চাপ আছে, যানজট নেই

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর ও রাজীব আল আরাফাত, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৬
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০৮: ৫৩

গাজীপুরের দুই মহাসড়ক ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইলে ঈদ উপলক্ষে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। এ দুই মহাসড়কে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে গাজীপুর সড়ক বিভাগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যানবাহনের চাপ না থাকলেও দুপুরের পর থেকে দুটি মহাসড়কে বেড়েছে গণপরিবহনের অতিরিক্ত চাপ। তবে চলাচলে ধীরগতি থাকলেও কোনো ধরনের যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে। এ সব কারখানায় কাজ করেন কয়েক লাখ শ্রমিক। এদের প্রায় সবাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবেন। অন্যদিকে, রাজধানীসহ সাভার আশুলিয়ায় কর্মরত অনেকেই ঈদযাত্রায় ব্যবহার করবেন গাজীপুরের দুই মহাসড়ক।

এদিকে, গতকাল গাজীপুর এবং ঢাকার সাভার এলাকায় অবস্থিত বেশির ভাগ পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ১২ কিলোমিটার সড়কে যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। মহাসড়কে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ও বিভিন্ন স্থানে ভাঙা থাকায় স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালাতে পারছেন না চালকেরা। দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগছে গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুপুরের পর থেকে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ বেড়েছে। রাস্তায় অনেক লক্কড়ঝক্কড় গণপরিবহনকে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়। গাড়িগুলো ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে। চালকেরা জানান, মাঝেমধ্যে রাস্তার সংস্কারকাজের কারণে সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে পারছেন না। তবে কোথাও কোনো পরিবহনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়নি।

যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সড়ক বিভাগ ও প্রশাসনের রয়েছে নানা পদক্ষেপ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখছে। বাসস্ট্যান্ডে ছাড়া কোনো পরিবহনকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না পুলিশ।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী বাসচালক মামুন মিয়া বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসতে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়াতে একটু ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এ রকম থাকবে না বলে আশঙ্কা হচ্ছে।’

এস আর পরিবহনের চালক শফিক হোসেন বলেন, ‘যাত্রীর চাপ অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে বেশি। ধারণা করছি, ঈদের দুই-এক দিন আগে যাত্রী আরও বৃদ্ধি পাবে।’

জেলার কালিয়াকৈরে চন্দ্রা ত্রি-মোড় এলাকায় সোহেল রানা নামের এক পোশাকশ্রমিক বলেন, ‘স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে খুশি লাগতেছে অন্য সময়ের তুলনায় রাস্তায় যানজটের পরিমাণ খুবই কম।’

সুরুজ মিয়া নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘সবার সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়ি যাচ্ছি। রংপুরের ভাড়া লোকাল বাসে ১০০০ টাকা চাচ্ছে। আর ছাদে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। যার থেকে যেমন নিতে পারে।’

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কথা হয় ময়মনসিংহের ফুলপুরগামী বাসযাত্রী এমারত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দেখতেই তো পাচ্ছেন-ধীর গতিতে বাস চলাচল করছে। এ জন্যই তো আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারছি। সময় অনেক বেশি লাগছে।’

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক করতে সড়কে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের জনবল বৃদ্ধি, তাদের কর্মঘণ্টা বাড়ানোসহ নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া মহাসড়কে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোথাও যানজট দেখা দিলে মাইকিং করে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।’

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কে অবৈধ যান অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলার দুই মহাসড়কে যান চলাচল স্বস্তিদায়ক হবে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম সফিউল্লাহ্ আজকের পত্রিকাকে বলেন, মহাসড়কে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে, সে জন্য পুলিশের কঠোর নজরদারি রয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে প্রশাসনের পক্ষে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সড়কের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত