বান্দরবান-রুমা সড়কের পাইক্ষ্যংঝিরি এলাকায় বেইলি সেতু ভেঙে একটি চালবোঝাই ট্রাক ঝিরিতে পড়ে গেছে। এতে ঘটনাস্থলেই চালক মো. আবদুল গফুর (৩৫) নিহত হন। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় বান্দরবান-রুমা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আবদুল গফুরের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় এলাকায়।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান বুধবার বিকেলে আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বান্দরবান-রুমা সড়ক হলেও দুর্ঘটনা ঘটেছে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের পাইক্ষ্যংঝিরি এলাকায়। ট্রাক দুর্ঘটনার পর চালক মো. আবদুল গফুর ঘটনাস্থলেই নিহত হন। খবর পেয়ে রোয়াংছড়ি থানা-পুলিশ দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান থেকে চালবোঝাই একটি ট্রাক রুমা যাওয়ার পথে বুধবার বেলা দেড়টার দিকে দুর্ঘটনায় পড়ে। ট্রাকটি পাইক্ষ্যংঝিরি খালের ওপর থাকা বেইলি সেতুতে উঠলে সেটি ভেঙে যায়। এতে ট্রাকটি নিচের ঝিরিতে পড়ে যায়। ফলে বান্দরবানের সঙ্গে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

রোয়াংছড়ি থানার ওসি মো. আবদুল মান্নান জানান, ট্রাকটি দুর্ঘটনায় পড়লে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেন। তবে দুর্ঘটনাস্থল কাছে হওয়ায় রুমা থানা-পুলিশ গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। এ সময় ট্রাকের সহকারীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আর চালক আবদুল গফুরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 
বান্দরবানের রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন শিবলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, একটি চালবোঝাই ট্রাক পাইক্ষ্যংঝিরি বেইলি সেতু পার হওয়ার সময় সেটি ভেঙে যায় এবং ট্রাকটি নিচে পড়ে গেছে। ট্রাক উদ্ধার ও সেতু সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের জন্য কাজ চলছে।

বান্দরবান সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়েছেন। সড়কটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের (ইসিবি) রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকায় সড়ক বিভাগ সেনাবাহিনীর ইসিবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবহিত করেছে। ইসিবি সেতু ঠিক করে যানবাহন চলাচলে কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, বান্দরবানের অভ্যন্তরীণ সড়কের অধিকাংশ সেতুই ইস্পাত (স্টিল) নির্মিত বেইলি সেতু। সেতুগুলো দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে সড়ক বিভাগ ইতিমধ্যে বেইলি সেতুগুলোর দুই পাশে ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ৫ টনের বেশি পণ্য নিয়ে যানবাহন পারাপার নিষেধ’ বিজ্ঞপ্তি লাগিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো বেইলি সেতু ভেঙে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর রাতে বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের হানসামা পাড়া এলাকায় নোয়াপতং খালের ওপর বেইলি সেতু দিয়ে বালু বোঝাই ট্রাক পার হওয়ার সময় সেতুর তিনটি পাটাতন ভেঙে যায়। এতে করে বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় ১৮ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার পর পরের দিন ১০ ডিসেম্বর দুপুর দুইটার দিকে ওই বেইলি সেতু মেরামত করার পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়। বান্দরবানের আরও অনেক বেইলি সেতু জরাজীর্ণ হয়ে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু ভেঙে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।