জামালপুরের ইসলামপুরে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থকেরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকেরা মারধরের শিকারও হয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। যেকারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা রয়েছেন আতঙ্কে।

ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। অনেকে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তবে এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেছেন-নির্বাচনী প্রচারণার কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়টি তাদের জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৬ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত ৬ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৬ জন, জাতীয় পার্টির ২ জন, স্বতন্ত্র ১৫ জনসহ ২৯ জন প্রার্থী হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত সবাই বর্তমানে ইউপির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ১২ জন মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। ৩ জন বিএনপি নেতাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়ায় গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলার পলবান্ধা ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান কমল ডিহিদার। সিরাজাবাদ বাজারে নির্বাচনী প্রচারণা কেন্দ্রে ওই সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য দেন তিনি।

ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান কমল ডিহিদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমার আনারস প্রতীকের প্রচারণা কাজে বাধা এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহাদৎ হোসেন স্বাধীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা বলে, আমি যদি নির্বাচন থেকে সড়ে না দাঁড়াই তাহলে আমাকে খুন করে লাশ গুম করা হবে।

তিনি আরও বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিরাজাবাদ বাজারে আমার নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রের সামনে প্রচার বন্ধ করে দেয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহাদৎ হোসেন স্বাধীনের লোকজনেরা।

এ সময় ওলি মিয়া নামে আমার এক কর্মীকে ডেকে নিয়ে যায় পাশে তাদের নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রে। সেখানে ওলি মিয়াকে ২০ হাজার টাকা ও একটি পিস্তল ধরিয়ে দিয়ে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলতে বলে। এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বেধড়ক মারধর করে। গুরুতর আহত হয় ওলি মিয়া।

এব্যাপারে অভিযুক্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহাদৎ হোসেন স্বাধীন তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। আমরা কাউকে প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে না।’

গাইবান্ধা ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাকছুদুর রহমান আনছারীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সরদার। তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা আমার নির্বাচনী প্রচারণা কাজে নিয়মিত বাধা দিচ্ছে।

গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে নাপিতেরচর বাজারে ঘোড়া প্রতীকের প্রচারণাকালে আমার সমর্থকদের বাধা দিয়েছে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। এ সময় রনি নামে আমার এক কর্মীকে মারধর করেছে তারা।’

অভিযুক্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাকছুদুর রহমান আনছারী বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অযথা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা অন্যের প্রচারণায় বাধা দেবো কেনো?’

চরগোয়ালিনী ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সরকারের লোকজনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার গভীর রাতে কান্দারচর আকন্দপাড়া গ্রামে

আমার মোটরসাইকেল প্রতীকের নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রে ঢুকে নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা তছনছ করে ফেলেছে। মোটরসাইকেল প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে গেছে।’

অভিযুক্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল্লাহ সরকার বলেন, ‘আমার লোকজন কারও নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র ভাঙচুর করেনি। আমাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট খবর ছড়ানো হচ্ছে।’

ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজেদুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ভালো রাখতে খোঁজ খবর নিচ্ছি। কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ পেলে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোছা. হোসনে আরা বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা দেওয়ার খবর আমাদের জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

উল্লেখ্য, জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।