চল্লিশ বছর বয়সে পরীক্ষার হলে নারী কাউন্সিলর

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৩১
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৩

‘শিক্ষার কোনো বয়স নাই, চলো সবাই স্কুলে যাই’—এমন স্লোগান চারপাশে অহরহ শোনা যায়। কিন্তু এই কথা মেনে কজনইবা আর বুড়ো বয়সে স্কুলে যান। জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বয়স যে কোনো বাধা নয়, তারই যেন জলজ্যান্ত উদাহরণ জলিদা বেগম। অভাবের সংসারে ছোট বয়সে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাননি চল্লিশ বছর বয়সী এই নারী কাউন্সিলর। কিন্তু তাতে কী! সম্প্রতি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কয়ামাজমপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ঠিকই পরীক্ষায় বসে গেছেন তিনি।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, কারিগরি বোর্ডের অধীনে নবম শ্রেণির (ভোকেশনাল) ফাইনাল পরীক্ষা হচ্ছে ওই স্কুলে। কেন্দ্রের ২০২ নম্বর কক্ষে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষায় অংশ নেন তিন সন্তানের জননী জলিদা বেগম। তাঁর বাড়ি দুর্গাপুর পৌর এলাকার নান্দোপাড়া গ্রামে। তিনি এবারের দুর্গাপুর পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসন ৪, ৫, ৬ সিংগা-বহরমপুর, রৈপাড়া ও নান্দোপাড়া-চৌপুকুরিয়া ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর।

আজকের পত্রিকাকে কাউন্সিলর জলিদা বেগম বলেন, ‘সংসারে খুব অভাব ছিল। যে কারণে ছোট বয়সেই বাবা-মা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেন। এরপর স্কুলে যেতে পারিনি আর। এই বয়সে এসে ভাবলাম, সাংসারিক জীবন ও জনসেবার পাশাপাশি চাইলে তো আমি লেখাপড়াও করতে পারি। যেই ভাবা সেই কাজ। আমি সত্যিই আজ পরীক্ষা দিচ্ছি।’

জলিদা জানান, স্কুলে ভর্তি হয়ে প্রথম প্রথম কয়েক দিন তিনি ক্লাসও করেছেন। অল্প বয়সী সহপাঠীরাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে তাঁকে উৎসাহ দিয়েছে। এরপর কাজের ব্যস্ততায় ক্লাস করতে না পারলেও ঠিকই বাসায় বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। দরকার হলে দ্বারস্থ হয়েছেন শিক্ষকদের।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল হক জানান, জলিদা ২০২১ শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণির ভোকেশনালে ভর্তি হন। এটি অন্যদের জন্য বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। জলিদার পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বয়স বেশি হলেও জলিদার পড়াশোনায় খুব আগ্রহ। পরীক্ষা তিনি ভালোই দিচ্ছেন। এমনকি এত বছর পর লিখতে বসেও তাঁর মধ্যে কোনো জড়তা নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত