ভেজাল

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭: ৫১

নিত্যপণ্যে ভেজাল নিয়ে আজকের পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে বুধবারে, তা দেখে একদিন বাজারের এক অভিজ্ঞতার কথা মনে হলো। মাছের বাজারে কেনাকাটার সময় এক ক্রেতা সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বলছিলেন, ‘এই মাছ কিনবেন না। দেখতে পারছেন না মাছগুলোয় মাছি বসছে না! এগুলো সব বিষাক্ত মাছ!’

ভদ্রলোকের কথায় সত্যতা ছিল। এমন সব রাসায়নিক মিশিয়ে মাছ পচনের হাত থেকে বাঁচানো হয়, যেগুলো পেটে গেলে স্বাস্থ্যের অবনতি অনিবার্য। কেন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ে, তা নিয়ে জরিপ করা হলে নির্ঘাত পেটের পীড়ায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের দেখা মিলবে। শুধু কি পেটের পীড়া? এ ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিকযুক্ত নানা খাবার খেয়ে ঘাতক ব্যাধিগুলোও বাড়তে থাকে।

বাজারে গিয়ে বিশ্বাস করে কিছু কেনা এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে দেওয়া যায়। তিন দিনের বাসি তরকারি কিংবা মাছ-মাংস একেবারে তাজা বলে চালিয়ে দেওয়ার নজির আছে। মিথ্যা বলা হয় এতটাই সহজভাবে যে সেই মিথ্যা ধরবে কেউ, এমন সাধ্য কারও নেই।

কাপড়ের বাজারেও একই ব্যাপার। সেখানে আরও একটি ব্যাপার ঘটে। যে পণ্যের দাম ৫ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে, সেই পণ্য কীভাবে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়, সেটা বোঝার কোনো যৌক্তিক উপায় নেই। অসততা হয়ে গেছে ব্যবসা পরিচালনার একটি প্রধান মাধ্যম।

এই অসততার কারণেই মানুষ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শরণাপন্ন হয়। ব্র্যান্ডের ওপর বিশ্বাস রাখার মূল কারণ হলো, দামে যেমন ঠকবে না ক্রেতা, তেমনি মানেও ঠকবে না। একটি পণ্য কেনা হলে তার ওপর নির্ভর করা যাবে। কিন্তু সেই বিশ্বাসেও যে স্থির থাকা যাচ্ছে না, তারই প্রমাণ পাওয়া গেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কর্তৃক কিছু প্রচলিত পণ্যের মান পরীক্ষার পর। যে নামীদামি ব্র্যান্ডগুলো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যেত, তাদের তৈরি খাদ্যের মানও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। হলুদ-মরিচ-সয়াবিন তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তৈরিতেও মান ধরে রাখছে না এই সব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ড। মুনাফা বাড়ানোর জন্য জনস্বাস্থ্যকে এভাবে জবাই করার কী অর্থ থাকতে পারে, সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। গুণগত মান রক্ষা করে স্বাভাবিক মুনাফা করাই তো ব্যবসার ধর্ম। সেই মূল ধর্মই যদি পালন করা না হয়, তাহলে তাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই তো স্বাভাবিক।

ভেজালের ভয়াবহতা এতটাই ছড়িয়েছে যে তা জনস্বাস্থ্যের তোয়াক্কা করছে না। শোনা যায়, ওষুধ তৈরিতেও কোনো কোনো কোম্পানি ঠিক হারে উপাদানগুলোর মিশ্রণ করে না, ফলে সেই ওষুধ খেয়ে রোগমুক্তির স্বপ্ন দেখা কঠিন। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবা এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি যে জনগণ তাতে আশ্বস্ত হবে। খাদ্য, পণ্য, ওষুধে মান ধরে না রাখতে পারলে তা মৃত্যুফাঁদ বলেই বিবেচিত হবে।

শেষে বলি, শুধু জরিপ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লাভ নেই, মূলত দরকার মান নিয়ন্ত্রণ করা। সেটা করবে কে?

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত