টেনেটুনেও চলে না সংসার

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
Thumbnail image

তারাগঞ্জের ইকরচালী গ্রামের জাহের আলী। আবাদি জমি না থাকা এই শ্রমজীবী রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। দিনের শেষে মজুরি পান ৪০০ টাকা। এ টাকায় আগে ছয় সদস্যের সংসার টেনেটুনে চালালেও এখন আর চলে না। চাল কিনলে ডাল কেনার টাকা থাকে না।

গতকাল শুক্রবার তারাগঞ্জ হাটে আলাপকালে এ দুর্দশার কথা জানান জাহের। তিনি বলেন, ‘এখন ধারদেনা করে এক বেলা উপোস থেকে সংসার চালালেও আগামী দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন, সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না আমার।’

জাহেরের মতো উপজেলার শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষগুলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শঙ্কায় রয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে খরচের জোগান দেবেন, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।

গতকাল হাটে কথা হয় জলুবার গ্রামের খেতু মিয়ার সঙ্গে। তিনি মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতনে একটি মুরগির খামারে কাজ করেন।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় খুবই ক্ষুব্ধ এ ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে কীভাবে বাঁচব, বলতে পারেন? বেতন পাই ৮ হাজার টাকা, সাদা ভাত আর সবজি খেতে খরচ যায় ১২ হাজার। এমন কোনো জিনিস নাই যে তার দাম দ্বিগুণ, তিন গুণ হয়নি। দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নাই। বেঁচে থাকা দায় হয়ে গেছে। সংসার চালাতে এখন মোটা অঙ্কের টাকা ধার করতে হচ্ছে।’

জুম্মপাড়া গ্রামের কালা মিয়া এবার ২৫ শতক জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেন। খেতে ৯ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করে ধান পেয়েছেন ২৫ মণ (স্থানীয় হিসেবে প্রতি মণে ২৮ কেজি)। জমির মালিককে দিয়েছেন ছয় মণ। বাকি ১৯ মণ ধান ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন তিনি চাল কিনে খান।

কালা মিয়া হতাশার সুরে বলেন, ‘মুই যখন ধান বেঁচানু তখন দাম নাই, অ্যালা চাল কিনার গেইলে হাত দেওয়া যাওছে না। তেল, নুন, মসল্লা, সবজির দামও দুই গুণ হইছে। দেশো গরিব মরবে আর ধনী আরও ধনী হইবে, সেই ব্যবস্থায় হইছে!’ 

গতকাল তারাগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি চাল প্রকার ভেদে ৫২ থেকে ৬৮ টাকা বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫ থেকে ৬২ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৩০ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা, সোনালি ২৬০ থেকে বেড়ে ২৯০ এবং দেশি মুরগি ৫২০ থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৩৫, রসুন ৫০ থেকে ৮০, আলু ২০ থেকে ২৫, করলা ২০ থেকে ৩০ এবং ঢ্যাঁড়স ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ইকরচালী হাটের খুচরা চাল বিক্রেতা মাহাবুবার রহমান বলেন, ‘মিলের মালিক ও আড়তদারেরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাল মজুত করে দাম বাড়িয়েছেন। বোরোর ভরা মৌসুমে যেখানে চালের দাম কমার কথা, সেখানে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।’

তারাগঞ্জ হাটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী এমদাদুল হক জানান, মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণ জিনিস কেনাকাটা করছেন। চাল, তেল, ডাল, সবজি, মসলাসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে ক্রেতাদের মুখ মলিন। বেশি দামে কেনা পণ্যের বিক্রি কম হওয়ায় লাভও কম হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত