স্কুলজীবনেই অস্ত্রধারী ক্যাডার ছিলেন মুন্না

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪: ৩৫
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ৫৭

চট্টগ্রামে ইতালি থেকে পার্সেলে করে অত্যাধুনিক পিস্তল পাঠানো রাজীব বড়ুয়া ওরফে মুন্না আগ্রাবাদের পুরোনো ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। স্কুলজীবন থেকেই তিনি অস্ত্রধারী ক্যাডার ছিলেন। স্বভাবেও ছিলেন উগ্র। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। অপরদিকে যাঁর ঠিকানায় অস্ত্র আসে, সেই মজুমদার কামরুল হাসান মুন্নার শৈশবের বন্ধু। দুজনই আগ্রাবাদের সিজিএস কলোনিতে বেড়ে ওঠেন। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গত রোববার গৃহস্থালি পণ্য ঘোষণা দিয়ে ইতালি থেকে আসে একটি পার্সেল। এতে বিভিন্ন মালামালের সঙ্গে দুটি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও ৫০টি গুলি জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় পরদিন সোমবার বন্দর থানায় কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে পার্সেলের প্রেরক ও প্রাপকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পার্সেলটি আসে ইতালির রোমা শহরের টিবুরিনাপ্রবাসী রাজীব বড়ুয়া ওরফে মুন্নার ঠিকানা থেকে। প্রাপক ছিলেন আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনির বাসিন্দা মজুমদার কামরুল হাসান (৪০)। ওই অস্ত্রগুলো ধরা পড়ার পর আত্মগোপনে চলে যান মজুমদার কামরুল হাসান। পরে এ মামলায় গত সোমবার রাত ১১টার দিকে নগরীর হালিশহর আই ব্লকের ৬ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ডবলমুরিং থানা-পুলিশ।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মো. আব্দুল ওয়ারিশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, অভিযুক্ত মজুমদার কামরুল হাসানের বিষয়ে বন্দর থানা-পুলিশের রিকুইজিশন ছিল। এর ভিত্তিতে সোমবার রাতে ডবলমুরিং থানা-পুলিশের একটি টিম হালিশহরের একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে অভিযুক্তকে বন্দর থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

তবে ইতালি থেকে চট্টগ্রামে আসা অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় দুটি পিস্তল কী উদ্দেশ্যে এসেছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। যাঁর নামে পিস্তল দুটি এসেছে তাঁকে গ্রেপ্তারের পরও অস্ত্রগুলোর মালিকানা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের বন্দর জোনের উপকমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, ‘মামলাটি তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এতে বিষয়টি নিয়ে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। অস্ত্রগুলো কার জন্য আনা হয়েছিল, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। আমরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’

মুন্নার স্কুলজীবনের সহপাঠী দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন মুন্না। ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ার সময়ই তিনি স্কুলটিতে অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান। তাঁর কাছে সব সময় অস্ত্র থাকত।

উগ্র স্বভাবের মুন্না দেড় যুগ আগে চট্টগ্রাম ওমরগণি এমইএস কলেজভিত্তিক এক ছাত্রলীগ নেতার প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। সে সময় কলেজটিতে আইয়ুব-মামুনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে ছিল। এ ছাড়া একসময় ছাত্রদলের ক্যাডার হিসেবেও কাজ করেন মুন্না। তাঁর বিরুদ্ধে তখন বেশ কয়েকটি মামলাও হয়। পুলিশ বলেছে, এসব মামলায় তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছেন একাধিকবার।

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ সময়ের দিকে ইতালিতে পাড়ি জমান রাজীব বড়ুয়া ওরফে মুন্না বড়ুয়া। অভিযোগ রয়েছে, মামলার ভয়ে তিনি পালিয়ে যান। সেখানে গিয়ে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তবে আড়াই বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে জানা গেছে, জেলার রাউজান উপজেলার বাসিন্দা মুন্না সম্প্রতি দেশে এসেছিলেন। এ সময় তিনি আগ্রাবাদে আড্ডাও দেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাউজানের ডাবুয়ার এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী শরণ বড়ুয়ার চাচাতো ভাই মুন্না। ফলে তাঁর প্রভাবও কাজে লাগাতেন। ২০০০ সালের ৭ মার্চ পশ্চিম রাউজানে নিহত হন শরণ।

অপর দিকে মজুমদার কামরুল হাসান চট্টগ্রামের আয়কর বিভাগের কর্মী। তিনি চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর অফিস সহায়ক পদে কর্মরত রয়েছেন। চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনিতেই তাঁর বাসা। বর্তমানে আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও রয়েছেন কামরুল।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার আসামিকে আদালতের অনুমতি নিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছি। তাঁকে থানায় এনে এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত