দুসান ভ্লাহোভিচ (সার্বিয়া)
ভ্লাহোভিচকে বলা হচ্ছে তার বয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে ‘আন্ডাররেটেড’। আগামী জানুয়ারিতে ২৩-এ পা দেবেন। একই সঙ্গে বিশ্বকাপ জেতা বড় কোনো দেশের হয়েও খেলেন না, এই দুই কারণেই তাঁর তারকাখ্যাতি কম বলে দাবি তাঁর বর্তমান ও সাবেক ক্লাবের ডিরেক্টর-কোচদের। ইতালিয়ান লিগে ৯৮ ম্যাচে ইতিমধ্যে যাঁর ৪৪ গোল হয়ে গেছে, জুভেন্টাসের মতো ক্লাব তাঁকে ৭০ মিলিয়ন ইউরোতে কিনে নিয়েছে, সে তো আর এমনি এমনি নয়! ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বকাপে সার্বিয়া যদি কোনো অঘটন ঘটায়, সেটার নেতৃত্ব ভ্লাহোভিচই দেবেন।

গাভি (স্পেন)
গত মাসেই অনূর্ধ্ব-২১ বছর বয়সী তারকাদের মধ্যে সেরা হওয়ার পুরস্কার জিতেছেন গাভি। বার্সেলোনার হয়ে দারুণ সময় কাটানো এই স্প্যানিশ তারকা ইতিমধ্যে জাতীয় দলে বড় বড় নামকে বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ২০২০ ইউরোর ‘ব্রেক আউট’ তারকা পেদ্রির সঙ্গে জুটি বেঁধে বার্সেলোনার মূল একাদশেও নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন। জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেব অভিষেক ও গোলের রেকর্ডও তাঁর দখলে।

তাকাফুসো কুবো (জাপান)
বার্সেলোনার একাডেমি থেকে উঠে এসে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো এই জাপানি তারকাকে বলা হয় ‘জাপানিজ মেসি’। ১৮ বছর বয়সেই যিনি বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবে নিজের নাম লেখাতে পারেন, তাঁর সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা না কারও। দুই স্প্যানিশ জায়ান্টের মূল দলের হয়ে মাঠে নামতে না পারলেও এখন ১০০-এর বেশি লিগ ম্যাচ তাঁর নামের সঙ্গে যোগ হয়েছে ধারে মায়োর্কা, ভিয়ারিয়াল ও গেতাফের হয়ে। বিশ্বকাপ খেলতে এসে বিশ্বের কাছে নিজেকে চেনানোর এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন, তা হতে পারে না। 

ফিল ফোডেন (ইল্যান্ড)
২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন ফোডেন। তখনই জানিয়েছিলেন, সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য নয়, লম্বা সময় রাজত্ব করতেই এসেছেন ফুটবল মাঠে। ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার দলে ফোডেন এখন নিয়মিত সদস্য। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ড থেকে উইঙ্গার, এমনকি স্ট্রাইকার পজিশনেও খেলতে পারেন এই তরুণ খেলোয়াড়। ২২ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যে যে কি না শীর্ষ দামি খেলোয়াড়ও। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে নিজের জাদু দেখানোর অপেক্ষায় ফোডেন।

জামাল মুসিয়ালা (জার্মানি)
জন্ম জার্মানিতে, নাইজেরিয়ান বাবা আর জার্মান মায়ের সংসারে। সাত বছর পর্যন্ত থেকেছেন ইংল্যান্ডে। ইংলিশদের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৫ থেকে ২১ পর্যন্ত সব বয়সভিত্তিক দলেই খেলেছেন জামাল। খেলেছেন জার্মান যুব দলেও। মূল দল হিসেবে বেছে নিয়েছেন জার্মানিকেই। বায়ার্ন মিউনিখ একাডেমি থেকে এখন মূল দলের সেরা একাদশের খেলোয়াড়। চলতি মৌসুমে বায়ার্নের হয়ে তার ফর্ম এত চমৎকার, যেকোনো সেরা মিডফিল্ডারের জন্যই এটা দারুণ কিছু। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, গতি আর চমকে দেওয়ার সঙ্গে সেরা ফর্ম—সব মিলিয়ে জার্মানদের হয়ে যেন একটা বারুদই অপেক্ষা করছে বিশ্বকাপের। 

মোহামেদ কুদুস (ঘানা)
২২ বছর বয়সী ঘানাইয়ান এই মিডফিল্ডার এখনো ততটা আলোচিত নন। নিজের দেশে  পেশাদার লিগ খেলে জায়গা করে নিয়েছে ডাচ ক্লাব আয়াক্সের মূল দলে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার আগে কোচ টেন হাগের প্রথম পছন্দের একজন ছিলেন কুদুস। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেও ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলতেও স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। জাতীয় দলের হয়ে ১৮ ম্যাচে ৫টি গোলও আছে তাঁর। বোঝাই যাচ্ছে, নিজের ভিতটা গড়ে তুলেছেন তিনি। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে নিজেকে চেনানোর এই সুযোগ নিশ্চয়ই হাতছাড়া করবেন না তিনি।

এনজো ফার্নান্দেজ (আর্জেন্টিনা)
কোচ লিওনেল স্কালোনির দলে জায়গা পেতে তাঁর একটু সময় লেগেছে। কিন্তু নিজের জায়গা ঠিকই করে নিয়েছেন ২২ বছর বয়সী এই মাঝমাঠের খেলোয়াড়। আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব রিভার প্লেটের হয়ে খেলছেন ৫ বছর বয়স থেকে। একাডেমি থেকে মূল দল ঘুরে এখন ইউরোপে। পর্তুগালের ক্লাব বেনফিকার চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলো নিশ্চিতে এই তরুণ তুর্কির যে দারুণ ভূমিকা, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিতে ও নিজেদের খেলোয়াড়দের কাছে বল বাড়িয়ে দেওয়ায় যে দারুণ দক্ষ।

জুড বেলিংহাম (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ডে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। কিন্তু বর্তমান জার্মান ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ডও পড়েছেন বেলিংহাম। দেড় বছর আগে যখন জার্মানিতে যান তখন কেউ কেউ সন্দেহের চোখেও তাকিয়েছিল। এখন সবার মুখ একদমই বন্ধ। চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের পরিসংখ্যানই চোখ কপালে তোলার মতো। এ বছর চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে ৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ৪ গোল। ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠ যে মাতাবেন, তা কী আর বলতে!