অন্য দশজনের মতো স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না জাহাঙ্গীর আলম। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে হয়েছে তাঁকে। দারিদ্র্যের কারণে মাধ্যমিকের গণ্ডিও পার হতে পারেননি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বছর দশেক আগে চট্টগ্রামে আসেন ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। নুরুল আমিন নামের এক প্রতিবেশীর দোকানের হিসাব দেখাশোনা করতে করতে ব্যবসায় হাতেখড়ি হয় বর্তমানে ৩৭ বছর বয়সী জাহাঙ্গীরের।

নগরীর চকবাজার এলাকার দেবপাহাড় বস্তির বাসিন্দা তিনি। নিজের জমানো কিছু টাকা আর সেই প্রতিবেশীর সহযোগিতায় কেনেন রিকশাসদৃশ তিন চাকার বাহন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হাতেচালিত এই বাহন নিয়ে ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করেন তিনি। তবে জামালখান ওয়ার্ডের ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনেই বেশি দেখা যায় তাঁকে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তা রাহা কামাল বলেন, ‘আমার বাসা পাশেই হওয়ায় প্রতিদিন অফিসে আসা-যাওয়ার পথে আমি জাহাঙ্গীরকে লক্ষ করি। অনেকের মতো প্রতিবন্ধিতাকে পুঁজি করে তিনি ভিক্ষা করে বেড়ান না। মাঝে মাঝে তাঁর সঙ্গে কথা বলি। কিছু কেনাকাটাও করি। নিজে কিছু করার অদম্য ইচ্ছে শক্তি রয়েছে তাঁর ভেতরে।’

ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইষ্মিতা সাহা বলেন, ‘গাড়িতে ওঠার জন্য এখানে দাঁড়াই। প্রায়ই জাহাঙ্গীর আঙ্কেলের কাছ থেকে চকলেট-চিপস কিনি।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শারীরিকভাবে আমার অন্য কিছু করার সামর্থ্য নেই। ধার-দেনা করে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে এই গাড়িটি তৈরি করেছি। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। স্কুল খোলা থাকলে আরও বেশি বিক্রি হয়।’ সকলের দোয়া ও সহযোগিতায় দুই সন্তান ও পরিবার নিয়ে বেশ ভালো আছেন বলেও জানান তিনি। কথাগুলো বলার সময় তাঁর চোখে-মুখে ছিল সৎভাবে উপার্জনের তৃপ্তি।