মরিচ চাষে ভাগ্যবদল কৃষকের

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
Thumbnail image

জানা গেছে, ঘিওরের প্রায় সব এলাকাতেই কমবেশি মরিচ চাষ হয়। তবে মৌহালী, বড়টিয়া, রাধাকান্তপুর, কালাচাঁদপুর, সাহিলী, শোলধারা, তাড়াইল, কাকজোর এলাকায় মরিচ চাষ বেশি হচ্ছে।

এদিকে পার্শ্ববর্তী শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুরে গড়ে উঠেছে রাতের বাজার। শিবালয়ের পাশাপাশি ঘিওরের অনেক এলাকার মরিচ ও শাকসবজি তোলা হয় এ রাতের বাজারে। এখান থেকে মরিচ চলে যায় ঢাকায়।

স্থানীয়ভাবে চালু হওয়া রাতের কৃষিবাজারকে ‘কালেকশন সেন্টার’ ঘোষণা করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এখানে প্রতি রাতে ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করতে ঢাকায় নেওয়া হয়। এ মরিচগুলো দুবাই, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার মৌহালী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মরিচ চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। প্রখর দাবদাহ উপেক্ষা করে মরিচ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ কাজ করছেন তাঁরা। নারী ও শিশুরা এ কাজে কৃষকদের সহায়তা করছে।

মৌহালী গ্রামের কৃষক জব্বার মিয়া বলেন, ‘এ বছর ৩ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। আমার ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং মৌসুম শেষে প্রায় ৮ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছি।’

একই এলাকার কৃষক মো. শাহাদত হোসেন বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আবাদ করে ক্ষতির মুখে পড়েছি। তবে মরিচ আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে। আমাদের অনুরোধ সরকার যেন মরিচ বিদেশে যাওয়া চালু রাখে।’

ঘিওর হাটে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে আসা উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের কৃষক মো. মুন্নাফ মোল্লা বলেন, ‘এ বছর তিন বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। সময়মতো সার, কীটনাশক প্রয়োগ এবং পরিচর্যার ফলে যথেষ্ট ফলন হয়েছে।’

মহাদেবপুর ইউনিয়ন কৃষক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আব্দুর রউফ বলেন, ‘আমরা ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করছি। এক সময় ১১০ টাকা কেজিও বিক্রি করেছি। আমাদের এ বাজার থেকে বিক্রিত সব মরিচই দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে। বাজার থেকে মরিচ কিনে রাতেই তা ঢাকায় নিয়ে প্যাকেট করে বিদেশে পাঠানো হয়। 
আব্দুর রউফ বলেন, এ বছর আমাদের এলাকায় কমপক্ষে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক কারেন্ট মরিচ উৎপাদিত হবে এবং এতে ১০ কোটি টাকার ওপরে রপ্তানি আয় হবে বলে আশাবাদী।

শিবালয়ের মহাদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রঘুনাথপুরে গড়ে ওঠা কৃষিবাজার কমিটির সভাপতি মো. শাহজাহান বলেন, এ এলাকার কৃষকেরা হয়রানিমুক্তভাবে রাতের এ বাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। এ এলাকায় কোটি টাকার কৃষিপণ্য রপ্তানি করা সম্ভব, যদি সরকারিভাবে সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা হয়। 
২১ এপ্রিল মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ কৃষকদের আয়োজনে রাতের বাজারের সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি কৃষক সমিতিকে শতকরা ৭০ ভাগ সরকারি ভর্তুকিতে কৃষি সরঞ্জাম দেওয়ার ঘোষণা দেন।

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর মরিচের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি প্রসারে আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি।’  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত