প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় জোর

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮: ৪২

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হওয়া দরকার, সে বিষয়ে সম্প্রতি নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারত। এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে যথাক্রমে গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দিল্লিতে সবাই গিয়েছিলেন জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে। তবে তাঁদের আলাপে অন্তত প্রকাশ্যে আগামী নির্বাচন এবং এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি বলে দাবি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের।

তবে দুই নেতার সঙ্গে আলাপেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরেন।

গতকাল জি২০ সম্মেলন শুরুর আগমুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন চললেও গতকালের সাক্ষাতে দুই নেতা ছিলেন হাসিমুখে। নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তাঁরা, তোলেন ছবি। এমনকি শেখ হাসিনা ও তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন বাইডেন।

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন দুই নেতার কাছাকাছি ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাইডেনের কী কথা হলো—জানতে চাওয়া হলে মোমেন টেলিফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আলাপ করেছেন।

ছবি তোলা ও কথা বলার একপর্যায়ে বাইডেন কাছাকাছি থাকা একজনের সেলফোন নিয়ে নিজেই শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তোলেন বলে মোমেন জানান।

মোমেনের তথ্য অনুযায়ী, বাইডেনকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক অবহিত করে বলেন, দেশের মানুষকে খাওয়ানো-পরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। বাড়িঘর দেওয়া হচ্ছে। দারিদ্র্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নিজের পরিবারের সবাইকে খুন করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন দেশের মানুষই তাঁর পরিবার। তাঁদের জন্যই তিনি কাজ করছেন। বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আছে বলেই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তিনি (বাইডেন) জানেন, বাংলাদেশ ভালো করছে।

দুই নেতার কথার এই পর্যায়ে সায়মা ওয়াজেদ এগিয়ে এলে তাঁকে শেখ হাসিনা বাইডেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

বাইডেন সায়মা ওয়াজেদের কাছে জানতে চান, ‘আপনি কী করেন?’ জবাবে তিনি জানান, তিনি অটিজম নিয়ে কাজ করেন। এতে বাইডেন বেশ উৎসাহিত বোধ করেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কোনো কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘এসব বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি।’

মোমেন জানান, সম্মেলনের একপর্যায়ে তিনি ও ব্লিঙ্কেন প্রায় ২০ মিনিট পাশাপাশি বসে ছিলেন। তিনি নিজে থেকেই ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের (ডিএসএ) কিছু অপব্যবহার হয়েছে। তাই সরকার এই আইন বাতিল করে সাইবার সিকিউরিটি আইন (সিএসএ) করছে। আর সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ব্লিঙ্কেন কী বললেন, এমন প্রশ্নে মোমেনের দাবি, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেবল শুনলেন। কিছু বলেননি।

নির্বাচন নিয়ে কিছু বলেছেন কি না, প্রশ্ন করা হলে মোমেন বলেন, ‘কিছু বলেননি।’

মোদির সঙ্গে শুক্রবারের প্রকাশ্য আলাপেও নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসেনি বলে জানান মোমেন। এই বৈঠকে দুই নেতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন।

গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি অনুযায়ী, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ উপায়ে সম্পন্ন হওয়ার পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাঁকে সপরিবারে দেশটির ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হতে পারে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। বিএনপি অভিযোগ করছে, দলটিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে ছক কষা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর চাওয়া, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক হোক।

পশ্চিমা দেশগুলোর এই অবস্থানকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করে চীন ও রাশিয়া। আর ভারত মনে করে, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে বলা আছে, কীভাবে নির্বাচন হতে হবে।

শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হওয়া, কথা বলা ও ছবি তোলার কোনো কিছুই হোয়াইট হাউস, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ব্লিঙ্কেনের সরকারি ও ব্যক্তিগত ফেসবুক এবং এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টগুলোয় শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।

কয়েকটি ছবি যুক্ত করে এক্সে একটি পোস্ট দেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ। তিনি লিখেছেন, নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে চমৎকার গল্প হয়েছে। সমন্বিত জনস্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব নিয়ে তিনি বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যালয় পর্যায়ে মনোবিদের গুরুত্ব নিয়েও কথা হয়েছে তাঁদের মধ্যে।

বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে জি২০ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। তিনি বক্তৃতায় বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য জি২০ জোটের সদস্য ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহসী, দৃঢ় ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে জোর করে বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে শেখ হাসিনা শুক্রবার দিল্লি যান। আজ রোববার তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

ফেরার আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের কর্মসূচি আছে।

এর বাইরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভসহ মোট ২৯টি দেশ ও সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত