আজকের পত্রিকা: এবারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কীভাবে দেখেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: কোটা সংস্কারের প্রশ্নে ছাত্রদের আন্দোলন সাম্প্রতিক নয়; অনেক বছর আগে থেকে আরম্ভ হয়েছে। ২০১৮ সালে সরকার কোটা সংস্কার করার নীতি ঘোষণা করেছিল। সেটা নিয়েও সবাই সন্তুষ্ট ছিল না। তখন একপক্ষ সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছিল। হাইকোর্টে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে একটি রিটও করা হয়। সেখানে তারা কোটার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে আবেদন জানায়। সে ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আন্দোলন চলাকালেই সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক মন্তব্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচণ্ড অসন্তোষ দেখা দেয়। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন মাঠে নেমে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায় এবং গোটা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে কয়েক শ মূল্যবান প্রাণ ঝরে যায়।
যে ক্ষয়ক্ষতি মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে হয়েছে, এ রকম আগে কখনো হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীর অধিকাংশ জেলায় বিস্তর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত ক্ষতি আমাদের জাতির ও রাষ্ট্রের হয়েছে। যে বর্বর মানসিকতার প্রকাশ এরই মধ্যে ঘটেছে, তার জন্য আসলে কারা দায়ী—সে প্রশ্ন আমাদের তুলতে হবে।
আগের যেকোনো গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে এবারের গণ-অভ্যুত্থানের পার্থক্য হচ্ছে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রসংগঠন ও রাজনৈতিক দল। এবারের গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল না। পাশাপাশি এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে অনেক শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ নানা পেশার মানুষ দাঁড়িয়েছেন।
আমরা দেখেছি, জনগণ যখন বিবেকবুদ্ধি দিয়ে সংঘবদ্ধ হয়েছে, তখন সেই শক্তির সামনে কোথাও কোনো অত্যাচারী শাসক টিকতে পারেনি। কেননা, জনগণ পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। জনগণ জাগলে কোনো অপশক্তিই তাকে পরাজিত করতে পারে না।
আজকের পত্রিকা: দেশে বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: শুধু কোটার ইস্যুতে আন্দোলন শুরু হলেও পরে সেটিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দীর্ঘদিন ধরে জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য, অনেকটা একদলীয় কায়দায় জাতীয় নির্বাচন হওয়াসহ নানা কারণে মানুষের মাঝে ক্ষোভ জমে ছিল। অনেকে ভোট দিতে পারেননি। কোনোভাবেই ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও কিছু বিষয়। মানুষের মধ্যে ভয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি বিরূপ হয়েছিল। সেই অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেশের জনগণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়। ছাত্র-জনতার বাঁধভাঙা জোয়ারে একসময় শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। পুলিশ এখনো পুরোপুরি তাদের দায়িত্বে ফেরেনি। ৮ আগস্ট রাতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। একটু সময় লাগবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে।
সমাজে যখন মানবিক বোধ কমে যায় এবং নানা রকম অনাচার বাড়ে, সেই সমাজকে সুস্থ, স্বাভাবিক বলা যায় না। আমরা সে রকম একটা অসুস্থ সময় পার করছি। বিজ্ঞানের কল্যাণে অর্থনীতির ব্যাপক যে উন্নতি হয়েছে, সেখানে এখন পৃথিবীর যেখানেই হোক, খেয়ে-পরে বাঁচার মতো একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মানবিক গুণাবলি ও মূল্যবোধ অনেকটাই লোপ পেয়েছে। উত্তরণ একেবারে হবে বলে মনে হয় না। পর্যায়ক্রমে সেটা হবে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এরপর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান বের করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: এত কিছুর পরও দেশের রাজনীতি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ইউরোপ, আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত চলমান, তাতে সুষ্ঠু রাজনীতির সন্ধান পাওয়া যায় না। এই অবস্থার মধ্যে সততার উপলব্ধি নিয়ে গোটা রাজনীতি পুনর্গঠিত করতে হবে। পশ্চিমের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রনীতিতে এই উপলব্ধি দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ভারত, চীন, রাশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে নিজেদের রাষ্ট্রীয় নীতিকে বিকশিত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যেমন নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, বিচার বিভাগ—এগুলো সরকারের আদেশক্রমে চলেছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্বাধীন ও কার্যকর করতে হবে। তা না হলে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব নয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করতে গেলে স্বচ্ছতা আনতে হবে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আমরা একটা পরিবর্তনের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি কতটুকু আশাবাদী?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: দেশে রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করে। জনগণের সমস্যা কেউ সমাধান করতে চায় না। তাই কোনো আদর্শবাদী রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠছে না। গতানুগতিক ধারা বাদ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন ও মৌলিক পরিবর্তন আনা দরকার; বিশেষ করে দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিরও সংস্কার করতে হবে। পুরোনো কায়দায় আর রাজনীতি করলে জনগণ মেনে নেবে না। আর রাজনৈতিক দল ও আদর্শ অবলম্বন করে দেশে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকে থাকে, সেটা এখন অনেকটা অনুপস্থিত। রাজনীতির জন্য জ্ঞান ও শৃঙ্খলাবোধ দরকার। এ বিষয়গুলো কোনো দলে নেই। বিভিন্ন দলের নামে এখন যাঁরা রাজনীতি করছেন, বিশেষ করে তরুণেরা কিছু না বুঝেই স্লোগানের ভিত্তিতে রাজনীতি করছেন। একটি রাজনৈতিক দলের ভেতরে কী কী থাকা দরকার, সেটা আগে ঠিক করতে হবে। সব প্রশ্নের মীমাংসা এখন পাওয়া যাবে, সেটা নয়। তবে ভালো রাজনীতির জন্য অন্তত বছর দশেকের প্রস্তুতি লাগবে।
উত্তরণের পথ হলো, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানুষের চাওয়া অনুসারে দেশ পরিচালনা করা। বৈষম্য কমানো, সর্বত্র সাম্য তৈরি করা। পুলিশ, সেনা, বিজিবি ও র্যাব নামিয়ে তো দীর্ঘকাল দেশ শাসন করা যাবে না। জনগণের সমস্যা সমাধানে তৎপর হলেই জনগণ সেই দলের প্রতি আস্থা পাবে। আর দরকার রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন।
ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ কিছু দলের সঙ্গে জোট করে টিকে ছিল। বিএনপিও একই কাজ করেছে ক্ষমতার বাইরে থেকে। আসলে জনগণের চাওয়া অনুসারে প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মসূচি কারও নেই। বাংলাদেশে তাই কোনো নীতি-আদর্শের রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠছে না। সে জন্য বলছি, গতানুগতিক ধারা বাদ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন ও মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরি।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: ১৯৭২ সাল থেকেই আমরা ভুলের রাজনীতির মধ্যে আছি। এমন প্রেক্ষাপটে ২০-২৫ দিন ধরে যা হয়েছে, তাতে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সরকারকে পররাষ্ট্রনীতির প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। উপদেষ্টা পরিষদে যাঁরা শপথ নিয়েছেন, তাঁদেরই বর্তমান সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান বের করতে হবে।
বিগত সরকারের আমলে দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছিল, তা অব্যাহত রাখতে হবে। জাতি ও রাষ্ট্র রক্ষার ব্যাপারে সব দলের উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। এ জন্য সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। জনগণকে অবশ্যই ভোটমুখী করতে হবে। সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজন থাকলেও সেটি এ সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।
আজকের পত্রিকা: এবারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কীভাবে দেখেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: কোটা সংস্কারের প্রশ্নে ছাত্রদের আন্দোলন সাম্প্রতিক নয়; অনেক বছর আগে থেকে আরম্ভ হয়েছে। ২০১৮ সালে সরকার কোটা সংস্কার করার নীতি ঘোষণা করেছিল। সেটা নিয়েও সবাই সন্তুষ্ট ছিল না। তখন একপক্ষ সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছিল। হাইকোর্টে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে একটি রিটও করা হয়। সেখানে তারা কোটার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে আবেদন জানায়। সে ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আন্দোলন চলাকালেই সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক মন্তব্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচণ্ড অসন্তোষ দেখা দেয়। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন মাঠে নেমে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায় এবং গোটা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে কয়েক শ মূল্যবান প্রাণ ঝরে যায়।
যে ক্ষয়ক্ষতি মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে হয়েছে, এ রকম আগে কখনো হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীর অধিকাংশ জেলায় বিস্তর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত ক্ষতি আমাদের জাতির ও রাষ্ট্রের হয়েছে। যে বর্বর মানসিকতার প্রকাশ এরই মধ্যে ঘটেছে, তার জন্য আসলে কারা দায়ী—সে প্রশ্ন আমাদের তুলতে হবে।
আগের যেকোনো গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে এবারের গণ-অভ্যুত্থানের পার্থক্য হচ্ছে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রসংগঠন ও রাজনৈতিক দল। এবারের গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল না। পাশাপাশি এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে অনেক শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ নানা পেশার মানুষ দাঁড়িয়েছেন।
আমরা দেখেছি, জনগণ যখন বিবেকবুদ্ধি দিয়ে সংঘবদ্ধ হয়েছে, তখন সেই শক্তির সামনে কোথাও কোনো অত্যাচারী শাসক টিকতে পারেনি। কেননা, জনগণ পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। জনগণ জাগলে কোনো অপশক্তিই তাকে পরাজিত করতে পারে না।
আজকের পত্রিকা: দেশে বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: শুধু কোটার ইস্যুতে আন্দোলন শুরু হলেও পরে সেটিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দীর্ঘদিন ধরে জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য, অনেকটা একদলীয় কায়দায় জাতীয় নির্বাচন হওয়াসহ নানা কারণে মানুষের মাঝে ক্ষোভ জমে ছিল। অনেকে ভোট দিতে পারেননি। কোনোভাবেই ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও কিছু বিষয়। মানুষের মধ্যে ভয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি বিরূপ হয়েছিল। সেই অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেশের জনগণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়। ছাত্র-জনতার বাঁধভাঙা জোয়ারে একসময় শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। পুলিশ এখনো পুরোপুরি তাদের দায়িত্বে ফেরেনি। ৮ আগস্ট রাতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। একটু সময় লাগবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে।
সমাজে যখন মানবিক বোধ কমে যায় এবং নানা রকম অনাচার বাড়ে, সেই সমাজকে সুস্থ, স্বাভাবিক বলা যায় না। আমরা সে রকম একটা অসুস্থ সময় পার করছি। বিজ্ঞানের কল্যাণে অর্থনীতির ব্যাপক যে উন্নতি হয়েছে, সেখানে এখন পৃথিবীর যেখানেই হোক, খেয়ে-পরে বাঁচার মতো একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মানবিক গুণাবলি ও মূল্যবোধ অনেকটাই লোপ পেয়েছে। উত্তরণ একেবারে হবে বলে মনে হয় না। পর্যায়ক্রমে সেটা হবে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এরপর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান বের করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: এত কিছুর পরও দেশের রাজনীতি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ইউরোপ, আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত চলমান, তাতে সুষ্ঠু রাজনীতির সন্ধান পাওয়া যায় না। এই অবস্থার মধ্যে সততার উপলব্ধি নিয়ে গোটা রাজনীতি পুনর্গঠিত করতে হবে। পশ্চিমের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রনীতিতে এই উপলব্ধি দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ভারত, চীন, রাশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে নিজেদের রাষ্ট্রীয় নীতিকে বিকশিত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যেমন নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, বিচার বিভাগ—এগুলো সরকারের আদেশক্রমে চলেছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্বাধীন ও কার্যকর করতে হবে। তা না হলে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব নয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করতে গেলে স্বচ্ছতা আনতে হবে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আমরা একটা পরিবর্তনের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি কতটুকু আশাবাদী?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: দেশে রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করে। জনগণের সমস্যা কেউ সমাধান করতে চায় না। তাই কোনো আদর্শবাদী রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠছে না। গতানুগতিক ধারা বাদ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন ও মৌলিক পরিবর্তন আনা দরকার; বিশেষ করে দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিরও সংস্কার করতে হবে। পুরোনো কায়দায় আর রাজনীতি করলে জনগণ মেনে নেবে না। আর রাজনৈতিক দল ও আদর্শ অবলম্বন করে দেশে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকে থাকে, সেটা এখন অনেকটা অনুপস্থিত। রাজনীতির জন্য জ্ঞান ও শৃঙ্খলাবোধ দরকার। এ বিষয়গুলো কোনো দলে নেই। বিভিন্ন দলের নামে এখন যাঁরা রাজনীতি করছেন, বিশেষ করে তরুণেরা কিছু না বুঝেই স্লোগানের ভিত্তিতে রাজনীতি করছেন। একটি রাজনৈতিক দলের ভেতরে কী কী থাকা দরকার, সেটা আগে ঠিক করতে হবে। সব প্রশ্নের মীমাংসা এখন পাওয়া যাবে, সেটা নয়। তবে ভালো রাজনীতির জন্য অন্তত বছর দশেকের প্রস্তুতি লাগবে।
উত্তরণের পথ হলো, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানুষের চাওয়া অনুসারে দেশ পরিচালনা করা। বৈষম্য কমানো, সর্বত্র সাম্য তৈরি করা। পুলিশ, সেনা, বিজিবি ও র্যাব নামিয়ে তো দীর্ঘকাল দেশ শাসন করা যাবে না। জনগণের সমস্যা সমাধানে তৎপর হলেই জনগণ সেই দলের প্রতি আস্থা পাবে। আর দরকার রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন।
ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ কিছু দলের সঙ্গে জোট করে টিকে ছিল। বিএনপিও একই কাজ করেছে ক্ষমতার বাইরে থেকে। আসলে জনগণের চাওয়া অনুসারে প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মসূচি কারও নেই। বাংলাদেশে তাই কোনো নীতি-আদর্শের রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠছে না। সে জন্য বলছি, গতানুগতিক ধারা বাদ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন ও মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরি।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: ১৯৭২ সাল থেকেই আমরা ভুলের রাজনীতির মধ্যে আছি। এমন প্রেক্ষাপটে ২০-২৫ দিন ধরে যা হয়েছে, তাতে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সরকারকে পররাষ্ট্রনীতির প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। উপদেষ্টা পরিষদে যাঁরা শপথ নিয়েছেন, তাঁদেরই বর্তমান সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান বের করতে হবে।
বিগত সরকারের আমলে দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছিল, তা অব্যাহত রাখতে হবে। জাতি ও রাষ্ট্র রক্ষার ব্যাপারে সব দলের উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। এ জন্য সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। জনগণকে অবশ্যই ভোটমুখী করতে হবে। সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজন থাকলেও সেটি এ সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৬ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে