ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

আরিফুল হক তারেক, মুলাদী
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ৩০
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১০: ২১

মুলাদীতে ইটের ভাটায় নেওয়া হচ্ছে  আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ের ফসলি জমির মাটি। এতে নদী ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। 
নাজিরপুর ইউনিয়নের কাচ্চিচর, বাটামারা ইউনিয়নের আলীমাবাদ, চর আলীমাবাদ, চরকালেখান ইউনিয়নের দক্ষিণ গাছুয়া এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ফসলি জমি থেকে মাটি নেওয়ায় পার্শ্ববর্তী জমি মালিকেরা ও চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাঁরা মাটি কাটা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনও করেছিলেন। যারা মাটি নিচ্ছেন তাদের দাবি, জমি মালিকেরা মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই জমি থেকে মাটি নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। 

জানা গেছে, মুলাদী উপজেলায় ১৫/১৬টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মাটির জোগান দিতে প্রতিবছরই অনেক জমির মাটি নেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নদীর পার থেকে মাটি নেন সরবরাহকারীরা।  

ইটভাটা মালিকেরা যারা মাটি সরবরাহের কাজ করেন তাদের সঙ্গে চুক্তি করে মাটি কেনেন। মাটি সরবরাহকারীরা জমি মালিক থেকে মাটি কেনেন। যেসব জমি মালিক মাটি বিক্রি করেন তাঁরা কিছুটা লাভবান হলেও পাশের জমি মালিক ও কৃষকদের ক্ষতি হয়। নদী ভাঙন বাড়ায় বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়ে। কাচ্চিচর গ্রামের আবু তাহের বলেন, যেসব জমি ২-৩ বছর পরে ভাঙনে পড়ার কথা তা আগেই ভাঙছে।

আলীমাবাদ গ্রামের আবুল খায়ের তালুকদার বলেন, চর আলীমাবাদ থেকে কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটায় মাটি নেওয়া হয়। নদীর পাড়ে এমনভাবে  মাটি নেওয়া হয় যেন নদী আর জমির মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। ফলে ভাঙনের ভয়ে পার্শ্ববর্তী জমি মালিক অপেক্ষাকৃত কম দামে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

চরকালেখান ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আবু ছালেহ পল্লব সিকদার বলেন, একটি চক্র আড়িয়ালখাঁ নদীর দক্ষিণ গাছুয়া গ্রাম এলাকার মানুষের ফসলি জমি থেকে মাটি নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছে। এতে ভাঙন তীব্র হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে গলইভাঙা বাজার, ঢালীবাড়ী লঞ্চঘাট, কাচা-পাকাসহ অনেক বাড়িঘর।

দক্ষিণ গাছুয়া গ্রামের কৃষক কালাম বেপারী বলেন, নদীর পাড়ে ফসলি মাঠ রয়েছে। পাড় ঘেঁষে মাটি কাটায় পার্শ্ববর্তী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 
জমি মালিক পাতারচর গ্রামের করিম প্যাদা বলেন, ‘নদীতে জমি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। তাই কম দামে মাটি বিক্রি করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে চর জেগে মাটি উচু হলে পরবর্তী প্রজন্ম ভোগদখল করতে পারবে।’

দক্ষিণ গাছুয়া গ্রামের শাহজাহান সিকদার বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী জমির মালিক মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই মাটি নিয়ে যাওয়ায় আমার জমির কাছে নদী চলে এসেছে। ভাঙনের ভয়ে মাটি বিক্রি করে দিয়েছি।’

মাটি সরবরাহকারী পাতারচর গ্রামের জাকির হাওলাদার জানান, নদীতে অনেক জমি ভেঙে যাচ্ছে। তাই জমি মালিকেরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। সেই জমি থেকে মাটি নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। ফনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটা মালিক বলেন, ‘আমরা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে মাটি কিনে ইট তৈরি করি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নদী ভাঙন এলাকা এবং পরিত্যাক্ত জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয়।’

চরকালেখান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিরাজ সরদার জানান, ফসলি জমিসহ নদী পাড় থেকে মাটি কাটাতে নিষেধ করা হয়েছে। কেউ মাটি কাটলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ হোসাইনী জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা অবৈধ। শিগগিরই এ বিষয়ে অভিযান চালানো হবে। কেউ নদীর পাড় কিংবা ফসলি জমি থেকে মাটি কাটলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত