্রতিটি গোলের পরই চিৎকার করে উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন। পরনে ছিল ব্রাজিলের জার্সি। বলেই ফেললেন, আর্জেন্টিনার হারে তিনি অনেক খুশি। 

মল অব কাতারের বাইরেও বিভিন্ন স্থানে সৌদির সমর্থকদের আনন্দ-উল্লাসের ছবিটা ছিল চোখে পড়ার মতো। সৌদি বাসিন্দারা দেশের পতাকা নিয়ে নাচ-গানে মেতে ওঠেন। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার দর্শকেরা নিজেদের জার্সি খুলে হতাশ হয়ে নীরবে বাসার পথ ধরেন। 

উৎসবের নগরী দোহার সর্বত্র এখন খেলা ছাড়া আর তেমন কিছু চোখে পড়ে না। প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষই খেলা আর খেলাকেন্দ্রিক আড্ডা আর গল্পে মশগুল। বিদেশিদের ভিড়ে দোহার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা এখন সবচেয়ে বেশি জমজমাট। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত