দুদক আতঙ্কে আ.লীগ নেতারা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ৪৮
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ৪২

হাজি মো. রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি।

রবিউল ইসলাম কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে রবিউল ইসলামকে নোটিশ দেওয়া হয়। গত ২১ এপ্রিল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে হাজির হয়ে কাগজপত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে কিছুদিন সময় চান। পরে দুদক তা মঞ্জুর করে এক সপ্তাহের সময় দেয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ২২টি অভিযোগের বিষয়ে তথ্য দিয়ে বলা হয়, তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নেওয়ার পরবর্তী তিন বছরে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ৭ এপ্রিল অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ এপ্রিল দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল চিঠি দেন রবিউল ইসলামকে এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে ২১ এপ্রিল কুষ্টিয়া কার্যালয়ে জির হতে বলেন।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, নোটিশে রবিউল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্টের ফটোকপি; তাঁদের এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদের (জমি, প্লট, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খামার, ফার্ম ও অন্যান্য) দলিল, অনুমোদিত নকশা, লিজ/বরাদ্দ/ক্রয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র; অস্থাবর সম্পদ (সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, বন্ড, শেয়ার বিনিয়োগ, গাড়ি ও অন্যান্য) ক্রয় সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র এবং ব্যাংক হিসাব ও ডিপোজিট স্কিমের (যদি থাকে) বিবরণী; তাঁদের নামে (ব্যক্তিগত/ব্যবসায়িক) শুরু থেকে সর্বশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নের সার্টিফায়েড কপি; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য থেকে গৃহীত ঋণ/দায় সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে।

দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল বলেন, নোটিশে রবিউলসহ তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদের বিবরণী চাওয়া হয়েছিল। তিনি হাজির হয়ে সময় নিয়েছেন।

এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কিছুদিন আগে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল গভীর ষড়যন্ত্র করেছিল, এটা তারই অংশ। প্রদর্শিত সম্পদ ছাড়া আমার কোনো সম্পদ নেই। আমার হিসাব দাখিলের পর আশা করি, সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।’

এর কয়েক দিন আগে দুদকের নোটিশে বলা হয়, কুষ্টিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শাম্মী আরা পারভীন তাঁর স্বামী কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। পাশাপাশি স্বামীর টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি করে ১ হাজার কোটি টাকা জ্ঞাত বহির্ভূত আয় করেছেন বলে অভিযোগ করে দুদক। পরে আতাউর রহমান আতা এবং তাঁর স্ত্রীর শাম্মী আরা পারভীনকে তাদের সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়া জন্য চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রী শাম্মি আরা পারভীনকে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে দুদকের নির্দিষ্ট ছকে সব সম্পত্তির হিসেব দাখিল করতে বলা হয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আয়-ব্যয়ের হিসেব জমা দিয়ে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন আতাউর রহমান।

এদিকে গত ১৯ এপ্রিল স্কুল উন্নয়নের টাকা আত্মসাতে দায়ে খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

দুদকের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, কুষ্টিয়ায় আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতার সম্পদ অর্জনের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে দুদক। তবে পরপর তিনজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে দুদকের এসব তদন্তে আতঙ্কের মধ্যে আছেন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, রাজনীতি হচ্ছে জনগণের জন্য, যাঁরা একে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছায় তাঁরা দলকে ভালোবাসতে পারেন না। যদি কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জন করেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে দল থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দুদক অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত