খান রফিক, বরিশাল
সহিংসতায় একের পর এক লাশ পড়ছে বরিশালের নদীঘেরা দুই উপজেলা হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে। রাজনৈতিক কারণে এক দশকে ১০ খুনের ঘটনা ঘটেছে বরিশাল-৪ আসনের আওতাধীন এই অঞ্চলে। সর্বশেষ গত শনিবার খুন হন জামাল মাঝি নামের এক আওয়ামী লীগের নেতা।
মেঘনা ও শাখানদীবেষ্টিত সবুজ এই অঞ্চলে বেড়ে চলা সহিংসতার পেছনে দুই নেতার দ্বন্দ্বকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের একজন হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথ এবং অন্যজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ড. শাম্মী আহমেদ। তবে ক্ষমতার এই লড়াইয়ে শাম্মী একা নন, তাঁর পাশে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া পংকজের অবস্থান মাঠে বেশ শক্তপোক্ত। মেহেন্দীগঞ্জের আলিমাবাদ ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া পংকজ উপজেলা আওয়ামী লীগে কোণঠাসা হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বড় অংশই তাঁর অনুসারী।
গত শনিবার হিজলা উপজেলার ধুলখোলায় খুন হওয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা জামাল মাঝি পংকজ নাথের অনুসারী। অভিযোগ উঠেছে, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের অনুসারী ধুলখোলা ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালীর নেতৃত্বে চালানো হামলায় খুন হন জামাল মাঝি। আগের দিন একই স্থানে পংকজের অনুসারীরা সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবককে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেন। এর জেরে শনিবারের ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়ের হোসেন বলেন, নিহত জামাল মাঝি সংসদ সদস্য পংকজ গ্রুপের লোক ছিলেন। এর সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ড. শাম্মী আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে পুলিশ সুপারের কথা হয়েছে। বলেছি, সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিন। ১০ বছর ধরে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষ মারা যাচ্ছেন। সুস্থধারার রাজনীতি ফিরে না এলে এ হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে না।’
১০ বছরে যত খুন
২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভাসানচর ইউনিয়নে নৌকার কর্মী চারু মিয়াকে হত্যার মধ্য দিয়ে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে খুনোখুনির রাজনীতি শুরু হয়। চারু মিয়ার রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হন হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নে নান্নু মেম্বার।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধে ২০২১ সালের ২০ মে খুন হন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উত্তর উলানিয়া ইউনিয়নের সলদি গ্রামের আব্দুস ছাত্তার ঢালী ও তার প্রতিবেশী সিদ্দিকুর রহমান। একই বছরের ১১ এপ্রিল মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন শাহিদ চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম সরদার।
এছাড়া ১০ বছরের বিভিন্ন সময়ে মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার চরহোগলায় ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম হাওলাদার, পৌর এলাকার গবিন্দপুরে আফসার হোসেন, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন ও শ্রীপুরে দুইজন রাজনৈতিক সহিংসতায় খুন হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংসদ সদস্য পংকজের অনুসারী হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, জামাল মাঝিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। পুলিশ সেখানে শুক্রবার সারা দিন ছিল। তারপরও যদি খুন হয় তাহলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
অন্যদিকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ড. শাম্মী আহমেদের অনুসারী হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপু সিকদার বলেন, ‘আমরা খুনের রাজনীতি করি না। যাঁরা দলের সিদ্ধান্ত মানেন না, তাঁরাই এসব করেন।’
পংকজের উত্থান-পতন
শাম্মী আহমেদের বাবা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে গেলে বরিশাল-৪ আসনটি লম্বা সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেখানে প্রতিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। ১৮ বছর পর আওয়ামী লীগের পংকজ নাথ আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বরিশালে অবস্থান পোক্ত করতে থাকেন পংকজ। হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জসহ পুরো বরিশালে তাঁর প্রভাব এতটাই বাড়তে থাকে যে, জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরও নিজের বিরোধী শিবিরে দাঁড় করিয়ে দেন তিনি।
তবে পংকজ বড় ধাক্কা খান ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময়। এ সময় তাঁকে দলীয় কার্যক্রমে অনেকটা নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়। আর এতে পালে হাওয়া পান পংকজবিরোধীরা। এরই মধ্যে ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়ে পংকজের। ওই নির্বাচনে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রার্থী হেরে যান। বিপরীতে জিতে আসেন পংকজের অনুসারীরা।
২০২২ সালের ২৮ আগস্ট মেহেন্দীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক মারামারি হয়। তখন একটি হাসপাতালে ঢুকে অন্য গ্রুপের চিকিৎসাধীন নেতা-কর্মীদের পেটানো হয়। অভিযোগ ওঠে, এই হামলাকারীরা পংকজের অনুসারী। এ ঘটনার পর পংকজকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয় আওয়ামী লীগ।
শাম্মীর সঙ্গে বিরোধ তুঙ্গে
ড. শাম্মীর সঙ্গে পংকজের বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে গত বছরের অক্টোবরে তাঁর বাবাকে নিয়ে পংকজের বক্তব্যকে ঘিরে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে এক অনুষ্ঠানে পংকজ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে খুনের পর মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকায় এমপি হোস্টেলে হাঁসের মাংস ও খিচুড়ি খেয়ে আমোদ-ফুর্তি করছেন। সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে বরিশালে এসেছিলেন। তাঁর লোক কামাল খানসহ (উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান) অন্যরা মেহেন্দীগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেঙে উল্লাস করেছেন।’
পংকজের এমন বেফাঁস বক্তব্যের পর শাম্মীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ তুঙ্গে ওঠে, যার রেশ দেখা যায় গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এই নির্বাচনে শাম্মী আহমেদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে তাঁর নির্বাচন ঠেকে যায় পংকজের করা অভিযোগে। পংকজের অভিযোগ ছিল, শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা গোপন করেছেন। এই অভিযোগে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায় শাম্মীর, আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পংকজ।
থেমে নেই খুনখারাবি
পংকজ নাথ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরে শাম্মী আহমেদকেও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দুজন সংসদ সদস্য হলেও থেমে নেই ক্ষমতার লড়াই, যার সর্বশেষ বলি জামাল মাঝি।
এ বিষয়ে পংকজ নাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ড. শাম্মীর লোকজন জামাল মাঝিকে খুন করেছেন। এর দায় শাম্মী এবং তাঁর মদদদাতারা এড়াতে পারবেন না। জামাল তাঁর নির্বাচন করায় শাম্মী লোক দিয়ে জামালকে আরও কয়েকবার কুপিয়েছে। শাম্মী ওসি এবং এসপিকে গালাগাল করেছেন। শুক্রবার হিজলা থানার ওসি (তদন্ত) দীপংকরের উপস্থিতিতে ধুলখোলায় তাঁর লোকজনকে মারধর ও হামলা করে ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালীর বাহিনী।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হিজলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) এস এম বায়জিদ ইবনে আকবর আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি জামাল মাঝি হত্যায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।
এসব খুনোখুনির প্রভাবে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের মানুষ আরও পিছিয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বরিশাল নগর সম্পাদক রফিকুল আলম। তিনি বলেন, দুই উপজেলায় বারবার ক্ষমতাসীন দলের লাশ পড়ছে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে পঙ্কজ এবং শাম্মিকে দলীয় হাইকমান্ড থেকে থামাতে হবে। তা না হলে ওই এলাকায় আওয়ামী লীগকে চরম খেসারত দিতে হবে।
সহিংসতায় একের পর এক লাশ পড়ছে বরিশালের নদীঘেরা দুই উপজেলা হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে। রাজনৈতিক কারণে এক দশকে ১০ খুনের ঘটনা ঘটেছে বরিশাল-৪ আসনের আওতাধীন এই অঞ্চলে। সর্বশেষ গত শনিবার খুন হন জামাল মাঝি নামের এক আওয়ামী লীগের নেতা।
মেঘনা ও শাখানদীবেষ্টিত সবুজ এই অঞ্চলে বেড়ে চলা সহিংসতার পেছনে দুই নেতার দ্বন্দ্বকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের একজন হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথ এবং অন্যজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ড. শাম্মী আহমেদ। তবে ক্ষমতার এই লড়াইয়ে শাম্মী একা নন, তাঁর পাশে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া পংকজের অবস্থান মাঠে বেশ শক্তপোক্ত। মেহেন্দীগঞ্জের আলিমাবাদ ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া পংকজ উপজেলা আওয়ামী লীগে কোণঠাসা হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বড় অংশই তাঁর অনুসারী।
গত শনিবার হিজলা উপজেলার ধুলখোলায় খুন হওয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা জামাল মাঝি পংকজ নাথের অনুসারী। অভিযোগ উঠেছে, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের অনুসারী ধুলখোলা ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালীর নেতৃত্বে চালানো হামলায় খুন হন জামাল মাঝি। আগের দিন একই স্থানে পংকজের অনুসারীরা সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবককে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেন। এর জেরে শনিবারের ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়ের হোসেন বলেন, নিহত জামাল মাঝি সংসদ সদস্য পংকজ গ্রুপের লোক ছিলেন। এর সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ড. শাম্মী আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে পুলিশ সুপারের কথা হয়েছে। বলেছি, সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিন। ১০ বছর ধরে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষ মারা যাচ্ছেন। সুস্থধারার রাজনীতি ফিরে না এলে এ হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে না।’
১০ বছরে যত খুন
২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভাসানচর ইউনিয়নে নৌকার কর্মী চারু মিয়াকে হত্যার মধ্য দিয়ে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে খুনোখুনির রাজনীতি শুরু হয়। চারু মিয়ার রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হন হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নে নান্নু মেম্বার।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধে ২০২১ সালের ২০ মে খুন হন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উত্তর উলানিয়া ইউনিয়নের সলদি গ্রামের আব্দুস ছাত্তার ঢালী ও তার প্রতিবেশী সিদ্দিকুর রহমান। একই বছরের ১১ এপ্রিল মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন শাহিদ চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম সরদার।
এছাড়া ১০ বছরের বিভিন্ন সময়ে মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার চরহোগলায় ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম হাওলাদার, পৌর এলাকার গবিন্দপুরে আফসার হোসেন, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন ও শ্রীপুরে দুইজন রাজনৈতিক সহিংসতায় খুন হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংসদ সদস্য পংকজের অনুসারী হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, জামাল মাঝিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। পুলিশ সেখানে শুক্রবার সারা দিন ছিল। তারপরও যদি খুন হয় তাহলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
অন্যদিকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ড. শাম্মী আহমেদের অনুসারী হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপু সিকদার বলেন, ‘আমরা খুনের রাজনীতি করি না। যাঁরা দলের সিদ্ধান্ত মানেন না, তাঁরাই এসব করেন।’
পংকজের উত্থান-পতন
শাম্মী আহমেদের বাবা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে গেলে বরিশাল-৪ আসনটি লম্বা সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেখানে প্রতিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। ১৮ বছর পর আওয়ামী লীগের পংকজ নাথ আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বরিশালে অবস্থান পোক্ত করতে থাকেন পংকজ। হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জসহ পুরো বরিশালে তাঁর প্রভাব এতটাই বাড়তে থাকে যে, জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরও নিজের বিরোধী শিবিরে দাঁড় করিয়ে দেন তিনি।
তবে পংকজ বড় ধাক্কা খান ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময়। এ সময় তাঁকে দলীয় কার্যক্রমে অনেকটা নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়। আর এতে পালে হাওয়া পান পংকজবিরোধীরা। এরই মধ্যে ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়ে পংকজের। ওই নির্বাচনে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রার্থী হেরে যান। বিপরীতে জিতে আসেন পংকজের অনুসারীরা।
২০২২ সালের ২৮ আগস্ট মেহেন্দীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক মারামারি হয়। তখন একটি হাসপাতালে ঢুকে অন্য গ্রুপের চিকিৎসাধীন নেতা-কর্মীদের পেটানো হয়। অভিযোগ ওঠে, এই হামলাকারীরা পংকজের অনুসারী। এ ঘটনার পর পংকজকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয় আওয়ামী লীগ।
শাম্মীর সঙ্গে বিরোধ তুঙ্গে
ড. শাম্মীর সঙ্গে পংকজের বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে গত বছরের অক্টোবরে তাঁর বাবাকে নিয়ে পংকজের বক্তব্যকে ঘিরে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে এক অনুষ্ঠানে পংকজ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে খুনের পর মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকায় এমপি হোস্টেলে হাঁসের মাংস ও খিচুড়ি খেয়ে আমোদ-ফুর্তি করছেন। সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে বরিশালে এসেছিলেন। তাঁর লোক কামাল খানসহ (উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান) অন্যরা মেহেন্দীগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেঙে উল্লাস করেছেন।’
পংকজের এমন বেফাঁস বক্তব্যের পর শাম্মীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ তুঙ্গে ওঠে, যার রেশ দেখা যায় গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এই নির্বাচনে শাম্মী আহমেদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে তাঁর নির্বাচন ঠেকে যায় পংকজের করা অভিযোগে। পংকজের অভিযোগ ছিল, শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা গোপন করেছেন। এই অভিযোগে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায় শাম্মীর, আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পংকজ।
থেমে নেই খুনখারাবি
পংকজ নাথ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরে শাম্মী আহমেদকেও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দুজন সংসদ সদস্য হলেও থেমে নেই ক্ষমতার লড়াই, যার সর্বশেষ বলি জামাল মাঝি।
এ বিষয়ে পংকজ নাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ড. শাম্মীর লোকজন জামাল মাঝিকে খুন করেছেন। এর দায় শাম্মী এবং তাঁর মদদদাতারা এড়াতে পারবেন না। জামাল তাঁর নির্বাচন করায় শাম্মী লোক দিয়ে জামালকে আরও কয়েকবার কুপিয়েছে। শাম্মী ওসি এবং এসপিকে গালাগাল করেছেন। শুক্রবার হিজলা থানার ওসি (তদন্ত) দীপংকরের উপস্থিতিতে ধুলখোলায় তাঁর লোকজনকে মারধর ও হামলা করে ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালীর বাহিনী।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হিজলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) এস এম বায়জিদ ইবনে আকবর আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি জামাল মাঝি হত্যায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।
এসব খুনোখুনির প্রভাবে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের মানুষ আরও পিছিয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বরিশাল নগর সম্পাদক রফিকুল আলম। তিনি বলেন, দুই উপজেলায় বারবার ক্ষমতাসীন দলের লাশ পড়ছে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে পঙ্কজ এবং শাম্মিকে দলীয় হাইকমান্ড থেকে থামাতে হবে। তা না হলে ওই এলাকায় আওয়ামী লীগকে চরম খেসারত দিতে হবে।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে