শতবর্ষী মন্দিরে আনন্দ আয়োজন

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ৪৪
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ২৩

আজ থেকে ১০০ বছর আগে, ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রামের হালিশহর গীতা সংঘ। সে হিসেবে এ বছর মণ্ডপটি শতবর্ষ উদ্‌যাপন করছে। ফলে হালিশহরের একেবারে শেষ প্রান্তের এই মণ্ডপে আনন্দের মাত্রা বেশি। ভক্ত ও দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন, এমন আনন্দ তাঁরা আগে দেখেননি!

উদ্‌যাপনের আনন্দ গায়ে মেখে ৭০ বছরের বৃদ্ধা লাঠিতে ভর করে এসেছেন মণ্ডপে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন নাতনিকেও। মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাকঢোল-তবলার তালে নাতনিকে নিয়ে যতটুকু পারছেন নাচছেনও। কেউ কেউ আবার দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক ও মহাদেবকে প্রণাম করছেন। মণ্ডপে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মিষ্টিমুখও করাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। এই চিত্র চট্টগ্রামের হালিশহর নাথপাড়ার শতবর্ষী গীতা সংঘের পূজামণ্ডপে।

১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গীতা সংঘ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদও করেছে নানা আয়োজন। মণ্ডপের বাইরে-ভেতরে ছিল পুলিশের সরব উপস্থিতি। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। এমন পরিবেশ দেখে বৃদ্ধ ভোলানাথ আজকের পত্রিকাকে জানান, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এমন উৎসবমুখর পরিবেশ আর দেখেননি তিনি।

ভোলানাথ বলেন, ‘পুরো নাথপাড়া ঝিলিক বাতির আলোয় আলোকিত। অলিগলিতে পুলিশের উপস্থিতি। সিসি ক্যামেরা, সাদাপোশাকেও পুলিশের টহল। সবকিছু মিলিয়ে নির্ভয়ে পূজা পালন করছি। ছোট-বড় সব বয়সীরা যেভাবে উৎসব করছে, এমনটা আর দেখা যায়নি।’

 

চট্টগ্রামের হালিশহর গীতা সংঘ পূজামণ্ডপে শতবর্ষের আয়োজন

হালিশহর মহব্বত আলী স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রুবেল কান্তি দাশ তার দুই বন্ধুকে নিয়ে মণ্ডপে এসেছে। একজন রাকিব, আরেকজন সজীব। রাকিব ও সজীব জানায়, ঈদে রুবেল তাদের বাড়ি যায়। পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। তাই তারাও পূজা দেখতে এসেছে।

গীতা সংঘ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ঝন্টু কুমার নাথ জানান, সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা তাঁরা পেয়েছেন। পুলিশ প্রশাসনও যথেষ্ট আন্তরিক। প্রতিদিন এই মণ্ডপে ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ ভিড় করছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর পুরো নাথপাড়ায় মানুষের ঢল নামে। ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ।

গীতা সংঘের পাশেই ভোলানাথ কুঠির যুবগোষ্ঠীর পূজামণ্ডপ। এই মণ্ডপের বিশেষ আকর্ষণ মহাদেব। এই দেবতাকে আলাদা করে তৈরি করা হয়েছে। সময় লেগেছে প্রায় দেড় মাস। শিবের পাশে আলাদা করে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী ও কার্তিককেও রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীরাও ভিড় করছেন এই মণ্ডপে।

ভোলানাথ কুঠির যুবগোষ্ঠী পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক দুলাল কান্তি নাথ বলেন, ‘আমাদের পূজামণ্ডপেও ১০০ বছর পূর্তির আনন্দ চলছে। এ উপলক্ষে ১০ ফুটের বিশাল মহাদেবের অবয়ব তৈরি করা হয়েছে। এটি এবারের বিশেষ আকর্ষণ।’

এই মণ্ডপে আগ্রাবাদ থেকে এসেছেন হরিনাথ। তিনি জানান, পূজার সময় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটাই অন্য রকম। এখানে তাঁর ব্যতিক্রম মনে হয়েছে ভোলানাথের অবয়বকে। মনে হচ্ছে শিব মহাদেব জীবন্ত দাঁড়িয়ে আছেন।

দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে মণ্ডপে এসেছেন সবুজ শর্মা। তাঁরা এই মণ্ডপে আসার আগে আরও চারটি মণ্ডপ ঘুরেছেন। সবুজ শর্মা বলেন, ‘সব মণ্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখেছি। সবার মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব। গত বছরের ঘটনা ও করোনার কারণে অনেক বছর এ রকম পরিবেশ পাইনি। সম্প্রীতির অপরূপ দৃষ্টান্ত এখনকার বাংলাদেশ। সরকারকে ধন্যবাদ।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘সবখানে এখন পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা চলছে। আমরা নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি রাখিনি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত