রাশেদ নিজাম
লেখার শিরোনামটি একটি হিন্দি সিনেমার সংলাপ থেকে নেওয়া হয়েছে। ঝালকাঠির আগুনে পোড়া লঞ্চের কয়েকটা ছবি দেখছিলাম, বারবার আমির খান অভিনীত দর্শকপ্রিয় বলিউড চলচ্চিত্র পি কের দুটো ডায়ালগের কথা মনে পড়ছিল। সিনেমার শেষের দিকে পিকের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় তপস্যী জি। একপর্যায়ে আমির খান বলছিলেন, ইনসান নেহি, স্রিফ জুতা রাহে যায়ে গা (মানুষ না, শুধু জুতা থেকে যাবে)।
গভীর রাতে লঞ্চে আগুনের ঘটনার বিস্তারিত রাজধানীতে বসে জানা যায় ভোরের পর। আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক আল আমিন রাজু রওনা দেন সকালেই। প্রতিদিনই ছবি পাঠান, ভিডিও পাঠান। ২৫ ডিসেম্বর বেশ কিছু ছবি পাঠান স্টোরির সঙ্গে। একঝলক করে সবগুলো ছবিই দেখি। কারও খাবারের বাটি সেভাবেই রয়ে গেছে, কারও হাতের চুড়ি, কেউ বাড়ির জন্য ঢাকা থেকে আঙুর কিনেছিলেন। কিছু পুড়েছে, কিছু অক্ষত রয়ে গেছে। শিশুর দুধ খাওয়ার ফিডার, নতুন কেনা কম্বল, হাতঘড়ি। কিন্তু চোখে ভাসছিল মারা যাওয়া মানুষগুলোর জুতার ছবি। কারও এক পাটি, কারও এক জোড়া। পোড়া, অর্ধপোড়া, একেবারেই না-পোড়া। সবই আছে, শুধু মানুষগুলো নেই।
কতভাবে মানুষ হারিয়ে যেতে পারে, এমন গবেষণার জন্য বাংলাদেশের চেয়ে ভালো প্লট বিশ্বে কোথাও নেই বলেই আমার বিশ্বাস। বাচ্চার জন্য চকলেট কিনবেন বলে বাসা থেকে বেরোলেন। গলির মুখের রাস্তায় গাড়িচাপায় হারিয়ে গেলেন। সাদা চোখে একজন, আদতে কিন্তু বেশি। কারও সন্তান, কারও বাবা, কারও স্বামী, কারও ভাই।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোডের হিসাবে, দেশে প্রতিদিন সড়কে প্রাণ হারান অন্তত ১৫ জন মানুষ। গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটি জানায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়কপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ৫১২ বার আর ক্ষতি হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকার। ৭১২টি নৌপথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮৮ আর রেলপথ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৩৮ জন। এসব হিসাব ঝালকাঠির লঞ্চে আগুনের দুর্ঘটনার আগের।
নির্মাণাধীন ভবনের ইট পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও রাজধানীতে ঘটছে অহরহ। ওই যে হারিয়ে যাওয়ার নানা রকমফের। আজিমপুরে দেয়ালচাপায় ও কয়েক বছর আগে শাহজাহানপুরে পানির পাইপে পড়ে মারা যায় একই নামের দুই শিশু জিহাদ। অনিয়মিত বিরতিতে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা কয়েক বছর ধরেই হচ্ছে। এ বছর কাছাকাছি সময়ে কয়েকটা হয়ে যাওয়ায় গণমাধ্যমে বেশি আলোচিত হয়েছে।
বছর দুয়েক আগে পল্টনে খোলা ম্যানহোলে পড়ে হারিয়ে যান এক পথচারী। দুদিন পরে মেলে তাঁর লাশ। ঘটনা শোনার পর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মনে হয়েছিল, এ কেমন মৃত্যু! সম্প্রতি চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর ভাগ্যেই জোটে একই পরিণতি। এখানে হারিয়ে যেতে কোনো কারণ লাগে না।
আরেক প্রকার হারিয়ে যাওয়া এ দেশে খুব আলোচিত। দুষ্ট লোকেরা এর নাম দিয়েছে গুম। তবে এতক্ষণ যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো আর এই ‘গুম’ হয়ে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো—মরদেহ পাওয়া না-পাওয়া। যাঁরা অতি ভাগ্যবান সপ্তাহখানেক, মাসখানেক, ছয় মাস পরে তাঁরা ফিরে আসেন। আর বেশির ভাগ আসলেই হারিয়ে যান। কেউ জানে না তাঁরা কোথায়।
প্রতিবছর মে মাসের শেষে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের করা মায়ের ডাক নামের একটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে। যেখানে তৈরি হয় খুবই আবেগতাড়িত এক পরিস্থিতি। এই মায়ের ডাক যখন শুরু হয়, তখন যে শিশুটিকে কোলে দেখেছিলাম, এখন সে বাবাকে ফিরে পাওয়ার জন্য মাইক হাতে বক্তব্য দেয়।
সাভারের স্পেকট্রাম থেকে শুরু হয়েছিল বড় ভবনধসের ঘটনা। যত দিন গেছে আরও বড় ভবন ধসেছে। বেশি মানুষ হারিয়ে গেছে। রানা প্লাজার পর তো সংজ্ঞাই হারিয়েছে মানুষ মারা যাওয়ার। ১ হাজার ১০০–এর বেশি মানুষ!!!
সকালে কাজে গিয়েছিলেন। বৃদ্ধ মা, ছোট্ট সন্তান আশায় ছিল সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন সবাই। কিন্তু নয়তলা সেই ভবন একেবারে মিশে গিয়েছিল। চাপা পড়া মানুষের সেই আর্তনাদ কাঁদিয়েছিল পুরো দেশবাসীকে। আন্তর্জাতিক মহলেও নাড়া ফেলেছিল রানা প্লাজার দুঃসহ ঘটনা। সেখানেও বহু মানুষের জুতা দেখেছিলাম। মানুষগুলো হারিয়ে গিয়েছিলেন, রয়ে গিয়েছিল জুতা।
তাজরীনের ভয়াবহ আগুন থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নিইনি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলাম অনেক। হ্যান হবে, ত্যান হবে। হয়েছে? হ্যাঁ। ট্যাম্পাকো নামের এক কারখানার আগুনে মারা গেছেন বহু মানুষ।
চলতি বছর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডসের মর্মান্তিক আগুনে মারা যান পঞ্চাশের বেশি মানুষ। শেষ হিসাব পর্যন্ত ৫১ জন। জানা গেল কি? পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্র কিছুই নাকি ছিল না তাদের। তাহলে দোষ কার? মরে যাওয়া মানুষগুলোর?
কয়লা হয়ে মরেছেন, নম্বর হিসাবে দাফন হয়েছে তাঁদের। পরিবার জানেও না আসলে কোনটা কার লাশ। ওই যে বাসা থেকে ভোরে এসেছেন, তারপর সেই চেহারাতেই হারিয়ে গেছেন সবাই।
আবারও মানুষের কয়লা মিলল অভিযান-১০ লঞ্চে; যা বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি আগে। প্রতিবারই নতুন করে আগের চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা তৈরি হয় এ দেশে।
২০১৪ সালের আগস্টে মুন্সিগঞ্জে পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার সেই ভয়ার্ত ভিডিও দেখেননি এমন মানুষ বোধ হয় পাওয়া যাবে না। ডুবে যাওয়া ওই লঞ্চ থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরে আর খোঁজ মেলেনি ৫০ জনের।
দেশের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলা হয় ২০০৩ সালের এমভি নাসরিন-১ নামের লঞ্চডুবিকে। সেখানে কত যাত্রী ছিল, সে বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য নেই। তবে সরকারি হিসাবে প্রায় সাড়ে ৬০০ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
ওই বছরের ৮ জুলাই ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনগামী লঞ্চটি চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ডুবে যায়।
তার আগের বছর ৩ মে সালাহউদ্দিন-২ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে মারা যায় অন্তত ৪০০ মানুষ। চাঁদপুরের ষাটনল এলাকায় মেঘনা নদীতে ডুবে যায় লঞ্চটি।
এক দশকের পরিসংখ্যান দেখলে মৃতের অঙ্কে অভিযান-১০-এর দুর্ঘটনা ইতিহাসের পাতায় নিচের দিকে জায়গা পাবে। কিন্তু দাউ দাউ করে নিকষ রাতে জ্বলা আগুনের শিখা ভুলতে পারবেন পুড়ে অঙ্গার হওয়া মানুষের স্বজনেরা?
নাসরিন, সালাহউদ্দিন, পিনাক-৬, মর্নিং বার্ড—সব ঘটনাই একেকটি অধ্যায়। সেই পুরোনো কথার মতো ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ওগুলো তো ডুবে গেছে। এবার তো পুড়েছে, শিক্ষাটা নেওয়া দরকার না?
তদন্ত কমিটি বলেছে, ইঞ্জিনরুম থেকেই লেগেছিল আগুন। মালিকের দাবি, গত মাসেই তিনি নতুন ইঞ্জিন লাগিয়েছেন। তাহলে এত মানুষ মরল কেন? এবারও তদন্ত হবে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, প্রাথমিক দায়ও স্বীকার করেছেন লঞ্চটির মালিক।
নৌ-দুর্ঘটনা ঘটার পরেই কেন যাত্রী বেশি ছিল কি না, জীবন রক্ষাকারী, আগুন নেভানোর যন্ত্র পর্যাপ্ত ছিল কি না, এসব প্রশ্ন আসে? যাত্রা শুরুর আগে প্রশ্নকারী ও উত্তরদাতারা কোথায় থাকেন?
এভাবে চলতে থাকবে, আবারও বড় দুর্ঘটনা ঘটবে। মাস্টার চালাচ্ছিলেন কি না, লাইসেন্স আছে কি না, মালিক কোন দল করেন—এসব প্রশ্ন আবারও আসবে। কিন্তু আমির খানের ভাষায়, মানুষ না, রয়ে যাবে শুধু জুতা।
রাশেদ নিজাম, প্রধান প্রতিবেদক আজকের পত্রিকা
লেখার শিরোনামটি একটি হিন্দি সিনেমার সংলাপ থেকে নেওয়া হয়েছে। ঝালকাঠির আগুনে পোড়া লঞ্চের কয়েকটা ছবি দেখছিলাম, বারবার আমির খান অভিনীত দর্শকপ্রিয় বলিউড চলচ্চিত্র পি কের দুটো ডায়ালগের কথা মনে পড়ছিল। সিনেমার শেষের দিকে পিকের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় তপস্যী জি। একপর্যায়ে আমির খান বলছিলেন, ইনসান নেহি, স্রিফ জুতা রাহে যায়ে গা (মানুষ না, শুধু জুতা থেকে যাবে)।
গভীর রাতে লঞ্চে আগুনের ঘটনার বিস্তারিত রাজধানীতে বসে জানা যায় ভোরের পর। আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক আল আমিন রাজু রওনা দেন সকালেই। প্রতিদিনই ছবি পাঠান, ভিডিও পাঠান। ২৫ ডিসেম্বর বেশ কিছু ছবি পাঠান স্টোরির সঙ্গে। একঝলক করে সবগুলো ছবিই দেখি। কারও খাবারের বাটি সেভাবেই রয়ে গেছে, কারও হাতের চুড়ি, কেউ বাড়ির জন্য ঢাকা থেকে আঙুর কিনেছিলেন। কিছু পুড়েছে, কিছু অক্ষত রয়ে গেছে। শিশুর দুধ খাওয়ার ফিডার, নতুন কেনা কম্বল, হাতঘড়ি। কিন্তু চোখে ভাসছিল মারা যাওয়া মানুষগুলোর জুতার ছবি। কারও এক পাটি, কারও এক জোড়া। পোড়া, অর্ধপোড়া, একেবারেই না-পোড়া। সবই আছে, শুধু মানুষগুলো নেই।
কতভাবে মানুষ হারিয়ে যেতে পারে, এমন গবেষণার জন্য বাংলাদেশের চেয়ে ভালো প্লট বিশ্বে কোথাও নেই বলেই আমার বিশ্বাস। বাচ্চার জন্য চকলেট কিনবেন বলে বাসা থেকে বেরোলেন। গলির মুখের রাস্তায় গাড়িচাপায় হারিয়ে গেলেন। সাদা চোখে একজন, আদতে কিন্তু বেশি। কারও সন্তান, কারও বাবা, কারও স্বামী, কারও ভাই।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোডের হিসাবে, দেশে প্রতিদিন সড়কে প্রাণ হারান অন্তত ১৫ জন মানুষ। গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটি জানায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়কপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ৫১২ বার আর ক্ষতি হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকার। ৭১২টি নৌপথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮৮ আর রেলপথ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৩৮ জন। এসব হিসাব ঝালকাঠির লঞ্চে আগুনের দুর্ঘটনার আগের।
নির্মাণাধীন ভবনের ইট পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও রাজধানীতে ঘটছে অহরহ। ওই যে হারিয়ে যাওয়ার নানা রকমফের। আজিমপুরে দেয়ালচাপায় ও কয়েক বছর আগে শাহজাহানপুরে পানির পাইপে পড়ে মারা যায় একই নামের দুই শিশু জিহাদ। অনিয়মিত বিরতিতে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা কয়েক বছর ধরেই হচ্ছে। এ বছর কাছাকাছি সময়ে কয়েকটা হয়ে যাওয়ায় গণমাধ্যমে বেশি আলোচিত হয়েছে।
বছর দুয়েক আগে পল্টনে খোলা ম্যানহোলে পড়ে হারিয়ে যান এক পথচারী। দুদিন পরে মেলে তাঁর লাশ। ঘটনা শোনার পর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মনে হয়েছিল, এ কেমন মৃত্যু! সম্প্রতি চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর ভাগ্যেই জোটে একই পরিণতি। এখানে হারিয়ে যেতে কোনো কারণ লাগে না।
আরেক প্রকার হারিয়ে যাওয়া এ দেশে খুব আলোচিত। দুষ্ট লোকেরা এর নাম দিয়েছে গুম। তবে এতক্ষণ যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো আর এই ‘গুম’ হয়ে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো—মরদেহ পাওয়া না-পাওয়া। যাঁরা অতি ভাগ্যবান সপ্তাহখানেক, মাসখানেক, ছয় মাস পরে তাঁরা ফিরে আসেন। আর বেশির ভাগ আসলেই হারিয়ে যান। কেউ জানে না তাঁরা কোথায়।
প্রতিবছর মে মাসের শেষে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের করা মায়ের ডাক নামের একটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে। যেখানে তৈরি হয় খুবই আবেগতাড়িত এক পরিস্থিতি। এই মায়ের ডাক যখন শুরু হয়, তখন যে শিশুটিকে কোলে দেখেছিলাম, এখন সে বাবাকে ফিরে পাওয়ার জন্য মাইক হাতে বক্তব্য দেয়।
সাভারের স্পেকট্রাম থেকে শুরু হয়েছিল বড় ভবনধসের ঘটনা। যত দিন গেছে আরও বড় ভবন ধসেছে। বেশি মানুষ হারিয়ে গেছে। রানা প্লাজার পর তো সংজ্ঞাই হারিয়েছে মানুষ মারা যাওয়ার। ১ হাজার ১০০–এর বেশি মানুষ!!!
সকালে কাজে গিয়েছিলেন। বৃদ্ধ মা, ছোট্ট সন্তান আশায় ছিল সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন সবাই। কিন্তু নয়তলা সেই ভবন একেবারে মিশে গিয়েছিল। চাপা পড়া মানুষের সেই আর্তনাদ কাঁদিয়েছিল পুরো দেশবাসীকে। আন্তর্জাতিক মহলেও নাড়া ফেলেছিল রানা প্লাজার দুঃসহ ঘটনা। সেখানেও বহু মানুষের জুতা দেখেছিলাম। মানুষগুলো হারিয়ে গিয়েছিলেন, রয়ে গিয়েছিল জুতা।
তাজরীনের ভয়াবহ আগুন থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নিইনি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলাম অনেক। হ্যান হবে, ত্যান হবে। হয়েছে? হ্যাঁ। ট্যাম্পাকো নামের এক কারখানার আগুনে মারা গেছেন বহু মানুষ।
চলতি বছর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডসের মর্মান্তিক আগুনে মারা যান পঞ্চাশের বেশি মানুষ। শেষ হিসাব পর্যন্ত ৫১ জন। জানা গেল কি? পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্র কিছুই নাকি ছিল না তাদের। তাহলে দোষ কার? মরে যাওয়া মানুষগুলোর?
কয়লা হয়ে মরেছেন, নম্বর হিসাবে দাফন হয়েছে তাঁদের। পরিবার জানেও না আসলে কোনটা কার লাশ। ওই যে বাসা থেকে ভোরে এসেছেন, তারপর সেই চেহারাতেই হারিয়ে গেছেন সবাই।
আবারও মানুষের কয়লা মিলল অভিযান-১০ লঞ্চে; যা বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি আগে। প্রতিবারই নতুন করে আগের চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা তৈরি হয় এ দেশে।
২০১৪ সালের আগস্টে মুন্সিগঞ্জে পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার সেই ভয়ার্ত ভিডিও দেখেননি এমন মানুষ বোধ হয় পাওয়া যাবে না। ডুবে যাওয়া ওই লঞ্চ থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরে আর খোঁজ মেলেনি ৫০ জনের।
দেশের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলা হয় ২০০৩ সালের এমভি নাসরিন-১ নামের লঞ্চডুবিকে। সেখানে কত যাত্রী ছিল, সে বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য নেই। তবে সরকারি হিসাবে প্রায় সাড়ে ৬০০ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
ওই বছরের ৮ জুলাই ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনগামী লঞ্চটি চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ডুবে যায়।
তার আগের বছর ৩ মে সালাহউদ্দিন-২ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে মারা যায় অন্তত ৪০০ মানুষ। চাঁদপুরের ষাটনল এলাকায় মেঘনা নদীতে ডুবে যায় লঞ্চটি।
এক দশকের পরিসংখ্যান দেখলে মৃতের অঙ্কে অভিযান-১০-এর দুর্ঘটনা ইতিহাসের পাতায় নিচের দিকে জায়গা পাবে। কিন্তু দাউ দাউ করে নিকষ রাতে জ্বলা আগুনের শিখা ভুলতে পারবেন পুড়ে অঙ্গার হওয়া মানুষের স্বজনেরা?
নাসরিন, সালাহউদ্দিন, পিনাক-৬, মর্নিং বার্ড—সব ঘটনাই একেকটি অধ্যায়। সেই পুরোনো কথার মতো ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ওগুলো তো ডুবে গেছে। এবার তো পুড়েছে, শিক্ষাটা নেওয়া দরকার না?
তদন্ত কমিটি বলেছে, ইঞ্জিনরুম থেকেই লেগেছিল আগুন। মালিকের দাবি, গত মাসেই তিনি নতুন ইঞ্জিন লাগিয়েছেন। তাহলে এত মানুষ মরল কেন? এবারও তদন্ত হবে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, প্রাথমিক দায়ও স্বীকার করেছেন লঞ্চটির মালিক।
নৌ-দুর্ঘটনা ঘটার পরেই কেন যাত্রী বেশি ছিল কি না, জীবন রক্ষাকারী, আগুন নেভানোর যন্ত্র পর্যাপ্ত ছিল কি না, এসব প্রশ্ন আসে? যাত্রা শুরুর আগে প্রশ্নকারী ও উত্তরদাতারা কোথায় থাকেন?
এভাবে চলতে থাকবে, আবারও বড় দুর্ঘটনা ঘটবে। মাস্টার চালাচ্ছিলেন কি না, লাইসেন্স আছে কি না, মালিক কোন দল করেন—এসব প্রশ্ন আবারও আসবে। কিন্তু আমির খানের ভাষায়, মানুষ না, রয়ে যাবে শুধু জুতা।
রাশেদ নিজাম, প্রধান প্রতিবেদক আজকের পত্রিকা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে