কাঁচাপাকা ধান কাটার তোড়জোড়

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৭
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ৩৭

ভারতের চেরাপুঞ্জি ও দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে গত শুক্রবার থেকে দ্বিতীয়বারের মতো উজানের ঢলে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি এখন বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এ ছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে নতুন করে আকস্মিক বন্যার খবরে হাওরের কৃষকেরা কাঁচাপাকা ধান কাটছেন। গতকাল রোববার পর্যন্ত হাওরাঞ্চলের ৩০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।

এর আগে গত ২ এপ্রিল রাত থেকে উজানের ঢলে প্রথম কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ৩ এপ্রিল সকাল থেকে ধনু ও বাউলাই নদীর অববাহিকার ৩৮০ হেক্টর বোরো ধানের খেত প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় এসব জমির প্রায় সব ধান।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় হাওরের ধনু নদীর পানি ৫২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, যেকোনো সময় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, হাওরের ধান পাকতে আরও ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।

তবে উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় ফসলরক্ষা বাঁধ তলিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হতে পারে পুরো হাওর—এমন আতঙ্কে এখন হাওরাঞ্চলের কৃষক পরিবার।

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জিউলের হাওরের কৃষক জালাল মিয়া বলেন, প্রথমবার পানি এসে নিচু জমি সব তলিয়ে গেছে। এখন যেভাবে নদীতে পানি বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি হাওরে ঢুকে আমাদের ফসল ডুবে যাবে। এই একটিমাত্র ফসলকে ঘিরে আমাদের অনেক স্বপ্ন। কারও মেয়ের বিয়ে, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ। পাশাপাশি সারা বছরের খোরাক এই ফসলকে ঘিরেই। আমরা এখন একমাত্র আল্লাহর ওপর সব ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ যা করেন তাই মেনে নিব।

আগাম বন্যা থেকে হাওরাঞ্চলের কৃষকের ফসলরক্ষার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এবার এখনো উজানের ঢলে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ক্ষতি হয়নি। তারপরেও বাঁধের সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে সর্বোচ্চ নজরদারি রয়েছে। এবারের ঢল মোকাবিলা করতে পারলে কৃষক অনায়াসে ধান ঘরে তুলতে পারবে। এ ছাড়া নদীর অববাহিকায় যেসব কৃষকের ধান তলিয়েছে, আমরা তাঁদের তালিকা তৈরি করছি। তাঁরা যাতে সরকারি প্রণোদনা পান, সে বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে জানাব।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, হাওরের ধান কাটা ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রতিদিনই এই ধারাবাহিকতা থাকবে। ধান কাটার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক রয়েছে। পাশাপাশি ২২২টি কম্বাইন হারভেস্টার এবং ২২টি রিপার রয়েছে। আর সাত থেকে দশ দিন সময় পেলে সব ধান কাটা সম্ভব হবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, হাওরের ৭৩টি ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমরা তদারকি করছি। প্রথমবারের উজানের ঢলে বাঁধ ভাঙেনি। এ ঢলেও বাঁধ ভাঙবে না। তবে, যদি ঢল অব্যাহত থাকে, তবে বাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া পূর্বাভাসে উচ্চমাত্রার বন্যার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। তাই জেলা প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগের পাশাপাশি আমরাও কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত