ঠাকুরগাঁওয়ে নীলগাইয়ের দেখা

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ০৭
Thumbnail image

আট দশক আগেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে প্রাণীটিকে। তবে আবার ফেরার আভাস দিচ্ছে সে। গত তিন বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে বিরল প্রজাতির চারটি নীলগাই দেখা গেছে। এর মধ্যে অবশ্য তিনটিরই মৃত্যু হয়েছে। একটি আছে দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায়। প্রাণীগুলো প্রতিবেশী ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

নীলগাইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম Boselaphus Tragocamelus। এক শতাব্দী আগেও বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় নীলগাই দেখা যেত। বাংলাদেশে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট ও নীলফামারীর মাঠেঘাটে বিচরণ ছিল এগুলোর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন উজাড় ও শিকারের কারণে এই প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে ১৯৪০ সালে বন্য প্রাণীটিকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। স্ত্রী নীলগাই দুই বছর বয়সের মধ্যে সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করলেও পুরুষ নীলগাইয়ের সময় লাগে তিন বছর। তবে প্রজননক্রিয়ার জন্য এরা চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে। প্রাণীটির গড় আয়ু ২১ থেকে ২২ বছরের মতো হয়।

জেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার যদুয়ার গ্রামের পাশে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বয়ে যাওয়া কুলিক নদের ধারে একটি নীলগাই দেখতে পান স্থানীয় জেলেরা। প্রাণীটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মকর্তারা দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নেন। সেখানে চার দিন থাকার পর একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করে প্রাণীটি। ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ উদ্যানের বেড়ার সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লেগে স্ত্রী নীলগাইটি মারা যায়। এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সীমান্তবর্তী এলাকার নাগর নদীর তীরে একটি কালো রঙের পুরুষ নীলগাই ধরা পড়ে স্থানীয়দের হাতে। বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ প্রাণীটিকে রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নেয়। গত জুলাইয়ে রাণীশংকৈলের ধর্মগড় সীমান্ত এলাকায় একটি ধূসর রঙের পুরুষ নীলগাই ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় প্রাণীটি। সম্প্রতি হরিপুর উপজেলার মিনাপুর গ্রামে ধরা পড়ে একটি পুরুষ নীলগাই। তবে ভারত সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় কাঁটাতারের খোঁচায় প্রাণীটির শরীর মারাত্মক জখম হয়। বিজিবি সদস্যরা প্রাণীটিকে নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নীলগাইটির মৃত্যু হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নীলগাই হরিণের মতো নিরীহ। আমাদের দেশে জনসাধারণের জন্য প্রাণীটি লালনপালনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় এর প্রজনন ও বংশবিস্তারের উদ্যোগ নেয়নি প্রাণিসম্পদ বিভাগ।’

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাজেদ জাহাঙ্গীর বলেন, নীলগাই একটি তৃণভোজী প্রাণী। প্রাণীটি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়তে শুরু করেছে। এদিকে ফসল রক্ষার্থে সম্প্রতি ভারতের অধিকাংশ এলাকায় নীলগাই হত্যা ও শিকার করা হচ্ছে। যার কারণে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এগুলো বাংলাদেশে চলে আসছে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দেশ থেকে নীলগাই বিলুপ্ত, তাই এটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত