কোন্দলেই নৌকার ভরাডুবি

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬: ৩৮
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৩৫

তৃতীয় ধাপে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের মধ্যে মাত্র চারটিতে জয় পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। বাকি ১০টির মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও একটিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন।

এর মধ্যে একাধিক ইউপিতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই আসতে পারেননি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দলটির অন্তর্কোন্দলের কারণেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের এই ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতা ও সমর্থকেরা। পাশাপাশি প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তৃণমুলকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই এই ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং কুষ্টিয়া-১ আসনের সাংসদ আ ক ম সারোয়ার জাহান বাদশা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দীন রিমনের বাড়ি দৌলতপুর উপজেলা ফিলিপনগর ইউনিয়নে। ৩য় ধাপের নির্বাচনে এই দুই নেতার ইউনিয়নে হেরেছে নৌকা সমর্থিত প্রার্থী একেএম ফজলুল হক কবিরাজ। দুই হাজার ৫৪৭ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে জয় তুলে নিয়েছেন দলটির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নঈমুদ্দীন সেন্টু।

ফিলিপনগর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ, নির্বাচনে দলীয় নেতারা মঞ্চে এক রকম বক্তব্য রাখলেও ভেতরে-ভেতরে তাঁরা অন্য খেলা খেলেছেন। যার কারণে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ নেতা যাঁর যাঁর ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, এ কারণে ১৪টি ইউপির মধ্যে মাত্র ৪টি জয়ী হয়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। বাকি ইউপিতে দলের বিদ্রোহীরা জিতেছেন। এমনকি বিএনপির একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তৃণমুলকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই এই ভরাডুবি হয়েছে।

সাধারণ মানুষ ও দলীয় কর্মীরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে এই উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান চেয়ারম্যানদেরই নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। একাধিকবার চেয়ারম্যান থাকায় অনেকের বিরুদ্ধে আছে নানা অভিযোগ। তাঁদেরই আবার নতুন করে মনোনয়ন দেওয়ায় দলের মধ্যে কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। আবার এই উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আছে একাধিক ভিভাজন। ফলে মনোনয়নের ক্ষেত্রে যে গ্রুপের প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে, সেই ইউনিয়নে অন্য পক্ষের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।

আবার এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে এমন অনেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। তাই তারাও অবস্থান নেন নৌকার বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে দলের একাধীক স্থানীয় নেতা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বলে অভিযোগ পরাজিত প্রার্থীদের। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে অধিকাংশ ইউনিয়নের নেতারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এ ছাড়া কিছু নেতার হুমকিতে সাধারণ কর্মী ও ভোটারেরা মুখ ফিরিয়ে নেন, যার খেসারত দিতে হয়েছে হারের মাধ্যমে।

আড়িয়া ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাঈদ আনছারীর পথসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা প্রকাশ্যে সিল মারাসহ হুমকি দিয়েছিলেন। সেই ইউপিতে নৌকার প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ৮৫ ভোট। আর বিদ্রোহী প্রার্থী পেয়েছেন ১০ হাজার ৭০৭ ভোট।

বোয়ালিয়া ইউপিতে নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন ৩ হাজার ২১৫ ভোট। সেখানে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছেন ৬ হাজার ৭৬৮ ভোট। আদাবাড়িয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পেয়েছেন ১০ হাজার ৪২২ ভোট। সেখানে নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৪৯ ভোট। পিয়ারপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পেয়েছেন ৯ হাজার ৫১৮ ভোট। সেখানে নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন ২ হাজার ৩৩৭ ভোট।

জয়ী এক বিদ্রোহী প্রার্থী বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের কর্মীদের কাছে কেউ আসেনি। মাঠের খবর কেউ নেয়নি। তার ফলে জনগণ ও কর্মীরা তাঁদের সিদ্ধান্ত ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরিফউদ্দিন রিমন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতবার যারা চেয়ারম্যান ছিল, তাদেরকেই আবার মনোনয়ন দেওয়ায় দলের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এটা যেমন পরাজয়ের একটা কারণ, তেমনি দলের সভাপতিসহ দলের একটা বড় অংশের নেতারা যাদের পেট্রোনাইজ করে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল পরে চেষ্টা করেও তাদেরকে আর বসাতে পারেনি। ফলে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ায় এই বিপর্যয় হয়।’

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী বলেন, ‘আমাদের সমন্বয়ের অভাবেই এমনটি ঘটেছে। নৌকার জনপ্রিয়তা কমেছে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। দলের শীর্ষ নেতাদের বাড়ি যে এলাকায়, সেখানেও নৌকা হেরেছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত