Ajker Patrika

বন অফিসের পাশেই গাছ লুট

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
বন অফিসের পাশেই গাছ লুট

কিছুদূর পর পর পাহাড়ি পথের পাশে কেটে রাখা হয়েছে বিশাল বিশাল সেগুনগাছ। স্তূপ করে রাখা হয় অনেক গাছের ছোট ছোট টুকরো। ডালপালা কাটা হয়েছে আরও কিছু গাছের। কেটে ফেলা অন্তত অর্ধশতাধিক সেগুনগাছের গোড়া মানুষের দৃষ্টি এড়াতে লতাপাতা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের অনন্তপুরসংলগ্ন পাহাড়ে। এর আনুমানিক ১০০ গজ দূরেই রয়েছে বন বিভাগের কুমিরা রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়।

স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দা সেকান্দার মিয়া অন্তত ৩০ শ্রমিক দিয়ে পাহাড়ের বড় বড় অর্ধশতাধিক সেগুনগাছ কেটে বিভিন্ন চক্রের কাছে বিক্রি করতে 
শুরু করেন।

রাতেই অনেক সেগুনগাছ কেটে ট্রাকে ভরে বিভিন্ন করাতকলে বিক্রি করে দেন।গতকাল দিনের বেলায়ও এই গাছ কাটার কাজ চলছে। কিন্তু এ সময়ে বন বিভাগের কেউ ঘটনাস্থলে আসেননি।

পরে গোপনে খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম। তিনি দুই ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়ে অনেক গাছের টুকরো এবং পাচারকাজে ব্যবহৃত কাঠভর্তি একটি ট্রাক জব্দ করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মকর্তারা পাহাড় থেকে সরকারি গাছ কাটার মহোৎসব দেখেও কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের পাহাড়ের একটি অংশ চাষাবাদ করছিলেন বাড়বকুণ্ডের দাঁড়ালিয়া পাড়ার সেকান্দার মিয়া।

ওই বাগানে রয়েছে শত শত সরকারি সেগুনগাছ। বৃহস্পতিবার রাতে সেকান্দার মিয়া শ্রমিক দিয়ে সেগুন গাছ কেটে নেন।

কুমিরার রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মকসুদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে কয়েকজন ব্যক্তি সেগুনগাছ কাটার অনুমতি চেয়ে আমাদের কাছে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের দেওয়া আবেদনটি যাচাই করতে গিয়ে আমরা অসংগতি খুঁজে পাই। তাঁরা যে দাগের গাছ কাটতে আবেদন করেন, সেই দাগের সঙ্গে যেখানে গাছ ছিল ওই দাগের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে আমরা তাঁদের আবেদনটি নাকচ করেছিলাম।’

বন বিভাগের কার্যালয়ের পাশের পাহাড় থেকে কীভাবে বনদস্যুরা গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে, জানতে চাইলে মকসুদ বলেন, ‘আবেদন করা চক্রটি শুক্রবার সরকারি ছুটিতে কার্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে গাছগুলো কেটে নিচ্ছিল। তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনো আঁতাত নেই। এ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, ‘পাহাড় থেকে সেগুনগাছ কেটে পাচার করার বিষয়টি স্থানীয় মাধ্যমে জানতে পারি। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে শুক্রবার দুপুরে অনন্তপুর পাহাড়ে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে টানা দুই ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন স্থান থেকে বিক্ষিপ্তভাবে কেটে রাখা বিশালাকার বেশ কিছু সেগুনগাছের টুকরো জব্দ করা হয়। এ ছাড়া কাঠভর্তি একটি ট্রাকও জব্দ করা হয়েছে। জব্দ গাছগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধির জিম্মায় রাখা হয়েছে।’

আশরাফুল আলম বলেন, ‘বন বিভাগের কার্যালয়ের পাশ থেকেই এভাবে অর্ধশতাধিক সেগুন গাছ কাটা ঘটনাটিতে অবাক হয়েছি। গাছ কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাশাপাশি বন বিভাগের কেউ জড়িত আছেন কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত