স্বপ্না রেজা
নারীর প্রতি সহিংসতা সমাজের প্রায় সকল স্তরেই। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, পরিবহন, রাস্তাঘাট—কোনো জায়গাই বাদ পড়ছে না এই সহিংসতার ছোবল থেকে। প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে এবং সেটা প্রতিনিয়ত। কোনো কোনো সংবাদ পত্রিকায় আসে, কোনো সংবাদ বোবাকান্নায় চাপা পড়ে যায়, কোনো কোনো সংবাদ আবার ক্ষমতার প্রতাপ ও প্রভাবে আড়ালে চলে যায়। যেগুলো পত্রিকার পাতায় আসে, সেগুলোই সাধারণ সচেতন মানুষ জানতে পারে, কথা বলে, প্রতিবাদে মুখর হয়। বাকি সংবাদগুলো নিয়মের বাকিতে চলে যায়। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতার সঠিক ও প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেই সবের কোনো প্রতিবাদ বা বিচারের দাবি ওঠে না। এতে যে নারী নির্যাতনের শিকার হয়, তার নীরব প্রস্থান ঘটে হয়তো এ জগৎ থেকে। এটা ঠিক যে, নারীর অধিকার বিষয়ে কোনো কোনো পরিবার ও নারী সচেতন হলেও গোটা সমাজ এখনো সার্বিকভাবে সচেতন হতে পারেনি, যা দৃশ্যমান হয় বিভিন্ন পর্যায়ের পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এবং কার্যক্রমে। নারীর অবস্থান যেখানে বিবেচনার শিরোনামে প্রকাশ ও নির্ধারিত হয়। জাতীয় শিক্ষা ও নারীশিক্ষার মতো বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হলেও আজও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীকে ভোগের সামগ্রী হিসেবে ভাবা ও অধীনস্থ করে রাখার মনমানসিকতা সমাজে বিদ্যমান। সে কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ে, কমে না।
ন্যায়বিচার চাইতে যাওয়াটা অনেকের কাছেই রীতিমতো আতঙ্ক। সাধারণত দেখা যায়, একবার নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ন্যায়বিচার চাইতে গেলে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্যাতনের শিকার হতে হয়। প্রথমবার নির্যাতনের সঙ্গে দ্বিতীয়বার নির্যাতন হওয়ার মধ্যকার মূল পার্থক্য হলো, প্রথমবার সে প্রকৃত নির্যাতনকারীর কাছে নির্যাতিত হয়। আর দ্বিতীয়বার নির্যাতিত হয় যার কাছে বিচার চাইতে গেল, সেই শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বা বিচারক (!) ব্যক্তির কাছে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে যেন নারীকে মানুষ হিসেবে না দেখার পাঁয়তারা থেকেই যায়। পুরুষ হয়ে ওঠে সিস্টেম। ফলে আইন, অধিকার আড়াল হয়ে পড়ে। ওসব কোনো কাজে আসে না। পুলিশের একটি গবেষণায় এমন তথ্য এসেছে যে, নির্যাতিত নারী বিচার চাইতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়। অনেকটা দ্বিতীয়বার নির্যাতনের শিকার হওয়ার মতো।
নারী প্রথমে যে জায়গায় যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়, সেটি হলো তার পরিবার। একজন মা বলছিলেন, যেদিন তিনি জানতে পারেন তাঁর গর্ভে একজন কন্যাশিশুর অস্তিত্ব, সেদিনই সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবারে অবস্থান নেবেন। কারণ, তিনি তাঁর কাজের সুবাদে এমন অনেক ঘটনা জেনেছেন, যেখানে পরিবারে একজন কন্যাশিশু তার পরিবারের পুরুষ সদস্য বা আত্মীয়স্বজন দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। মা তাঁর আগত কন্যাশিশুকে নিয়ে এমন তিক্ত ও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান না। তাই একান্নবর্তী পরিবারের গণ্ডি থেকে বের হতে চেয়েছেন। অভিজ্ঞতা ব্যক্তিকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করে বিধায় একজন মায়ের এমন সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বা ভুল বলা যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর পরও কি একটি কন্যাশিশু তার পরিবারে নিরাপদ হতে পারছে বা থাকছে? উত্তর, না। এমন সিদ্ধান্তের দ্বিমত পোষণকারীরা বলেন, একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবারে সন্তানেরা নিরাপদ বেশি। কারণ, বাবা ও মা কর্মজীবী হলে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের সন্তানদের দেখভাল করতে পারে, চোখের নজরে রাখতে পারে। কিন্তু একক পরিবারে বাবা ও মা কর্মজীবী হয়ে থাকলে পরিবারের সহায়তাকারী পুরুষ, যেমন—ড্রাইভার, দারোয়ান, সাপোর্ট স্টাফ দ্বারা কন্যাশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হতে পারে। তাঁরা আরও মনে করেন যে, সমস্যা একক বা যৌথ পরিবারের নয়; সমস্যা হলো, পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে নৈতিক শিক্ষার অভাব।
জিনগত বৈশিষ্ট্য ছাড়া একজন যা শেখে, তার পুরোটাই পরিবেশ থেকে। যে পরিবেশে সে বেড়ে উঠছে, সেই পরিবেশ তাকে কী দেখাচ্ছে, কী শোনাচ্ছে, কোন আদর্শ ও চিন্তাচেতনায় পরিবেশ ধাবিত, কেমনটা তার কাছ থেকে আশা করা হচ্ছে ইত্যাদি বিষয় তার মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। অভিভাবকদের নৈতিক মূল্যবোধ, সততার প্রভাব সন্তানের ওপর যেমন পড়ে, তেমনি অনৈতিক ও অসততার প্রভাবও পড়ে। কোনো ব্যক্তির চিন্তাচেতনার প্রথম ভিত তৈরি করে তার পরিবার। তারপর যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে তার মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি নির্ধারিত হয়। যদিও এর সঙ্গে সমাজে সংঘটিত নানান ঘটনা, প্রচলিত আচরণ ও বিশ্বাস এবং ধর্মীয় রীতিনীতি তাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশের বিদ্যমান আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ না করা বা অপপ্রয়োগ ব্যক্তিকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে।
নারীর প্রতি সহিংসতা, অশোভনীয় আচরণ, যৌন নিপীড়নের মতো নিকৃষ্ট আচরণগুলো বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা, অসংগতি, আদর্শচ্যুত কর্মকাণ্ডেরই ফলশ্রুতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে উচ্চতর বিদ্যাপীঠে নারী শিক্ষার্থী তাঁর পুরুষ শিক্ষক কর্তৃক যেভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন প্রায় প্রতিদিন, এই সূচকই বলে দেয় যে, নারীর জন্য সমাজ কতটা অরক্ষিত এবং ভবিষ্যতে কেমন নাগরিকের আগমন ঘটবে এই সমাজে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র স্থানেও একজন নারী নিরাপদ হতে পারছে না, এর নেপথ্যে যে কারণটি উল্লেখযোগ্য বলে অনেকেই মনে করেন সেটা হলো, যোগ্য ব্যক্তির শিক্ষকতা করার সুযোগ না পাওয়া। অর্থাৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে নিয়োগব্যবস্থা, সেখানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের শক্ত প্রভাব পড়ে। নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় অদৃশ্য বলা চলে। তা ছাড়া একজন ব্যক্তির মানসিকতা ও দর্শন কতটা উন্নত ও ইতিবাচক, তার মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা বাংলাদেশের কোথাও করা হয় কি না, তা জানা নেই। তবে হওয়াটা জরুরি। ব্যক্তির ভেতরে আচরণগত বৈকল্য থাকলে এবং তা চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এ ধরনের আচরণ সংক্রমিত হয় এবং বেশ দ্রুততার সঙ্গে।
কামনা, বাসনা প্রাণীমাত্রই একটি সহজাত আচরণ। এই আচরণই প্রাণিকুলের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে মানুষের এজাতীয় আচরণ শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা হয়। মানুষই সভ্য হওয়ার তাগিদে সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছে। আবার সেই মানুষই সভ্যতার দেয়ালটা ভাঙছে। যে ভাঙছে, সে আদতে কখনোই সভ্য মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠেনি। সমাজে বিদ্যমান আইন, শাসন, রীতিনীতি কোনো কিছুই তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এহেন পুরুষ নারীর প্রতি শোভনীয় আচরণ করে না। রাষ্ট্রে নারীর অধিকার বিষয়ে যে আইন রয়েছে, তার সঠিক প্রয়োগ না হলে এজাতীয় পুরুষের সংখ্যা বাড়ে এবং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমাদের সমাজে একজন পুরুষ অনৈতিক সম্পর্কে জড়ালে তাকে ‘হিরো’ উপাধি দিতে তৎপর হয় অনেকেই। অথচ একজন নারীর পুনর্বিবাহের মতো ঘটনাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা ও দেখাটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে আইন করেও নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন যেমন সম্ভব হবে না, তেমনি তার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হবে না। প্রত্যেক নারী যেন তার অধিকার ভোগ করতে পারে, সেটা দেখা ও পর্যালোচনা করা জরুরি। নারী তার প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা পাবে, সেটাই কাম্য।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
নারীর প্রতি সহিংসতা সমাজের প্রায় সকল স্তরেই। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, পরিবহন, রাস্তাঘাট—কোনো জায়গাই বাদ পড়ছে না এই সহিংসতার ছোবল থেকে। প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে এবং সেটা প্রতিনিয়ত। কোনো কোনো সংবাদ পত্রিকায় আসে, কোনো সংবাদ বোবাকান্নায় চাপা পড়ে যায়, কোনো কোনো সংবাদ আবার ক্ষমতার প্রতাপ ও প্রভাবে আড়ালে চলে যায়। যেগুলো পত্রিকার পাতায় আসে, সেগুলোই সাধারণ সচেতন মানুষ জানতে পারে, কথা বলে, প্রতিবাদে মুখর হয়। বাকি সংবাদগুলো নিয়মের বাকিতে চলে যায়। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতার সঠিক ও প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেই সবের কোনো প্রতিবাদ বা বিচারের দাবি ওঠে না। এতে যে নারী নির্যাতনের শিকার হয়, তার নীরব প্রস্থান ঘটে হয়তো এ জগৎ থেকে। এটা ঠিক যে, নারীর অধিকার বিষয়ে কোনো কোনো পরিবার ও নারী সচেতন হলেও গোটা সমাজ এখনো সার্বিকভাবে সচেতন হতে পারেনি, যা দৃশ্যমান হয় বিভিন্ন পর্যায়ের পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এবং কার্যক্রমে। নারীর অবস্থান যেখানে বিবেচনার শিরোনামে প্রকাশ ও নির্ধারিত হয়। জাতীয় শিক্ষা ও নারীশিক্ষার মতো বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হলেও আজও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীকে ভোগের সামগ্রী হিসেবে ভাবা ও অধীনস্থ করে রাখার মনমানসিকতা সমাজে বিদ্যমান। সে কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ে, কমে না।
ন্যায়বিচার চাইতে যাওয়াটা অনেকের কাছেই রীতিমতো আতঙ্ক। সাধারণত দেখা যায়, একবার নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ন্যায়বিচার চাইতে গেলে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্যাতনের শিকার হতে হয়। প্রথমবার নির্যাতনের সঙ্গে দ্বিতীয়বার নির্যাতন হওয়ার মধ্যকার মূল পার্থক্য হলো, প্রথমবার সে প্রকৃত নির্যাতনকারীর কাছে নির্যাতিত হয়। আর দ্বিতীয়বার নির্যাতিত হয় যার কাছে বিচার চাইতে গেল, সেই শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বা বিচারক (!) ব্যক্তির কাছে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে যেন নারীকে মানুষ হিসেবে না দেখার পাঁয়তারা থেকেই যায়। পুরুষ হয়ে ওঠে সিস্টেম। ফলে আইন, অধিকার আড়াল হয়ে পড়ে। ওসব কোনো কাজে আসে না। পুলিশের একটি গবেষণায় এমন তথ্য এসেছে যে, নির্যাতিত নারী বিচার চাইতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়। অনেকটা দ্বিতীয়বার নির্যাতনের শিকার হওয়ার মতো।
নারী প্রথমে যে জায়গায় যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়, সেটি হলো তার পরিবার। একজন মা বলছিলেন, যেদিন তিনি জানতে পারেন তাঁর গর্ভে একজন কন্যাশিশুর অস্তিত্ব, সেদিনই সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবারে অবস্থান নেবেন। কারণ, তিনি তাঁর কাজের সুবাদে এমন অনেক ঘটনা জেনেছেন, যেখানে পরিবারে একজন কন্যাশিশু তার পরিবারের পুরুষ সদস্য বা আত্মীয়স্বজন দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। মা তাঁর আগত কন্যাশিশুকে নিয়ে এমন তিক্ত ও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান না। তাই একান্নবর্তী পরিবারের গণ্ডি থেকে বের হতে চেয়েছেন। অভিজ্ঞতা ব্যক্তিকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করে বিধায় একজন মায়ের এমন সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বা ভুল বলা যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর পরও কি একটি কন্যাশিশু তার পরিবারে নিরাপদ হতে পারছে বা থাকছে? উত্তর, না। এমন সিদ্ধান্তের দ্বিমত পোষণকারীরা বলেন, একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবারে সন্তানেরা নিরাপদ বেশি। কারণ, বাবা ও মা কর্মজীবী হলে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের সন্তানদের দেখভাল করতে পারে, চোখের নজরে রাখতে পারে। কিন্তু একক পরিবারে বাবা ও মা কর্মজীবী হয়ে থাকলে পরিবারের সহায়তাকারী পুরুষ, যেমন—ড্রাইভার, দারোয়ান, সাপোর্ট স্টাফ দ্বারা কন্যাশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হতে পারে। তাঁরা আরও মনে করেন যে, সমস্যা একক বা যৌথ পরিবারের নয়; সমস্যা হলো, পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে নৈতিক শিক্ষার অভাব।
জিনগত বৈশিষ্ট্য ছাড়া একজন যা শেখে, তার পুরোটাই পরিবেশ থেকে। যে পরিবেশে সে বেড়ে উঠছে, সেই পরিবেশ তাকে কী দেখাচ্ছে, কী শোনাচ্ছে, কোন আদর্শ ও চিন্তাচেতনায় পরিবেশ ধাবিত, কেমনটা তার কাছ থেকে আশা করা হচ্ছে ইত্যাদি বিষয় তার মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। অভিভাবকদের নৈতিক মূল্যবোধ, সততার প্রভাব সন্তানের ওপর যেমন পড়ে, তেমনি অনৈতিক ও অসততার প্রভাবও পড়ে। কোনো ব্যক্তির চিন্তাচেতনার প্রথম ভিত তৈরি করে তার পরিবার। তারপর যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে তার মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি নির্ধারিত হয়। যদিও এর সঙ্গে সমাজে সংঘটিত নানান ঘটনা, প্রচলিত আচরণ ও বিশ্বাস এবং ধর্মীয় রীতিনীতি তাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশের বিদ্যমান আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ না করা বা অপপ্রয়োগ ব্যক্তিকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে।
নারীর প্রতি সহিংসতা, অশোভনীয় আচরণ, যৌন নিপীড়নের মতো নিকৃষ্ট আচরণগুলো বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা, অসংগতি, আদর্শচ্যুত কর্মকাণ্ডেরই ফলশ্রুতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে উচ্চতর বিদ্যাপীঠে নারী শিক্ষার্থী তাঁর পুরুষ শিক্ষক কর্তৃক যেভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন প্রায় প্রতিদিন, এই সূচকই বলে দেয় যে, নারীর জন্য সমাজ কতটা অরক্ষিত এবং ভবিষ্যতে কেমন নাগরিকের আগমন ঘটবে এই সমাজে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র স্থানেও একজন নারী নিরাপদ হতে পারছে না, এর নেপথ্যে যে কারণটি উল্লেখযোগ্য বলে অনেকেই মনে করেন সেটা হলো, যোগ্য ব্যক্তির শিক্ষকতা করার সুযোগ না পাওয়া। অর্থাৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে নিয়োগব্যবস্থা, সেখানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের শক্ত প্রভাব পড়ে। নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় অদৃশ্য বলা চলে। তা ছাড়া একজন ব্যক্তির মানসিকতা ও দর্শন কতটা উন্নত ও ইতিবাচক, তার মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা বাংলাদেশের কোথাও করা হয় কি না, তা জানা নেই। তবে হওয়াটা জরুরি। ব্যক্তির ভেতরে আচরণগত বৈকল্য থাকলে এবং তা চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এ ধরনের আচরণ সংক্রমিত হয় এবং বেশ দ্রুততার সঙ্গে।
কামনা, বাসনা প্রাণীমাত্রই একটি সহজাত আচরণ। এই আচরণই প্রাণিকুলের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে মানুষের এজাতীয় আচরণ শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা হয়। মানুষই সভ্য হওয়ার তাগিদে সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছে। আবার সেই মানুষই সভ্যতার দেয়ালটা ভাঙছে। যে ভাঙছে, সে আদতে কখনোই সভ্য মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠেনি। সমাজে বিদ্যমান আইন, শাসন, রীতিনীতি কোনো কিছুই তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এহেন পুরুষ নারীর প্রতি শোভনীয় আচরণ করে না। রাষ্ট্রে নারীর অধিকার বিষয়ে যে আইন রয়েছে, তার সঠিক প্রয়োগ না হলে এজাতীয় পুরুষের সংখ্যা বাড়ে এবং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমাদের সমাজে একজন পুরুষ অনৈতিক সম্পর্কে জড়ালে তাকে ‘হিরো’ উপাধি দিতে তৎপর হয় অনেকেই। অথচ একজন নারীর পুনর্বিবাহের মতো ঘটনাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা ও দেখাটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে আইন করেও নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন যেমন সম্ভব হবে না, তেমনি তার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হবে না। প্রত্যেক নারী যেন তার অধিকার ভোগ করতে পারে, সেটা দেখা ও পর্যালোচনা করা জরুরি। নারী তার প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা পাবে, সেটাই কাম্য।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে