নতুন চরে জাগছে সন্দ্বীপবাসীর স্বপ্ন

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ২০
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ৪২

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বহুমুখী প্রভাবে দেশে বেড়েছে নদীভাঙন। পাশাপাশি ভূমিধস, নদীর নাব্যতা হ্রাস, পলি জমে চর জাগা, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ নেতিবাচক চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে দেশে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন স্বপ্ন। কারণ, গত কয়েক বছরে সেখানে একের পর এক চর জেগে উঠছে।

ইতিমধ্যে বিশাল জলরাশির বুক চিরে সন্দ্বীপ উপজেলায় ৫টির বেশি চর জেগেছে। এতে করে দ্বীপ উপজেলার আয়তনে নতুন করে যোগ হয়েছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর ভূমি। এসব জমি জেগে ওঠার পরই ঘাসে ভরে গেছে। সেখানে চরছে গরু-মহিষ, ভেড়াসহ গবাদিপশু। এতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে মানুষ। এতে ভাঙনকবলিত দ্বীপটির বাসিন্দাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।

সন্দ্বীপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পশ্চিমের চর, কালাপানিয়া চর, সারিকাত ইউনিয়নের দিকে একটি, বাউরিয়া ইউনিয়নের দিকে একটি ও দীর্ঘা পাড় ইউনিয়নে আরেকটি চর জেগেছে। ২ হাজার হেক্টর ভূমি উপজেলায় নতুন করে যোগ হয়েছে।

এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, নতুনভাবে গড়ে ওঠা চারণভূমি লবণাক্ত। ফলে সেখানে কীভাবে ফসল ফলানো যায়, সে জন্য মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এমনকি ব্রি ধান-৮৯ নতুন জমিতে ভালো ফলন দিয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, উপজেলায় ইতিমধ্যে ৪০টি ভেড়ার খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে কারও ৫০ আর কারও ১০০ ভেড়া রয়েছে। একইভাবে গরু, মহিষেরও খামার নতুনভাবে গড়ে উঠছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গবাদিপশু পালন বাড়ছে। কারণ নতুন চারণভূমিতে মিলছে পশু খাবার।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভাঙনের কবলে কিংবা হুমকির মুখে যাঁরা অন্যত্র চলে গেছেন তাঁরাও আবার ফিরে আসছেন।

ভেড়ার খামার করে সফল হয়েছেন সন্দ্বীপ পৌরসভার মেয়র মোক্তাদের মাওলা সেলিম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, যদিও আগে থেকে সন্দ্বীপে ভেড়ার খামার ছিল। তবে চারণভূমি বাড়ায় নতুন করে অনেকে এ পেশায় আসছেন। এ পেশায় লাভবানও হচ্ছেন।

সারিকাতের বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ‘১৯৮০ সালের দিকে আমাদের মহিষের খামার ছিল। মাঝে ভাঙনের কবলে পড়ে এ পেশা থেকে সরে আসি। দুই বছর আগে একটা মহিষ কিনি। এখন চারটি মহিষ আমার।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মো. আলী আজম বলেন, ‘কর্মিসংকট থাকলেও খামারিদের পশু পালনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’

নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশের (এনসিসিবি) ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) ড. মুহাম্মদ ফররুখ রহমান বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব হালনাগাদ করা প্রয়োজন। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে নতুন চরে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত