বদলি-আতঙ্কে রাজারবাগে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ সদস্যরা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ৩১

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে নেতৃত্ব দেওয়া অধস্তন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং কয়েকজনকে রাজধানীর বাইরে বদলি করা হয়েছে। কাউকে কাউকে সতর্ক করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পুলিশের অধস্তন সদস্যদের মধ্যে মামলার ভয় ও বদলি-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পুলিশের সব বিভাগে বদলি ও পদায়ন চলছে। ওই আন্দোলনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। আর মামলা করা হয়েছে বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উসকানি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে। অধস্তন সদস্যদের ১১ দফা দাবি নিয়ে কাজ চলছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে থানা ও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র-গুলি লুট করে বিক্ষুব্ধ জনতা। নিহত হন পুলিশের ৪৬ জন সদস্য। 

পুড়িয়ে দেওয়া হয় ২১৬টি স্থাপনা। পুলিশ হত্যা-স্থাপনায় হামলার ঘটনার বিচার, নিয়োগে স্বচ্ছতা, পুলিশ আইনের সংস্কারসহ ১১ দফা দাবিতে পরদিন ৬ আগস্ট থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বিক্ষোভ ও লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেন পুলিশের অধস্তন সদস্যরা। এতে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী সংগঠন। ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠকের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল শোয়াইব হাসান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের অধস্তন সদস্যদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন ১৯ জন সমন্বয়ক। তাঁদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব ছিলেন। তাঁরা ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র বলছে, ওই সব লেখালেখিতে উসকানির কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় পুলিশে শৃঙ্খলা ফেরাতে দেরি হয়। তাই কারও কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরপর ফেসবুকে খোলা ‘পুলিশ সংস্কার আন্দোলন’ নামের পেজ বন্ধ করা হয়েছে।

সূত্র বলেছে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং সচিবালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন সদস্যকে ইতিমধ্যে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন পরিদর্শককে মানিকগঞ্জে, দুজন উপপরিদর্শকের (এসআই) মধ্যে একজনকে চট্টগ্রামে, একজন সার্জেন্টকে ময়মনসিংহে এবং তিনজন কনস্টেবলকে বিভিন্ন রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। বদলির প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন আরও কয়েকজন। তাঁদের কয়েকজনকে ডেকে সতর্ক করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করলে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে তাঁদের। এ নিয়ে অধস্তন সদস্যদের মধ্যে বদলি-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ইতিমধ্যে বদলি হওয়া এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা কোনো শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেননি। পুলিশ বাহিনীর স্বার্থে কথা বলেছেন। তবে এখন তাঁদের বদলি করা হয়েছে।

এক নারী সার্জেন্ট অভিযোগ করেন, তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁকে ডেকে সতর্ক করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কনস্টেবল বলেন, সমন্বয়কের তালিকায় তাঁর নাম কারা দিয়েছেন, তা জানেন না। ওই তালিকায় নাম দেখে বদলি করলে নতুন কর্মস্থলে যাবেন।

এদিকে অধস্তন পুলিশের ওই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক কনস্টেবল শোয়াইবুর রহমান ও নায়েক সজিব সরকারের বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দুই দফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়। মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা ছড়ানোর জন্য উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে আন্দোলনের কারণে কাউকে বদলি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর। তিনি বলেন, কেবল অধস্তন নয়, ঊর্ধ্বতনদেরও বদলি করা হয়েছে। তাঁদের ১১ দফা দাবি নিয়ে কমিটি কাজ করছে। কমিটি সুপারিশ করলে দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার বিষয়টি ভিন্ন।

জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে পুলিশের সব সদস্যের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির কাছে জবাবদিহি নয়, তার কাজের জন্য কেবল বিচার বিভাগের কাছে জবাবদিহির জায়গা নিশ্চিত করতে পারলে সবার জন্য মঙ্গল।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত