শাইখ সিরাজ
সময় দ্রুত চলমান। এরই সঙ্গে চলমান মানুষের জীবন-জীবিকা, চিন্তা, স্বপ্ন, সাফল্য—সবকিছুই। সময়ের এই পরিবর্তনকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধির জন্য আমরা কৃষির দিকে তাকিয়ে আছি। দুই, তিন বা চার দশকের বিবেচনায় এই খাতের মতো পরিবর্তন আর কোথাও আসেনি। একমাত্র কৃষি খাতকে সামনে রেখেই বলা যায়, প্রতিটি দিন পরিবর্তিত দিন। প্রতিটি দিন পাল্টে যাওয়া দিন। একসময় কৃষক একা কৃষি নিয়ে ভাবতেন, এখন সেই ভাবনা ভাগ হয়ে গেছে। কৃষিতে বড় ব্যবসায়ীরা এসে গেছেন।
কৃষির বাণিজ্যিক পরিধিও বিশাল আকার ধারণ করেছে। এখন কৃষির লাভ-লোকসানের হিসাব শুধু গ্রামের সাধারণ প্রান্তিক একজন কৃষকই কষেন না, হিসাব কষেন বড় বড় ব্যবসায়ীও। কারণ তাঁরাও এখন সবচেয়ে লাভজনক খাত হিসেবে বিনিয়োগ করছেন কৃষিতে।অনেকে শখের বশে কৃষি শুরু করে পরে এখানে খুঁজে পাচ্ছেন বিশাল লাভের এক ক্ষেত্র।
শৌখিনতা থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে এসে সাফল্য অর্জন করছেন অনেকেই। সাফল্য অর্জনের বহু উদাহরণ ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে দেশে। নতুন প্রজন্ম যেমন শিক্ষিত হয়ে অ্যাগ্রো বিজনেসের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে, একইভাবে বড় বড় ব্যবসায়ীও জীবনে একটু সুখের সন্ধানে ফিরে আসছেন মাটির কাছে। এমনি এক ব্যবসায়ী শিল্পোদ্যোক্তা হারুন অর রশীদ।
তিনি জীবনের অর্থ খুঁজে নিয়েছেন কৃষিতে। একজন সফল শিল্পপতি ও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। তাঁর পোশাক কারখানার সুবিশাল ছাদে তিনি গড়ে তুলেছেন মনোরম ছাদকৃষি। সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। ছাদে ফল-ফসলের এক বিশাল ক্ষেত্র গড়ে তুলেছেন। এমনকি ছাগল পালনও শুরু করেছেন।
অনেক দিন ধরে আমি ‘ছাদকৃষি’ নামে নাগরিক কৃষিকাজভিত্তিক একটি অনুষ্ঠান করছি। এই অনুষ্ঠানে বহু পেশাজীবী, বাড়ির মালিকের কৃষির প্রতি অনুরাগ দেখে অভিভূত হয়ে যাই। আজকের দিনে এই ছাদকৃষি এক অপরিহার্য উদ্যোগ। আমরা স্বপ্ন দেখি রাজধানীসহ প্রতিটি নগর-মহানগরের উপরিভাগে সবুজের এক নতুন স্তর গড়ে উঠুক। যেখানে প্রচুর ফল-ফসল উৎপাদিত হোক, একই সঙ্গে শহরগুলোর পরিবেশ হয়ে উঠুক আরও স্বাস্থ্যকর ও সজীব।
এ বিষয়গুলো শিল্পপতি হারুন অর রশীদও বিশ্বাস করেন। বছর চারেক আগে যখন তাঁর পোশাক কারখানার ছাদে অনুষ্ঠান ধারণ করতে যাই, তখন মনে হয়েছে দেশের সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদে যদি ছাদকৃষি গড়ে উঠত, তাহলে সেখানে কৃষি উৎপাদনের নতুন এক অধ্যায় সূচিত হতো। এই সময়ে এসে অনেক কারখানার ছাদেই এখন সবুজের চাষ হচ্ছে, হচ্ছে ছাদকৃষি।
হারুন অর রশীদ সেদিন বলেছিলেন, শুধু পোশাক কারখানার ছাদেই নয়, কৃষি তিনি মাঠেও করেন। তাঁর একটি সমন্বিত খামার রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদরের দাসেরগাঁওয়ে। বিশাল এলাকাজুড়ে হারুন অর রশীদের সমন্বিত কৃষি খামার। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি একরকম শৌখিনতা থেকেই ১৯৮২ সাল থেকে কৃষিকাজের চর্চাও চালু রেখেছেন তিনি। বলা যায়, কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে একরকমের অনুরাগ ও দায়িত্ব থেকেই কৃষির সঙ্গে যুক্ত থাকা। অবাক ব্যাপার হচ্ছে ৩৫ বিঘা আয়তনের খামারে তিনি কৃষির সব খাতের এক দারুণ সমন্বয় রচনা করেছেন।
দেশি-বিদেশি ফলের বাগান, শাকসবজির আবাদ, মাছ, হাঁস-মুরগি, টার্কি, ছাগল, গরু পালন সব রয়েছে। খামারের এক কোণে ছাগলের খামার। সেখানে পালন করা হচ্ছে উন্নত জাতের পাটনার ছাগল ও ভারতীয় গাড়ল। ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টির মতো ছাগল ও গাড়ল রয়েছে। হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, ছাগল ও গাড়ল ছয় মাস অন্তর বাচ্চা দেয়। ২০ থেকে ৩০টি বাচ্চা পাওয়া যায়। দুই মাস বয়সী প্রতিটি বাচ্চার দাম ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। ছয় মাস অন্তর এসব ছাগল থেকে তিন-চার লাখ টাকা আসে।
আরেক পাশে টার্কির আয়োজন। ওই খামারে বড় আকারের টার্কি রয়েছে ১০০টি। এ ছাড়া বিভিন্ন আকারের টার্কি রয়েছে প্রায় চার শর মতো। সেখান থেকে প্রতিদিন পাওয়া যায় ৩০-৩৫টি ডিম। টার্কির ডিম থেকে ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতির কারণে খরচও হচ্ছে কম। দিন দিন বড় হচ্ছে টার্কির খামার। প্রতি হালি ডিম বিক্রি করছেন ৮০০ টাকা দরে। টার্কি বিক্রি করছেন ৩০০ টাকা কেজি দরে। একেকটি এক বছর বয়সী টারকির ওজন ৮ থেকে ১০ কেজি।
আরেক পাশে গাভির খামার। ষাঁড়, গাভি, বাছুর সব মিলিয়ে ৫৫টি গরু আছে সেখানে। আগামী বছর নাগাদ খামারে ব্রাহমা জাতের মাংসের গরু লালনপালন শুরু হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি গাভির ব্রাহমা জাতের সিমেন প্রয়োগ করা হয়েছে। এখনো বাচ্চা হয়নি। দুগ্ধ খামারে প্রতিদিন দুধ পাওয়া যাচ্ছে ১০০ লিটারের মতো। ৭০ টাকা লিটার দরে সেই দুধও বিক্রি করছেন।
এসব গাভির খামারের গোবর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জৈব সার; যা এখানকার সব ফল-ফসলে ব্যবহার করা হয়। গরুর খামারে কাজ করছেন ১০ জন কর্মচারী। গরুকে খাওয়ানো হয় দানাদার খাবার আর খামারেই উৎপাদিত ঘাস। মাঠে উৎপাদিত ঘাস তো আছেই। হারুন অর রশীদ জানালেন, হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে দেখানো হাইড্রোপনিক ঘাস উৎপাদন দেখে নিজেই আবিষ্কার করে নিয়েছেন নিজস্ব এক পদ্ধতি। সেই পদ্ধতিতেই উৎপাদন করছেন ঘাস।
পুকুরে মাচা করে চাষ করা হচ্ছে সবজি। মাচার নিচে রোপণ করা হয়েছে কচু। এ ছাড়া ঝিঙা, পটোল, কুমড়াসহ অন্যান্য সবজি তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে মিশ্র ফসল, সাথি ফসল বা সমন্বিত চাষের এমন উৎকৃষ্ট উদাহরণ সত্যিই বিরল। আর সব চাষই হচ্ছে জৈবিক পদ্ধতিতে।
পুরো বাগানে দেশি-বিদেশি ফুল-ফলের গাছ। কোনো ফলই কিনে খেতে হয় না। সমন্বিত খামারের বড় অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে মাছ চাষে। রুই-কাতলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করা হয়। এসব মাছের খাবারের ব্যাপারে শতভাগ সতর্ক থাকেন তিনি। এতে মাছের আকার যেমন ভালো হচ্ছে, মাছের স্বাদও হচ্ছে তুলনামূলক বেশি। ছোট-বড় ৫টি পুকুরের ২১ বিঘা জলায়তনে বছরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় হয়।
মজার ব্যাপার হলো এই বিভিন্ন উৎপাদিত ফল-ফসল ও মাছ বা গাভির দুধ সবই নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাকি অংশ চলে যায় তাঁর পোশাক কারখানায় নিযুক্ত ১ হাজার ৫০০ শ্রমিকের কাছে। বাজার থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে এবং বিষমুক্ত ও ফ্রেশ খাবার হিসেবে মাসিক চুক্তিতে তিনি শ্রমিকদের মাঝে বিক্রি করে থাকেন। ফলে তাঁর চাষাবাদের বাজারটিও সুনিশ্চিত।
হারুন অর রশীদ বলছিলেন, এত সুদীর্ঘ আয়োজন, এমন শখ শৌখিনতা আর উৎপাদনশীল উদ্যোগের পেছনে রয়েছে টেলিভিশন।টেলিভিশনে দেখে দেখে তিনি পদক্ষেপ নেন নতুন নতুন চাষবাসের। হারুন অর রশীদ অন্য শিল্পপতিদের আহ্বান জানান, এ ধরনের সমন্বিত কৃষি উদ্যোগে যুক্ত হতে। তিনি বলেন, প্রতিটি শিল্পেই ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তবে কৃষিতে তুলনামূলক কম। ক্ষতি নেই, আছে লাভের অঙ্ক। সবচেয়ে বড় যে লাভ, তা হচ্ছে মনের তৃপ্তি। তাজা খাবার পাওয়ার সুখ।
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুযোগ সবখানেই আছে। সবাই পারেন নিজ নিজ অঙ্গনে উৎপাদনমুখী হয়ে উঠতে। হারুন অর রশীদের মতো গার্মেন্টস শিল্পোদ্যোক্তা এ দেশে বহু আছেন, কিন্তু এই বহুমুখী কর্মতৎপরতা ও উৎপাদন সাফল্য রয়েছে খুব কম মানুষের।
কৃষির প্রতি ভালোবাসা তাঁর মানসিক প্রশান্তিকে প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ প্রকৃতির এই দান সব সময় তাঁকে করছে কৃতজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি, হারুন অর রশীদের দেখাদেখি অন্যান্য শিল্পোদ্যোক্তাও যেকোনো শিল্প-বাণিজ্যের পাশাপাশি একটু জায়গা রেখে দেবেন কৃষির জন্য। যেখানে ফলবে তরতাজা ফল-ফসল। এই ফল-ফসলই বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
সময় দ্রুত চলমান। এরই সঙ্গে চলমান মানুষের জীবন-জীবিকা, চিন্তা, স্বপ্ন, সাফল্য—সবকিছুই। সময়ের এই পরিবর্তনকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধির জন্য আমরা কৃষির দিকে তাকিয়ে আছি। দুই, তিন বা চার দশকের বিবেচনায় এই খাতের মতো পরিবর্তন আর কোথাও আসেনি। একমাত্র কৃষি খাতকে সামনে রেখেই বলা যায়, প্রতিটি দিন পরিবর্তিত দিন। প্রতিটি দিন পাল্টে যাওয়া দিন। একসময় কৃষক একা কৃষি নিয়ে ভাবতেন, এখন সেই ভাবনা ভাগ হয়ে গেছে। কৃষিতে বড় ব্যবসায়ীরা এসে গেছেন।
কৃষির বাণিজ্যিক পরিধিও বিশাল আকার ধারণ করেছে। এখন কৃষির লাভ-লোকসানের হিসাব শুধু গ্রামের সাধারণ প্রান্তিক একজন কৃষকই কষেন না, হিসাব কষেন বড় বড় ব্যবসায়ীও। কারণ তাঁরাও এখন সবচেয়ে লাভজনক খাত হিসেবে বিনিয়োগ করছেন কৃষিতে।অনেকে শখের বশে কৃষি শুরু করে পরে এখানে খুঁজে পাচ্ছেন বিশাল লাভের এক ক্ষেত্র।
শৌখিনতা থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে এসে সাফল্য অর্জন করছেন অনেকেই। সাফল্য অর্জনের বহু উদাহরণ ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে দেশে। নতুন প্রজন্ম যেমন শিক্ষিত হয়ে অ্যাগ্রো বিজনেসের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে, একইভাবে বড় বড় ব্যবসায়ীও জীবনে একটু সুখের সন্ধানে ফিরে আসছেন মাটির কাছে। এমনি এক ব্যবসায়ী শিল্পোদ্যোক্তা হারুন অর রশীদ।
তিনি জীবনের অর্থ খুঁজে নিয়েছেন কৃষিতে। একজন সফল শিল্পপতি ও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। তাঁর পোশাক কারখানার সুবিশাল ছাদে তিনি গড়ে তুলেছেন মনোরম ছাদকৃষি। সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। ছাদে ফল-ফসলের এক বিশাল ক্ষেত্র গড়ে তুলেছেন। এমনকি ছাগল পালনও শুরু করেছেন।
অনেক দিন ধরে আমি ‘ছাদকৃষি’ নামে নাগরিক কৃষিকাজভিত্তিক একটি অনুষ্ঠান করছি। এই অনুষ্ঠানে বহু পেশাজীবী, বাড়ির মালিকের কৃষির প্রতি অনুরাগ দেখে অভিভূত হয়ে যাই। আজকের দিনে এই ছাদকৃষি এক অপরিহার্য উদ্যোগ। আমরা স্বপ্ন দেখি রাজধানীসহ প্রতিটি নগর-মহানগরের উপরিভাগে সবুজের এক নতুন স্তর গড়ে উঠুক। যেখানে প্রচুর ফল-ফসল উৎপাদিত হোক, একই সঙ্গে শহরগুলোর পরিবেশ হয়ে উঠুক আরও স্বাস্থ্যকর ও সজীব।
এ বিষয়গুলো শিল্পপতি হারুন অর রশীদও বিশ্বাস করেন। বছর চারেক আগে যখন তাঁর পোশাক কারখানার ছাদে অনুষ্ঠান ধারণ করতে যাই, তখন মনে হয়েছে দেশের সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদে যদি ছাদকৃষি গড়ে উঠত, তাহলে সেখানে কৃষি উৎপাদনের নতুন এক অধ্যায় সূচিত হতো। এই সময়ে এসে অনেক কারখানার ছাদেই এখন সবুজের চাষ হচ্ছে, হচ্ছে ছাদকৃষি।
হারুন অর রশীদ সেদিন বলেছিলেন, শুধু পোশাক কারখানার ছাদেই নয়, কৃষি তিনি মাঠেও করেন। তাঁর একটি সমন্বিত খামার রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদরের দাসেরগাঁওয়ে। বিশাল এলাকাজুড়ে হারুন অর রশীদের সমন্বিত কৃষি খামার। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি একরকম শৌখিনতা থেকেই ১৯৮২ সাল থেকে কৃষিকাজের চর্চাও চালু রেখেছেন তিনি। বলা যায়, কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে একরকমের অনুরাগ ও দায়িত্ব থেকেই কৃষির সঙ্গে যুক্ত থাকা। অবাক ব্যাপার হচ্ছে ৩৫ বিঘা আয়তনের খামারে তিনি কৃষির সব খাতের এক দারুণ সমন্বয় রচনা করেছেন।
দেশি-বিদেশি ফলের বাগান, শাকসবজির আবাদ, মাছ, হাঁস-মুরগি, টার্কি, ছাগল, গরু পালন সব রয়েছে। খামারের এক কোণে ছাগলের খামার। সেখানে পালন করা হচ্ছে উন্নত জাতের পাটনার ছাগল ও ভারতীয় গাড়ল। ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টির মতো ছাগল ও গাড়ল রয়েছে। হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, ছাগল ও গাড়ল ছয় মাস অন্তর বাচ্চা দেয়। ২০ থেকে ৩০টি বাচ্চা পাওয়া যায়। দুই মাস বয়সী প্রতিটি বাচ্চার দাম ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। ছয় মাস অন্তর এসব ছাগল থেকে তিন-চার লাখ টাকা আসে।
আরেক পাশে টার্কির আয়োজন। ওই খামারে বড় আকারের টার্কি রয়েছে ১০০টি। এ ছাড়া বিভিন্ন আকারের টার্কি রয়েছে প্রায় চার শর মতো। সেখান থেকে প্রতিদিন পাওয়া যায় ৩০-৩৫টি ডিম। টার্কির ডিম থেকে ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতির কারণে খরচও হচ্ছে কম। দিন দিন বড় হচ্ছে টার্কির খামার। প্রতি হালি ডিম বিক্রি করছেন ৮০০ টাকা দরে। টার্কি বিক্রি করছেন ৩০০ টাকা কেজি দরে। একেকটি এক বছর বয়সী টারকির ওজন ৮ থেকে ১০ কেজি।
আরেক পাশে গাভির খামার। ষাঁড়, গাভি, বাছুর সব মিলিয়ে ৫৫টি গরু আছে সেখানে। আগামী বছর নাগাদ খামারে ব্রাহমা জাতের মাংসের গরু লালনপালন শুরু হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি গাভির ব্রাহমা জাতের সিমেন প্রয়োগ করা হয়েছে। এখনো বাচ্চা হয়নি। দুগ্ধ খামারে প্রতিদিন দুধ পাওয়া যাচ্ছে ১০০ লিটারের মতো। ৭০ টাকা লিটার দরে সেই দুধও বিক্রি করছেন।
এসব গাভির খামারের গোবর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জৈব সার; যা এখানকার সব ফল-ফসলে ব্যবহার করা হয়। গরুর খামারে কাজ করছেন ১০ জন কর্মচারী। গরুকে খাওয়ানো হয় দানাদার খাবার আর খামারেই উৎপাদিত ঘাস। মাঠে উৎপাদিত ঘাস তো আছেই। হারুন অর রশীদ জানালেন, হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে দেখানো হাইড্রোপনিক ঘাস উৎপাদন দেখে নিজেই আবিষ্কার করে নিয়েছেন নিজস্ব এক পদ্ধতি। সেই পদ্ধতিতেই উৎপাদন করছেন ঘাস।
পুকুরে মাচা করে চাষ করা হচ্ছে সবজি। মাচার নিচে রোপণ করা হয়েছে কচু। এ ছাড়া ঝিঙা, পটোল, কুমড়াসহ অন্যান্য সবজি তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে মিশ্র ফসল, সাথি ফসল বা সমন্বিত চাষের এমন উৎকৃষ্ট উদাহরণ সত্যিই বিরল। আর সব চাষই হচ্ছে জৈবিক পদ্ধতিতে।
পুরো বাগানে দেশি-বিদেশি ফুল-ফলের গাছ। কোনো ফলই কিনে খেতে হয় না। সমন্বিত খামারের বড় অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে মাছ চাষে। রুই-কাতলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করা হয়। এসব মাছের খাবারের ব্যাপারে শতভাগ সতর্ক থাকেন তিনি। এতে মাছের আকার যেমন ভালো হচ্ছে, মাছের স্বাদও হচ্ছে তুলনামূলক বেশি। ছোট-বড় ৫টি পুকুরের ২১ বিঘা জলায়তনে বছরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় হয়।
মজার ব্যাপার হলো এই বিভিন্ন উৎপাদিত ফল-ফসল ও মাছ বা গাভির দুধ সবই নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাকি অংশ চলে যায় তাঁর পোশাক কারখানায় নিযুক্ত ১ হাজার ৫০০ শ্রমিকের কাছে। বাজার থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে এবং বিষমুক্ত ও ফ্রেশ খাবার হিসেবে মাসিক চুক্তিতে তিনি শ্রমিকদের মাঝে বিক্রি করে থাকেন। ফলে তাঁর চাষাবাদের বাজারটিও সুনিশ্চিত।
হারুন অর রশীদ বলছিলেন, এত সুদীর্ঘ আয়োজন, এমন শখ শৌখিনতা আর উৎপাদনশীল উদ্যোগের পেছনে রয়েছে টেলিভিশন।টেলিভিশনে দেখে দেখে তিনি পদক্ষেপ নেন নতুন নতুন চাষবাসের। হারুন অর রশীদ অন্য শিল্পপতিদের আহ্বান জানান, এ ধরনের সমন্বিত কৃষি উদ্যোগে যুক্ত হতে। তিনি বলেন, প্রতিটি শিল্পেই ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তবে কৃষিতে তুলনামূলক কম। ক্ষতি নেই, আছে লাভের অঙ্ক। সবচেয়ে বড় যে লাভ, তা হচ্ছে মনের তৃপ্তি। তাজা খাবার পাওয়ার সুখ।
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুযোগ সবখানেই আছে। সবাই পারেন নিজ নিজ অঙ্গনে উৎপাদনমুখী হয়ে উঠতে। হারুন অর রশীদের মতো গার্মেন্টস শিল্পোদ্যোক্তা এ দেশে বহু আছেন, কিন্তু এই বহুমুখী কর্মতৎপরতা ও উৎপাদন সাফল্য রয়েছে খুব কম মানুষের।
কৃষির প্রতি ভালোবাসা তাঁর মানসিক প্রশান্তিকে প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ প্রকৃতির এই দান সব সময় তাঁকে করছে কৃতজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি, হারুন অর রশীদের দেখাদেখি অন্যান্য শিল্পোদ্যোক্তাও যেকোনো শিল্প-বাণিজ্যের পাশাপাশি একটু জায়গা রেখে দেবেন কৃষির জন্য। যেখানে ফলবে তরতাজা ফল-ফসল। এই ফল-ফসলই বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে