সোমেশ্বরীর চরে ২০ ধরনের শাক-সবজির আবাদ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ১০
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭: ৩৬

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সোমেশ্বরী নদী। ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এই নদীর কিছু অংশ কলমাকান্দা উপজেলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলায়ও পরেছে। নদীর তীরে জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজির আবাদ করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

চরে অন্তত ২০ ধরনের শাক সবজির আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদনও বেশ ভালো। কলমাকান্দা কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন, গত বছর সোমেশ্বরী নদীর চরে সবজির ভালো ফলন হয়েছে। যে কারণে এবারও চরে মানুষ সবজি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তারাও কৃষকদের সাধ্যমতো সুবিধা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতোধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১১৪ মিটার। শুকনো মৌসুমে সুমেশ্বরী নদীর দুই পাশে বড় বড় চর জেগে ওঠে। এ চরে হাজারো কৃষক তাদের স্বপ্নের ফসল চাষাবাদ করেন। যার মধ্যে রয়েছে আখ, সরিষা, গম, টমেটো, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, আলু, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল। এমনকি এই চরের নিম্নাঞ্চলে ইরি ধানের বীজও রোপণ করেছেন কৃষক। গত কয়েক বছর ধরে শীতের সময় এলেই ফসলে ভরে যায় নদীর দুই দিকের চরগুলো। একদিকে পানি অন্যদিকে সবজির বাগান দেখে যেন চোখ মিলিয়ে যায়।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই নদীর কলমাকান্দা উপজেলা অংশে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার কৃষক ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহের পথ তৈরি করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলমাকান্দা উপজেলার মহিষাসুরা, বড়উগঞ্জ, চাঙ্গেরপাড়া, সিধলী এলাকায় সুমেশ্বরীর চরে আখ, গোলআলু, মিষ্টিআলু, শিম, মিষ্টি কুমড়া ও বেগুন চাষ করা হচ্ছে। নদীর চরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে ধানের বীজ রোপণের। সবজি চাষে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখছেন। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। চরের পাশেই নদীর পানি থাকায় এসব শাকসবজি চাষ করতে পানির জন্য বেগ পেতে হয় না।

সিধলী গ্রামের বাসিন্দা সোহেল খান জানান, আগে মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত মৌসুমে সুমেশ্বরীর চরে স্বল্প পরিসরে গম, মরিচ চাষ করে ভালো লাভ হয়। এবার তিনি মিষ্টি আলুও চাষ করছেন।

মহিষাসুরা গ্রামের বাবুল, বড়উগঞ্জ গ্রামের নজরুল, চাঙ্গেরপাড়া গ্রামের কাসেম জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা সুমেশ্বরী নদীর চরে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। এবারও তারা লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন।

এ বিষয়ে কলমাকান্দা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, এখানে প্রায় ২০ ধরনের সবজির আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আলু, শিম, মরিচ, ধনেপাতা, আখ, মিষ্টিকুমড়া, দেশি লাউ, বেগুন, মুলা, বরবটি, বাদাম, ডাটা, করলাসহ অন্যান্য শাকসবজি। সুমেশ্বরী নদীর চরে অন্তত ৪৫ বিঘা জমিতে এসব রবিশস্য চাষ হচ্ছে। এখানে ৫ হাজার মেট্রিক টন ফসলের আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত বছর কলমাকান্দা উপজেলার সুমেশ্বরী নদীর চরে সবজির ভালো ফলন হয়েছে। যে কারণে এবারও সুমেশ্বরীর চরে মানুষ সবজি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে সবজি চাষ করার জন্য আমরা সার্বিক সহযোগিতা করছি। কৃষককে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ করলে কৃষকেরা ভালো ফল পাবে বলে আশা করছি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত