জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে নিখোঁজের ৩৭ ঘণ্টা পর বাবা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন আব্দুল আজিজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে জান্নাত (৪)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঝিনাই নদ থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, হত্যার পর তাঁদের লাশ নদে ফেলে দেয় প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে চাইলেও পুলিশ নেয়নি। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের বীর বয়সিং গ্রামের জালেক মন্ডলের চার ছেলে। তাঁরা হলেন খোরশেদ আলম, আজাহার আলী, আব্দুল আজিজ ও কাজল মিয়া। কয়েক বছর আগে প্রতিবেশী মুসা মুন্সির ছেলে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে আজাহার আলীর এক মেয়েকে বিয়ে দেন। বিয়ের আগে থেকেই মোহাম্মদ আলী ও আজাহার আলীর সঙ্গে আব্দুল আজিজের পরিবারের মধ্যে যাতায়াতের রাস্তা নিয়ে বিরোধ চলছিল।

চাচা শ্বশুর আব্দুল আজিজ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে চাকরি করেন। দুই মাস আগে আব্দুল আজিজ ছুটিতে দেশে আসেন। দুই বছর আগে মোহাম্মদ আলী তাঁর চাচা শ্বশুর খোরশেদ আলমের কাছ থেকে ৭ বস্তা সিমেন্ট ধার নেন। ধার দেওয়া সিমেন্ট ফেরত চাইতে গিয়ে গত ২৩ মার্চ খোরশেদ আলমের ছেলে ফজলুর রহমান (২২) মারধরের শিকার হন। এ নিয়ে দুই পরিবারে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। পরে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় পাল্টা মামলা হয়।

মামলায় মোহাম্মদ আলী পক্ষের বাবু মিয়া, আব্দুর রশিদ ও তাঁর ছেলে সাগর মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠায় পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা গত মঙ্গলবার জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। গত মঙ্গলবার রাতেই লাঠিসোঁঠা নিয়ে আজাহার আলী ও মোহাম্মদ আলী লোকজন নিয়ে ফের খোরশেদ আলম ও আব্দুল আজিজের বাড়িঘরে হামলা চালায়। অবস্থা বেগতিক দেখে আব্দুল আজিজ তাঁর একমাত্র মেয়ে জান্নাতকে (৪) নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। হামলাকারীরা তখন আব্দুল আজিজ ও তাঁর মেয়েকে ধরে ফেলে। পরে তাঁদেরকে বাড়ির পাশের ঝিনাই নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করে তাঁদেরকে নদীতে ফেলে দেয় হামলাকারীরা। এরপর থেকে আব্দুল আজিজ ও তাঁর মেয়েকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও নেয়নি পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির পাশের ঝিনাই নদীতে আব্দুল আজিজ ও তাঁর মেয়ে জান্নাতের লাশ ভেসে উঠে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে তাঁদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। পুলিশ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পীর মোহাম্মদ, কাজলি বেগম, মর্জিনা বেগম ও সুমা বেগমকে আটক করে।

নিহত আব্দুল আজিজের বড় ভাবি ও খোরশেদ আলমের স্ত্রী ফজিলা বেগম বলেন, ‘প্রায় দেড় যুগ ধরে তাঁর দেবর আব্দুল আজিজ সৌদি আরবে থাকেন। দুই মাসের ছুটিতে তিনি দেশে এসেছিলেন। আগামী শনিবার তাঁর সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলার ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বাদল ও নিহতের বড় ভাই আজহার আলীর ইশারায় তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।’

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে ভাটারা ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বাদল বলেন, তিনি এখন মিটিংয়ে আছেন। পরে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’

নিহত আব্দুল আজিজের স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, ‘কাজের সুবাদে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে থাকার পর দুইমাসের ছুটিতে দেশে আসেন আব্দুল আজিজ। রাস্তার জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে আজহার আলী, জামাতা মোহাম্মদ আলী লোকজন নিয়ে তাঁদের পরিবারের ওপর হামলা চালায়। এ সময় প্রাণভয়ে তাঁরা দৌড়ে পালিয়ে এদিক-ওদিক যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় পর থেকে তাঁর স্বামী আব্দুল আজিজ ও মেয়ে জান্নাতকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

রোজিনা বেগম আরও অভিযোগ করেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।’

এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মৃত জালেক মন্ডলের ছেলেদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের লোকজন থানায় মামলা করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাবা-মেয়ের লাশ নদীতে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছেও বলে তিনি জানান।’